সেই স্বপ্নই দেখে যায় প্রতিদিন....

লিখেছেন লিখেছেন উমাইর চৌধুরী ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৫৫:৪৭ রাত

সেদিন তেহরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সাইন্সেস এর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ডরমেটরীতে গেলাম Shahid Khan এবং Omar Faruque ভাই এর সাথে দেখা করতে। সাথে ছিল Kamruzzaman Nabil ভাই। সন্ধ্যায় আসার সময় মেইন গেটে বের হতেই দেখি শহিদ ভাইদের এক নাইজেরিয়ান রুমমেটসহ বেশ কয়েকজন নাইজেরিয়ান ব্যাপক খোশগল্প করছে। পাশেই একটা সাদা রং এর গাড়ি। আমি এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলাম এবং কুশল জিজ্ঞাসা করলাম। গাড়িতে হেলান দিয়ে থাকা লোকটা সবার আগে সজোরে সালামের জবাব দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমিও হাসিমুখে পরিচয় দিলাম । কিছুক্ষণ পর বিদায় নিয়ে আসার সময় শহিদ ভাই বললেন যে ঐ লোক নাইজেরিয়ান দূতাবাসের একজন ডিপ্লোম্যাট। মাঝে মাঝেই নাইজেরিয়ানদের সাথে সময় কাটাতে দূতাবাসের গাড়িতেই চলে আসেন।

আমি তখন ভাবছিলাম যে কোখায় নাইজেরিয়া আর কোথায় বাংলাদেশ ! বাংলাদেশ দূতাবাসের একটা ডিপ্লোম্যাট বা কর্মকর্তা তো দূরে থাক একটা কর্মচারীও আমাদের সাথে আড্ডা দিবে এটা কল্পনাও করিনা কখনও।

বাংলাদেশ দূতাবাসে এ পর্যন্ত কোনদিন তো যায়নি বরং দোয়া করি যে কোনসময় যেন যাওয়াও না লাগে !

দেশে আমরা যেমন থানা জিনিসটাতে বিপদে না পড়লে যেতে চাইনা কখনও তেমনি প্রবাসীরা বাধ্য না হলে দূতাবাসে যেতে চাননা !

বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন-দূতাবাস-কাস্টমস এসব জিনিস হয়রানী করার চমৎকার সব জায়গা।

শাহজালাল এয়ারপোর্টে আমাকে যেভাবে হয়রানী আর জেরা করে ফ্লাইটের মাত্র ১৫ মিনিট আগে ছেড়েছিল সে ইতিহাস কোনদিন ভুলবনা। সেদিন সম্ভবত আমিই ছিলাম সর্বশেষ ব্যক্তি । বহু ক্যাচাল প্যাচাল এবং আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় কাস্টমস এর সহ-কমিশনারকে মধ্যরাতে জাগিয়ে তুলে তাকে দিয়ে সুপারিশের পর আলহামদুলিল্লাহ ছাড়া পেয়েছিলাম।

কোন কারণ ছাড়াই পুরো উদ্ভট আচারণ করে জাস্ট খালি ইরানের ভিসা দেখে আমকে আটকে দিয়েছিল । শহিদ ভাই এবং ফারুক ভাইও সেদিন ছিলেন একই ফ্লাইটে। তাদেরকেও প্রচন্ড হয়রানি করেছিল শুধু ইরানের ভিসা থাকার কারণে। তার উপরে শহীদ ভাই হচ্ছেন হুজুর মানুষ তাকে তো ছাড়বেইনা এমন একটা ভাব।বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন এ সম্ভবত দেশের সবচেয়ে কুখ্যাত পুলিশদেরকে নিযুক্ত করা হয় এবং মধ্যরাতে কারও ফ্লাইট থাকলে দেখবেন সে সময় এরা কতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

অত্যাধুনিক স্ক্যানার আছে কিনা জানিনা তবে কাস্টমস অযথায় আমার হ্যান্ডব্যাগে টর্নেডো তুলে দিয়েছিল এবং জুতা পর্যন্ত খুলতে বাধ্য করেছিল। আমি তথন চরম বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গেছি ওদের হাবভাবে মনে হচ্ছিল প্যান্ট শার্টও মনে হয় খুলে চেক করা লাগে !

অথচ তেহরানে নেমে মাত্র ৫-৭ মিনিটে সব শেষ করে সালাম দিয়ে 'ওয়েলকাম টু ইসলামিক রিপাবলিক অভ ইরান' বলে একটা গোলাপ ধরিয়ে দিয়েছিল হাতে ।

এসব কথা চিন্তা কেরে কষ্ট আর লজ্জায় কুকড়ে যায়। এ কি জাতি আমরা ! এক রাশিয়ান মহিলাকে চরম হয়রানি করার একটা কাহিনী কোন এক ব্লগে পড়েছিলাম। সে ব্যাচারী ছাড়া পেয়েছিল কয়েকশ ডলার দিয়ে এবং ঢাকার মাটিতে পা দিয়ে সে বলেছিল, যে দেশে ঢুকতেই এরকম অবস্থা হয় সেখান থেকে বেরোতে তো জামা-কাপড় দিয়ে দেওয়া লাগতে পারে !

এর পরিবর্তন সম্ভব সেদিনই যেদিন শাহজালাল রহ. এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনে ঢুকার সময় বলবে 'ওয়েলকাম টু ইসলামিক রিপাবলিক অভ বাংলাদেশ' ! সেই দিনের স্বপ্ন দেখে যায় প্রতিদিন....

বিষয়: বিবিধ

১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File