মাহে রমজান দেশে দেশে-২ (আর্জেন্টিনা)

লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ০২ জুলাই, ২০১৪, ০৪:০১:৫৩ রাত

'রমজান আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধির মাস। আমরা এখানে এসেছি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে জোরালো করতে। আমাদের কম্যুনিটির সবাই যেন ভাল থাকে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে আমাদের ভাই-বোনদের মাঝে যেন আবার শান্তি ফিরে আসে এই দোয়া করি আমরা।' -এভাবেই বলছিলেন এক আর্জেন্টাইন মুসলিম নারী, বুয়েন্স আয়ার্সের ইসলামিক সেন্টারের সামনে।

আর্জেন্টিনার মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪-৫ লাখের কাছাকাছি। এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১.৫% প্রায়। আর্জেন্টিনায় মুসলমানদের আগমন অনেকটা ব্রাজিলের মতই। স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজ কলোনী ছিল যখন আর্জেন্টিনা, বহু পশ্চিম আফ্রিকান কালো মানুষদের ধরে আনা হতো দাস হিসেবে আর্জেন্টিনায় কাজের জন্য। এর মধ্যে আফ্রিকার মরক্কোর বহু বাসিন্দা ছিল, আর স্বভাবতই তারা ছিল মুসলিম। এরপর উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন সময় আরবদেশ লেবানন-সিরিয়ার অনেকেই অভিবাসনে পাড়ি জমান সাউথ আমেরিকার এই দেশটিতে। তাদের মধ্যে যেমন ছিল মুসলিম তেমন ছিল খৃষ্টান-ইহুদী আরব। এখনকার আর্জেন্টাইন মুসলিম সমাজের প্রায় সবার শরীরেই কোন না কোনভাবে আফ্রিকান বা আরব রক্ত আছে।

রমজানের ছোঁয়ায় নতুনভাবে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠেন আর্জেন্টাইন মুসলিমরা। রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে আছে বেশ কটি বড় বড় মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টার (CIRA)। আর্জেন্টিনার মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে দ্য ইসলামিক সেন্টার অফ আর্জেন্টিনা। এখানে মোটামুটি রমজানজুড়ে উৎসব চলে এবং শেষ হয় ঈদের দিন। ঈদে এখানে মেলা বসে একরকম, পুরো দেশের মুসলমানরা চেষ্টা করেন সর্ববৃহৎ এই আংগিনায় এক হতে বছরের একটা দিনে। এরপরই আছে কিছু মসজিদ কমপ্লেক্স যেমন আল আহমাদ মসজিদ, কিং ফাহাদ মসজিদ। এর মধ্যে কিং ফাহাদ মসজিদ ল্যাটিন আমেরিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। ১৯৯৫ সালে সৌদী এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টর উদ্যোগে নির্মাণ হয় এই মসজিদটি। অন্যদিকে আহমাদ মসজিদ এর সাথে যৌথ সম্পর্ক আছে মিশরের আল আযহার মসজিদের। রমজানে মোটামুটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে এসব মসজিদগুলোতে। নিয়মিত ইফতার-তারাবীর জন্য বুয়েন্স আর্য়ার্সের মুসলমানরা একত্রিত হোন এখানে। ঈদের দিনে ঈদের নামাজ শেষে কম্যুনিটি সমাবেশ হয় কখনও কখনও, সরকারের বড় পদের কেউ কেউ যোগ দেন সে উৎসবে। এছাড়া ইফতারেও মাঝে মাঝে আসেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। এবার আর্জেন্টাইন মুসলমানরা রোজা রাখছেন ৯ ঘন্টা।

১/১১'র বিপর্যয়ের পরে আর্জেন্টিনার মুসলমানরা কিছুটা আতঙ্কে থাকলেও সেরকম কোন সমস্যা তাদের হয়নি। এছঅড়া সরকার এবং আর্জেন্টিনার জনগণ মোটামুটি মুসলমানদের প্রতি সহনশীল এবং বন্ধুভাবাপন্ন। আশার দিক হচ্ছে গোটা দুনিয়ার মতই মসজিদগুলোতে ক্রমেই মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। এটা যেমন ইসলাম থেকে দূরে চলে যাওয়া মুসলমানদের নতুন করে আলোর পথে ফিরে আসার নজীর তেমনি অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে শান্তির পতাকাতলে আবদ্ধ হচ্ছেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।

ছবিঃ কিং ফাহাদ মসজিদ কমপ্লেক্স এন্ড ইসলামিক সেন্টার, বুয়েন্স আয়ার্স



তথ্যসূত্র:

http://en.wikipedia.org/wiki/Islam_in_Argentina

http://www.argentinaindependent.com/tag/buenos-aires-mosques/

https://www.youtube.com/watch?v=ElFKOvqhcRI

http://www.pedrobrieger.com.ar/english/e03.pdf

http://www.beautifulmosque.com/king-fahd-mosque-buenos-aires-argentina/

বিষয়: বিবিধ

২৬৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

240838
০২ জুলাই ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
egypt12 লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই জেনে খুবই ভালো লাগলো Love Struck Rose Happy
০৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৪:৫৭
188280
উমাইর চৌধুরী লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ Happy
240904
০২ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাল লাগল। আল্লাহতায়লা তাদেরকে বিরুপ পরিবেশে ইসলাম অনুসরন করার সুযোগ দিয়েছেন।
০৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৪:৫৭
188279
উমাইর চৌধুরী লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ আপনাকে Happy
242389
০৬ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:২৯
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
০৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৪:৫৭
188278
উমাইর চৌধুরী লিখেছেন : আমীন। জাঝাকুমুল্লাহখাইরান এবং ধন্যবাদ আপনাকেও Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File