আমার ইরানী জীবন, চলছে যেমন (পর্ব-৫)
লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ১৫ মে, ২০১৩, ০৭:৫৫:৪৫ সন্ধ্যা
গতদিন রাত ১২ টা থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত আমার রুমে আন্ত:মাযহাব সম্মেলন বসেছিল। হানাফী,মালেকী,শাফেয়ী,যায়েদী,সালাফী,শিয়া,সুন্নী সব। তবে সালাফী/ওহাবী পরিচয় দেয়াটা ইরানে সুবিধাজনক না । তাই সালাফীরা/আহলে হাদিস/ওহাবীরা এখানে হানাফী হয়ে যায় আপাতত ।
বুঝলাম যে মুসলমানরা নিজেদেরকেই চিনতে পারেনি আজতক। নিজ মাযহাবের বাইরে অন্য মাযহাব সম্পর্কে জানা তো দুরে থাক তাদেরকে মুসলমানই বলতে চাইনা অনেকে। আমিসহ আমার বাপ-চাচা-মামারা গুষ্টিসহ আহলে হাদিস। হানাফী মসজিদে নামাজ হবেনা এমন ফতোয়াও অনেকে দেন। হাত বাঁধার নিয়ম নিয়ে বাহাস-মারামারি হয়।আহলে হাদিস এর লোকেরা উগ্রতা দেখায় বেশী,বোখারীর হাদিস নিয়ে মাস্তানী করেন তারা। অনেকটা জিরো টলারেন্সে চলেন এই লা-মাযহাবের লোকজন। এখানে এসে আমি বুঝেছি একজন মুসলমানের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত। এখন বুকে, নাভীর নিচে হাত বাধা তো দুরের কথা হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে দেখলেও মোটেও অবাক হয়না। সেও মুসলিম, সেও কাবার দিকে মুখ করে সিজদা করে,সেও নামাজের ফরজগুলা আমার মতই মেনে চলে। তার সাথে আমার বিশ্বাসের মৌলিকত্বে মিল আছে পুরোটাই। ইবাদতে দুই-একটা নিয়মে থাকনা ফারাক। তাকে তো আমি মুরতাদ/ফাসেক/কাফের বলার স্পর্ধা দেখাতে পারিনা !
শিয়ারা সারা পৃথিবীতে নির্যাতিত। পাকিস্তানে শিয়া মারলেই সওয়াব পাওয়া যায়। মার্কিন মদদপুষ্ট কিছু গ্রুপ শিয়া-সুন্নি বিভেদ উস্কে দিতে এই ফতোয়া বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে যে শিয়া পাইলেই শেষ করে দিবা, ওরা কাফির। ইভেন নিজেদের লামাযহাবী বলে সুন্নীদের অন্য ৪ মাযহাবকেও তারা স্বীকৃতি দিতে চাইনা। শিয়ারা কি বলে জানেন, বলে, আমরাও তো খানায়ে কা'বা তাওয়াফ করতে মক্কায় যায়, নবী করিম (সা.) রওজা জিয়ারত করি মদিনায় যেয়ে, তোমরা পারলে সেখানে আমাদেরকে হত্যা করো কিন্তু পারবেনা । লক্ষ লক্ষ মুসলিম হজ্ব এর সময় মাযহাব ভুলে এক কাতারে নামাজ পড়ে, কাবার গিলাফ ধরে দোয়া করার সময় সেখানে লেখা থাকেনা যে এখানে শিয়া/হানাফী নিষিদ্ধ ! অদ্ভূত সে দৃশ্য।
আমরা পুরো পৃথিবীর মুসলমানরা যদি এমন করে থাকতে পারতাম ! আহ !
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন