আমার ইরানী জীবন, চলছে যেমন (পর্ব-৪)

লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৫৯:১৩ রাত

ঘটনা-১:

একদিন দুপুরে খেয়ে ক্যাম্পাস থেকে ফিরতে দেখি মেইন গেটের বাহিরে পুলিশের একটা পেট্রোল কার দাড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে অলি-গলি তে পুলিশ আর পুলিশ দেখে এবং লড়ে অভ্যস্ত তাই এখানে এসে পুলিশ খুজি সবসময় কিন্তু এরা কালেভদ্রে দেখা দেয়। আর ক্যাম্পসে পুলিশ থাকবে এটা তো অকল্পনীয় অনেকটা তাই আমি খুব আশ্চর্য হলাম। ক্যাম্পাসে পুলিশের কি কাজ থাকতে পারে, এখানে তো ছাত্রলীগ নাই আর কোন কাজ থাকলে গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকলেই তো পারে। কৌতুহলবশত কিছুক্ষণ আমিও একটু দুরে যেয়ে দাড়িয়ে থাকলাম দেখার জন্য যে ঘটনা কি আসলে। প্রায় ৪-৫ মিনিটের মাথায় আমার অপেক্ষাকে প্রলম্বিত না করতেই মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে আসল একসাথে কয়েকটা গাড়ি। আর তাদের সামনে সেই পেট্রোল কারটি চলতে শুরু করল। এগিয়ে যেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটিকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে কাহিনী কি । জবাবে বলল যে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটা টিম এসেছিল কিছু বিদেশী ডেলিগেট নিয়ে । তো পুলিশ বাইরে কেন? সে অবাক হয়েই বলল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কি চোর-ডাকাত থাকে যে পুলিশ ঢুকবে !

ঘটনা-২:

আরেকদিন ঠিক একই সময়ে খেয়ে ফিরছি ডরমেটরীতে। মূল ক্যাম্পাস থেকে আমাদের ডরমেটরী এরিয়া বিচ্ছিন্ন এবং ১০ মিনিট হাটা পথ। ডরমেটরীর গেটে পৌছে দেখি একটা বড়সড় জটলা এবং একটা পুলিশ পেট্রোল কার প্যাপু করে উড়ে আসল প্রায় । তো কিছুক্ষণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আর কয়েকজনের কাছে শুনে জানতে পারলাম যে কিছুক্ষণ আগে এক ফিলিস্তিনী পাশেই বাহিরের এক দোকানদারের সাথে কি একটা বিষয়ে ঝামেলা করে এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। সাথে সাথে খবর চলে যায় পুলিশের কাছে। পুলিশ আসার আগেই সে ব্যাচারা ডরমেটরী এরিয়াতে ঢুকে যায়। এখন পুলিশ গেটে এসেই আটকে যায়। পুলিশের টার্গেট ছিল সম্ভবত সেই ছেলেকে এবং দোকানদার দুটোকেই ধরে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু বাধ সাধে বিশ্ববিদ্যালয় সিকিউরিটি । তারা কোনভাবেই মেইনগেট দিয়ে পুলিশকে ঢুকতেই দিলনা। অবশেষে সিকিউরিটি সেই ছেলেকে আর ফিলিস্তিনী কিছু বড়ভাইকে ডেকে নিয়ে যায় গেটে। আর গেটের ওপারে আছে পুলিশ আর সেই দোকান এর মালিক-কর্মচারীরা। সে এক মজার দৃশ্য । ব্যারিকেডের দুই পারে দাড়িয়ে কিছু বাক-বিতন্ডা হলো পুলিশের এবং ফিলিস্তিনী ছাত্রদের মধ্যে। সিকিউরিটির সাথেও পুলিশের তর্ক-বিতর্ক হলো। বাট তাদের একটাই কথা। এর নিরপেক্ষ তদন্ত করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং এতে যদি দোষ পায় সে ছাত্রের তখন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ই নিবে এখানে পুলিশ এর কিছু করার থাকলে তখন দেখা যাবে। যেহেতু খুব ভয়াবহ কিছু হয়ে যায়নি তাই নগদে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকার এবং তাকে ধরে নিয়ে যাবার কোন অধিকার রাখেনা।

কিছুক্ষণ পরে অবশ্য মিমাংসা হয়ে যায় ফিলিস্তিনী সিনিয়র ভাইদের এবং বাসিজ নেতাদের হস্তক্ষেপে।

বুঝিলাম ইহারা অন্যজাতের মানুষ !

মানুষ তৈরীর কারখানায় অমানুষ খুঁজিয়া বেড়ানো পুলিশ ঢুকিবে এরকম ব্যাপারখানি ইহারা ঠিক বরদাশত করেনা হয়ত !

বিষয়: বিবিধ

১৭১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File