আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১০ জুন, ২০১৩, ০৪:৪২:২৬ বিকাল
মাননীয় আপোষহীন -দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া !
আসসালামু আলাইকুম ।
১৯৯১ সাল । কেউ ধারনা করেনি দেশের ১ম নারী প্রধানমন্ত্রী হবেন বেগম খালেদা জিয়া । জনগণ চেয়েছিল তাই হয়েছেন । তখন আপনার দলের কুটনৈতিক এবং আমলা নির্ভরতা ছিল না । আপনার দল আওয়ামী লীগের চেয়ে দুর্বলই ছিল । আপনার সম্বল ছিল শহীদ জিয়ার আদর্শ , দেশের মানুষের ভালবাসা , কয়েকজন সাহসী নেতার যথার্ত পদক্ষেপ , একদল তরুন -যুবকের বলিষ্ট্যতা -ত্যাগ , ইসলাম পন্থীদের শর্তহীন সহযোগীতা , স্বচ্ছ নির্বাচনের গ্যারান্টি এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ভুমিকা । যা বিএনপির বিজয়ের পথ সুগম করেছিল ।
১৯৯৬ সাল । আপনার দলের পরাজয় ঘটল । কারন আপনার জানা । নির্বাচন মুখী গনতন্ত্রে ভোটের হিসাব-নিকাষে ভুল ছিল । জাতীয়তাবাদী - ইসলাম পন্থী ভোট ব্যাংক বিভাজিত হয়েছিল । আমি যে এলাকার বাসিন্দা সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী [৪৩ হাজার ] বিএনপি [৪০ হাজার ] প্রার্থী হতে মাত্র ৩ হাজার ভোট বেশী পেয়ে বিজয় লাভ করেছিল । জামায়াত প্রার্থী ভোট পায় ১৬ হাজার । অনেক জায়গায় ৩/৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জামায়াত প্রার্থী পরাজিত হয় । গোটা দেশে শতাধিক আসনের চিত্র এমনই ছিল । আপনার তথ্য গবেষক এবং ভোট বিশ্লেষকগন নিশ্চয়ই আপনাকে গোটা দেশের চিত্র পরিবেশন করেছে ।
২০০১ সাল । আপনার সঠিক পথে হাঁটা বিফলে যায়নি । জোটবদ্ধতা ভোট ব্যাংক সুরক্ষীত করে । আপনার পাশে তৃনমুলের সাধারন মানুষ দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়ায় । দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করে । জনগনের উপর আস্থা - জনগনের ভালবাসা এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত থাকলে বিজয় কেউ ঠেকাতে পারে না । বার বার তা প্রমানিত হয়েছে ।
২০১৩ সাল । আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন । ২/৪ জন আছেন ঘরে রাজনৈতিক প্যারালাইসড হিসাবে । আর আপনার বাঘা বাঘা সাবেক মন্ত্রী , ব্যারেষ্টার , ড , মুক্তিযোদ্ধা , আমলা জীবন্ত প্যারালাইসড । সাধু ভাষায় প্রতিবাদ জানান । হরতাল ডেকে ঘরে বসে টিভি দেখেন । পুলিশ আর আওয়ামী লীগ রাস্তা দখল করে হরতাল সফল করে । উনারা মিষ্টি-ভদ্র আন্দোলনে বিশ্বাসী । ঘরে বসে তত্ত্ববোধায়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবেন । প্রথম আলোর জরিপ ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্ববোধায়ক সরকার চায় । অতএব আওয়ামী লীগ সরকার কোথায় যায় ?
তারা কোথায় যায় তা আপনার দলের নেতারা দেখে না । জিয়া পরিবারকে নানা মুখী আক্রমনে ফেলে ধবংসের আয়োজন চলেছে তাও এই নেতারা বুঝেন না ? তা সামাল দেয়ার দায়িত্ব যেন শুধু নেত্রীর । এই ক্ষেত্রে আপনার ১০ পুরুষ নেতার সমান এক বোন পাপিয়াই সংসদে দাঁড়িয়ে দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছে । তাকে প্রানঢালা অভিনন্দন ।
আওয়ামী লীগ ভয় দেখিয়ে এবং শক্তি প্রয়োগ করে টিকে আছে । এটা আধুনিক গণতান্ত্রিক আওয়ামী স্ট্যাইল । অতি গোপনে একটি গ্রুপকে ইসলামী দাবী-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামায় , তাদেরকে জংগী বানায় , মিডিয়া কাজে লাগায় । তারপর কঠোর হাতে দমন করে । বিশ্বকে দেখায় ---আমরা মৌলবাদ এবং জংগীবাদ মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি ।এই কুটচালে আওয়ামী লীগ সফল । সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এমন ইসলাম বিদ্বেষী সরকার চায় । তাই আওয়ামী লীগের ২শতাধিক সিট দরকার । জনগণ দরকার নেই । অদৃশ্য পরামর্শ দাতা এবং বস্তাভর্তি টাকা দিয়েই তারা সিট দখল করে ক্ষমতায় এসেছে । ক্ষমতার সিড়ি ভেঙ্গে ফেলেছে । সংবিধান পরিবর্তন করেছে । নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সংসদ বিলুপ্তি ধারা হাওয়া হয়ে গেছে । এখন আওয়ামী লীগ -তারপরও আওয়ামী লীগ ২০২১ ওভার !
মাননীয় দেশ নেত্রী !
দেশের মানুষ চরম ভাবে উদ্বিগ্ন -আতংকিত -ক্ষুব্ধ । ১টি দিনের জন্যেও এই ফ্যাসীবাদী সরকারকে চায় না । সাধারন মানুষ চায় টানা কঠোর আন্দোলন । ৪মে ঢাকার মহাসমাবেশ তার প্রমান । ৫মে হেফাজতের অবস্থান ঢাকার ৬ প্রবেশ পথেই ২দিন আর পল্টনে ১৮ দলের শক্ত অবস্থান যদি থাকত তাহলে ক্রাক ডাউন দুরে থাক সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে উঠত । আন্দোলনের গতি সৃষ্টি হত । তা সামাল দেয়া সরকারের জন্যে খুবই কঠিন ছিল । আপনার রণকৌশলী নেতাদের ব্যর্থতার সুযোগে আওয়ামী লীগ বেশী বেপরোয়া এবং শক্ত অবস্থানে যায় । ২দিনের মিষ্টি প্রতিবাদ হরতাল কোন প্রভাব ফেলেনি । বরং তারা আরো বড় শ্বৈরাচারী রুপ ধারন করেছে । রাতের নির্মম গণহত্যা গায়েব করে দিয়েছে । ৩ মাসের নির্বাচনি প্রস্তুতি প্যাকেজ সামনে রেখে ১ মাস সভা-সমাবেশ , মিছিল , মানব বন্ধন নিষিদ্ধ করল । তার পর রমজান ১ মাস এবং ঈদ উৎসব । এর ভিতর তাদের অভ্যন্তরীন প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে । বিরোধি দলকে অপ্রস্তুত রেখে আগাম নির্বাচনের চমক দেখানো হবে । লেডী স্পীকার হবেন সেই চমক সরকার প্রধান । এমনটাই ধারনা করা হচ্ছে ।
অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ধৈর্য্য নেই ।সরকার যেখানে সংবিধান - গনতন্ত্র - আইন মানছে না । সেখানে পাবলিক কেন নিয়মতান্ত্রিক পথে হাটবে ? তারা চায় কঠোর -তীব্র আন্দোলন । সরকার পতনের ১ দফার আন্দোলন । অতীতে সকল আন্দোলনে সাধারন মানুষ আপনার পাশে ছিল । এখনও সাধারন মানুষ প্রস্তুত । পিছনের সকল আন্দোলনের গতি সৃষ্টি করেছে যুবক-তরুন-ছাত্র সমাজ । তৈরী হয়েছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ । ১৮ দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কোন ভুমিকা দেখছি না । এটা সময়ের দাবী । সম্মেলিত যুবকদের লড়াই ছাড়া আন্দোলনের গতি আসবেনা । সাবেক ছাত্র নেতাদের নিয়মিত মনিটরিং সহযোগিতা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারে ।
আমরা আশা করি জনতার চাহিদার আলোকে আপনি সময়াপোযগী সিদ্ধান্ত এবং টেকসই পদক্ষেপ নিবেন । আলোচনার দরজা ফ্যাসিষ্ট সরকার বন্ধ করে দিয়েছে ।তারা বাকশালী চরিত্র ধারন করেছে । এখন রাজপথই একমাত্র সমাধানের পথ । যেমন কুকুর তেমন মুগুর ছাড়া কাজ হবে না । হরতাল , অবরোধ , আবস্থান , স্বেচ্ছায় কারাবরন প্রভৃতি জনসম্পৃক্ততা মুখী কর্মসুচী তৃনমুল নেতা কর্মীদের দাবী ।
গণহত্যার শ্বেতপত্র , অডিও-ভিডিও, দুর্নীতির প্রমান চিত্র , রিমান্ডে নির্যাতন-হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ীর রেকর্ড , আর্মী হত্যার চিত্র , রাষ্ট্রী চাদাবাজী [ ব্যাংক হতে ৭০ লাখ টাকা চিঠির মাধ্যমে চাঁদা তুলে ১,৯০,০০০ টাকা খরচ করে বিদেশী পত্রিকায় সফলতা প্রকাশের হীনচেষ্টা ] ,পদ্মাসেতুর দুর্নীতি প্রভৃতি ডুকেমেণ্ট আকারে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়া দরকার । নেতা -কর্মী- সমর্থক যেন প্রমান দিয়েই সক্রিয় ভুমিকা রাখতে পারে তার ব্যবস্থা একান্ত জরুরী ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন