১৫ মিনিটের টর্নেডোতে নিহত ১০, লণ্ডভণ্ড ১৫ গ্রাম
লিখেছেন লিখেছেন এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০৭:৫৩ রাত
মাসুক হৃদয়, জেলা প্রতিনিধি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর ও বিজয়নগর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ১৫ মিনিটের টর্নেডোতে ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী-শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে কয়েকশ মানুষ।
শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় আঘাত হানা ভয়াবহ টর্নেডোতে বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালা উপড়ে গেছে।
নিহতদের মধ্যে জেলা সদর হাসপাতালে পাঁচজন ও আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
সদর উপজেলার রামরাইল, সুলতানপুর, মাছিহাতা ও বাসুদেব ইউনিয়ন ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামে ১৫ মিনিটের ভয়াবহ টর্নেডোতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চার নারী, শিশু রয়েছে।
টর্নেডোতে গ্রামগুলোর কয়েক শতাধিক কাঁচা বাড়িঘর ও বোরো ফসলি জমির ধান ব্যাপক নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে সদর উপজেলার উড়শিউড়ায় জেলা কারাগারের পূর্ব পাশের দেয়ালও ধ্বসে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিভিন্ন স্থানে বৃহৎ আকারের শিলাসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সদর উপজেলার রামরাইল, সুলতানপুর, মাছিহাতা ও বাসুদেব ইউনিয়নের রামরাইল, সোহাতা, মোহাম্মদপুর, উড়শীউড়া, পাতিরহাতা, চান্দপুর, চিনাইর, চাপুইর, পাইকপাড়া, বাসুদেব, ভাতশালা, জারুলতলা, খেয়াই ও বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ও পত্তনসহ ১৫টি গ্রামের উপর দিয়ে আকস্মিক ভয়াবহ টর্নেডো আঘাত হানে।
এছাড়া কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহনের ওপর গাছ উপড়ে পড়লে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। এছাড়া কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে যাত্রীরা গুরুতর আহত হয়।
নিহতদের রয়েছেন সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের উরশিউড়া গ্রামের ডলী রানী দে (৩০), পাতিরহাতা গ্রামের লাভলী বেগম (৩০), সুমা আক্তার ( ) ও জয়নাল মিয়া। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
জানা গেছে, টর্নেডোর সময় জেলা কারাগারের পূর্বপাশের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। টর্নেডোর ছোবলে এখন পর্যন্ত এক কারারক্ষী নিখোঁজ রয়েছেন। কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি। ঘটনার পর পরই গ্রামবাসী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস হতাহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার টর্নেডোর ছোবলে অর্ধশত লোক আহত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে দুই শতাধিক বাড়িঘর।
জেলা সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু সাঈদ বাংলানিউজের কাছে পাঁচজন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী আসছে। এর সংখ্যা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।”
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহ আলম তার হাসপাতালে পাঁচজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন চাকমা টর্নেডোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছি। হিসেব না করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে না।”
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক নূর মোহাম্মদ মজুমদার নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা এবং প্রত্যেক পরিবারকে ২০ কেজি চাল, ঘরহারাদের দুই বান্ডিল টিন দেওয়ার ঘোষণা দেন।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন