মরহুম তাজুদ্দিন সাহেব পদত্যাগে বাধ্য হলেন কেন ? আমাদের আস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তা ভালকরে জানেন , তাই -----

লিখেছেন লিখেছেন আবরার ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:২০:৩৫ দুপুর



২৬শে অক্টোবর ১৯৭৪ সাল । বঙ্গবন্ধুর পাঠানো পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন দেশের প্রথম আস্থায়ী প্রধান মন্ত্রী এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দিন আহম্মদ । তার কি কোন অপরাধ ছিল ? তিনি ছিলেন সৎ সাহসী এবং স্বাধীনচেতা বীর পুরুষ । অন্যায়ের সাথে আপোষ করে ক্ষমতার মসনদ আকড়িয়ে থাকতে চাননি । তাই তিনি সাহসীকতার সাথে '' ২টি অপরাধ '' করেছিলেন !

১] '' ৭৪ সালের চরম দুর্ভিক্ষের জন্যে প্রকাশ্যে নিজ দলীয় আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত, অদক্ষ ম্যানেজমেন্ট এবং দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি -লুটপাঠের কড়া সমালোচনা করেছিলেন ।

২] দুর্ভিক্ষের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে সর্বদলীয় আস্থা এবং সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুরোধ করেছিলেন ।

অনেক আওয়ামী নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে জনাব তাজুদ্দিন সাহেবের জন্যে এটাই কাল হিসাবে গণ্য হয়েছে । তার পদত্যাগের এটাই অন্যতম কারন । আমাদের বর্তমান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদ এই বিষয়টা আরো ভালভাবেই জানেন । তিনি প্রত্যক্ষভাবে অবগত আছেন যে , একসময়কার বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন স্বহকর্মী '' হেভী ওয়েট '' অনেক বড় বড় নেতা কেন আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছেন বা বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন । তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঃ

১] জনাব ব্যারেষ্টার মওদুদ আহম্মদ ।

২] জনাব ডঃ কামাল হোসেন ।

৩] জনাব শাহা মোয়াজ্জেম হোসেন ।

৪] জনাব কে এম ওবায়দুর রহমান ।

৫] জনাব খন্দকার মোশতাক আহম্মদ ।

৬] জনাব খন্দকার মাহাবুব হোসেন ।

৭] বঙ্গবীর জনাব কাদের সিদ্দিকী ।

৮] বঙ্গবন্ধুর খ্যাতিমান ৪ খলিফা ---

১] জনাব শাহজান সিরাজ ।

২] জনাব আ স ম আব্দুর রব ।

৩] জনাব সিরাজুল আলম ।

৪] জনাব নুরে আলম সিদ্দিকী ।

৯] জনাব সফিউল আলম প্রধান ।

এমন বড় মাপের নেতারা আজ আওয়ামী লীগে নেই । কেন নেই তা তারাই ভালভাবে জানেন । তাদের ভিতর খন্দকার মোস্তাক আহমাদ এবং কে এম অবায়দুর রহমান দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন । বাকী নেতারা জীবিত এবং রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন । তবে জনাব নুরে আলম সিদ্দিকীকে শুধু টক শোতে দেখা যায় এবং জনাব সিরাজুল আলম বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নেপথ্য নায়ক হিসাবে পর্দার আড়ালেই অবস্থান করেছেন ।

অপরদিকে রাজনৈতিকভাবে '' প্যারালাইসড " করে রাখা হয়েছে বা আছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহামদ , অধ্যাপক আবু সাঈদ খান , আমির হোসেন আমু , আব্দুল মতিন খসরু , সাবের হোসেন চৌধুরী , মাহমুদুর রহমান মান্না সহ অনেক ঝানু অভিজ্ঞ পোড় খাওয়া নেতাকে । সম্ভবত এই নেতারা আনুগত্যের কঠিন পরীক্ষায় ফেল করেছেন । বর্তমান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এই নেতাদের দল ত্যাগ , নিষ্ক্রিয়তা , অবমুল্যায়ন ইত্যাদি বিষয় খুবভাল করেই জানেন । তাই তিনি ফেল করতে চান না ।

স্বনামধন্য জনাব এডভোকেট আব্দুল হামিদ স্পীকার হিসাবে দলের নিকট যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে সম্মানীত হয়ে আছেন । যদিও তিনি বিরোধী পক্ষকে আস্থায় নিয়ে সংসদকে কার্যকর সংসদে পরিনত করতে সক্ষম হননি । বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে নিতে তেমন দৃশ্যমান বা অদৃশ্য কোন ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন এমন কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি । দেশের বর্তমান ভয়াবহ নৈরাজ্যময় পরিস্থিতে সংকট নিরসনে কোন উদ্যোগ গ্রহন করতে দেখা যায়নি । সম্ভবত এই ক্ষেত্রে নেত্রীর গ্রীন সিগনাল মিলেনি ।

************ জি হুজুর ভুমিকাই বড় দায়িত্ব পাওয়ার মাপকাঠি *****************

'' জি হুজুর '' ভুমিকায় তিনি অতীতে না থাকলেও সম্প্রতি ২ টি ফাইলে দস্তখত করে '' জি হুজুর '' চরিত্রে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন । তিনি একজন পাকা আইনবীদ । অভিজ্ঞ সংসদ বিশারদ । তিনি অন্ধের মত না দেখে নথিপত্রে স্বাক্ষর করে বিতর্কের জম্ম দিতে পারেন না । কিন্তু তিনি ইতিমধ্যে তা করেছেন । বিশিষ্ঠ্য সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান দৈনিক প্রথম আলোতে '' অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির অবাক সিদ্ধান্ত '' শিরনামে একটি কলাম লিখেছেন । দেখুন ------

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-05/news/342376

আইন এবং সংবিধান বিশ্লেষক হিসাবে খ্যাতিমান এই সাংবাদিক লিখেছেন , '' গুরুতর অসাদাচরণের দায়ে জাতীয় সংসদে তিরিস্কৃত একজন বিচারককে দেশের স্ররবোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ । অন্যদিকে আওয়ামী পন্থী একদল চিকিৎসক নেতাকে অধ্যাপনায় পদোন্নতি প্রদান । এতে প্রবীন রাজনীতিবীদ আব্দুল হামিদের তুলনামুলক নিরপেক্ষ ভাবমুর্তি কলুষিত হয়েছে । এবং সেটা এমন একটি প্রেক্ষাপটে ঘটল , যখন রাজনীতিতে সংকট ঘনীভুত হচ্ছে এবং তাকে ঘিরে নির্বাচন কালিন একটা গ্রহনযোগ্য সরকার গঠন করার সম্ভাবনা বাতাসে ভাসছে ।''

তার নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত বিচারপতি বলেছিলেন , '' স্পীকারের মন্তব্য শুধু অজ্ঞতাই নয় , অমার্জনীয় '' । বিগত ৫/৬/২০১২ তারিখে সংসদে তার এই বক্তব্যে ঝড় উঠে ।

ক] জনাব শেখ সেলিম বলেন ----তার মন্তব্য সংসদের উপর নগ্ন হামলার শামিল । তার ক্ষমা চাওয়া উচিত ।

খ] জনাব রাশেদ খান মেনন ----তার এই আচরন আমরা মেনে নিতে পারি না ।

গ] বাবু শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ----- যিনি সংবিধান লংঘন করেন তার এই আসনে থাকা সমীচীন হবে না । তিনি সংবিধান লংঘন করেছেন ।

ঘ] জনাব তোফায়েল আহমদ ---- বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী স্যাডিস্ট । তিনি মানুষকে অপমান করতে পছন্দ করেন ।যারা স্যাডিস্ট , অন্যদের কষ্ট দিয়ে আনন্দ পান , আমরা তাদের ঘৃনা করি ।স্যালুট না দেয়ায় তিনি ট্রাপিক পুলিশকে কান ধরে উঠাবসা করান । তৃতীয় শ্রেনীর টিকেট কেটে এই ব্যক্তি বিমানের বিজনেস ক্লাসের সিট চান । তার লজ্জা থাকা উচিত ।

এই প্রেক্ষাপটে স্পীকার [ এড আব্দুল হামিদ ] তার বিরুদ্ধে সংসদে রুলিং দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন । সেই স্পীকার বর্ত্মানের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে একজন '' স্যাডিস্ট '' নির্লজ্জ '' আসদাচরনকারী '' সংবিধান লংঘনকারী '' [ বড় বড় নেতাদের ভাষায় ] কে আপীল বিভাগে নিয়োগ দিলেন ।

যার নিয়োগে ক্ষুব্ধ বার এসিসিয়োশন । তারা নিয়মিত কাল পতাকা হাতে নিয়ে আদালতে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন । তিনি ছাড়া কি একজন বিচারপতি ছিল না যার গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলত না । এই ভাবে ব্যক্তিবিশেষের হুকুম তালিম করে রাষ্ট্রপতির পদ কলংকিত করেছেন । আজ প্রমানিত হল মানীয় প্রধান মন্ত্রী রাষ্ট্রের একজন '' অভিভাবক '' চান না । তিনি চান একজন '' অনুগত রাষ্ট্রপতি '' । সম্ভবত জনাব এডভোকেট আব্দুল হামিদ '' আনুগত্যের পরীক্ষায় '' পাশ করেছেন । বংগভবনের বাসিন্দা হবার যোগ্যতার মাপকাঠি '' জি হুজুর '' আত্মস্থ করেছেন । ২৪/৪/২০১৩ তারিখ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে । দেশ অনুগত রাষ্ট্রপতি চায় না । চায় গ্রহনযোগ্য একজন সাহসী অভিভাবক ।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File