ফুফুর ভালোবাসাকে তুচ্ছ করলো সূচনা (প্রেমিকের নেশার টাকার জন্যে ভাইকে অপহরণ)

লিখেছেন লিখেছেন পত্রিকার পাতা থেকে ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৩৭:১০ সকাল



প্রেমিকের নেশার টাকা সংগ্রহ করতে ফুফাতো ভাই তাজবিকে অপহরণ করে কলেজ ছাত্রী ফারিয়া তাসনিম সূচনা। শিশু তাজবির বয়স তিনবছর। পরিকল্পনা ছিল ফুফার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু সফল হয়নি। ঘটনার নয় ঘণ্টার মাথায় গত সোমবার দিবাগত রাত একটার সময় সূচনা ও তার প্রেমিক আল আমিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে হালিশহর থানা পুলিশ। উদ্ধার করা হয় শিশু তাজবিকে।

তাজবির মা হোসনে আরা মুক্তা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সিডিএ শাখায় কর্মরত। বাবা মোশাররফ হোসেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। হালিশহরের ‘এল’ ব্লকে ভাড়া বাসায় থাকেন সপরিবারে।

অপহরণের কথা স্বীকার করে ফারিয়া তাসনিম সূচনা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার নিহার রঞ্জন হাওলাদারের অফিসে পুলিশকে বলেন, তার বাবা হাফিজুর রহমান একটি সিএন্ডএফ কোম্পানিতে চাকুরি করেন। তাজবি তার ফুফাতো ভাই। সে আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। মহসিন কলেজে ইংরেজি বিভাগে অনার্সে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে তিন বছর আগে আল আমিনের সাথে যোগাযোগ হয়।

২০১২ সালের অক্টোবর মাসে তাদের দেখা হয়। পরবর্তীতে দুজনের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ইতিমধ্যে আল আমিনের মাধ্যমে তার বন্ধু আল মামুনের সাথে পরিচয় হয়। তারা দু’জনেই নেশা করতো। ফুফার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতে আল আমিনের পরিকল্পনায় তাজবিকে অপহরণ করে সে।

সূচনা জানায়, তিন মাস আগে এ অপহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমি কোনমতেই কাজটি করতে পারছিলাম না। আল আমিনের সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ায় তার কথার বাইরে যাবার কোন উপায় আমার ছিল না। তার সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছিলাম। ফুফু আমাকে খুবই আদর করতেন। আল আমিনের পীড়াপীড়িতে কৌশলে ফুফাতো ভাইকে ঘর থেকে নিয়ে গিয়ে আল আমিনের হাতে তুলে দেই। পরিকল্পনা ছিল তাজবিকে অপহরণ করে পাঁচলাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা। আল আমিন বলেছিল মুক্তিপণের টাকা পাওয়া গেলে আমাদের বিয়ে হবে। সে ব্যবসা করবে।

পুলিশের কাছে আল আমিন জানিয়েছে, তার বাবা রুহুল আমিন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক। তিনি বর্তমানে কুমিল্লায় কর্মরত আছেন। ২০০৯ সালে এমইএস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। ফেসবুকের মাধ্যমে সূচনার সাথে পরিচয় হবার পর প্রেমের সম্পর্ক হয়।

পুলিশের হাতে আটকের কথা মা-বাবা জানেন কিনা জানতে চাইলে সূচনা বলে, তাঁরা সবকিছুই জানেন। আমি তাদের একমাত্র সন্তান। তবে পুলিশের হাতে আটকের পর মা-বাবা আমাকে দেখতে আসেননি।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার নিহার রঞ্জন হাওলাদারের অফিসে কথা হয় ব্যাংকার হোসনে আরার সাথে। তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে তাহিতা তাসনিমের বয়স নয় বছর। ছেলে তাজবির বয়স তিন বছর ও ছোট মেয়ে তাসনিয়া তাজনিনের বয়স চারমাস। সূচনা আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে। তাকে নিজের বড় মেয়ে হিসেবে জানতাম। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না সে এ কাজ করতে পারে। তিনি জানান, বড় মেয়ে তাসনিম হালিশহর এল ব্লকের সিলভার বেল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলের পাশেই একজন শিক্ষকের কোচিং সেন্টারে ক্লাস করে। সূচনা তার মা বাবার সাথে বউবাজারে থাকতো। সূচনা প্রায়সময় আমাদের বাসায় আসতো। বাচ্চারা তাকে খুবই পছন্দ করতো।

তাজবির বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মা-বাবার সাথে সূচনা আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে। খাওয়া-দাওয়া শেষে রাতে তার মা-বাবা চলে যায়। বাচ্চারা তাকে পছন্দ করে বিধায় সে থেকে যায়। গত সোমবার আমি ও আমার স্ত্রী প্রতিদিনের মতো কর্মস্থলে চলে যাই। বেলা তিনটার সময় বড় মেয়ে তাসনিমের কোচিং সেন্টারে যাবার কথা। সূচনা তাকে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাবার সময় তাজবিকেও নিয়ে যায়। বেলা সাড়ে পাঁচটায় কোচিংশেষে তারা বাসায় না ফিরলে আমি কোচিং সেন্টারে যাই। সেখানে সূচনাকে পাইনি, তবে মেয়েকে কোচিং সেন্টার থেকে নিয়ে আসি।

তাজবি যেহেতু সূচনার সাথে আছে তাই আমরা তেমন চিন্তা করিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় সূচনা খালি হাতে বাসায় ফিরে জানায়, তাসনিমকে কোচিং সেন্টারে দিয়ে সাড়ে তিনটার সময় বাসায় ফেরার পথে ‘এল’ ব্লক মসজিদের পশ্চিম পাশে রাস্তার পাশে তিন চারজন যুবক তার পথ আটকে মারার ভয় দেখিয়ে তাজবি ও তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। সিআরবি এলাকায় নিয়ে তাজবিকে আটকিয়ে রেখে তাকে ছেড়ে দিয়েছে।

মোশাররফ বলেন, সূচনাকে আমার নিজের মেয়ের মতো আদর করি। তাকে এখনো হাতে তুলে খাইয়ে দেই। তার কথা আমরা বিশ্বাস করেছি। ঘটনার পর বিষয়টি হালিশহর থানায় অবহিত করি। পুলিশ বার বার সূচনাকে সন্দেহ করলেও আমরা কখনো সন্দেহ করিনি। সূচনা এ কাজ করেছে তা বিশ্বাস করতে এখনো আমার করতে কষ্ট হচ্ছে ।

যেভাবে উদ্ধার হয় তাজবি : নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার নিহার রঞ্জন হাওলাদার বলেন শিশু অপহরণের অভিযোগ পাবার পর বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। কমিশনার মহোদয় বার বার তাগাদা দিচ্ছিলেন যাতে শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়।

সূচনার কথাবার্তায় আমাদের সন্দেহ হয়। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে শিশু তাজবিকে অপহরনের কথা স্বীকার করে সূচনা। তার কথামতো রাতেই আমবাগান এলাকায় যাই। আটক করি প্রেমিক আলআমিনকে। আলআমিনের স্বীকারোক্তিতে টাইগারপাসের আমবাগান রেলওয়ে আবাসিক এলাকার ৩৪/বি বাসার ভাড়াটিয়া পারভিন আক্তারের বাসা থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাজবিকে উদ্ধার করি। এসম পারভিন ও প্রেমিক আল-আমিনের বন্ধু আল-মামুনকে আটক করি। সূচনাসহ রাতেই চার অপহরণকারীকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো খুলনার রুহুল আমিনের ছেলে আল আমিন (২২) ও কুমিল্লার বেলাল হোসেনের ছেলে আল মামুন (২১) ও আমবাগান এলাকার পারভিন আক্তার। তাজবিকে আমবাগান রেলওয়ে আবাসিক এলাকার পারভিনের ভাড়া বাসায় রাখা হয়েছিল।

হালিশহর থানার পরিদর্শক শাহজাহান কবির বলেন, সূচনা জানিয়েছে পূর্বপরিকল্পনা মতো তাসনিমকে কোচিং সেন্টারে রেখে তাজবিকে নিয়ে সিআরবিতে গিয়ে আল-আমিনকে ফোন করে। আল-আমিন তার বন্ধু আল মামুনকে সূচনার পাঠায়। আল-মামুন সূচনা এবং তাজবিকে নিয়ে আমবাগান তাদের প্রতিবেশী পারভিনের বাসায় তাজবিকে রাখে। তাজবি কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায়। পরে প্রেমিক আল আমিনের পরিকল্পনা মতো সূচনা ফুফার বাসায় ফিরে যায়।

শিশু তাজবিকে কোলে নিয়ে উপ-কমিশনার নিহার রঞ্জন হাওলাদারের অফিসে এসেছিলেন মা হোসনে আরা মুক্তা; সাথে ছিলেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন। তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সন্তানকে অক্ষত ফিরে পাবো তা ভাবিনি। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হয়েছেন। পুলিশের এ উপকারের কথা আমাদের সারাজীবন মনে থাকবে।

http://www.dainikpurbokone.net/index.php/-lfontglfont-colorq5a5757qg-lfontg/-lfont-colorq5a5757qglfontg/17815-2014-02-05-01-35-28

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File