জামায়াত-শিবিরের লেজ ধরে টানাটানিতে কোন লাভ আছে কি ?

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৫০:০৩ রাত



এই যে শুরু হল আর শেষ নেই । আরে ভাই মরা গরুর লেজ বা পা ধরে টানা যায় । গর্তে ফেলে কবর দেয়া যায় । নদীতে ভাসান যায় । কিন্তু জীবিত প্রানীর লেজ বা পা ধরে টানাটানি করেন তো । ছোট্ট প্রাণী বিড়ালের পা বা লেজ ধরে টানেন তো । খামছি খেয়ে জনমের শিক্ষা হবে । মৌচাকে ঢিল মেরে দেখেছেন ? ভিমরুল -ভ্যাংগুলের বাসায় খোছা দিয়ে দেখেছেন ? জীবন্ত আগ্নেয় গিরির অগ্নুতপাত দেখেছেন ? রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বা ভালুকের থাবা কত ভয়ানক তা কি কখনও অনুভব করেছেন ? খর স্রোত নদীর আগ্রাসন ঠেকাতে পারেন ? এই সেদিন ব্রাম্মন বাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া মাত্র কয়েক সেকেন্ডের '' টর্নেডো '' কারো কথা শুনেছে ? শুনেনি । শুনবে না । কারো বাধা মানবে না ।

মানুষের সৃষ্ট জঞ্জাল হতে দেশ এবং জাতিকে সুরক্ষাদেয়ার আইন আদালত রয়েছে । বাঁকা পথে এর সমাধান নেই । গায়ের জোরে সব কিছু হয় না । কোন গোষ্ঠী বা দলের কর্ম কান্ড সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা যায় । কিন্তু চিরতরে নির্মুল করা যায় না । কোন দল আপন কর্মের ফলে টিকে থাকে । আবার নিভে যায় । অনেক দল জম্ম নেয় । আবার আপনা হতেই বিদায় নেয় । আবার একদল ভেঙ্গে কয়েকটা জম্ম দেয় । রাজনীতির চোরাবালিতে এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলতে থাকবে ।

কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠিত দল ভেঙ্গে বা নির্মুল করে ক্ষমতা নিরাপদ কেউ করতে পারেনি । ইতিহাসে তা দেখা যায়নি । এক নায়ক শাসকরা তাই বলে থেমে থাকেনি । গণতন্ত্রের নামে তারা '' এক নায়ক তন্ত্র '' হতে পিছু হটেনি । তারা পরিবারতন্ত্র চালু করতে ভুলেনি । ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ভিন্ন মত-পথের দরজা খোলা রাখেনি । ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন নাটক করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মানসিকতা ত্যাগ করেনি । তাই বিরোধী পক্ষকে একদম মাটির সাথে পিশিয়ে শেষ করে দিতে হবে । এক নায়ক যা বলবেন তাই '' গণতন্ত্র '' তাই ''সংবিধান'' , তাই ''আইন ''। তাতেই দেশের কল্যান -শান্তি । বাকীরা সব বোকা -পাগল !

তাই এই এক নায়ক তন্ত্রের কর্ণধার প্রথমে জামায়াত-শিবিরের লেজ ধরে টানাটানি শুরু করলেন । তারা খুব ভাল করে জানেন যে , এই শক্তিশালী দেহ হতে ধর আলাদা করতে পারবেন না । তারপরও লেজ ধরা থামছে না । জিদ -প্রতিহিংসার লালসায় লেজের লোম গুচ্ছ ছিড়তে চান । টেনে হেচড়ে গায়ের লোম-চামড়া এবরো থ্যাবর ছেড়া বেড়া করতে চান । এই হেয়ালীপনা অদুর্দর্শী পদক্ষেপ বুমেরাও হবে ইনশাআল্লাহ । এতে বাম দের আত্মতৃপ্তি হলেও দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে চরম মাশুল দিতে হবে । বামদের হারাবার কি আছে ? ভারত-বামদের জ্বালানো আগুনে পুড়ে যাবে '' হাসিনা লীগ '' আর প্রশ্নের সম্মুখীন হবে এক সংগ্রামী দল আওয়ামী লীগ ।

অভিজ্ঞ দেশপ্রেমিক ঝানু আওয়ামী নেতারা মুখে তালা মেরে বসে আছেন । তারা তামাসা দেখছেন । আমলা আর বামতন্ত্রের ভারে নৌকা ডুবে যাচ্ছে । আমলারা ক্ষমতা ছাড়ে না । টায়ার্ড-রিটায়ার্ড হয়েও চুক্তিভিত্তিক চেয়ার পাচ্ছে । তারাই আজ '' গণ তন্ত্রের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সাংবিধানিক কলাতন্ত্র দেখিয়ে বাঁকা পথে ক্ষমতায় রেখে ''জন '' হাইজ্যাক করে '' আমলানেত্রী '' বানিয়ে ফেলেছেন । প্রথমে জামায়াত শিবির খাব তারপর বিএনপি খাব --সব খাব । এই ধ্যানে মগ্ন হয়ে স্থায়ী মসনদের স্বপ্নে বিভোর ।

আল্লামা সাঈদীর রায় এবং ৬ই এপ্রিলের শাপলা চত্বরের গণবিস্ফোরনে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গেছে । ফটিক ছড়ির অপ্রত্যাশিত উলটাপালটা আকস্মিক অঘটন বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে । সরকার চোখে ধুয়াকার অন্ধকার দেখছে । বাতাসে সংলাপ-ফর্মুলা বিতর্ক ছুড়ে দিয়েছে । সামনে ১৮ দলের '' শো ডাউন--- টানা হরতাল , অবরোধ , ঘেরাও, অসহযোগ আন্দোলনের আভাস । ৫ই মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ । তার উপর জামায়াত নেতা ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম এবং সংগ্রামী যুব নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আসন্ন রায় এবং তার বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভের মাত্রা দেশকে আরো ভয়ানক কঠিন পর্যায় নিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

জামায়াত - শিবিরের ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে তাদের নিষিদ্ধ করবেন ? পারবেন না । নিবন্ধন বাতিল করবেন ? ৭/৮ জন নেতাকে ফাঁসি দিবেন ? আল্লাহ এই নেতাদের তকদিরে শাহাদাত নির্ধারিত করে রাখলে তা কবুল হবে । তাতে কি জামায়াত-শিবির নির্মুল হয়ে যাবে । না হবে না ।একটি বার মিশরের মুসলিম ব্রাদার হুডের দিকে তাকান । এই মুরসিওকে হোসনি মোবারক জেলে ঢুকিয়ে ছিল । আর এখন হোসনি মোবারক জেলে আর মুরসি সে দেশের প্রেসিডেন্ট ।

এত কিছুর পরও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী তো দুরে থাক একজন দুর্বল সমর্থকের মন ভাংগেনি । আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে তারা ভয় করতে শিখেনি । তারা কোরআন -হাদীস বুঝে শুনে এই পথে এসেছে । তারা সুরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতের দাবী এবং রিএ্যাকশন ,ঝুকি খুব ভালকরে জেনেছে । সেখানে আল্লাহ বলেছেন ---'' আমি অবশ্যিই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো , ভয়-ভীতি , ক্ষুধা-অনাহার ,তোমাদের জান মাল এবং ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে । তুমি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দাও '' ।

জামায়াতের রুকন এবং শিবিরের সদস্য হতে হলে দ্বিধাহীন চিত্তে জান-মালের ঝুকির বিপদ মাথায় থাকতে হয় । সুরা আন আ'মের ১৬২ নং আয়াতের আলোকে নিজের সব কিছু আল্লাহর রাস্তায় উতসর্গ করার সিদ্ধান্ত না নিলে কেউ জামায়াতের রুকন এবং শিবিরের সদস্য হতে পারে না । সেখানে আল্লাহ বলেছেন ---'' নিশয়ই আমার নামাজ , আমার সুকৃতি , আমার জীবন এবং মৃত্যু বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর জন্যে '' । একজন মুসলমানের নিকট এটা ঈমানের দাবী । এই দাবী পুরন করতে যারা সর্বদা প্রস্তুত থাকে তাদেরকে কেউ ঠেকাতে পারে না । ঈমানের বলে বলিয়ান কাফেলা কখনও থামে না । নৈতিক ভিত্তি যাদের ঈমান , আদর্শ যাদের ইসলাম , নেতা যাদের হযরত মুহাম্মদ স ,আখেরাতের সফলতাই যাদের কাম্য তাদের ভয় কিসের ? তাদের পৃষ্টপোষক স্বয়ং আল্লাহ । ২৮/২/২০১৩ তারিখ হতে আমরা যা দেখলাম তাতে তারা ত্যাগ -কোরবানীর বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশ বাহিনী এইভাবে নির্বিচারে গুলি করে বিপুল সংখ্যক মানুষ আর কখনও হত্যা করেনি । এমন নির্মম গণহত্যার পর কি জামায়াত-শিবির নির্মুল হয়ে গেছে ? বরং তাদের দৃঢ়তা , সাহসীকতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । দিন দিন জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে ।

দেশের ভিতরে-বাইরে তারা ব্যাপকভাবে সহযোগিতা পাচ্ছে । বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে তাদের পক্ষে খবর -প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সমুহ এবং আইনি ফোরাম এবং আইনবীদ্গন তাদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে সরকারের ভুল ভ্রান্তির সমালোচনা করেছে । আসলে সরকার তাদের লেজ ধরে টানাটানি করে বিশ্ব দরবারে জামায়াত-শিবিরের গ্রহন যোগ্যতা -পরিচিতি বৃদ্ধি করেছে । যা করতে জামায়াতের ২০ বছর লাগত বলে মনে হয় । ১৪ আনা মিডিয়া যেভাবে জামায়াত-শিবিরকে জংগীদল বানাবার গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তাতে জামায়াত ফিনিশ হয়ে যাবার কথা । জামায়াত শিবির আস্র হাতে দেশের কোথাও আক্রমন করেছে এমন দৃশ্য এখন পর্যন্ত তারা দেখাতে পারেন নি । তারপরও তারা লিখে যাবেন । মিডিয়া আর শাহাবাগের বদৌলতে আওয়ামী লীগের বড় ২টা অর্জন হয়েছে ।

১] সাময়িকভাবে তাদের অপকর্মগুলো চাপা পরেছে । মানুষ দেখছে পুলিশ-জনতার মুখোমুখী যুদ্ধ ।

২] দেশের সকল আলেম -ওলামার পক্ষ হতে নাস্তিক- ইসলাম বিদ্বেষী সরকার হিসাবে সনদ । জম্ম হয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠন । দেশ ২ভাগে বিভক্ত হয়েছে । একদিকে ইসলাম - জাতীয়তাবাদী পক্ষ আপরদিকে নাস্তিক-ধর্মবিদ্বেষী পক্ষ । জাতীয় ঐক্য ফিনিশ ।

আওয়ামী লীগে ধর্ম কর্ম করে এমন নারী পুরুষ যথেষ্ট পরিমানে আছে । গুটিকতেক নাস্তিক সন্ডা পলিটিশিয়ান এবং আনারী কতেক নব্য নাস্তিক ব্লগারের উৎপাতে তারা চরমভাবে ব্যথিত , মর্মাহত এবং শংকিত । নেত্রী এই আনারী মার্কা নব্য আওয়ামী লীগারের খপ্পরে বন্দী হয়ে আছেন । মাননীয় নেত্রী এই বন্দীখানা হতে নিজকে মুক্ত করে স্বাধীনভাবে প্রজ্ঞা এবং সমজোতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন এটাই দেশ বাসী কামনা করে । তিনি আওয়ামী লীগের নেত্রী কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী । সংসদ নেত্রী । সরকার প্রধান । তাকে বাকা পথে ক্ষমতায় দেখতে যারা উম্মাদ হয়ে গেছে তারা মুলত প্রধানমন্ত্রীর শত্রু । এটা তিনি যত দ্রুত বুঝবেন তত দ্রুত সংকট কেটে যাবে ।

বিষয়: বিবিধ

১৪১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File