বয়ঃসন্ধির বেড়াজাল (ইশরাত মৌরি)

লিখেছেন লিখেছেন পত্রিকার পাতা থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:০৭:২০ দুপুর



বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে কমবেশি সবার কিছু না কিছু জানা আছে। এই বয়সে একটা ‘ফ্যান্টাসি’ কাজ করে। কিংবা ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতাই এই বয়সে খুব কম থাকে। এগুলোর কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও আছে। শারীরিক পরিবর্তন যদিও বয়ঃসন্ধি শুরুর সাধারণ বয়সসীমার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। তবে গড়পড়তা মেয়েদের এই প্রক্রিয়া ছেলেদের ১-২ বছর আগে শুরু হয়, (গড় বয়স : মেয়েদের ৯-১৪ বছর। ছেলেদের ১০-১৭ বছর)। আর অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। সাধারণত বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার চার বছরের মধ্যেই মেয়েরা তাদের উচ্চতা ও প্রজনন পরিপূর্ণতা লাভ করে। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ছেলেদের বৃদ্ধি হয় একটু ধীরে।



বয়ঃসন্ধির সময় যা করণীয়

বয়ঃসন্ধিকাল চলার সময় ছেলেমেয়ের খাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাংস, সবজি, ফল ইত্যাদি খাবার খাওয়াতে হবে। খেলাধুলা, সময়মতো ঘুম আর খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। দরকার পড়লে পুষ্টিবিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এ সময় বাবা-মা, বড় ভাইবোন এবং শিক্ষকদের বাড়তি মনযোগ এবং যথাযথ যৌনশিক্ষা প্রয়োজন।

বয়ঃসন্ধির সময় ছেলেমেয়ে ফ্যান্টাসি বা একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। তাই ভালো বা খারাপ বোঝা তো পরের কথা, খারাপ জিনিসের প্রতি সহজেই প্রলুব্ধ হয়। সুতরাং এই সময় সন্তানকে বাবা-মায়ের প্রচুর সময় দেওয়া উচিৎ।

বাচ্চারা বড় হওয়া শুরু করলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতিও আকর্ষণ বাড়তে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। তবে উঠতি বয়সীদের মধ্যে অনেকেরই ইন্টারনেটের পর্নোছবি দেখার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে পরিবারের বাইরে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অন্য রকমভাবে বাড়তে থাকে। যেখানে সম্মান দেখানোর কোনো চেষ্টা থাকছে না। একটু বড় হলে একসময় এসব থেকেই বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-কিশোরী।

পরিসংখ্যান করে দেখা গেছে স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা যারা মোবাইল ব্যবহার করছে তাদের কাছে এসব অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। যখন ধরা পড়ছে তখন শাস্তি হিসেবে অনেক সময় স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতে বাচ্চাটা আরও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর থেকে বরং বাসায় ইন্টারনেট থাকা ভালো। তবে আপনার সন্তান ইন্টারনেটে কী করছে, কী দেখছে সেসব অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবেন। এতে দূরত্ব দূর হবে।

বাসায় অনেকেরই আলাদা রুম থাকে। অনেক কিশোর-কিশোরী দরজা আটকে নিজের ঘরে থাকতে চায়। এটা করতে দেবেন না। বুঝিয়ে বলবেন, যেন দরজা ভিড়িয়ে পড়ালেখা বা কাজ করে। কারণ দরজা লাগানোর পর ওপাশে কী হচ্ছে তা আপনি জানতে পারছেন না। এতে আপনার সঙ্গে যেমন দূরত্ব বাড়ছে, তেমনি সেও অপরাধ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।

সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক হলে, তার সঙ্গে যৌনবিষয়ক ব্যাপারগুলো আলোচনা করতে পারেন। দরকার হলে এসব বিষয়ে ভালো বই কিনে দেবেন। লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ এসব ক্ষেত্রে না রাখাই ভালো। মনে রাখবেন, সন্তান প্রথম তার নিজের পরিবার থেকেই সব কিছু শেখে। আপনি যতই এসব ব্যাপার ওদের কাছ লুকানোর চেষ্টা করবেন ততই সে খারাপ জিনিসের প্রতি এগুতে থাকবে। কারণ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতির ঝোঁক সব মানুষেরই থাকে।

ছেলেদের এই বয়সে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরে অনেকেই। তাই বাবারা এই বিষয়েও সন্তানকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলে, সে চিন্তিত হবে না। আবার মেয়েদের ঋতুস্রাব হয়ে থাকে এই বয়সে। ভয় যাতে না পায়, এ কারণে মা তার মেয়েকে আগে থেকেই এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে রাখবেন।

এ সময় বাচ্চাদের পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে যাওয়ার প্রবনতা থাকে। তাই সবসময় খোঁজখবর রাখবেন। স্কুলে সব ক্লাস করছে কি না, পরিক্ষায় মন দিচ্ছে কি না, শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে খোঁজ নেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করতে হবে। এ ব্যাপারে শুধু মায়েদের দায়িত্ব নিলেই হবে না, বাবাদেরও এই দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ। ছুটির দিনে অন্তত ২ ঘণ্টা বাচ্চাকে নিয়ে পড়ালেখা করাতে বসবেন। এতে সন্তান আপনার সঙ্গে ফ্রি হবে, যেটা বুঝবে না সেটা আপনাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে শিখবে।

বয়ঃসন্ধির সময় স্কুলে পড়ার কারণে ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে ক্লাসের সঙ্গীদেরই বন্ধুত্ব হয়। আপনার সন্তান কার সঙ্গে মিশছে, কেমন তার বন্ধুবান্ধব এসব দিকে খেয়াল রাখা অভিভাবকের দায়িত্ব।

এই বয়সে বন্ধু বাছাই করতে পারে না। কে ভালো, কে খারাপ সেটা বোঝার ক্ষমতা তাদের থাকে না। তাই এই ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারেন। তাই বলে জোর করে নয়।

বয়ঃসন্ধির বেড়াজাল

ইশরাত মৌরি

সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File