এবার কালো আইনে ম্যাজিষ্ট্রেট হবেন '' চিঠির বক্স '' !!
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১৪ জুন, ২০১৩, ০৭:৫৬:৫৩ সন্ধ্যা
আইন কাদের জন্যে ? জনগণের জন্যে । অতি স্বাভাবিক কথা । এই কথাটি এখন অতি সস্তা । জনগণের সরকার । জনগণের পার্লামেন্ট । জনগণের জন্যে আইন বানাবে । জনগণ সে আইনের সুবিধা ভোগ করবে । কিন্তু দেখা যায় জনগণই সে আইনের দুর্ভোগ পোয়ায় । উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যর্থ হয় । জনগণ উপকৃত হত যদি আইনটি পাশ হওয়ার আগে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করত । রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না থাকত ।
১] দলীয় - নির্দলীয় দেশের প্রখ্যাত আইনবিদদের ফোরামে পর্যালোচনা এবং তাদের মতামতের প্রতিফলন হত ।
২] সংসদীয় আইন কমিটির পর্যালোচনা এবং তাদের মতামত ।
৩] মন্ত্রী পরিষদে ব্যাপক পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন ।
৪] সংসদে পেশ করে বিস্তারিতভাবে সংসদ সদস্যদের নিকট প্রস্তাবনার কপি প্রদান , ব্যাপকভাবে আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ করে দেয়া এবং তাদের মতামতের গুরুত্ব দেয়া হত । তাইলে বিতর্কের অবসান ঘটত ।
গুরুত্বপুর্ণ আইন প্রনয়নে যথাযথভাবে মতামতের গুরুত্ব না দেয়ায় আইন অনেক সময় '' শাখের কড়াতে '' পরিনত হয় । জনকল্যানের পরিবর্তে জননিপিড়নের হাতিয়ার হয় । মুলত ক্ষমতা বাধাহীন এবং স্থায়ী করার মানসিকতা নিয়েই নতুন নতুন আইন তৈরী হচ্ছে । সংবিধান বার বার সংশোধিত হচ্ছে ।
১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই সংবিধান প্রনয়ন করেছে । তাদের হাতেই সংবিধান ১ম আহত হয়েছে । হোচট খেয়েছে । ক্ষতবিক্ষত হয়েছে । ১৯৭২ সালের সংবিধানে জরুরী অবস্থা জারীর বিধান ছিল না । ইনু সাহেবদের গণবাহিনী ঠেক দিতে ১৯৭৩ সালে ২২সেপ্টেম্বর জরুরী অবস্থা ঘোষনার বিধান সংবিধানে সংযুক্ত হয় । তাতে সংবিধানের ৩৬ থেকে ৪০ এবং ৪২ অনুচ্ছেদের কার্যকরিতা স্থগিত রাখার বিধান সন্নিবেসিত হয় । [ ১৪১ ক খ গ ] । ফলে মৌলিক অধিকারের মুল বিষয়গুলো হরনের সুযোগ তৈরী হয় । যা ছিল সংবিধানের মুল স্প্রীটের পরিপন্থী ।
১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১ম জরুরী অবস্থা জারী করা হয় । তাতে পরিস্থিতি আরো বেশী খারাপ হয় । দিকভ্রান্ত সরকার ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারীতে বিজলী চমকানোর মত ৪র্থ সংশোধনী আনল । তাতে আওয়ামী লীগ সহ সকল দলের দাফান হয় । গঠন করা হল বাকশাল । ক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দবস্ত হল । সরকারের নিয়ন্ত্রনে মাত্র ৪ টি পত্রিকা রাখা হল । বাকী সংবাদ পত্র বাতিল হয়ে গেল । বিরোধী মতামত একদম খারিজ । সব কিছুই করা হল গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে । আওয়ামী লীগকে চরম মুল্য দিতে হল । ১৯৭৪ সালের কালো আইন আর সাদা হল না । সেই বিশেষ ক্ষমতা আইন কেউ খারিজ করলেন না । সবাই কাজে লাগালেন ।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ জননিরাপত্তা নামে আর একটি কুখ্যাত কাল আইনের জম্ম দিয়েছিল । যে আইনে হাজার হাজার বিরোধী নেতা কর্মী নির্যাতনের শিকার হয় ।
এইবার ২০১৩ সালে ১১জুন সংসদে পুলিশকে অবাধ ক্ষমতা দিয়ে '' সন্ত্রাস বিরোধী [সংশোধন ] বিল ২০১৩ বিল '' কন্ঠ ভোটে পাশ করেছে । বিরোধী পক্ষের প্রবল আপত্তি উপেক্ষীত হওয়ায় তারা ওয়াক আউট করে ।আইনটি মুলত বিরোধী মত -পথ -পক্ষ দমনের নতুন হাতিয়ার । আইনটিকে সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী বলে প্রখ্যাত আইনবিদগন অভিমত-আপত্তি জানিয়েছেন । আইনটি সংবিধানে সুরক্ষিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলেছেন আইন বিশেষজ্ঞগন ।
****** সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ *******
'' রাষ্ট্রের নিরাপত্তা , জনশৃংখলা , জনসাধারনের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিওসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের
ক] প্রবেশ , তল্লাশী ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তালাভের অধিকার থাকিবে ; এবং
খ ] চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতারক্ষার অধিকার থাকিবে ।''
**** এই অনুচ্ছেদের মুল বক্তব্য উপেক্ষা করেই নতুন কালো আইন তৈরী হয়েছে । আইনটির ৪০ ধারায় ছিল -- '' জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পুর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোন পুলিশ কর্মকর্তা এই আইনের অধীন কোন অপরাধের তদন্ত করিতে পারিবে না '' ।
এই বিধান পরিবর্তন করে বলা হয়েছে ---'' এই আইনের অধিন কোন অপরাধ সংঘটিত হইলে , সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা , তাৎক্ষণিক ভাবে জেলাম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিতক্রমে মামলা রজু করিবে এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করিবে '' ।
******* আইনটির ২১ ধারায় ৩ উপধারা নতুন করে সংযোযন করা হয়েছে । তাতে বলা হয়েছে ----'' কোন সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সত্তা কতৃক ব্যবহ্রত ফেস বুক , স্কাইপি , টুইটার বা যে কোন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা তাহাদের অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থির বা ভিডীও চিত্র পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কতৃক কোন মামলার তদন্তের স্বার্থে যদি আদালতে উপস্থাপন করা হয় তাহা হইলে , স্বাক্ষ্য আইনে যাহা কিছু থাকুক না কেন , পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কতৃক উপস্থাপিত তথ্যাদি আদালতে স্বাক্ষ্য হিসাবে গ্রহনযোগ্য হইবে '' ।
****** আইনটির ৩৯ ধারা অনুযায়ী এই আইনের অধীন সব অপরাধ আমলযোগ্য এবং সব অপরাধ জামিন অযোগ্য হিসাবে গন্য হবে ।
বর্তমানে পুলিশের আচরনে সর্বমহল ক্ষুব্ধ । আতংকিত । পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে পারেনি । তাদের সেবার কোন মান নেই । তারা এখন রাজনৈতিক লাঠিয়াল । সেই পুলিশ অবাধ ক্ষমতা পেলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে । ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব খর্ব করে সে দায়িত্ব পুলিশকে দেয়া হলে ব্যাপকভাবে আইনের অপপ্রয়োগ হবে । ম্যাজিস্ট্রেটকে পোস্ট বক্স না বানিয়ে কোর্ট- আদালত তুলে দিন । রাস্তায়ই যদি বিচার করা যায় -শাস্তি দেয়া যায় ,কোন জবাবদিহিতা না থাকে তা হলে কোর্ট আদালতের দরকার কি ? দেশটাকে পুলিশী রাষ্ট্র ঘোষণা করে দিতে বাধা কোথায় ?
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন