শাহবাগ পরিস্থিতি : বিএনপির টাইমিং মিস হচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন ফুয়াদ আহমেদ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:০৬:১০ সন্ধ্যা
শাহবাগের কন্ট্রোল রুমে ছাত্রলীগ এখন বেশ ব্যস্ত।
আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়মিতই শাহবাগে এসে উইন্কিং করে যান ছাত্রলীগকে।
পুরো ব্যাপারটা একটা সেটপিসের মত বিএনপির রাজনীতির জন্য।
এবং এই সেট পিসের সাথে টাইমিং করতে ভুল করছে বিএনপি।
সেটা কিভাবে ?
আওয়ামী লীগের রাজনীতি কখনোই জনসেবা , নীতিসেবার রাজনীতি না।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি হলো মাঠ দখলে রাখার রাজনীতি।
শাহবাগে ছাত্রলীগকে রাখা হয়েছে "মাঠ দখল" না হলেও "মাঠের সর্দারি"র নিয়তে।
সে কারনে তারা দিনরাত প্রচার করে যাচ্ছে - শাহবাগে জড় হওয়া অরাজনৈতিক আবেগ পূর্ণ তরুনদের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা।
যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনে তারা খাদেম।
খেদমত করছে।
কুকুর লীগ - চাপাতিলীগ- খুনি লীগ নানা ধরনের ভীতিকর জননিন্দিত ব্র্যান্ডিং এর পর তারা চাইছে "শাহবাগের খেদমতগার খাদেম" ব্র্যান্ডটি।
ভালো , আই অ্যাপ্রিশিয়েট।
কিন্তু ছাত্রলীগ যত বেশী সময় শাহবাগের অরাজনৈতিক আবেগী ছেলেগুলোর নেতৃত্বে বসে থাকবে ততক্ষনই সময়টা বিএনপির জন্য অস্বস্তিকর।
শাহবাগ আন্দোলনে ছাত্রলীগকে কন্ট্রোল রুমে সেট করে শেখ হাসিনা বিএনপিকে একটি স্নায়ু যুদ্ধে না হলেও স্নায়ু দ্বন্দে / কোল্ড কনটেনশনে ফেলে দিয়েছে।
আবার একই সংগে এখানেই সুযোগ।
বিএনপির এখনই রাজপথে নামতে হবে সর্বাত্নক শক্তি নিয়ে।
মিছিল এবং মিটিং ডেকে রাস্তা - মাঠ- গাছ কানায় কানায় ভর্তি করতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে।
ঠিক যেমনটা করা হয়েছিলো ২০১১ আর ২০১২ 'র রোডমার্চের সময়।
তাতে কি হতে পারে ?
এখানেই রাজনীতির সেট পিস।
তাতে যেটা হতে পারে -
[১]
ছাত্রলীগকে শাহবাগ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে।
কারন বিরোধী দলের হাতে রাজপথ দখলে গেছে দেখলে হাসিনা আঁতকে উঠবে।
সে তার প্রথামত পোষা সেনাবাহিনী ছাত্রলীগকে বলবে শাহবাগ ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে রাজপথে মুভ করতে।
কারন রোডমার্চের যে বিপুল জনস্রোত ছিলো সেটা দেখে বহু জায়গায় পুলিশ হাল ছেড়ে দিয়েছিলো।
এটা কোনভাবেই পুলিশের পক্ষে সম্ভব না সামাল দেয়া।
আর শিবিরের হাতে মারধোর খাওয়ার পর স্থানীয় বা মেট্রোপলিটন পর্যায়ে পুলিশের ভেতরে যে কমবেশী কিছুটা ক্রাউড ফোবিয়া তৈরী হয়েছে সেটাও মিথ্যা নয়।
এরফলে ছাত্রলীগ তাদের "খেদমতগারী" মুখোশ খুলে আগের সেই বিশ্বজিৎ কিলিং ইন্সটিংক্টের খুনী চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসবে।
ছাত্রলীগের শাহবাগ মিশন অ্যাবোর্টেড।
তাতে শাহবাগ আন্দোলন এর কন্ট্রোলরুম অ-আওয়ামী , অ-বিএনপি দের হাতে যাবে।
নতুনদেরকে নির্দলীয় বলা না গেলেও তারা আন্দোলনটাকে ভেজালমুক্ত রাখতে পারবে তাদের দলীয় কোন কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট না থাকার কারনে।
এর ফলে শাহবাগ পরিস্থিতি এক্সিলারেটেড হবে।
এবং সেটা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে।
এখন শাহবাগে আওয়ামী রাজাকারদের নাম নেয়া যায়না।
কারন ছাত্রলীগ আছে।
তখন
ম- তে ম খা আলমগীর , তুই রাজাকার , তুই রাজাকার
আ-তে আশিকুর রহমান , তুই রাজাকার , তুই রাজাকার
ন - তে নুরুল ইসলাম , তুই রাজাকার , তুই রাজাকার
ক-তে কামরুল টাকলু , তুই রাজাকার , তুই রাজাকারের ভাই
ম-তে মোসলেহউদ্দিন , তুই রাজাকার , তুই রাজাকার
ব-তে বেয়াই মোশাররফ , তুই রাজাকার , তুই রাজাকার
শ- তে মুসা শমসের , তুই রাজাকার তুই রাজাকার
- এই শোর গুলো তোলা যাবে।
দুঃখজনক সত্যটা হলো শেখ সেলিমের বেয়াই মুসা শমসের বা নুলা মুসা ১৯৭১ এ ফেরোসিটির স্কেলে ফরিদপুর এলাকায় বাচ্চু রাজাকারের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলোনা।
তখন আওয়ামী লীগ ঠান্ডা পানি আর বিরিয়ানী খাওয়ায় কিনা সেটা সাধারন তরুনরা নিজ চোখেই দেখবে।
পুলিশের আদুরে আচরনও থাকে কিনা সেটাও তারা দেখবে।
অন্যদিকে ছাত্রলীগ বিরোধী দল ঠেকাতে আবার তাদের চাপাতি লীগ ব্র্যান্ডেই ফিরে যাবে।
লেট দা হোল সিনারিও বি ডিসপ্লেইড অন মিডিয়া।
গনমাধ্যমে পুরো দৃশ্যটা প্রদর্শিত হোক।
তখনই মানুষের মেমোরীতে হলমার্ক- ডেস্টিনি-পদ্মাসেতু-শেয়ার বাজার- বিশ্বজিৎ - সাগর রুনী- ইলিয়াস আলী-ফেলানি-টিপাইমুখ-তিস্তা-বর্ডারকিলিং সব কিছু ফিরে আসবে।
[২]
২য় সম্ভাব্যতা হচ্ছে ছাত্রলীগ শাহবাগেই থাকবে।
ছাত্রলীগ শাহবাগে থাকলে মাঠ খালি।
রাজপথ দখলে নিন তত্ত্বাবধায়কের দাবীতে।
ছাত্রলীগ যত বেশী সময় শাহবাগে থাকবে তত বেশী ইনিয়ে বিনিয়ে আন্দোলনকে ডাইলেটোরী করবে , ফলাফল লিংগার করাবে।
বিএনপি ফুল থ্রোটলে রাজপথে নামলে তারা শাহবাগের মাইক দিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক বক্তৃতা শুরু করবে এখন যেটা অনেক কষ্টে দমিয়ে রাখছে।
যেইসব সাধারন তরুনরা শাহবাগে জড় হয়েছে তারা দেখবে , বুঝবে - তাদের কেবলা বংগবন্ধু এভিনিউ এর দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে স্বস্বীকৃত ছাত্রলীগারা শাহবাগের কন্ট্রোলরুমে ঢুকে।
তারা এটা মানবেনা , ক্ষেপে যাবে।
সাথে সাথে ঠান্ডা পানি - বিরিয়ানি আর আদুরে মামা পুলিশের ভোলটাও পাল্টে যাবে।
লেট দ্যাম শাউট-
শ - তে শেখ হাসিনা, তুই ভন্ড , তুই ভন্ড।
[৩]
৩য় সম্ভাব্যতা হচ্ছে ছাত্রলীগ শাহবাগে এবং দেশের অন্য সব জায়গার আন্দোলন চত্ত্বর গুলোতে থাকবে।
আর যুবলীগ , স্বেচ্ছাসেবক লীগ এরা মাঠে থাকবে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে - ছাত্রলীগ / যুবলীগ/ স্বেচ্ছাসেবক লীগ এরা সবাই কুমিরের এক বাচ্চাই বার বার দেখায়।
একই পোলাপাইন , একই ক্রাউড - কোন দিন ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল করে , কোন দিন যুবলীগের ব্যানারে মিছিল করে , কোনদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে মিছিল করে।
কোন দিন ৬০০ জন কে ২০০-২০০-২০০ তে ভাগ করে ৩ ব্যানারেই মিছিল করে।
এবং ১০০ % ম্যাস নিয়েও ছাত্রলীগ মাঠে টিকতে পারবেনা যদি রোড মার্চের মত জনস্রোত তৈরী করা যায়।
কথায় বলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা।
কিন্তু তখন কাঁটা হাতে ধরতে হবেনা।
কাঁটা নিজেই এসে অন্য কাঁটাকে তুলবে।
সোজা অর্থে অ্যালিয়েন ভার্সাস প্রিডেটরের মত শিবির - ছাত্রলীগ তাদের সব ফিয়ার্স ইন্সটিংক্ট নিয়ে একে অন্যকে পেটাবে।
ফলাফল যেটা হবে - ছাত্রলীগ মার খাবে রাজপথে , মাইকে চেঁচাবে শাহবাগে।
অরাজনৈতিক আবেগ নিয়ে জড় হওয়া তরুনদের কাছে এদের রাজনৈতিক চেহারা লুকাতে পারবেনা।
শাহবাগের কন্ট্রোল রুম নির্দলীয়দের হাতে দেয়ার দাবী শক্ত হবে।
নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে।
বিএনপি সলিড বোন নিয়ে আক্রমনাত্নক হতে পারলে পুলিশ অনেক জায়গাতেই ছাড় দেবে।
কেবল কিশোরগন্জ্ঞী আর গোপালগন্জ্ঞী ব্যাটালিয়ন ছাড়া।
লক্ষ্যনীয়:
[১]
শাহবাগের সাধারন তরুনদের বিপক্ষে একটা টু শব্দও বলা যাবেনা।
বরন্চ্ঞ তাদের কে বলতে হবে "তোমরা ছাত্রলীগারদের হাত থেকে নিজেদের আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নাও "।
[২]
মিছিল - মহাসমাবেশ এমনভাবে অ্যারেন্জ্ঞ করতে হবে যাতে শাহবাগ এবং দেশের অন্য জায়গায় যেখানে যেভাবে মন্চ্ঞ / চত্ত্বর হইতেসে সেগুলো পারটার্বড না হয়।
[৩]
প্রতিটা মিছিলে ক্যামেরা রাখতে হবে। সম্ভব হলে একাধিক।
এদেশের মিডিয়ায় জন্ডিস রোগী ঢুকে গেছে প্রচুর।
এরা আসল ঘটনার ছবি তুলবে , কিন্তু ছাপাবেনা , সরকারের দালালী করবে।
মিছিল বের করার আগে যে কোন একজনকে পুরো ডেমোনেস্ট্রেশন গোপনে ভিডিও রেকর্ড করতে হবে।
দরকার হলে তাকে মিছিল থেকে একটু দুরে রাখতে হবে।
ভালো মানের ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে যাতে দুর থেকে জুম ইন করা যায়।
সব ধরনের ছাত্রলীগিয় গুন্ডামী - পুলিশী গুন্ডামীর মোশন এবং স্টিল ইমেজ ফেসবুকে ছেড়ে দিতে হবে।
এগুলো আন্তর্জাতিক ভাবে নোটিফাই করতে হবে।
[৪]
সম্প্রতি ট্রাইব্যুনাল বিরোধী প্রচারনা বন্ধ করার নামে এরা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কেলেংকারীগুলো প্রচার করছে এই রকম একটা প্রো বিএনপি ফেসবুক পেজকে বাংলাদেশ থেকে নন ভিজিবল করে দিয়েছে ফেসবুকে রিপোর্ট করে।
পেজটার একজন এডমিন আমাকে ইনবক্সে জানিয়েছেন এটা।
পেজটার নাম ভয়েস অফ ন্যাশনালিস্ট।
ইংরেজীতে লিখে টাইপ করলে যারা দেশের বাইরে আছেন তারা পাবেন।
এখনই এগুলোর বিরুদ্ধে না দাড়ালে সামনে এরা সরকারবিরোধী সবকিছুকে ট্রাইব্যুনাল বিরোধী অজুহাত দেখিয়ে বাকশালীপনার চুড়ান্ত করে ছাড়বে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে অফিসিয়াল প্যাডে কিংবা অফিসিয়াল ইমেইল থেকে ফেসবুককে নোটিফাই করতে হবে যে বিটিআরসি বাংলাদেশ সরকারের হয়ে ইরান / চীন সরকারের মতই রাষ্ট্রীয় মাস্তানী করছে অনলাইন গনমাধ্যমের উপর।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অতীত এবং বর্তমান রেকর্ড ২ টাই খারাপ।
তারা ২০১০'র মাঝামাঝিতে ফেসবুক এবং ইউটিউব ২ টাই ব্লক করেছিলো এবং ২য় বারের মত ইউটিউব বন্ধ করার কারনে গুগল এখন ইউটিউব রিওপেন করতে সাহায্য করছেনা এগুলো জানাতে হবে।
প্রয়োজনীয় পেপার ক্লিপিংস (ইংরেজী দৈনিক হলে ভালো হয় ) এবং টিভি নিউজ রিপোর্ট (ইংরেজী হলে ভালো হয়) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফেসবুক-ইউটিউব বন্ধ করার রিপোর্টগুলো অ্যাটাচ করতে হবে মেইলের সাথে।
ফেসবুককে বলতে হবে যে বিটি আর সি ২০১০ সাল থেকেই বিরোধী মত প্রকাশ দমনের জন্য সরকারের ইয়েসম্যান হিসাবে কাজ করছে।
বিটি আর সি'র ভবিষ্যত যেকোন নোটিফিকেশনে / রিপোর্টে ফেসবুক যেন সহজে রেসপন্স না করে।
গুগল যেভাবে এই বাপ বেটির নবাবীর চাকরদেরকে রাস্তা মাপিয়ে দিয়েছে , ফেসবুকও এদের অনলাইন গনমাধ্যমের উপর খবরদারীর এইসব অতীত রেকর্ড জানলে একই ট্রিটমেন্ট দিতে পারে।
সবমিলিয়ে শেখ হাসিনা এখানে একটা কাজই করতে পারেন , সেটা হলো মামলার মহামারী শুরু করা।
সেটা করলে আরো ভালো।
হাসিনার গত ৪ বছরের ডিক্টেটর চেহারা শেষ মুহুর্তে আরো ভালো ভাবে মানুষ দেখবে।
আর মামলা ভয় পেয়ে বসে থাকলে শেষ পর্যন্ত কিছুই হবেনা।
কোন নেতা এরেস্ট করার সাথে সাথে সবাই মিলে থানা ঘেরাও করতে হবে।
সব পুলিশ অফিসারের ছবি তুলে রাখতে হবে পরিচয় নোট করে।
উপরের পুরো অ্যানালাইসিসটাই একটা প্রজেকশন।
টেস্ট কেস হিসাবেও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন