আসুন চিনে নিই এ শতাব্দীর মুসলিম নেতাদের #শহীদশাইখআহমেদইয়াসিন পর্ব: ৩
লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০৯:২৩:০৮ রাত
মিশরে একটা জিনিশ তিনি স্পষ্ট বুঝে গেলেন, আরবদের সমস্যার সমাধান সম্ভব একমাত্র ইসলামী গণজাগরণেই। সেক্যুলার আরব শাসক আর আমেরিকা-ইজরাইলের চরিত্রে তিনি কোন ফারাক খুজে পেলেননা যখন দেখলেন পশ্চিমের অংগুলি নির্দেশে ইখওয়ানের উপর পাইকাড়ী হত্যা-গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে।
আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল তার এবং ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে তা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে ফিলিস্তীনী এই পংগু যুবকের জন্য। অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ডিপ্লোমা নিয়েই গাজায় ফিরলেন আহমেদ ইয়াসিন যা আগের পর্বে এসেছে। ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেন তারই আত্মীয় হালিমা ইয়াসিনকে ১৯৬০ সালে।
ততদিনে তার মন-মগজে ঢুকে গেছে মানুষকে সত্যের দিকে দাওয়াতের বিভিন্ন পন্থা।
গাজায় নিজ বাড়িতে ফিরে বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনে প্রচুর সময় ব্যায় করতে থাকলেন। রাজনীতি, ইতিহাস, দর্শন এবং ইসলামী ফিকহসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় স্বাধীন বিচরণ করতে থাকলেন। এদিকে ইখওয়ানের ফিলিস্তীন শাখার প্রোগ্রামেও নিয়মিত দেখা যেত তাকে। গাজার আল-আব্বাসী মসজিদে জুমুআর নামাজে নিয়মিত খুতবা দিতে শুরু করলেন তিনি। তার গভীর জ্ঞান এবং মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার হৃদয়গ্রাহী পন্থা মানুষকে আকৃষ্ট করতে শুরু করল। গাজার ওই মসজিদে তার বক্তব্য শুনতে প্রায়ই শখানেক যুবক ছেলেপুলে হাজির হতো, আর এরাই পরবর্তীতে হয়েছিল হামাসের নিউক্লিয়াস। পাশাপাশি তিনি একটা স্কুলে আরবি সাহিত্য এবং ইসলাম ধর্ম বিষয়ে শিক্ষকতা করতেন। স্কুলের ছেলে-মেয়েরা তার এ ক্লাসের সময় মুগ্ধ নয়নে কান খাড়া করে সব শুনতো, একজন পংগু মানুষ যে কিনা হুইল চেয়ারে ঘোরাফেরা করে সে কিভাবে এত জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে সে বিস্ময়ে হতবাক হতো অনেকেই। গাজার সে স্কুলের শত শত ছেলে মেয়ের কাছে প্রিয় শিক্ষকে পরিণত হলেন সদা হাসজ্জ্বল আহমেদ ইয়াসিন।
যুবকদের মধ্যে জ্ঞান এবং জিহাদের অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেবার জন্য অদ্ভূত অদ্ভূত কৌশল ব্যবহার করতে থাকলেন। মসজিদে ২ মিনিটের সমাবেশ বা অমুক এলাকায় ৩ মিনিটের বক্তব্য এ ধরনের পন্থাতে গাজার নতুন প্রজন্মের মগজে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করছিলেন তিনি। পাশাপাশি ফিলিস্তীনী শহীদ-বাস্তুহারা পরিবারগুলোর লিস্ট করে তাদের জন্য সাহায্য কালেকশন এবং বিতরনের মত বিরাট উদ্যোগও নেন তিনি।
১৯৬৭ তে আরব-ইজরাইল যুদ্ধের সময় গাজাসহ পুরো ফিলিস্তীন দখল করে ফেলে ইজরাইল। পঙ্গু শাইখ আহমেদ ইয়াসিনের নাম ছড়িয়ে গেছে গাজার আনাচে-কানাচে। ঘুমন্ত আরব সিংহদেরকে জাগানোর গান গেয়ে যাচ্ছেন তিনি, জাগরণ কিন্তু শুরুও হয়ে গেছে ততদিনে।
প্রতিরোধ-প্রতিশোধ এবং আল আকসার পুনরুদ্ধারের জন্য জ্বালাময়ী ভাষণ দিতেন নিয়মিত। দলে দলে যুবকেরা যোগ দিতে থাকল তার এসব সমাবেশে, তাদের বুকভর্তি আশা আর চোখভর্তি আগুন। সে আগুনে পুড়িয়ে দিতে চায় সন্ত্রাসী দখলদারদেরকে। চোখের সামনে নিজ প্রিয়জনকে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যার প্রতিশোধ নেবার একটা পথ বাৎলে দিবে কেউ তাদের এমনটাই তাদের চাওয়া। গোটা ফিলিস্তীন ঢুকে যাচ্ছে এক বিরাট অজগরের মুখে, তাকে রুখতে হবে। লড়তে হবে।
বীজ বোনা শেষ এবার ফসলের ক্ষেতে নামার পালা।
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে এরই মধ্যে। ১৯৮২
'মাজদ' এই সাংকেতিক নামে ছোট খাটো অপারেশন শুরু করল শাইখ আহমেদ ইয়াসিনের শিষ্যরা। এ সকল অপারেশনের আর্থিক এবং অস্ত্র সাহায্য আসত ইখওয়ানের জর্ডান শাখার বেশ কিছু নেতার মাধ্যমে। সফলতাও আসতে থাকলো 'মাজদ' এর ছোট ছোট কাজগুলোর দ্বারা। ইজরাইল এই প্রথম টের পেল কেউ একজন তাদের পেছনে লাশের স্তুপ থেকে উঠে দাড়িয়ে অস্ত্র তাক করেছে তাদের দিকে।
আরবদের ঘাড়ে সাপের মত উঠে বসা ভয়ংকর ইজরাইলের শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল ভবিষ্যতের বিপদের কথা চিন্তা করে।
মোসাদ সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করল এই গ্রুপের মাথা বের করার জন্য।
খুব অল্প কষ্টেই তারা গাজার বিখ্যাত আলেম এবং জনপ্রিয় নেতা শাইখ আহমেদ ইয়াসিনকে 'মাজদ' এর মূল হোতা হিসেবে বের চিহ্নিত করলো।
১৯৮৪ তে গ্রেপ্তার হলেন শাইখ আহমেদ ইয়াসিন।
ইজরাইলের পবিত্র ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার এবং উস্কানীর অভিযোগে তাকে ১৩ বছরের জেল দিল ইজরাইলের আদালত।
কিন্তু প্রায় এক বছরের মাথাতেই ছাড়া পেলেন তিনি, সে আরেক কাহিনী....
আরেক বিজয়....
চলবে বিজয় আল-আকসা মুক্ত করা পর্যন্ত....
হয় জয় নয় শহীদ....
আর এ বিজয়ের প্রতিশ্রুতি তো স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালার দেয়া...
(পরের পর্বে তার মুক্তির ঘটনা, হামাসের প্রতিষ্ঠা, আবার ইজরাইলি দখলদারদের হাতে তার বন্দিত্ব এবং আম্মানে হামাসের হাতে মোসাদের গুপ্তহত্যা মিশন ব্যর্থ হবার পর আবার তার মুক্তির ঘটনাসহ আরও .....)
পর্ব ১
পর্ব ২
তথ্যসূত্র: ইখওয়ানওয়েব
[url href="null" target="_blank"]
কাসসাম ব্রিগেড
উইকি
প্যালেস্টাইন হিস্টোরি
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৪৩০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন