পবিত্র কাবা ঘর ও রাসূল (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তিকারী এক খৃষ্টান সম্রাট এবং সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর প্রতিশোধ
লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ২২ জুন, ২০১৪, ০৭:১০:০১ সকাল
গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জন্মেছিলেন ইরাকের তিকরীতে, গোত্রে ছিলেন একজন কুর্দ।
তার মা বলেন, 'আমার পেটে যখন সালাহউদ্দিন একদিন স্বপ্নে দেখলাম আমার পেটে আল্লাহর একটা তরবারী বড় হচ্ছে।'
হ্যা, তিনি তরবারীর মতই কচুকাটা করেছিলেন ক্রুসেডারদেরকে।
মরু সিংহের মত ফ্রান্সের ফিলিপ, জার্মানির ফ্রেডরিখ কিংবা রিজন্যাল্ডদের মত খৃষ্টান সম্রাটদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছিলেন আরবের মরুভূমিতে।
তার গুরু ছিলেন নুরুদ্দিন জংগী। জংগী একদিন বসে বসে মসজিদের জন্য মিম্বর বানাচ্ছিলেন, একজন জিজ্ঞেস করলেন আপনি এ মিম্বর কি করবেন? তিনি বললেন, 'আমি এ মিম্বর বানাচ্ছি বায়তুল মুকাদ্দাসের জন্য'। শক্তিশালী খৃষ্টানদের দখলে থাকা মসজিদুল আকসা মুক্ত করার কথা শুনে অনেকেই ভাবতেন যে এ লোক দিবা স্বপ্ন দেখছে।
তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছিলেন তারই শাগরেদ সালাহউদ্দিন, তার পাশে সবসময় ছিলেন নুরুদ্দিন জংগী।
ক্রুসেডারদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল রিজন্যাল্ড। সিরিয়ান-আর্মেনিয়ান মুসলমানদের উপরে নিয়মিত সে লুটতরাজ আর নির্যাতন চালাত। মুসলমানদের হাতে বন্দী হয় সে এক লড়াই এ। দামেশকের জেলে আটক থাকে ১৫ বছর এবং নুরুদ্দিন জঙ্গির কাছে সে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করে যে জীবনে আর কখনও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেনা এবং মোটা অংকের জরিমানা গুণে সে ছাড়া পায়।
ছাড়া পেয়েই শুরু করে অপকর্ম, নিয়মিত মক্কাগামী কাফেলাতে লুট-হত্যা করা ছিল তার রুটিনওয়ার্ক। সে ক্রাক দূর্গ থেকে দম্ভভরে ঘোষনা করে আমি মক্কা দখল করব, কাবা ধ্বংস করে দিব ! (নাঊযুবিল্লাহ) এছাড়াও রাসূল সা. কে নিয়ে কটূক্তি এবং বাজে কথা বলেও সে কুখ্যাত হয়েছিল।
এ খবর শুনে সালাহউদ্দিন প্রতিজ্ঞা করলেন যে তিনি নিজ হাতে হত্যা করবেন রিজন্যাল্ডকে। অবশেষে হাতিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের মাজা ভেংগে দেয় মুসলমানরা, এ যুদ্ধে ফিলিস্তিনসংলগ্ন বিরাট এলাকা মুসলমানরা নিজেদের অধিকারে আনে। ক্রুসেডারদের বিরাট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মরু ঈগলের ক্ষীপ্রতা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন আইয়ুবী, বরাবরের মতই তার সেনাবাহিনী সংখ্যায় ছিল কম কিন্তু ঈমান আর কৌশলে পাহাড়ের মত অটল আর বাঘের মত ধূর্ত।
যুদ্ধের শেষ দিকে সালাহউদ্দিনের স্পেশাল কমান্ডোবাহিনী চলে যায় রিজন্যাল্ডের তাবু লক্ষ করে। যুদ্ধ প্রায় শেষ, সেনাপতিরা বলছেন আমরা বিজয় পেয়ে গেছি, কিন্তু সালাহউদ্দিন তখনও নিরব। বললেন এখনও না, অপেক্ষা করো। তিনি দূর থেকে যখন দেখলেন রিজন্যাল্ডের তাবু ভেংগে পড়ছে তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন কালের মহানায়ক। এ যুদ্ধে বহু বড় বড় খৃষ্টান রুই-কাতলা, নাইট-সম্রাট আর পোপ ধরা পড়ে মুসলমানদের জালে। ইউরোপ থেকে মদ-নারী আর টাকা হাতে উড়ে আসা ক্রুসেডাররা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে যায় মরু শার্দুলের ক্ষিপ্রতা যারা ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল সালাহউদ্দিন নামের এক মুসলমানের আজান শুনে।
রিজন্যাল্ডকে তার সামনে উপস্থিত করা হল, তিনি বললেন 'তুমি কেন বিশ্বাসঘাতকতা করেছ?'
রিজন্যাল্ড বলল, 'রাজাদের কাজই এটা'।
রিজন্যাল্ডের পাশেই বশে ছিল আরেক বন্দী খৃষ্টান সম্রাট দখলকৃত জেরুজালেমের রাজা গে অব লুজয়ান।
সালাহউদ্দিন বন্দীদেরকে কদর করতেন, যার যা সম্মান দিতেন যার যা প্রাপ্য তাকে সেটাই বুঝিয়ে দিতেন।
সম্রাট গে কে মুসলমানদের যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী বরফশীতল পানি দেয়া হল। এর মানে তাকে বড় কোন শাস্তি দয়া হবেনা। রিজন্যাল্ড তখন প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত। সেই রাজা নিজে পানি না খেয়ে রিজন্যাল্ডের দিকে আগিয়ে দিলেন। সালাহউদ্দিন এক ঝটকায় পানি কেড়ে নিয়ে বললেন, 'এ পানি তোমার জন্য তো দেয়া হয়নি !'
সালাহউদ্দিন বললেন, ''এ লোকটা তার স্পর্ধামূলক কথা, অঙ্গীকার ভংগ আর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি ভোগ করল, এর বেশী কিছুই না। তুমি যদি আমার নামে কোন বাজে কথা বলতে, আমি তোমাকে ছেড়ে দিতাম, কিন্তু তুমি আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় রাসুলকে (সঃ) নিয়ে কটুক্তি করেছ"। এরপর তাকে দুইটা অপশন দেয়া হয়েছিল। হয় তওবা করে মুসলিম হওয়া নতুবা কল্লা হারানো। দ্বিতীয়টাই বেছে নেয় সে। পবিত্র কাবা ঘর হামলা করতে চাওয়া এই পাপিষ্টর মাথা কিছুক্ষণের মধ্যেই গড়াগড়ি খেতে থাকে মাটিতে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন সালাহউদ্দিন যিনি তাকে তার প্রতিজ্ঞা পালনের ক্ষমতা দিয়েছেন। এরপর তার শেষ প্রতিজ্ঞা 'ফিলিস্তীনের' দিকে চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য মার্চ করলেন তিনি।
আল্লাহপাক তাকে সে প্রতিজ্ঞা পালনেরও তৌফিক দিয়েছিলেন। হাতিন যুদ্ধের কয়েক মাস পরেই মসজিদুল আকসাতে কৃতজ্ঞতার অশ্রু ফেলে মহান রবের দরবারে লুটিয়ে পড়েন দ্য গ্রেট সালাদিন।
সালাহউদ্দিন তার যুদ্ধের বেশীরভাগটাই করেছেন নিজ ভাইদের বিরুদ্ধে, গাদ্দারদের বিরুদ্ধে। আরব গাদ্দার মুসলমান আমীর-ওমরাদের সাথে লড়তে লড়তে তার তরবারী লাল হয়ে গেছিল, সেই তরবারীর দিকে তাকিয়ে তিনি অঝোরে কাঁদতেন।
সেসময়ের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি ব্যক্তি হাজার বছর পরেও বিদ্যমান। শুধু বিদ্যমান নাই সালাহউদ্দিন। গুস্তামগীন-আবু সালেহ এদের মত আমীররা আজও আরবের সিংহাসনে মদ আর নারীতে মত্ত। খৃষ্টানদের পাঠানো উপঢৌকণে আকুণ্ঠ ডুবে আছে তারা।
ইনশাআল্লাহ ইতিহাসের পূনারাবৃত্তির নিয়মে আবার সালাহউদ্দিন আসবে, নতুন কোন নামে কিন্তু একই লক্ষ্য আর ক্ষীপ্রতা নিয়ে। আমরা তারই অপেক্ষায়.....
বিষয়: বিবিধ
৩০৭৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এতে প্রমান হয় সেই খ্রীষ্টান সেনাপতি একজন সত্যিকারের বীর। বর্বর মুসলমান হওয়ার চেয়ে তিনি মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন। শাবাস।
মুসলমানরা তাদের পাপের শাস্তি হাড়ে হাড়ে পেয়েছে এবং পাছ্ছে। খ্রীষ্টানদের আবিস্কার- রেডিও, টিভি, নিউজ পেপার, কম্পিউটার, ইন্টানেট, ফেসবুক, টুওটার, ব্লগ..... সর্বত্র নবী মোহাম্মদের অনবরত বিয়ে ভিমরতি, শিশু ধর্ষন, দাসীধর্ষন, নারী নির্যাতন....... নিয়ে এখন হাসি তামাসা, ঠাট্টা, বিদ্রুপ চলছেই।
ইনশাআল্লাহ ইতিহাসের পূনারাবৃত্তির নিয়মে আবার সালাহউদ্দিন আসবে, নতুন কোন নামে কিন্তু একই লক্ষ্য আর ক্ষীপ্রতা নিয়ে। আমরা তারই অপেক্ষায়.....
মোনাজাত করেন আর আঙ্গুল চোষেন।
উৎস টা একটু জানাবেন?
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন