ইসলামী ব্যাংকে হাত দেবে না সরকার ব্যাংক কম্পানি আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
লিখেছেন লিখেছেন মেঘাচছন্ন আকাশ ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০২:৪৫:৫২ দুপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে হস্তক্ষেপ করবে না সরকার। ব্যাংকটিকে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে। তবে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ইসলামী ব্যাংকের মতো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে সরকার। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'ব্যাংক কম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৩' নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার সময় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'ব্যাংক কম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৩' সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বৈঠক সূত্রে জানায়, এ সময় কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। এ অবস্থায় একজন সিনিয়র মন্ত্রী ইসলামী ব্যাংক যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে, তা রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের জন্য নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন। সব ব্যাংকের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলেই সুষ্ঠু ব্যাংকিং খাত গড়ে উঠব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকে ২০ জন পরিচালক রয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্যও প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনে সমানসংখ্যক পরিচালকের বিধান রাখা হচ্ছে।
সংশোধনীতে ব্যাংক কম্পানি আইনের খসড়া অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসহ সব বেসরকারি বাণিজ্যিক বাংকের পরিচালনা পর্ষদে একজন পরিচালক (তিন বছর মেয়াদে) টানা দুই বারের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে দুইবারের পর তাঁকে আবশ্যিক অবসর নিতে হবে। তবে এ সময় তিনি অন্য ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন। পরিচালনা পরিষদে এক-তৃতীয়াশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবেন। এক পরিবার থেকে একজনের বেশি এক ব্যাংকে পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে একই পরিবারের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকে পরিচালক থাকতে কোনো বাধা নেই। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগে একটি ব্যাংক তার দায়ের ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারত না। সংশোধনীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব হচ্ছে, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। মূলধন বলতে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ মুদ্রার মজুদ ও খুচরা আয়কে (রিটেইল আর্নিং) বোঝায়। বর্তমানে যে ব্যাংকের বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের বেশি রয়েছে, আইন পাস হলে তাদের বিনিয়োগ এই সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
আগে কোনো ব্যাংকের পরিচালক, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অপসারণের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছিল না। সংশোধনীতে এ ক্ষমতা রাখার প্রস্তাব করা হলেও শেষ পর্যন্ত কেবল এমডিকে অপসারণের ক্ষমতা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া আগে কেবল এমডির নিয়োগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন নিতে হতো। কিন্তু সংশোধনীতে এমডির অধস্তন আরো দুজন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ ছাড়া গ্রাহক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়েও সংশোধনী হতে যাচ্ছে ব্যাংক কম্পানি আইনে। এতে গ্রাহকদের দাবিহীন আমানতের মেয়াদ আগে ছিল ১০ বছর। এটাকে বাড়িয়ে ১৫ বছর করার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তা ছাড়া হিসাব খোলা বা স্থায়ী আমনত রাখার ক্ষেত্রে আগে যেখানে একজনের বেশি নমিনি থাকত না, এখন সেখানে একাধিক নমিনি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংক কম্পানি আইনের সংশোধনীতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকিং করার বিধান না রাখার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে প্রচলিত ধারার ব্যাংক ইসলামী উইং পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে তাকে পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরিত হতে হবে।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, 'আগে কেবল ব্যাংক কর্মকর্তাকেই শাস্তির আওতায় আনা হতো। আইন সংশোধন হলে এখন কোনো অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেও শাস্তির আওতায় আনা যাবে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যাংককে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রাখা হচ্ছে।'
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন