আসুন চিনে নিই এ শতাব্দীর মুসলিম নেতাদের #শহীদশাইখআহমেদইয়াসিন পর্ব:২
লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ২১ মার্চ, ২০১৪, ০৬:৩৫:৫৭ সন্ধ্যা
পুরো ফিলিস্তিন জুড়েই তখন চলছে অনাহারী মজলুমের আর্তনাদ। ১৯৫২ তে মেরুদন্ডে আঘাত পাবার আগের দিন পর্যন্তও আহমেদ ইয়াসিন নামের এই কিশোর ছূটে বেড়াতো পরিবারের অন্য মুখগুলোর জন্য অন্নের সন্ধানে। একটা রেস্টুরেন্টেও কাজ জুটিয়ে নিয়েছিল সে। মাঝে মাঝে গাজা-মিশর সীমান্তেও ঘুরে বেড়াত সে। মিশরীয় সৈন্যদের ফেলে যাওয়া খাবার বা পোষাক যদি কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু অসুস্থ হয়ে যাবার পর সে জানল হুইল চেয়ার তার পরবর্তী জীবনের সংগী।
কিছুটা সুস্থ হলে স্কুলে যাওয়া শুরু হলো তবে হুইল চেয়ারে করে। ১৯৫৮ তে হাই স্কুল পাশ করে গেল হুইল চেয়ারে বসে সংগ্রামরত এ যুবক। পাশ করার পর একটা ছোট্ট চাকরীও যোগাড় করে ফেলল সে শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, একটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার কাজ।
মাত্র কদিন যেতে না যেতেই বই-পুস্তক তাকে আবার টানতে লাগল। হাই স্কুল পেরুনো এ যুবকের মনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ক্যাম্পাস ভাসছে ।
১৯৫৯ তিনি চলে গেলেন মিশরে। আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করলেন। অনেক কিছু শিখলেন এখানে। সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা ঘটলো তার মগজে ইমাম হাসান আল বান্নার থিওরি ঢুকে গেল। পরিচিত হলেন ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সাথে। মিশলেন তাদের সাথে, তার হৃদয়জুড়ে যে কষ্টের হাহাকার আর চোখজুড়ে যে আগুন জ্বলছিল তা প্রশমিত হবার পথ পেল। তখন হাজার হাজার পথ হারা যুবক অশান্তির আগুন থেকে বাঁচতে দলে দলে যোগ দিচ্ছিল ১৯২৮ সালে হাসান আর বান্নার প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনে। মিশরের জালেম শাসক দিশেহারা ইখওয়ানের চিন্তায়।
এরই মধ্যে কলেজ ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট পেয়ে গেলেন। কিন্তু মিশরে কথন চলছে আরেক ফেরাউনের শাসন। সে ফেরাউনের নাম জামাল আব্দুন নাসের। মিশর কর্তৃপক্ষ বহুদিন ধরেই নজর রাখছিল বেশ কিছু ফিলিস্তিনী ছাত্রের উপরে। ইখওয়ানের উপরে ক্রমাগত ক্র্যাকডাউনের অংশ হিসেবেই গ্রেপ্তার হলেন আহমেদ ইয়াসিন। অভিযোগ আনা হলো তিনি মিশরের সরকার বিরোধী কার্যকালাপে জড়িত। জেল খাটলেন অল্প কদিন। কোর্টে তার উকিলের কঠিন যুক্তির মুখে ছাড়া পেলেন। জীবনের প্রথম জেল জীবনেই অনিয়ম-অনাচার আর অবিচারের প্রতি ঘৃণার সবচেয়ে বড় বীজ বপন করলেন তিনি। এভাবে চলতে দেয়া যায়না। আল্লাহর জমিনে মুসলমানরা কাফের-মুনাফিক উভয়ের হাতে অবিচার-জুলুমের শিকার হবে, এটা চেয়ে চেয়ে দেখার কোন রাস্তা নাই। নামতে হবে প্রতিরোধে । এ জুলুমের শেকড় উপড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
হুইল চেয়ারে করে আবার রওনা হলেন প্রিয় জন্মভূমির দিকে । এবার আর ছন্নছাড়া কাজ না, গোছানো কাজে হাত দিতে হবে। মাথারভর্তি বহু চিন্তা, প্ল্যান। কোন কোন সূত্রে জানা যায়, মিশর থেকেই তাকে গাজায় মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিন শাখার স্থানীয় কোন দায়িত্ব দেয়া হয় এবং সে দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি ফিরে আসেন গাজায়।
চলবে... (প্রতি জুমুআবার একটা করে পর্ব লেখার ইচ্ছা ইনশাআল্লাহ)
পর্ব: ১
তথ্যসূত্র: ইখওয়ানওয়েব, কাসসামব্রিগেডসাইট, হামাসসাইট, ইলেক্ট্রনিক ইন্তিফাদা, উইকি,
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৪৪৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন