‘জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের সম্পর্ক নেই’

লিখেছেন লিখেছেন মেঘাচছন্ন আকাশ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২৬:৪৫ দুপুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শাহবাগের তরুণরা যদি ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে ভালোভাবে জানত তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানটি বুক দিয়ে আগলে রাখত বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।

বুধবার ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “শাহবাগে তরুণরা শক্তিশালী ভয়েসে কথা বলছে। অন্য একটি ইস্যুর সঙ্গে ইসলামী ব্যাংককে ব্র্যাকেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা দু:খজনক।”

“বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকের যে ভূমিকার রয়েছে তরুণরা যদি জানত আমার বিশ্বাস তারা একে বুক দিয়ে আগলে রাখত।”

তিনি বলেন, “বাইরে বিষয়গুলি তারা তাদের মতো করে করতে পারেন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থেই এসবের মধ্যে ইসলামী ব্যাংককে না টানা উচিৎ।”

ব্যাংকটি দেশের অন্যতম বেসরকারি ব্যাংক। রেমিট্যান্স, আমদানি ও রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জাতীয় অর্থনীতি ও জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ব্যাংকটির শুরুতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭০ শতাংশ। বর্তমানে বিদেশি শেয়ার রয়েছে ৬৩ শতাংশ। ব্যাংকটি ক্ষতি হলে বিদেশি বিনিয়োগেও প্রভাব পড়তে পারে।

এতে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক, কুয়েতের তিনটি মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ব্যাংকটির যে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলা হয় তা কল্পনাপ্রসূত। যারা বলেন তারা না জেনেই বলেন। ইসলামী ব্যাংক কোনো দল বা মতের ব্যাংক নয়।”

তিনি বলেন, “এতে জামায়াতের কোনো নেতার একক সর্বোচ্চ শেয়ার নেই। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য নুরে আলম সিদ্দিকী হচ্ছেন দেশীয় সর্বোচ্চ একক শেয়ারের মালিক। তার শেয়ারের পরিমাণ ২ শতাংশ।”

আর দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক সর্বোচ্চ শেয়ার রয়েছে চট্টগ্রামের বাইতুস শরফ ফাউন্ডেশনের। ব্যাংকটি মৌলবাদের অর্থনীতি বা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না, বরং নিন্দা করে বলেও দাবি করেন অন্যতম এই কর্ণধার।

ইসলামী ব্যাংক জঙ্গি অর্থায়নকে ঘৃণা করে। ইসলামের নামে যারা জঙ্গিবাদ করছে তারা ইসলামের ক্ষতি করছে। তারা হারাম কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।

জঙ্গিবাদ ইসলামের মৌলিক বিষয়ের পরিপন্থী। তাই জেনে শুনে কোনো অবস্থাতেই সহায়তা সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

বাংলা ভাই ধরা পড়ার সময় সেখান থেকে ইসলামী ব্যাংকের চেক বই উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে তিলকে তাল করা হয়েছে। বিষয়টি কোন অর্থায়ন ছিল না। তাদের শাখার মাধ্যমে টাকা টিটি করা হয়।

তিনি বলেন, তাদের সিলেটের লালদিঘীপাড় শাখায় জনৈক সাইদুর রহমানের একটি পুরাতন একাউন্টে সাভারের জয়দেবপুর শাখা থেকে পৃথক ৮টি টিটির মাধ্যমে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়।

আত্মসমালোচনা করে বলেন, “আমাদের হয়ত আরও সাবধানী হওয়া উচিত ছিল। তার মানে এই নয় যে আমরা অর্থায়ন করেছি। আমরা ছিলাম বাহক মাত্র।”

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক ব্যাংকিং নীতিমালার বাইরে কোন বিনিয়োগ করে না। এখানে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে বিনিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে কোন দল-মত বা গোষ্ঠীকে বিশেষ ‍সুবিধা প্রদান বা কাউকে বঞ্চিত করা হয় না।”

তিনি বলেন, “আশ্চর্যজনক মনে হলেও সত্য ব্যাংকটির প্রথম ঋণগ্রহীতা ছিলেন অমুসলিম। বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, নোমান গ্রুপ, আবুল খায়েরসহ বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠীর প্রায় সবগুলোতেই তাদের বিনিয়োগ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা সব সময় উন্নয়ন ও কল্যাণ খাতে বিনিয়োগ করে থাকি। আমরা তামাক খাতে কোন বিনিয়োগ করিনি।”

তিনি নাম উল্লেখ না করার শর্তে জানান, “দেশের একটি বৃহৎ সিগারেট উৎপাদক কোম্পানি তাদের মতিঝিল শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি।”

ব্যাংকটির কর্ণধার দাবি করেন, “আমরা টাকার বেচা-কেনার পরিবর্তে মালের বেচা-কেনা করি। যে কারণে বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের বিশেষ কর্মসূচি রয়েছে। এ খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। যার মাধ্যমে ৬ লাখ বিনিয়োগকারী সুবিধা ভোগ করছেন।

ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। বিষয়টি অনেকে সন্দেহের চোখে দেখে থাকে। এ প্রসঙ্গে আবদুল মান্নান বলেন, “আসলে আমাদের পরিশ্রমের কারণে এ অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছি।”

তিনি জানান, ১৯৯৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যে যান রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার জন্য। সেখানে তিনি পাঁচ বছর অবস্থান করেন। সে সময়ে প্রবাসীদের প্রতিটি কমিউনিটিতে বৈঠক করেন।

ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোগের কারণে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে বাদ দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো শুরু করেন। সরকারও এর আগে রেমিট্যান্সকে গুরুত্ব দেয়নি। গত বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে ব্যাংকটির মাধ্যমে।

শাহবাগের আন্দোলনের কারণে ইসলামী ব্যাংক কোন সংকটে সৃষ্টি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই ব্যাংকার বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। ব্যাংকটির এটিএম বুথে হামলার ঘটনাকেও বিছিন্ন ঘটনা বলে দেখছেন তারা।

তবে কোথাও উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তার কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একটি অনলাইনে নিউজ পোর্টালে তাদের আমানত তোলার হিড়িক পড়েছে বলে যে নিউজ করেছে তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং নিয়মে সব সময়েই নতুন আমানত আসবে। পুরাতন আমানত তুলে নেবে এটাই নিয়ম। যাদের স্থায়ী আমানতের মেয়াদ শেষ হয়েছে তারা ভাঙবেন এটাই নিয়ম। আর তেমনই ঘটেছে।

২০১২ সালে ব্যাংকটিতে ১৯ লাখ নতুন হিসেব খোলা হয়েছে। একই বছরে মাত্র তিন লাখ হিসেব বন্ধ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের কাছে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মডেলে পরিণত হয়েছে। নাইজেরিয়ার জায়েজ ব্যাংক, শ্রীলংকার সিলন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আগে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

ব্যাংকটি সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে বেস্ট ওয়ান ব্যাংক পদক পেয়েছে। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যাংকিং ও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে পদক পেয়েছে।

ব্যাংকটিতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে ৫ শতাধিক নারী অফিসার রয়েছে। অমুসলিম কোনো স্টাফ নেই। তবে আগামীতে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নিট প্রফিট থেকে সাড়ে ৪২ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। তারপর সব আইন মেনে বিদেশি শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফা নিয়ে থাকেন।”

আরো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সন্ধান করছি। সে অবস্থায় এই বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই বলেও জানান তিনি।

http://banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=de7841abc5af8fb48bc6e5bdd655ca27&nttl=20130222073424176225

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File