ভাংচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগে ঘরবাড়ি সহায়সম্পদ সবকিছু শেষ (সাতক্ষীরায় হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে)

লিখেছেন লিখেছেন পত্রিকার পাতা থেকে ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৩০:৫১ রাত



যৌথবাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের তা-বে আশ্রয় ও গৃহহারা হাজার হাজার মানুষের আর্তনাদে সাতক্ষীরার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। সর্বত্রই চলছে মানুষের হাহাকার। এসব মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই বসতবাড়ি ও আসবাবপত্রটুকু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধান-চাল ও কাপড়-চোপড় সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। রক্ষা করার জন্য বাড়ির মহিলা ও শিশুদের কোন আকুতিই কাজে আসেনি। খোলা আকাশের নিচে বাগানে বসে শিশু-সন্তানদের নিয়ে দু’মুঠো রান্না করে খাবে তারও কোন উপায় নেই। এতো কিছুর মধ্যেও চলছে গ্রেফতার আতঙ্ক। বাজারে যাওয়ারও কোন পথ নেই। আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা যৌথবাহিনীর সহযোগিতায় মোড়ে মোড়ে পাহারা বসিয়েছে। আর বাগানে গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও মশার কামড় আর ঠা-ায় সেখানেও কেউ থাকতে পারছে না। এ যেন ডাঙ্গায় বাঘ আর পানিতে কুমীর অবস্থা বিরাজ করছে এখানে।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হরতাল ও অবরোধ চলাকালে গত ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন নিহত হবার তিনদিন পর জানাযা ও দাফনের সময় উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ মেহেদী ও তার ভাই আশেক মেহেদীর নেতৃত্বে শতাধিক মোটর সাইকেলযোগে মৌতলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, হাসু, বোমা-ককটেল নিয়ে কুশলিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে হামলা করে। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত তা-বলীলা চালায়। এ সময় উক্ত গ্রামের বাসিন্দা জামায়াত কর্মী রহমত আলী তরফদারের একতলা বিল্ডিং, একটি রান্নাঘর, একটি গোয়ালঘর ও ধানের গাদা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াত কর্মী সিদ্দিক তরফদারের সেমিপাকা ঘর, একটি রান্না ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি কর্মী লাল্টু তরফদারের একটি ঘর, একটি রান্নাঘর ও শতাধিক মুরগীসহ একটি পোল্ট্রিফার্ম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি কর্মী বাবলু তরফদারের বসতঘর, রান্নাঘর, বিএনপিকর্মী টুলু তরফদারের ঘরবাড়িসহ একটি ধানের গাদা ও হাস-মুরগি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াত কর্মী ওয়াহেদ আলী তরফদারের বসতঘর, রান্নাঘর, জামায়াত কর্মী মোবারক হোসেন তরফদারের বসতবাড়ি, রান্নাঘর ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। বিএনপি নেতা মিজান তরফদারের একতলা বিল্ডিং, তার বেকারীর কারখানা ও মেসার্স শাহিনুর ট্রেডার্স আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া এবং লুটপাট করা হয়েছে। জামায়াত কর্মী মুরশীদ আলীর বাড়ি-ঘর, দুই শতাধিক মুরগিসহ পোল্ট্রি ফার্ম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াত কর্মী জব্বার আলী’র বসতঘর, রান্নাঘর, ভ্যানচালক ওয়াহেদ আলীর বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াত কর্মী সাদেক আলী’র বাড়ি-ঘর ভাংচুর লুটপাট করা হয়েছে। বিএনপি কর্মী মোন্তেজ আলী, আব্দুল গফুর তরফদার ও বাসেদ আলীর বাড়ি-ঘর, রান্নাঘর, ধানের গোলাসহ সব জ্বালিয়ে দিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল ইঞ্জিনভ্যানে করে নিয়ে একই ইউনিয়নের দুই কিলোমিটার দূরের ভদ্রখালি গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুর রহমানের তিনতলা বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তারা তিনতলা বিল্ডিংয়ের প্রতিটি তলায় আগুন দেয় এবং লুটপাট শুরু করে। বাড়ির উঠানে থাকা ধানের গোলায়, গরুর গোয়ালে ও সরদার স্টোর নামের একটি মুদি দোকানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। এ বাড়িতে রক্ষিত নগদ এক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা। জামায়াত কর্মী আব্দুস সোবহানের একতলা বিল্ডিং বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বেলায়েত আলী মোড়লের কাঁচা বাড়িঘর ও রান্না ঘরে আগুন ও ভাংচুর করা হয়েছে। সামছুর রহমান গাজীর সেমিপাঁকা ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় তার বাড়িতে রক্ষিত নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। সুরাত আলী গাজীর কাঁচা ঘর বাড়ি, দাউদ আলী গাজীর সেমিপাঁকা ঘর-বাড়ি, হাঁস-মুরগি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মাওলানা আব্দুর রহমানের ভদ্রখালীর বাজারের দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আব্দুল গফুরের সেমিপাঁকা ঘর ও রান্নাঘর, হাফিজুল ইসলামের সেমিপাঁকা বাড়ি-ঘর, ক্বারী মোসলেম উদ্দিনের একতলা বিল্ডিং, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, আমির আলী গাজীর একতলা বিল্ডিং, ঘরের আসবাবপত্র, রেজাউল করীমের সেমিপাকা ঘর-বাড়ি, হাঁস-মুরগি এবং বুলবুল আহমেদের সেমিপাঁকা ঘর-বাড়ি ও আসবাবপত্র আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় বাড়ির মালিকরা বাড়িতে ছিল না। তবে হামলাকারীরা মহিলা ও শিশুদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তারা মায়ের কোলে থাকা শিশু বাচ্চাদের টেনে হেঁচড়ে নিয়ে ছুড়ে মেরেছে। মহিলা ও শিশুদের হাউমাউ করে কান্না আওয়ামী লীগের এসব ক্যাডারদের মন গলাতে পারেনি।

নলতা বাজারে আওয়ামী লীগের অগ্নিসংযোগ : বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হকিস্টিক, রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, হাসু ও বোমা নিয়ে নলতা বাজারে হামলা করে। এ সময় তারা দু’টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. মোসলেম উদ্দীন জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নলতা বাজারে কয়েকটি শক্তিশালী হাতবোমা মেরে গোটা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। এ সময় তারা শাহী বস্ত্রালয় ও মোড়ল স্টোর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে শাহী বস্ত্রালয় এর প্রোপ্রাইটর আব্দুল্লাহ দাবি করেন।

এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আযম খান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক গোবিন্দপুর ও ভদ্রখালি গ্রামে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে। এতে কয়েকটি বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নলতা বাজারের দু’টি দোকানে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এসব ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব বাড়ি থেকে যৌথবাহিনীর উপস্থিতিতে লুটপাট করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কথা ঠিক নয়।

এসব ব্যাপারে কথা হলে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘরে চাল নেই, খাব কি। রান্নাঘর নেই রান্না করব কোথায়? বাথরুম নেই প্রস্রাব-পায়খানা করব কোথায়? বাইরে বের হলে গ্রেফতার, বাগানে থাকলে মশার কামড়, এখন করব কি? আমাদের কি এ দেশে থাকার কোন অধিকার নাই? তিনি বলেন, গত সোম ও মঙ্গলবার যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে তার ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র ও স্বর্ণালংকারসহ সব মালামাল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। আর যেগুলো অবশিষ্ট ছিল, তাও লুটপাট করে নিয়ে চলে গেছে। এতে করে তার পরিবারটি বসবাসের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘর-সংসার সবকিছু হারিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কিত। যৌথবাহিনী ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের হুঙ্কারে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জনপ্রিয় এই নেতা। নিজে যখন ঘর ছাড়া তখন তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেশীদের সহযোগিতা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ এই আলেম সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর। এরশাদ সরকারের আমলে তিনি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি কয়েক দফায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে সারাদেশে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ৫ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক তিনি। ছাত্রজীবন শেষ করে তিনি সাতক্ষীরা আগরদাঁড়ি কামিল মাদরাসায় অধ্যাপনার দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। সাতক্ষীরায় ইসলামী আন্দোলন প্রতিষ্ঠায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তার হাত ধরেই সরকার পতনের আন্দোলনে সাতক্ষীরাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এতেই তার কাল হয়েছে। সরকার তাকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ডজনখানেক মামলা দিয়েছে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে যৌথবাহিনী দিয়ে তাকে সমূলে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক গত ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর দফায় দফায় তার দোতলা বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় যৌথবাহিনীর সদস্যরা। সাতক্ষীরার জনপ্রিয় এ নেতা দীর্ঘ সময়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও নিজের জন্য কিছুই করতে পারেনি। নেই শহরে কিংবা রাজধানীতে কোন বিলাশবহুল অট্টালিকা। রয়েছে সদরের সাতানি ইউনিয়নে খলিলনগর গ্রামে এই ছোট একটি কুটির। সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনে দলমত নির্বিশেষে সৎ ব্যক্তি হিসেবে যার অবস্থান ছিল। তার উপর এই সীমাহীন হামলা-মামলা ও নির্যাতনে খোদ সরকারি দলের ভেতরেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই নেতার এক কন্যার বিয়ে হয় অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফফারের সাথে। তিনিও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বর্তমানে একটি আলিম মাদরাসর অধ্যক্ষ। তিনি সদর পশ্চিম জামায়াতের আমীর। জেলা আমীরের বাড়ি ভাংচুরের পর স্বাভাবিকভাবে তার মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে থাকার কথা। কিন্তু বর্তমান সরকার তাও হতে দেয়নি। ১৭ ডিসেম্বর মাওলানা আব্দুল গফফারের বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এই পরিবারটির অবস্থাও একই রকম। কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ডা. মোসলেম উদ্দীন জেলা আমীরের আরেক জামাতা। তাকেও দীর্ঘদিন যাবত কারাগারে আটকে রাখা হয়। এ রকম অবস্থা জেলার শতাধিক পরিবারের মাঝে। মাত্র পাঁচ দিনে এ জেলায় যৌথবাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিএনপি-জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীর বসতবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে বিরান হয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের বিবৃতি : সাতক্ষীরা জেলা আমীর ও সাবেক এমপি. অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক, জেলা নায়েবে আমীর হাফেজ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, সেক্রেটারি শেখ নূরুল হুদা, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান ও কালিগঞ্জ থানা আমীর অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন, সেক্রেটারি আব্দুল ওহাব সিদ্দিকী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, যৌথবাহিনীর ছত্রছায়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় খুন, জখম, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। বহু এলাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে নারী, পুরুষ, শিশু, আবাল বৃদ্ব-বনিতা মাঠে ঘাটে অবস্থান করছে । অনেক এলাকার নিরীহ মানুষ এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে ।

গত ১৯ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদরের রইসপুর গ্রামে যৌথবাহিনী টহলরত ছিল। এ সময় বিনা উস্কানিতে তাদের কতিপয় অতি উৎসাহী সদস্য নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলী করে। একপর্যায়ে তারা মাঠ থেকে শিবির কর্মী আমিরুল ইসলাম (লাভলু) কে ধরে এনে (ঠা-া মাথায়) বন্দুক ঠেকিয়ে পাঁয়ে গুলী করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারকে আমিরুলের পা কেটে ফেলতে বাধ্য করে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া এলাকা থেকে আরো অনেককে ধরে গুলী করে আহত করে এবং ৫ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ওই এলাকার গ্রামবাসীরা কোন অবরোধ সৃষ্টি বা আইন-শৃংঙ্খলা বিরোধী কোন তৎপরতা চালায়নি। যে তথ্য প্রশাসন থেকে প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং নিজেদের আইন বিরোধী অপকর্মকে ঢাকা দেয়ার অপচেষ্টা মাত্র।

এছাড়া একই দিন কালিগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা সাঈদ মেহেদী শ্রমিকলীগ নেতা কামরুলের নেতৃত্বে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এক-দেড়শ’ আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডার বোমা, পিস্তল, বন্দুক, পেট্রোল বোমা, রামদা, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিকেল ৪টা থেকে জামায়াত-শিবির ও সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরে অগ্নি-সংযোগ, লুটপাট, ও ভাংচুর করে। এমনকি তারা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিও লুট করে। তারা গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের বাড়িসংলগ্ন পাঞ্জেগানা মসজিদও গুঁড়িয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নলতা বাজারে শাহী বস্ত্রালয় ও মোড়ল স্টোর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। অগ্নিকা-ের ঘটনায় শাহী বস্ত্রালয়ের মালিক আব্দুল্লাহর দুটি পা আগুনে ঝলসে যায়। এরপর তারা নলতা বাজারে কয়েকটি শক্তিশালী হাতবোমা মেরে গোটা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে চলে যায়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর যৌথবাহিনী ও তাদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা শান্তিকামী মানুষকে হতবাক করেছে। নেতৃবৃন্দ উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এবং জনগণের জান-মালের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রশাসন ও সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান।

আব্দুর রাজ্জাক রানা, সাতক্ষীরা থেকে ফিরে :

http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=134658

বিষয়: বিবিধ

১৩০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File