ধর্মের পথে শহীদ যাহারা , আমরা সেই সে জাতি ---বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ২৪ মে, ২০১৩, ০৮:৫৯:৩১ সকাল



বিশ্ব ইতিহাসে মুসলিম জাতি স্বত্তা তুলে ধরেছেন । মুসলমানদের সোনালী অধ্যায় স্মরন করিয়েছেন । ঘুমন্ত মুসলিম জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন । বৃটিশ পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গেছেন । বিদ্রোহের আগুন জালিয়েছেন । কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন । সেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী ১১ই জৈষ্ঠ্য ।

পরাধীন ভারতে কবির জম্ম ১৮৯৯ সালে । ১৯২১ সাল হতে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত । মাত্র কটি বছর । কবিতা আর গানের প্লাবন সৃষ্টি করলেন । বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর এবং বিখ্যাত উপনাস্যিক শরৎচন্দ্র চট্টপয়াধ্যায়ের মত মনিষীদের প্রেরনায় উজ্জীবিত হন এই কবি । পারস্যের কবি হাফিজ , ওমর খৈয়াম , ফেরদৌসী , শেখ সাদী কবির প্রেরনার উৎস । ''

বিদ্রোহী '' ধুমকেতু '' অগ্নীবিণা '' দোলন চাপা '' বিষের বাঁশী '' প্রভৃতি নিয়ে গেলো কবিকে মানুষের মনের গভীরে ।

পরাধীন ভারত বর্ষেই ১৯৪২ সালে কবি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন । বিশাল সাহিত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে । ১৯৭৬ সালে কবি আমাদের ছেড়ে চলে যান । কিন্তু কবির বিশাল সাহিত্য ভান্ডার তাকে আমাদের মাঝে জীবন্ত করে রেখেছে । তিনি লিখেছেনঃ

'' ধর্মের পথে শহীদ যাহারা ,

আমরা সেই সে জাতি ।

সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা ,

বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি ,

আমরা সেই সে জাতি ।

আজ আমরা সেই কবিকে ভুলতে বসেছি । নিপিড়ীত নির্যাতিত অসহায় মানুষের পাশে দাড়ালেন কবি ।শির উঁচু করে দাড়াতে মুসলমানকে আহবান জানালেন ঃ

'' বাজিছে দামামা , বাঁধরে আমামা

শির উঁচু করি মুসলমান ।

দাওয়াত এসেছে নয়া জামানার

ভাঙ্গা কিল্লায় ওড়ে নিশান ।''

এই সেই কবি যিনি পরাধীনতার জিঞ্জির ছিড়ে বিশাল কারাগারের কবাট ভাঙ্গার ডাক দিলেন ।জালেমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালেন ঃ

'' কারার ঐ লৌহ কবাট

ভেঙ্গে ফেল , কররে লোপাট

রক্তজমাট

শিকল পুজোর পাষাণ বেদী !

ওরে ও তরুণ ঈশান !

বাজা তোর প্রলয় বিষাণ !

ধবংস বিশান

উড়ক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি ।

বিদ্রোহী কবি এক আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তির নিকট মাথা নত করেননি । অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছেন । কোন রক্ত চক্ষু কবির কণ্ঠকে স্তব্দ করতে পারেনি । কবি লিখেছেন ঃ

'' বিদ্রোহী রনক্লান্ত , আমি সেই দিন হব শান্ত ,

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধবনিবে না ।

অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভুমে রণিবে না ,

বিদ্রোহী রণক্লান্ত ,

আমি সেই দিন হব শান্ত ।

শুধু জম্মভুমি নয় । গোটা দুনিয়াটাকে ভাবতেন আপন ভুমি । তিনি শুধু বাংলার জন্য পয়দা হননি । তিনি লিখলেন ---

'' Even though I was born in this country[Bengal ] , in this society , I don"t belong to just this country, this society. I belong to the world . ''[নজরুল রচনাবলি- ভলিয়ম -৪ ]

তিনি শুধু বাংলাদেশের জাতীয় কবি নন । ১৯২৯ সালেই কবিকে অবিভক্ত বাংলার জাতীয় কবি ঘোষনা করা হয় ।

১৯২৯ সাল । কলকাতার আলবার্ট হল । হিন্দু মসলিম বিখ্যাত মনিষীদের উদ্যোগ । কবির জন্যে সম্বর্ধনা সভা । সভাপতি বিখ্যাত মনিষী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় । এই সভার অন্যতম উদ্যোক্তা সংগ্রামী মহানয়ক সুভাষ চন্দ্র বসু । তিনি তার ভাষণে বলেন --

'' আমরা যখন যুদ্ধে যাব , সেখানে নজরুলের গান গাওয়া হবে । আমরা যখন কারাগারে যাব , তখনও তার গান গাইব । ''

এই সভায় কবিকে অবিভক্ত বাংলার জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষোনা করা হয় । অবিভক্ত বাংলা নিয়ে কবির ছিল বিশাল স্বপ্ন । ভারত-পাকিস্তানের বাইরে একটি বৃহত্তর বাংলা রাষ্ট্র চেয়েছিলেন -হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী , আবুল হাশিম এবং শরৎচন্দ্র বসু । তারা বৃহত্তর একটি বাংলা রাষ্ট্রের প্রস্তাব দিয়েছিলেন । মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তা সমর্থন করেছিলেন । কিন্তু অবাংগালী হিন্দু নেতা গান্ধী - নেহেরু-প্যাটেল এবং বাংগালী নেতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীদের প্রবল বিরোধীতায় তা ভন্ডুল হয়ে যায় । কবি নজরুলের স্বপ্ন আর পুরন হয়নি ।

১৯৭২ সাল ২৪ শে মে । রাষ্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ইন্ডিয়া হতে কবিকে নিয়ে আসলেন ঢাকায় । কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিলেন । রাষ্ট্র কবির যাবতিয় দায়িত্ব গ্রহন করল । ১৯৭৬ সাল । আর এক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান কবির কফিন কাঁধে নিয়ে কবরে শুইয়ে দিলেন । রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিয়ে কবি ঘুমিয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে । হে কবি তোমাকে আজ গোটা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছে ।

বিষয়: বিবিধ

৩৯৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File