ধর্মীয় স্বাধীনতা , মতের স্বাধীনতা এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ০৮ জুন, ২০১৩, ১০:১০:২৮ রাত
ব্যক্তি , পরিবার এবং দল তন্ত্রের গ্যারাকলে বাংলাদেশ বন্দী । আমরা একশ্রেনী চাই ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ । আর এক শ্রেনী চাই জাতীয়তাবাদী , একটি অংশ চায় সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ । আবার যারা ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত তারা চান ইসলামী বাংলাদেশ । এই চাওয়ার ভিতর কোন দোষ নেই । যিনি যে আদর্শে বিশ্বাসী তিনি সেই আদর্শের বাংলাদেশ চাইবেন । এটাই স্বাভাবিক । সমস্যা হলো মুলত ব্যক্তি , পরিবার এবং দলতন্ত্রিক মানসিকতা । শত্রুতার সীমা অতিক্রম । অন্যের মতামতকে অবমুল্যায়ন । একদম খারিজ করার প্রবনতা । '' আমি , আমার পরিবার এবং আমার দল শুধু সঠিক আর বাকী সবাই ভুল '' । এই জায়গা থেকে চুল পরিমান নড়চড় নেই । জোর জবরদস্তি করে অন্যের উপর নিজের মত - পথ চাপাতে চাই । শুনতে -মানতে বাধ্য করতে চাই । আমি অন্যজনের মত-পথ গ্রহন করতে চাইনা । অথচ সে কেন আমার মত -পথ গ্রহনে বাধ্য হবেন তা কিন্তু ভাবছি না ।
আমি যে আদর্শ ধারন করলাম তা সর্বোত্তম হিসাবে প্রমান করে দেখাবার যোগ্যতা নেই । কথা এবং কাজের ভিতর দিয়ে তা প্রমান করতে পারি না । মানুষের বিবেক-মস্তিস্ক ধবংস করতে চাই । কিভাবে সে আমার হাতে হাত মিলাবে ?আমাকে বুকে জড়িয়ে নিবে ? আমরা কি নিজ নিজ আদর্শের মডেল হিসাবে নিজদেরকে পেশ করতে স্বক্ষম ? আমাদের কত ভাগ নেতা - কর্মীর গ্রহন যোগ্যতা আছে ? আমরা তো ব্যক্তিপুজা আর দলবাজীতে ওস্তাদ । গড়তে না পারলেও ভাংতে পারি । পুড়তে পারি । ধবংসযজ্ঞ চালাতে পারি । এই চরিত্র দিয়ে কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ বা জাতীয়তাবাদী বা সামাজতান্ত্রিক অথবা ইসলামী আদর্শের বাংলাদেশ তৈরী হবে ? আমরা কি পারব এসকল আদর্শের একাধিক বা একটি গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ হতে বের করে দিতে অথবা নির্মুল করে দিতে ? সবাইর তো জন্মভুমি বাংলাদেশ । এখানে জীবন এবং এখানেই জীবনের শেষ । মুসলিম - অমুসলিম , ডান - বাম , মধ্যম-কট্টর , আস্তিক-নাস্তিক , ধর্মানুরাগী- ধর্মবিমুখ , নামাজী - বেনামাজী সব মিলেই তো আমরা আছি যুগ যুগ ধরে ।একই ঘরে নানা মতের মানুষ বাস করে । এই সম্প্রীতির বাংলাদেশ আমাদের সকলের । সকল গোষ্ঠী মিলেই আমরা এক বিশাল গোষ্ঠী বাংলাদেশী ।
*******এই বাংলাদেশ গড়তে যারা আজীবন লড়াই করেছেন ********
একটিবার ভাবুন । হঠাত করে দেশ স্বাধীন হয়নি । ১৯৪০ , ৪৭ , ৫২ , ৫৪ , ৬৬ , ৬৯ , ৭১ , ৭৫ সালগুলো আমাদের ইতিহাস । এক একটি ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায় । স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট ।স্বাধীনতার সংগ্রাম । স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই । ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে বাংলাদেশ নির্মাতাদের নাম । হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী , শের -ই বাংলা একে ফজলুল হক , মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী , বংগবন্ধু শেখমুজিবর রহমান ,শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কি সংঘাত - হিংসা -বিভেদ-বিভাজনের বাংলাদেশ চেয়েছিলেন ? তারা কি কেউ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মতের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন ? তারা কি বৈষম্যের বাংলাদেশ বানাতে সংগ্রাম করেছেন ? নিশ্চয়ই না ।
তারা এমন একটি ভুখন্ড চেয়েছেন যেখানে থাকবে ধর্মীয় স্বধীনতা , নানা পথের নানা মতের মানুষের একসাথে থাকার অধিকার । যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য । এই নেতাদের দেশ প্রেম , আত্মত্যাগ , আপোষহীন সংগ্রাম এবং বলিষ্ঠ্য নেতৃত্বের বিনিময় আজকের বাংলাদেশ ।
********* আজ অসহিঞ্চুতার বীজ কারা বপন করল ? ********
আমাদের ভিতর এই নেতাদের আদর্শ নেই । আমরা তাদেরকে বর্জন করে চলেছি । আজ আমরা সর্বক্ষেত্রে চরম অসহিঞ্চু । ব্যক্তি এবং দলীয় ক্ষেত্রে চলেছে সীমাহীন হিংসা বিদ্বেষ সংঘাত । বাক যুদ্ধের সীমা ছাড়িয়ে হানা হানি মারামারি , গুম , খুন নিত্যদিনের ঘটনা । চারিদিকে বিভাজন চিত্র । ঘাটে ঘাটে রাজনৈতিক দেয়াল । বিদ্বষের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলেছে । এই বিদ্বেষের বীজ কে বপন করল ? এই বিষাক্ত বীজের বৃক্ষটি কাদের যত্নে ডালাপালা সম্প্রসারিত করল ? টেকনাফ থাকে তেতুলিয়া পর্যন্ত শিকর বিস্তারিত হল । এই বিষাক্ত বৃক্ষের প্রসারিত দানব গ্রাস করেছে বাংলার মানুষের উদারতা ভালবাসা পরম সহিঞ্চুতা । এ যেন এক মানবতা খেকো বীষ বৃক্ষ ।
কৌশলী বৃটিশরা অস্র-সৈন্য ছাড়াই মুসলিম রাজত্ব দখলে নিয়েছিল । তাদের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের জালে বন্দী করেছিল । তাদের বপন করা বীজ মুসলিম মসনদ লোভী এবং বর্ণবাদি হিন্দু বুদ্ধিজীবিরা বৃক্ষের রুপ দেয় । ডালপালা সম্প্রসারনে ভুমিকা পালন করে । ফলে সাধারন মুসলিম সমাজ চরম অবহেলা এবং ঘৃনার শিকার হয় । অনৈক্যের ত্রিমুখী শিক্ষা চালু করে গোটা গৃহ -সমাজ-রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিভাজিত করে দেয়া হল । পানিকে জলে গ্রাস করল । গোসলকে স্নানে দখল করল । মুসলিম জাতি সত্ত্বা বেদখল হতে থাকল । এখন ধর্মীয় মুসলিম সমাজ দাড়ি , টুপি , পাঞ্জাবী , হিজাব নিয়ে আপনদেশে অস্বস্থিতে আছেন । এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়েছেন । সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জগতে এই আগ্রাসনে থমকে গেছে আমাদের স্বকীয়তা -জাতীয়তাবোধ । ধর্মীয় স্বাধীনতা আজ বিপন্ন । ধর্মীয় অধিকারের জন্যে লড়াই করতে হচ্ছে ।
কতিপয় উগ্র মুসলিম নামধারী হিন্দু - বৈদ্য মন্দীরে আগুন দেয় । ভাংচুর করে । হামলা চালায় । লুটপাঠ করে । এরা মুলত মানবতার শত্রু । ইসলামের দুশমন । এদের কোন ধর্ম নেই । দুঃখের বিষয় এদের কোন শাস্তিও নেই । এদের প্রশ্রয় দাতা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকেন । তদন্ত হয় , রিপোর্ট হয় । কিন্তু এই রিপোর্ট সুর্যের আলো দেখে না ।
সকল ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব । সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা সকল নাগরিকের কর্তব্য । অথচ আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ ভুলে আছি । একটি শ্রেনী ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন । '' মৌলবাদী '' ধর্মান্ধ '' সাম্প্রদায়িক '' প্রতিক্রিয়াশীল চক্র '' জঙ্গিবাদী '' প্রভৃতি শাব্দিক আস্র ছুড়ে মারছেন । ব্যাপক প্রোপাগান্ডা চালাছেন । যাদের বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগ তারা দুনিয়ার দ্বান্দ্বাবাজীতে অনুপস্থিত । রাষ্ট্রের অঙ্গে দুর্বল অবস্থান । কিন্তু তাদের নৈতিক অবস্থান খুবই শক্তিশালী । তাদের ঈমানে যখন আঘাত আসে তখন তারা নাস্তিক ঠেকাতে ঝাপিয়ে পড়ে । '' নাস্তিক '' মুর্তাদ '' ধর্মবিরোধী '' ইসলামের দুশমন '' ইত্যাদি শব্দ প্রতিপক্ষের দিকে ছুড়ে মারে । এইভাবে আমাদের সমাজে বিভাজনের দেয়াল তৈরী হতে থাকল । দিন দিন নিজেরাই নিজেদের শত্রু হতে লাগলাম । এর শেষ কোথায় ? সমাধান কি ?
********* আমার হাতে বুলেট নেই , কি দিয়ে বুলেটের জবাব দেই ? ********
সমাধানের নামে নতুন নতুন ফ্রন্ট খুলেছি । বরং সমস্যার পাহাড় তৈরী করে চলেছি । প্রতিপক্ষ রাখতে নেই । তাই ভিন্নমত একদম খারিজ । বেশী বাড়াবাড়ি করলে সরাসরি বুলেট হল সমাধান ! ইতিহাস কিন্তু তা বলে না । রাষ্ট্র যখন নাগরিক অধিকার হরন করে তখন নাগরিক অধিকার আন্দোলন হয় । নাগরিক নিরস্র । মুখের ভাষা প্রকাশের ভিতর দিয়েই তারা অধিকার ফিরে পেতে চায় । মিছিল - মিটিং , মানব বন্ধন , প্রেস কনফারেন্স , টক শো , গোল টেবিল বৈঠক , আবস্থান , অবরোধ , ঘেরাও , হরতাল , মিডিয়া প্রভৃতি নাগরিক অধিকার । মত প্রকাশের মাধ্যম । অধিকার অদায়ের হাতিয়ার । জননিরাপত্তার নামে জনগণঅকে তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত করার আইন থাকতে পারে না । কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে । বুলেট খরচ করে রাস্তায় শাস্তি দেয়ার বিধান নেই । বুলেটের যখন হিসাব থাকেনা , জবাবদিহিতা দরকার হয় না তখন এই বুলেট প্রয়োগকারী আর সন্ত্রাসী এক হয়ে যায় । রাষ্ট্র হয়ে যায় নিয়ন্ত্রনহীন এক জংগল । জননিরাপত্তা হয় বিগ্নিত । চারিদিকে ভয় আতংক ছড়িয়ে পরে । আইন - আদালত হয় উপেক্ষীত । আইন ভাঙ্গার ঝড় শুরু হয় ।
জনগনের মত - ক্ষোভ প্রকাশের পথ রুদ্ধ হলে জনরোষ তৈরী হয় । একসময় তা জনবিস্ফোরনের রুপ নেয় । ছোট একটি ঘটনা বড় অঘটন জম্ম দিতে পারে । যা সামাল দেয়া যায় না । তাই ব্যক্তি - দলীয় স্বার্থের উর্ধেব উঠে জনস্বার্থ বিবেচনায় নেয়াটাই দুরদর্শী রাজনৈতিক নেতার দায়িত্ব । জনগনকে বুলেটের মুখোমুখী করা খুব অন্যায় । বুলেট সমস্যা বাড়ায় । তা কোন সমাধান নয় । ইরাক , আফগানিস্তান , পাকিস্তান , সিরিয়া জ্বলন্ত উদাহরন ।
আমার হাতে বুলেট নেই , কি দিয়ে বুলেটের জবাব দেই ? আমি কি বুলেট খুজব ? না না না । আমি কার বিরুদ্ধে বুলেট ছুড়ব ? সে তো আমার ভাই , বাবা , চাচা , প্রতিবেশী , এই সমাজের বাসিন্দা , এই দেশের মানুষ । একই রাস্তায় হাটি , একই মসজিদে নামাজ পড়ি , একই ঈদগাহে নামাজে দাড়াই , দাওয়াত করি , দাওয়াতে শরিক হই । তাকে আমি গুলি করতে পারি ? তার জন্যে আমি লাল গোলাপ -জবা- জুই-চামেলী ফুল কিনতে পারি । আমি মানুষ । তাকে গালি গালাজ করতে পারি না । সে ভুল জায়গায় পা দিয়েছে । আমি ফাঁদে পা দিতে পারি না ।
তার বুলেট এক সময় শেষ হয়ে যাবে । রক্তের স্রোত আর লাশের স্তুপ দেখে সে চোখের পানি ফেলবে । তার ভুল ভাঙ্গবে । সে একসময় বুলেট মারার হুকুম দাতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে । চরম ধৈর্য্য - সহিঞ্চুতা- হিকমত দিয়েই বুলেটের জবাব দিতে হবে । কারন আমি আদর্শবাদী । আমি সংগ্রামী । আমি রণবীর ! '' বল বীর , চির উন্নত মম শীর '' !
******** বৈষম্যের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলুন ******
শ্রেনী বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য সাম্য উৎখাত করেছে । ২২ পরিবার হতে ২২ হাজার পরিবার তৈরী হয়েছে । ধানমন্ডি , গুলশান , বনানী , বারিধারা , হাতির ঝিলের ঝিলিক হয়েছে । কিন্তু বস্তির জায়গায় বস্তি দাঁড়িয়ে আছে । একটি শিশু খেতে চায় না তাকে জোর করে হরলিকস , ল্যাকটোজেন , ডানো ,পিজা ইত্যাদি খেতে দেয়া হচ্ছে । একটু সর্দ্দি-জ্বর হলে এম বি বিএস ডাকতার হাজির । জীবানুর আক্রমন হতে রক্ষার জন্যে সম্ভব হলে সন্তানকে ফিরিজে রাখতেন । নামী দামী স্কুলে পড়া লেখা । হাজার হাজার টাকা বাজেট ।
এর বিপরীত বস্তির একটি শিশু বা গ্রাম বা চরাঞ্চলের শিশুটির দিকে তাকান । গায়ে জামা নেই । ধুলাবালিতে গড়াগড়ি । ডাস্টবিনের খাবার নিয়ে কারাকারি । বৃষ্টি তুফানের বাড়াবাড়ি । শীতের আক্রমন । পেটে নেই ভাত । এইভাবেই চলেছে এদের দিন রাত । কোথায় ডাকতার , কোথায় ঔষধ , কে দেয় পথ্য ? মাটি , পানি , বৃষ্টি , রোদ , ঝড়-তুফানের সাথে লড়াই করে প্রাসাদ বাসীদের জন্যে মাছ-গোশত-দুধ-সব্জির যোগান দেয় । তাদের ফেলে দেয়া আবর্জনা ক্লীন করে । গ্রামের মায়া ছেড়ে আসে শহরে । ঘুমাবার ঠাই রাস্তার পারে পারে । সদর ঘাটের টার্মিনালে । কমলাপুর রেল স্টেশনে । ঘুম ভাংগে মশার আক্রমনে । কোথায়ও আবার পুলিশ-আনসারের পিটুনি খেতে হয় । কখনও আবার '' জজ মিয়া '' হয়ে জেলের ঘানি টানতে হয় । টাকার লোভে মিছিলে যায় । পিকেটিং করে । পুলিশের পিটুনি -কাদুনি গ্যাসে চোখের পানি ফেলায় ।
যাদের রক্ত-ঘামে জাতীয় আর্থ সমৃদ্ধ হয় । রিজার্ভ ফান্ড তৈরী হয় । প্রবৃদ্ধি উর্ধবমুখী হয় । রফতানি বৃদ্ধি পায় । তাদের গলায় গোলামীর জিঞ্জির । তাদের সাথে দাসের আচরন । তাদেরকে তালা মেরে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করি । ডেকে এনে বিল্ডিংধবসিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করি । অধিক মুনাফা খোর মালিকের স্টীম রোলারের নীচে শ্রমিকের জীবন । মাত্র ৫০ ডলার বেতন । থাকার জায়গা নেই । দুপুরে নাস্তা নেই । চিকিৎসা নেই । জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই । জীবনের কোন মুল্য নেই ।
বৈষম্যের এই পাহাড় ভাঙ্গতে হবে । চারিদিকে আওয়াজ তুলতে হবে । শ্রমিকের ঘাম শুকাবার আগে তার ন্যায্য মজুরী দাও । জান মালের নিরাপত্তা দাও । শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।
********বড় বড় রাজনৈতিক দলের সম্মেলিত সিদ্ধান্ত এবং প্রচেষ্টা ছাড়া সফলতা আসবে না ********
স্বাধীনতার পর হতে দেশ পরিচালনায় ৩টি রাজনৈতিক দল প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত । ছোট কয়েকটি দল তাদের অংশীদার । দেশের জনসংখ্যার বিরাট অংশ ৪/৫ টি দলের সাথে সক্রিয়-নিস্ক্রিয়ভাবে সংযুক্ত । ডান -বাম - ইসলামী ধারায় তারা বিভক্ত । ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ , জাতীয়তাবাদ , গণতন্ত্র , সমাজতন্ত্র এবং ইসলাম মুলত এই দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ । গণতন্ত্র সকল দলের অভিন্ন আদর্শ । কিন্তু প্রাক্টিসে অগণতান্ত্রিক চেহারা ফুটে উঠে বার বার । না ভারত , না বৃটেন , না আমেরিকা মডেল মানা হচ্ছে । এখানে গণতন্ত্র চর্চার স্ট্যাইল ব্যক্তি এবং দলতান্ত্রিক । রিমোট কন্ট্রলে পরিচালিত । তারপরও এই দলগুলো আশা-ভরসার জায়গায় আছে । দেশের সফলতা - ব্যর্থতা তাদের উপর নির্ভর করে । দেশে গনতন্ত্র - সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তারা ব্যর্থ হলেও ঘুরে ফিরে তাদের বড় একটি দল বংগবভন এবং গণবভনের কতৃত্ব নিবেন । জনগনের চুক্তিপত্র ছিন্ন ভিন্ন করবেন । আশা-ভরসা , হতাশা-নিরাশার দলগুলো হল ঃ
১] বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।
২] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ।
৩] বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ।
৪] বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ।
৫] বাংলাদেশ কমুনিষ্ট পার্টি ।
এই ৫টি দলের বাইরে ডান-বাম-ইসলাম পন্থী আরো অনেক দল আছে । এই ৫টি দল বাংলাদেশ হতে নির্মুল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই । দেশের মানুষ এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি এবং বিএনপির বিকল্প আওয়ামী লীগকেই ভাবে । এই বাসতবতা সামনে রেখেই ২টি জোটের জম্ম । ২ নেত্রীকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক বৃত্ত ঘুরপাক খাচ্ছে । দেশের মানুষ তাদের নিকট জিম্মি বলেন , খেলার বস্তু বলেন , অতি সম্মানীত বা ভালবাসার পাত্র বলেন -তাই চরম বাস্তবতা । জংগলের বাঘ-সিংহ ছাড়া আর কোন তৃতীয় শক্তি আপাতত নেই । তাদের তাড়িয়ে বাঘ-সিংহ ভাল মনে করলে ডাকতে পারেন । একজন তো বাঘের ভয় দেখিয়ে দেখিয়ে আর একজনকে কাবু করে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন । যাক আমি সেদিক যেতে চাচ্ছি না ।
আমরা বলতে চাই , দেশের সার্বিক পরিস্তিতি ঠিক রাখা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরী করার মুল দায়িত্বটা যে দল সরকারে থাকে তাদের । সফলতা - ব্যর্থতার দায়ভার ৯০ ভাগ তাদের । বাকী ১০ ভাগ দায়দায়িত্ব সরকারের বাইরে থাকা দল গুলোর উপর বর্তায় । সরকার যখন বাধাহীন একক কতৃত্বের সুযোগ পায় তখন বেপরোয়া-স্বৈরাচারি হয়ে উঠে । খমতার মোহ , দুর্নীতি , স্বজনপ্রীতি , দলীয়করন , প্রাসাদ ষড়যন্ত্র , উর্ধব চাপ , নিম্ন চাপ- পার্শ্ব চাপে দিকভ্রান্ত হয়ে যায় । সংসদ -সরকার অকার্যকর হয় । দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় । বিদেশীরা নাক গলায় ।
এমন পরিস্থিতে বিরোধী পক্ষ এবং সরকারের বাইরে থাকা সকল দলের দায়িত্বশীল ভুমিকা দেশের মানুষ কামনা করে । সাহসী পদক্ষেপ আশা করে ।
লাগামহীন কথা - কর্মের লাগাম টেনে ধরার দায়িত্ব সরকার এবং বিরোধী পক্ষের । বাংলাদেশ আমাদের সকলের । হিংষা বিভেদ ভুলে সম্মেলিত পদেক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে । পারস্পরিক অনাস্থার জায়গাটা মেরামত করতে হবে । আন্তরিকতার অভাব থাকলে সমঝোতার দরজা খুলবে না । প্রতিশোধের নেশা শেষ হবে না ।
আমরা এখনও আশাবাদী । নিরাশ নই । প্রত্যেক দলেই আছেন দেশপ্রেমিক -ত্যাগী -সাহসী -প্রজ্ঞাবান সংগ্রামী নেতা । দেশের চরম দিকভ্রান্ত পরিস্থিতে তারা চুপ থাকতে পারেন না । তারা এগিয়ে আসবেন । মানুষের আশা ভরসা -অধিকার নিশ্চিত করবেন । আশার আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার দুর করবেন । দেশ এগিয়ে যাবে । স্বাধীনতা সুরক্ষীত হবে । অপশক্তি বিদায় নিবে ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন