সরকার চড়েছে বাঘের পিঠে ঃ জামায়াত-বিএনপির জন্যে হুশিয়ারী সংকেত
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ০৮ মে, ২০১৩, ০৯:০৫:১৪ রাত
আওয়ামী সরকারের যথেষ্ট সাহস । তবে সাহসের ভিতরে একটি ভীতি লুকিয়ে আছে । মনে হচ্ছে জনতার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত এবং দিকভ্রান্ত । মরুর পথিক চড়েন উটের পিঠে , সখ করে কেউ চড়েন হাতির পিঠে , সৈনিক ঘোড়ার পিঠে , রাখাল নদী পারাতে মহিষের পিঠে চড়েন । কিন্তু বাঘের পিঠে চড়া দেখলে চমকে যাবেন । স্বচক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না । এবার দেখে নিন আমাদের মামনীয় প্রধানমন্ত্রী বাঘের পিঠে উঠে বসেছেন । তিনি কোথায় যাচ্ছেন ? তার দল এবং জাতিকে কোথায় নিচ্ছেন ? তা কি অবগত আছেন ?
পৃথীবির বহু শাসক বাঘের পিঠে চড়ে স্বৈরাচারের কুখ্যাতি নিয়ে বিদায় নিয়েছেন । লৌহ মানব আয়ুব খান শেষ দিকে এসে বুঝতে পারলেন বাঘের পিঠে ভ্রমণ মঝা কেমন । ইয়াইয়াহ খান ,টিক্কা খান বাঘের পিঠে চড়ার পরিনতি কত ভয়াবহ তা বুঝতে পারেনি । তারা ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ নিরীহ মানুষের উপর নিষ্ঠুর গণহত্যা চালায় । তাতে ক্ষমতা স্থায়ী হয়নি । ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি । প্রধানমন্ত্রীর পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান শেষ পর্বে লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে সকল ক্ষমতা হাতে নিয়ে টিকতে পারেননি । প্রশিক্ষিত রক্ষীবাহীনি একটি বুলেট খরচ করেনি রাষ্ট্রপতিকে রক্ষার জন্যে । একটি মানুষ ইন্নালিল্লাহ শব্দ উচ্চারণ করেনি । আওয়ামী সংসদের স্পীকার আব্দুল মালেক উকিল বলেছেন - বাংলাদেশের ফেরাউন মারা গেছে ।
ইরাকের সাদ্দাম , লিবিয়ার গাদ্দাফী , সিরিয়ার আসাদ বাঘের পিঠে চড়েছেন । ২জন না ফেরার দেশে চলে গেছেন । অন্যজন যাবার পথে । বর্তমান পাকিস্তান সরকার বাঘের পিঠে চড়ার করুন নির্মম ইতিহাস অনুধাবন করে তত্ত্বাবোধায়ক ফর্মুলা চালু করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিদায় নিচ্ছে । কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কি হল ? তিনি নাকি কারো কথাই শুনছেন না । তিনি যা বলেন বুঝেন তাই আইন । তাই বাস্তবায়ন হবে । অনির্বাচিত ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা দিবেন না । অথচ অনির্বাচিত - অনভিজ্ঞ কাচা মানুষকে স্পীকার বানালেন । এই আনারী নারী স্পীকারের হাতে তথাকথিত নির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে রশীটা নিজের হাতে রাখার ব্যবস্থা করলে জাতি হতবাক হবে না । এমন চমক সৃষ্টি প্রধানমন্ত্রী করতেই পারেন । তখন তিনি বলবেন আমি তো ক্ষমতায় নেই । এখন বিরোধী দলের সমস্যা কি ? এই সরকারে বিরোধী মন্ত্রী ২/১ জন নিতে আপত্তি নেই । আসেন একসাথে নির্বাচন করি । এমন রেডিমেড কথা বলতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অভ্যস্ত ।
কাঙ্গালের কথা বাসি হলে ফলে । প্রধানমন্ত্রী কারো কথা শুনবেন না । এরশাদ সাহেব ১দিন আগেও জানতেন না যে তিনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারছেন না । কৌশল করে বেগম খালেদা জিয়া থাকতে পারেননি । মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন পারেননি । তারা কেউ ২৮/২/১৩ , ২৪/৪/১৩ এবং ৬/৫/১৩ তারিখের মত নির্বিচারে গুলিকরে গণহত্যা চালায়নি । রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তারা সৃষ্টি করেননি । দেশের দ্বীনদার মুসল্লী , হাফেজ , ঈমাম , মোদাররেছ , আলেম ওলামার মত এমন নিরীহ মানুষের উপর অতীতের কোন সরকার নিষ্ঠুর আচরন করেনি । কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ইতিহাসের ভয়াবহতম ৩ টি কালো অধ্যায় তৈরী করেছে ।
১] ২৮/২/১৩ তারিখে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অনুসারী -ভক্ত সাধারন মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যা চালিয়ে শত শত মানুষ খুন করেছে ।
২] ২৪/৪/১৩ তারিখে সাভারে রানাপ্লাজায় ডেকে নিয়ে সহস্রাধিক গরীব গার্মেন্ট শ্রমিকে দিবালোকে হত্যা করেছে ।
৩] ৬/৫/১৩ তারিখে মতিঝিল শাপলা চত্তরে বাতি নিভিয়ে রাতের আঁধারে মিডিয়া বন্ধ করে হেফাজতে ইসলামের দাবী ৩ হাজার কর্মীকে নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যা চালিয়েছে ।
শাপলা চত্তরে গভীর রাতে ঘুমন্ত নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র শিক্ষক,ঈমাম , মুয়াজ্জিনের উপর পুলিশ , র্যাব, বিজিবি , যুবলীগ - ছাত্র লীগ ক্যাডার যৌথভাবে যে নির্মম নিষ্ঠুর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা ৭১এর ২৫শে মার্চের কালোরাত্রিকে হার মানিয়েছে । তারা কাদের উপর গুলি চালালেন ? কাদেরকে হত্যা করলেন ? এই নিরীহ ব্যক্তিদের একজন কি একটি ছুরী , চাকু , চাপাতি , পিচতল হাতে নিয়ে কাউকে আক্রমন করেছিল ? একটি ছবি দেখান । ঘটনার ২দিন পর ৮/৫/১৩ তারিখে ডিএমপি কমিশনার হাস্যকর এক ডাহা মিথ্যা বিবৃতি দিলেন । তিনি মাত্র ১০ মিনিটে শাপলা চত্তর ক্লীন করেছেন । মানুষ মারার মত কোন অস্র ব্যবহার করেননি । ৫এবং ৬ তারিখে সর্বমোট ১১জন মারা গেছে বলে তথ্য দিলেন ।
মতিঝিলের মাটি স্বাক্ষী হয়ে আছে । নিরস্র ঘুমন্ত মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলার বাস্তব ভিডিও দেখুন ।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=461599013928068&set=a.461597687261534.1073742110.428835640537739&type=1&theater
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের রিপোর্ট দেখুন ।
http://www.humanrights.asia/news/ahrc-news/AHRC-STM-088-2013
ধোকা দিয়ে দেশের মানুষকে বোকা বানাতে চান । শাপলা চত্তর হতে আওয়ামী লীগ কি লাভ করেছে ? ভুল রাজনীতির ভুল সিদ্ধান্ত শুভ ফল দেয় না । এটা তাদের বড় ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয় । এই ঘটনা হেফাজতে ইসলাম ,জামায়াত এবং বিএনপি কে এক করে দিয়েছে । তাদের ঐক্য আরো বেশী সুদৃঢ় হবে । আওয়ামী বিরোধী বলয় বেশী শক্তিশালী হবে । এই ঘটনা বিরোধী পক্ষকে অনেক কিছু শিখাবে । সামনে আরো বড় ধরনের এ জাতীয় এট্টাক অপারেশন আসবে । সরকার বিরোধী মিডিয়া বন্ধ থাকবে । পুলিশ , র্যাব , বিজিবির পোষাকে আওয়ামী ক্যাডার বাহীনি গুলি চালাবে । শাপলা অপারেশন সে কথা বলে দিচ্ছে ।
একটি প্রশিক্ষিত বাহীনি এবং আওয়ামী ক্যাডারদের আকস্মিক হামলা ঠেকাবার সামান্যতম প্রস্তুতি হেফাজতের ছিল না । এই ক্ষেত্রে তাদের পুর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই । প্রতিরোধ দুরে থাক শুধু নিজেদের নিরাপত্তার কোন বাস্তব ব্যবস্থা ছিল না । ইনফরমেশন , তথ্য , কৌশল আর প্রচন্ড ঈমানী শক্তিদিয়ে কিভাবে নিরাপত্তা -প্রতিরোধ বুহ্য তৈরী করা যায় তা তাদের জানা প্রস্তুতি ছিল না । জনবল বেশী থাকলেই হবে না । কতটা মনবল , কৌশল এবং ক্ষিপ্রতার বেগে ১০ হাজারের বাহীনি লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ পন্ড করেছে । হেফাজতকে তা অনুধাবন করতে হবে । সীসা ঢালা প্রাচীর [ বুনিয়ানুম মারসুস ] তৈরীর জন্য বেশী মানুষ দরকার হয় না । মুতার যুদ্ধে ৩ হাজার ঈমানদার মুজাহিদ লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত শসস্র সুসংগঠিত বাহীনিকে পরাজিত করেছিল । আমরা কি সে ইতিহাস ভুলে গেছি ?
সব ভেদাবেদ ভুলে ইসলাম পন্থীদের আজ এক জায়গায় দাড়াতে হবে । ইসলামের দুশমনদের মুকাবিলায় সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে । তাওহীদ , রেসালাত এবং আখেরাতের মুল ভিত্তির উপর মজবুত ইমারাত বানাতে হবে । নিখাত , নির্ভেজাল ঈমান ছাড়া টিকা সম্ভব নয় । '' তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না , দৃঢ়ভাবে আল্লাহর রজ্জু ধারন কর '' আল কুরআন ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন