ইরানে মাতৃভাষার মর্যাদা
লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:২৯:৩৮ রাত
ইরানীদের ২১ শে ফেব্রুয়ারীর মত কিছু না থাকতে পারে কিন্তু ওরা আমাদের চেয়ে নিজ ভাষার মর্যাদা অনেক বেশী করে দিতে জানে । রীতিমত অহংকারী একটা জাতি, হবেইনা কেন ? যাদের ঝুড়িতে রুমী-হাফিজ-সাদী-খৈয়াম-ইবনে সীনা রা আছে যাদের ভাষা ফার্সিতে একসময় শাসন হয়েছে সেই ভারতবর্ষ থেকে বোখারা পর্যন্ত বিশাল রাজ্য।
ভাষার মর্যাদা কেমনে দিতে হয় আসেন দেখি
*ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টুডেন্টরা আসছে দল বেঁধে ইরানে পড়তে বিশেষ করে সায়েন্স-টেকনোলজি সেক্টরে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার জন্য ফার্সি মিডিয়ামে পড়ালেখা বাধ্যতামূলক । চীনারা এত কষ্ট করে ফার্সি শিখে যে দেখলে মায়া হয়। আমার পাশের ব্লকে এক চাইনিজ ১ বছর ট্রাই করে ৩ মাসের কোর্স পাশ করতে পেরেছে ! এরপরেও শিখতেই হবে এবং এরা শেখাবেই !
*ইরানী নাগরিকদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কোন ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে পড়া হারাম তবে বিদেশী নাগরিকদের বাচ্চাদের জন্য কিছু এম্বেসি পরিচালিত স্কুল আছে ইংলিশ মিডিয়ামে।
*সমস্ত ব্যাংক-অফিস-আদালতে প্রধান এবং একমাত্র ভাষা ফার্সি। ইংরেজী কিছু ক্ষেত্রে অপশনাল আছে যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব রাখে।
*ইরানের জাতীয় নেতারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ব্রিফ করেন নিজ ভাষায়। যার দরকার হয় সে নিজের ভাষাতে অনুবাদ করে নেই। এটা তোমার গরজ, আমার না !
*গাড়ির পেছনের নেমপ্লেটের নম্বর এমনকি আমাদেরকে যেসব বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কার্ড ঢুকিয়ে কাজ করতে হয় সেগুলোর নম্বরও ফার্সিতে ।
*এখানে অনেকেই ইংরেজি ভাল জানেন বাট মুখ দিয়ে ইংরেজী বের করা যায়না, মনে হয় উংরেজী বলাটা একটা লজ্জাকর ব্যাপার।
*মেডিকেল সাইন্স এবং প্রকৌশল সাইন্সের যেসব বিশ্ববমানের বই ইংলিশে সেসব বই এরা নিজের ভাষায় অনুবাদ করে নিয়েছে।
*সাহিত্য আর দর্শন একটা অনন্য স্থান দখল করে আছে এখানে। আমরা মেডিকেল সাইন্সের স্টুডেন্ট অখচ আমাদেরকেও ফার্সি সাহিত্য পড়তে হয়।
কোমের ধর্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দর্শন আর আধ্যাত্বিকতার চর্চা প্রতিটা ভবিষ্যৎ ধর্মীয় নেতার জন্য বাধ্যতামূলক। আধ্যাত্বিকতা ধর্মের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে।
*ইংরেজী সাল এর কোন খবর কেউ রাখেনা বলেই মনে হয়। সকল কাজ চলে পারসিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে। ইংরেজী নববর্ষে কোন কিছু আঁচ করতে পারিনি অথচ ফার্সি নববর্ষ নওরোজ উপলক্ষে প্রায় ১৪ দিন ছুটি ভোগ করে সবাই।
ইংরেজীতে পায়ের কাছে রেখেও যে একটা জাতি হুহু করে উন্নতি করতে পারে তার প্রকূষ্ট উদাহরণ ইরান । আর আমরা ২১ শে ফেব্রুয়ারীটা পালন করি তাও ইংরেজী সাল থেকে ধার করে, আফসোস !
শেষে একটা মজার কথা বলি ।
প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে উচ্চস্বরে দুরুদ পাঠ করে ব্রিটেন-আমেরিকা-ইজরাইলের ধ্বংস কামনা করা হয়।
এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে মাঠ গরম করা শ্লোগান ছিল ওইটাই ।
মার্গ বার ইংগিলিস!!
মার্গ বার অমরিকা!!
মার্গ বার ইজরায়েল !!
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন