আক্কেল দাঁতের বেয়াক্কল অবস্থান
লিখেছেন লিখেছেন আবরার ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৪৮:৫৭ বিকাল
১] সে কি আকাশ ফাটানো শ্লোগান । গগণ বিদারী কণ্ঠ । ক তে কাদের মোল্লা -তুই রাজাকার । ম তে মুজাহীদ -- তুই রাজাকার । বিচার চাইনা -ফাঁসী চাই - জবাই কর । শাহাবাগের আকাশ-বাতাস মুখরিত এই শ্লোগানে । দিনের পর দিন গলা ফাটাল অগ্নিকন্যা লাকী আকতার । লাকী ছাড়া শাহাবাগ জমে না । তরুন-তরুনী প্রান পায়না । নৃত্য -ঢোল ঝংকারিত হয় না । কিন্তু হঠাতকরে উল্টপাল্ট হয়ে গেল । লাকীর যেন কি হল ? তাকে দেখা যায়না । যে মিডিয়া লাকীকে আকাশে তুলল সে মাতম মিডিয়ার বিশাল পার্টনার '' প্রথম আলো '' লাকীকে একদম ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করল । লাকীর আবেগ -বিবেক - মস্তিস্ক -কর্ম সব তছনছ হয়ে গেল । সে বড় ধরনের আঘাত পেল । কিন্তু লাকীদের জীবন নিয়ে যারা খেলে তারা পর্দার আড়ালে থেকে গেল ।
হাসানত আব্দুল হাই । একজন জাদরেল সাবেক সিএসপি আমলা । কথা সাহিত্যক । '' ক্যামেরার সামনে সে মেয়েটি '' নামে প্রথম আলোতে লাকীকে নিয়ে গল্প লিখেছেন । সে গল্পে লাকীর নাম ছিল না । পাঠক বুঝতে পেরেছেন কাকে কেন্দ্র করে এ লেখা । লাকী এবং তার ফ্রেন্ড এবং সেই ধান্দ্বাবাজ অভিভাবকও বুঝেছেন । লেখক মুলত শিক্ষিত এলিট তথাকথিত প্রগতিবাদীর মুখোস উম্মোচন করেছেন । লাকী ভুক্তভোগী উপমা মাত্র । এই গল্প পড়ে '' মুক্ত চিন্তার '' সোল এজেণ্টধারীরা চরম নাখোশ । লাকীর স্থানে যদি হিজাব পড়া কোন নারী হত তাহলে খুশী কবির মানব বন্ধন করতেন না । লেখক এবং প্রথম আলো ক্ষমা চাইল । তাতেও খুশী কবির অখুশী । তার দাবী লেখক এবং প্রথম আলোর '' তওবা সম্পাদক '' কে শাহাবাগ গিয়ে প্রকাশ্যে নারীদের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে ।
২] শাহাবাগের নেপথ্য নায়ক বাম নেতা । আওয়ামী প্রেসিডিয়াম সদস্য । প্রেসিডিয়াম সভায় শাহাবাগের ইতি টানতে চাইলে বাম ২ নেতা চালু রাখার যুক্তি দেখালেন । এমরান সরকারকে কে বক্তব্য লিখে দেন ? এমন প্রস্ন হলে নেপথ্য নায়ক নিজথেকে বললেন আমি লিখে দেই না । হরি ঘরে কে রে ? আমি কলা খাই না । বুঝতে আর বাকী থাকল না ।
৩] '' ২য় মুক্তিযুদ্ধের ১ম শহীদ '' এর বাসায় ছুটে গেলেন প্রধানমন্ত্রী । সেখানে বললেন -- জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার অধিকার নেই । সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি ট্রাইবুনালকে শাহাবাগের দাবী অনুযায়ী রায় দিতে ডিকটেট করলেন । অনুগত ট্রাইব্যুনাল সেই নির্দেশনা আর দাবী অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে । আল্লামা সাঈদীকে হত্যার আয়োজন পাকাপাকি হল ! সংসদে জনাব তোফায়েল আহমদের মত এত বড় জাদরেল নেতা নাস্তিক রাজীবের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব এবং নীরবতা পালনের দাবী করেছিলেন ।
৪] সরকার একদিকে নাস্তিকদের আসকারা দিয়ে গাছের চুড়ায় উঠালেন । আবার ২/৪ জন গ্রেপ্তার করে নাটক করেন । ঐদিকে শাপলা চত্তরে হেফাজতের মহাসমাবেশের অনুমতি দিলেন । অপরদিকে নাস্তিকদের দ্বারা হরতাল ডাকালেন । গাড়ী , ফেরী ,ট্রেন বন্ধ করে মহাসমাবেশ পন্ড করার চেষ্টা চালালেন । এই দ্বিমুখী নীতি সরকারের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে ।
৫] '' তুই কুত্তার বাচ্চা , চুপ কর '' === আমাদের বস্তি , গ্রাম , চরাঞ্চলের মুর্খ বদলা-কামলা মানুষের গালি । আল্লামা সাঈদীর রায়ের পর এজলাশের সামনে মাওলানা সাঈদীকে এমন ভাষায় গালি দিয়ে আক্রমনে উদ্ধত হলেন জাবি ভিসি আনোয়ার । তাকে পশু বললে পশুরা অপমান বোধ করবে । উনারা জাতির মেরুদন্ড । তাই আজ শিক্ষাঙ্গন লন্ড ভন্ড । নেই তাদের জন্য কোন দন্ড ।
৬] '' ইসলাম হেফাজতের দরকার নেই '' বললেন ডঃ মিজানুর রহমান । জুডু কারাত ক্লাবের সভাপতি হলে তিনি সফল হতেন । এই পর্যন্ত তিনি ১ টি মানবাধিকার লংঘনের প্রতিকার করতে পেরেছেন বলে জানা নেই । উনার চেম্বারে ২ নেত্রীকে চা পানের দাওয়াত দিলেন । বামুন হয়ে চাঁদে হাত । ভদ্র লোকের জানা নেই আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার , বিকাশ -বিস্তার ,প্রতিষ্ঠা , নিরাপত্তা , সঙ্গরক্ষন সব কিছুই করেন । এই জন্যে আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম আ কে আমাদের জাতির পিতা বানিয়েছেন । তার অনুসারীদেরকে ইসলাম হেফাজতের জন্য বাছাই করেছেন । সুরা হজ্জ্বের শেষ আয়াত ৭৮ ং দেখুন ।
***হেফাজতের ১৩ দফা মানলে দেশ ১৩০০ বছর পিছিয়ে যাবে -- বললেন মহাপন্ডিত নাস্তিক জাফর ইকবাল । তিনি অবাধ উদাম বেলাল্লাপনা সমাজ তৈরীর নির্মাতা । প্রগতির জোয়ারে দেশ ভাসিয়ে দিয়েছেন । আজ সুখ আনন্দে দেশ আত্মহারা ।
*** হেফাজতের দাবী মানলে দেশ ১০০ বছর পিছিয়ে যাবে - বললেন বাম নেতা রাশেদ খান মেনন । ভদ্র লোক মহাজোটে এসে দেশকে ১০০ বছরের রাস্তা এগিয়ে দিলেন ! পিছে যাবেন কেন ?
৭] সাভার থেকে আমি '' রানা প্লাজার '' মালিক রানা বলছি--- আমার বিল্ডিং ধসে পরেছে । আমি সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত ।আমার আগে কত বিল্ডিং ধবংস হল ।মানুষ মরল । তাতে কি হয়েছে ? কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে ? শাস্তি হয়েছে ? আমাকে আমার নেতা মুরাদ ঝং উদ্ধার করেছে । কেউ বলেছেন আমি বাইরে থেকে পালিয়েছি । আমি শ্রমিকদের ডেকে এনে হত্যা করেছি । হ্যান্ড মাইক দিয়ে সবাইকে অভয় দিয়েছি । আমি কি জানতাম আজরাইল এখানে অপেক্ষা করেছে । সে একসাথে এত প্রান নিবে আমি বুঝিনি । আমি অবৈধ স্থানে ডোবা ময়লা দিয়ে ভরাট করে বিল্ডিং বানাই । ৬ তলার জায়গায় ৯ তলা । রাজমিস্ত্রীরা ভেজাল সিমেন্ট ,কচি বাঁশের মত রড লাগিয়ে আমারে খেয়েছে । নির্মান বিধি মেনে কতজন বিল্ডিং বানায় ? একটা স্তম্ভ ফাটল ধরেছে । তাতে কি হয় ? হরতাল কারী মৌলবাদীরা এসে এই ফাটল স্তম্ভ ধরে ধাক্কা ধাক্কি করে । এই কথা স্বয়ং আমাদের সম্মানীত স্বররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন । বিল্ডিং ধবংসের এটা একটা কারন । দেশের হগল মানুষ -মিডিয়া আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন । দেখবেন শীঘ্রই সব থেমে যাবে । একটু অপেক্ষা করুন । আপনারা প্রথম আলো পড়ুন । যুগান্তর , মানব জমিন , ইনক্লাব , আমার দেশ , নয়া দিগন্ত জামায়াত বিএনপির দালাল । তারা খামাকা আমার দোষ দেখে ।
আর বাড়াতে চাই না । এইভাবে হাজার ঘটনা লিখা যাবে । আক্কেল দাঁত যাদের গজিয়েছে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে । আক্কেল দাঁতের বেয়াক্কেল অবস্থান । তাতে মাড়ির ব্যাথা হেড অফিসকেও তেক্তবিরক্ত করে । তবে এই বাড়তি উপসর্গ সাময়িক । উপশম পদ্ধতি খুব কঠিন নয় । কিন্তু আমাদের শিক্ষিত সমাজের নেতা বা দায়িত্ববান ব্যক্তি আক্কেল অবস্থানে থেকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন তা হলে আর রক্ষা নেই । আমরা শিক্ষিত ছেলে সন্তান বা বন্ধু বান্ধবকে বলি -- এত বড় শিক্ষিত তুমি আথচ মানুষ হতে পারনি । তোমার আক্কেল হয়নি । তোমার আক্কেল দাঁত এখনও গজায়নি ।
সব শিক্ষিত মানুষ আক্কেল সম্পন্ন নন । আক্কেল - বিবেক- মানবিকবোধ - মনুষত্ব কারো ভিতর না থাকলে আমরা তাকে '' মানুষ '' বলতে পারিনা । আক্কেল সম্পন্ন মানুষ কখনও বেয়াক্কেলের মত কথা - কাজ করতে পারে না । তারা বেয়াক্কেল আবস্থানে থাকতে পারেন না । তারা বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য । তাদের নৈতিক শক্তি মজবুত । তাদের নৈতিকতার ভিত্তি হল তাওহীদ- রেসালাত এবং আখেরাত । আল্লাহ আমাদের এই ভিত্তির উপর দাড়াবার তৌফিক দিন ।
বিষয়: বিবিধ
২৮৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন