স্মৃতির ভিড়ে আছ তুমি (পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে নিহত লে. কর্নেল শহীদ এনশাদ ইবনে আমিনের সহধর্মিণী)
লিখেছেন লিখেছেন পত্রিকার পাতা থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:৪০:১০ সকাল
ফেব্রুয়ারী মাস-অনেক যন্ত্রণার একটি মাস। পাঁচ বছর- কত দ্রুত চলে যাচ্ছে সময়। কিছুদিন থেকে মনের ভিতর দুটো লাইন শুধু বেজেই চলেছে-‘‘হৃদ মাঝারে রাখব, তোমায় ছেড়ে দেব না’’ কিন্তু তুমি যে আমাদের ছেড়ে চলে গেলে অনেক দূরে, তাই তো তুমি এখন আছ আমদের সকলের হৃদয়ের মাঝে। কতদিন দেখিনি তোমায়! আজ কত স্মৃতি মনে পড়ছে। দুঃখের নয়- সুখের স্মৃতিগুলিই এখন আমার বড় সম্পদ।
কাজ-পাগল ছিলে তুমি। শত কাজের ফাঁকেও নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে ভালবাসতে। ১৯৮৬ সালে তোমার সাথে ভারতে যাই। তোমার চাকুরির কারণে ভারতে আমরা ছিলাম এক বছর। দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারতে ঘুরে বেড়িয়েছি। ভালবাসার নিদর্শন আগ্রার তাজমহল
দেখেছি আমার ভালবাসার সাথে। কাশ্মীরের ‘ডাল লেক’ এ হাউস বোটে থাকার আনন্দ কি কখনও আর পাব? সেসব দিনগুলির অনুভূতি এখন শুধুই স্মৃতি! আল্লাহর দরবারে শোকর আলহামদুলিল্লাহ জানাই, তোমার সাথে বাচ্চাদের নিয়ে হজ্জ পালন করতে পেরেছি ১৯৯৩ সালে। তুমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকতে ভালবাসতে। তাই ছোট দুই বাচ্চাকে নিয়ে আমরা জেদ্দায় ছিলাম প্রায় চার মাস। সেখানেও তোমার কাজের অবসরে আমাদের নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরেছ।
১৯৯৬-তে পাকিস্তান ও নেপালে নিয়ে গেছ আমাকে তুমি। ট্যুর প্ল্যান করতে খুউব দক্ষতার সাথে। পাকিস্তানের ঐতিহাসিক জায়গাগুলোতে যেয়ে তুমি নিজেই হয়ে যেতে বাচ্চাদের জন্য গাইডম্যান। কি সুন্দরভাবে তাদের বুঝিয়ে দিতে সেসব স্থানের ইতিহাস। এই ঘোরাঘুরির নেশা এখন তোমার ছেলে রাহীনের মাঝে দেখি। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকেই বেড়িয়ে পড়ে নিজের দেশ চিনতে। আমি তো নিজের দেশকে চিনেছি তোমার সাথেই। কাজের জন্য বা ছুটিতে যেখানেই তুমি গেছ, আমরা ছিলাম তোমার সঙ্গী। জানো, খুব বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মনের ভিতর থেকে আগের সেই আনন্দ পাই না। এখন যে আমি একা একা ঘুরছি সংসারের যাঁতাকলে!
ফেব্রুয়ারি মাস কি এখন শুধুই ভাষা আন্দোলনের মাস? ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ কী জঘন্যতম ছিল তা কি আমরা ভুলে যাচ্ছি? বাংলাদেশের ইতিহাসে কি এই দিনটি ‘‘কালো দিন’’ ছিল না? পরবর্তী প্রজন্ম কি তোমাদের দেশপ্রেমের কথা, তোমাদের আত্মত্যাগের কথা জানবে না? না, কখনোই না- তোমাদেরকে আমরা ভুলতে পারি না। দেশের প্রতিটি মানুষ এই ৫৭ জন অফিসারকে ‘‘শহীদ’’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায়। সকলের মনের দাবি- ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘‘শহীদ সেনা দিবস’’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হউক।
ডা. রোয়েনা মতিন
(লেখক : পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে নিহত লে. কর্নেল শহীদ এনশাদ ইবনে আমিনের সহধর্মিণী)
বিষয়: বিবিধ
১৬০৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন