বাংলাদেশের উপর মিঃ ওবামার মিসাইল নিক্ষেপ
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ০৫ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৫৯:৪১ সন্ধ্যা
বাংলাদেশ - যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সুগভীর । এই সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের । প্রচুর বাংলাদেশী আমেরিকায় অবস্তান করেছে । সেখানে নাগরিকত্ব নিয়ে স্থায়ীভাবে আছেন তার সংখ্যা কম নয় । দেশের অর্তনৈতিক চাকা ঘুরাতে তাদের অবদান খাট করে দেখার সুযোগ নেই । পৃথিবীর সুপার পাওয়ার খ্যাত আমেরিকা ঢাকার প্রতি সহযোগীতার হাত ঘুটিয়ে নেয়নি । দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি । বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ আমেরিকার পরীক্ষিত বন্ধু । কুটনৈতিক - অর্তনৈতিক- সামরিক কিংবা বানিজ্যিক কোনক্ষেত্রেই খুব টানাপোড়া হয়নি । বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাদের পররাষ্ট্রনীতির হেরফের হয়নি । আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি আমাদের মত বদলায় না । একক নেতৃত্ব - কতৃত্ব আমেরিকায় নেই । তাদের প্রেসিডেন্ট অনেক ক্ষমতার অধিকারী । তাই বলে যা ইচ্ছা তা করার সুযোগ নেই ।
অনেক গরীবদেশ আমেরিকার বাজারে ৯৭ পণ্যের জিএসপি সুবিধা ভোগ করে আসছে । বাংলাদেশও সেই সুবিধা পেয়ে আসছে । যদিও এই পণ্যগুলোর খুব একটা চাহিদা আমেরিকার বাজারে নেই । ২০১২ সালে বাংলাদেশ ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমেরিকায় রপ্তানি করে ২০লাখ ডলার সুল্ক সুবিধা পায় । অপর দিকে ৪৯০কোটি ডলারের পোষাক রপ্তানি করে ১৫% ভাগ শুল্ক হিসাবে বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে ৬৫০০ কোটি টাকা । চীন আমেরিকাকে পোষাক খাতে শুল্ক দেয় ৩% ভাগ । পোষাক খাতে আমেরিকার বাজারে আমাদের জিএসপি সুবিধা নেই ।
**** জিএসপি সুবিধা বাতিল কেন ? ******
*** AFL - CIO [ দি আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার - কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন ] ২০০৭ সালে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্যে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরে পিটিশন দাখিল করে । তারা মে ২০১৩ -এর প্রথম সপ্তায় পুনরায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরীকে একই দাবীতে লিখিত আবেদন দেয় ।
**** গত ডিসেম্বরে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্যে শর্ত পুরনের তাগিদ দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব জিএম কাদেরকে চিঠি দেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রন কার্ক ।
****** মার্চ ২০১৩ , বাংলাদেশ -ওয়াশিংটন জিএসপি বিষয়ক শুনানি হয় । বাংলাদেশ তাতে অংশ গ্রহন করে । তাতে শর্ত সাপেক্ষে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত থাকার আবাস ছিল । কিন্তু সাভার ট্রাজেডিতে সব এলোমেলো হয়ে যায় ।
**** অনেকের ধারনা '' টিকফা '' চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা হারিয়েছে । বাণিজ্যমন্ত্রী টিকফা চুক্তি করার জন্য বার বার প্রধানমন্ত্রীকে তাগিদ দিচ্ছিলেন । যদিও টিকফা চুক্তিতে জিএসপি সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই । সরকারের পক্ষ হতে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পজেটিভ ম্যাসেজ ওয়াশিংটনে গিয়েছে । এই চুক্তির গোপনীয়তা নিয়ে অনেক আপত্তি সরকারের ভিতরে -বাইরে রয়েছে । তাই বিষয়টি চুড়ান্ত রুপ নেয়নি ।
**** সর্বমহল হতে ৩ টি বিষয় জোর তাগিদ দেয়া হয় ।
১] সংশোধিত শ্রম আইন প্রয়োগ ।
২] কর্ম পরিবেশের উন্নতি ।
৩] ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা ।
এই তিন শর্ত পুরনে সরকার এবং মালিক পক্ষ চরমভাবে ব্যর্থ । ২০১৩ ৬ জুন US সিনেট কমিটি অন রিলেশন্স বাংলাদেশের শ্রম বাজার নিয়ে শুনানি করে । তাতে এই বিষয় গুলো চলে আসে । সেখানে সাভার ট্রাজেডি এবং মাত্র ৩৮ ডলার শ্রমিকের মাসিক বেতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় । ঐশুনানিতেই জিএসপি সুবিধা বাতিলের বিষয়টি একরকম চুড়ান্ত হয়ে যায় ।
***** ২০১৩ ,২৭ জুন মধ্যরাতে ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের উপর জিএসপি সুবিধা বাতিলের অর্থনৈতিক মিসাইল নিক্ষেপ করল । আন্যায় করল সরকার এবং মালিক পক্ষ । কিন্তু মিসাইল আঘাত হানল সেই গরীব নিরীহ শ্রমিকের উপর ।
২০০৭ সালে শুরু হয় জিএসপি সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ । সরকার এবং মালিক পক্ষ ডেম কেয়ার । তাদের কোন সংকট নেই । নেই মিসাইল প্রতিহত - প্রতিরোধ - ফেরত পাঠাবার তাগদ । আছে বেহুদা আস্ফালন । মুল সমস্যা আড়াল করতে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং দোষারোপ চরিত্রের প্রকাশ করে চলেছেন নির্লজ্জের মত । দেখুন মিসাইলের জবাব -----
১] বিমান মন্ত্রী কর্নেল ফারুখ খান ঃ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা স্থগিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেছে ।
২] পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতি ঃ জিএসপি স্থগিতের সিন্ধান্তটি বাংলাদেশ সরকার জানতে পেরেছে । দীর্ঘদিন ধরে চালানো বাংলাদেশবিরোধী প্রচারনার কারনেই অনাকাংখিত এ সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হতে হলো বাংলাদেশকে ।
৩] মহাজোট নেতা মোহাম্মদ নাসিম ঃ বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার তদবিরে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করেছে ।
৪] তথ্যমন্ত্রী বাম নেতা হাসানুল হক ইনু ঃ সরকারকে বিরোধীতা করতে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী জিএসপি সুবিধা বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়েছেন ।
৫] ছাত্রলীগ - যুব মহিলা লীগের যুক্ত বিবৃতি ঃ খালেদা জিয়ার অনুরোধে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ফলে দেশের পোষাক শিল্পের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানার লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন অনিশ্চয়তায় পড়বে ।
৬] বাণিজ্য মন্ত্রী জি এম কাদের ঃ খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি কথার কথা বলেই মনে হচ্ছে । কারো চিঠির উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে , তা ভাবার কারন নেই । মুলত বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির জন্যে চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসাবেই যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এই সিদ্ধান্ত কারো ষড়যন্ত্রের পরিনতি নয় ।
৭] জনাব গওহর রেজবি ,পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ঃ যখন জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হল তখন নিশ্চয়ই আমি বলব , আমাদের কিছু ব্যর্থতা ছিল । শ্রম আইনে সংস্কার আনার ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে ।
৮] পোষাক শিল্প মালিক সংগঠনের সভাপতি আতিকুল ইসলাম ঃ এ সিদ্ধান্তের কারনে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষতি হবে । সিদ্ধান্তটির পিছনে অন্য কারন থাকতে পারে । বাংলাদেশকে নিয়ে '' বাণিজ্য ষড়যন্ত্র '' হতে পারে ।
উল্লেখিত বক্তব্য হতে আমরা কি বুঝলাম ?
***** জনাব জিএম কাদের এবং গওহর রেজভি ব্যতিক্রমধর্মী কথা বলেছেন । রাষ্ট্রের গুরুত্বপুর্ণ ২জন ব্যক্তি মুলত আসল সংকট এবং কারন যথার্তভাবেই উপলব্ধি করেছেন ।
****** বাকীদের তীর আমেরিকার দিকে এবং বিরোধী পক্ষের দিকে । নিজেরা সম্পুর্ণ দায়মুক্ত । এই জন্যে সরকার এবং মালিক পক্ষ দায়ী নন ।
***** আমেরিকা কান কথা শুনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে । মিঃ ওবামা এবং তার বৌ মিলে রাতে মিসাইল নিক্ষেপ করলেন বাংলাদেশের উপর । তার একটু আগে খালেদা জিয়া তাদের নিকট তার বার্তা পাঠিয়েছিলেন । খালেদা জিয়ার এত প্রভাব মিঃ ওবামার উপর ! যা বলেন তাই হয়ে যায় । তাইলে লজ্জায়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত ।
হায় লজ্জা ! হায় বাংলাদেশ ! এমন বেকুব দেশের বাসিন্দা আমরা । বুঝেও না বুঝার ভান করি । নিজের দোষ অন্যের গাঢ়ে চাপাই । নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল চালাই । নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করি । ডেকে নিয়ে শ্রমিক হত্যা করি । গেটে তালা মেরে নিরীহ গরীব শ্রমিক আগুনে পুড়ে ছাই বানাই । বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডের পোষাক নির্মাতাদের কোন নিরাপত্তা নাই । তাদের সাথে দাস সুলভ আচরন । সেই দিকে কোন নজর নেই । আছে যত ভেল্কিবাজীর রাজনীতি । আছে ক্ষমতার মোহ ।আছে কাদা ছোড়া ছুড়ি ।
জিএসপি সুবধা বাতিলের ভিন্ন একটি কারন উল্লেখ করেছে লন্ডনের '' দ্য ইকনমিষ্ট '' পত্রিকা [ ৪/৭/১৩ ] । তাদের দৃষ্টিতে '' ডঃ ইউনুছ এবং শ্রমিক নেতা আমিনুল '' ইসুতে আমেরিকা ক্ষুব্ধ । ডঃ মোহাম্মদ ইউনুছ আমেরিকার প্রিয়ভাজন ব্যক্তি এবং আমিনুল ছিল জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়েছে । তাতে সরকারের ভাবমুর্তি চরমভাবে খর্ব করেছে ।
আজ জিএসপি সুবিধা বাতিলে ইউরোপ ইউনিয়ন যদি একই পথে হাঁটে তা হলে দেশের পোষাক শিল্প চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে । জাতীয় অর্থনীতি মুখ থুবরে পরবে । দেশ এক কঠিন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হবে । যেখান হতে বের হওয়া খুবই কঠিন হবে । রাজনৈতিক বিতর্কের উর্ধেব উঠে বিষয়টি পার্লামেণ্টে উঠানো জরুরী । বিরোধীদের আস্থায় নিয়ে জাতীয় সংকট মোকাবিলার পথ খুজে বের করা দরকার । নচেৎ দৈত্যের পায়ের নীচে ছাগলের দফারফা হয়ে যাবে । দৈত্য -দানবের সাথে ছাগলের কুস্তি চলে না । তবে ছাগল বুদ্ধি খাটাতে পারলে সম্মানের সাথে দৈত্যের বন্ধু হয়েও সুবিধা নিতে পারে ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন