জিহাদ করি না! তবে কি সোনার পালঙ্কে ঘুমাই? ???????????????????????????????
লিখেছেন লিখেছেন এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৫:১৯ দুপুর
গত ৮ ও ৯ মার্চ ২০১৫ নায়েবে আমীর হযরত
মাওলানা মুফতী সাইয়েদ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম
সাহেবের কক্সবাজার সফর ছিল। সফরের দ্বিতীয়
দিন কক্সবাজার সদরস্থ বাংলাবাজার এক মাদরাসায়
শায়খকে মধ্যাহ্ন ভোজের দাওয়াত দেওয়া হয় এবং
মাদসারায় তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে স্থানীয় গণ্য-
মান্য মানুষ, ওলামায়ে কেরাম, রাজনীতিক দলের
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকেও দাওয়াত দেওয়া
হয়েছিল। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কক্সবাজার
জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সেক্রেটারি ইয়াসিন
হাবীবও উপস্থিত ছিলেন। ইসলামী আন্দোলন
বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা সেক্রেটারি বন্ধুবর
শোয়াইব ভাই বর্ণনা করেছেন, সমবেত সুধীবর্গের
উদ্দেশ্যে শায়খ বলেন, ‘চরমোনাই কোনো দরবার
নয়। প্রচলিত যে দরবারি রেওয়াজ পীর-মুরীদীর নামে
দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠেছে তার জন্য বিশেষ
কিছু করতেও হয় না। লাখ-লাখ লোকের দরকার নেই,
এতো মিছিল-মিটিং, দেশব্যাপী এতো ছুটোছুটি,
মাহফিল-সমাবেশ—কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না।
আস্ত সম্পদশালী-ধনী-ব্যবসায়ী ক’জনকে মুরীদ
করার নামে বোকা বানিয়ে আরামে সোনার পালঙ্কে
ঘুমোতে পারতাম।’
আসলেই! সুরেশ্বরী, চন্দ্রপুরী, আটরশি,
দেওয়ানবাগী, মুনিরিয়া, রাজারবাগী, সাইয়েদাবাদী,
সিরেকোটী, মাইজভান্ডারী, আমির ভান্ডারী—
নিরেট ভেজাল কয়কটার নাম উল্লেখ করা হলো।
এসব দরবারের পীরদের বিশেষ যোগ্যতা-মর্যাদা
আছে তেমন নয়, শিক্ষায়-দীক্ষায় বিশেষ মকামের
অধিকারীও তারা নয়। আবার এমনও নয় যে, একদম
সাধারণ-মূর্খ-অশিক্ষিত মানুষরাই কেবল এসব
দরবারমুখো; বরং দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত অনেক
ডক্টর ডিগ্রিধারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস
চ্যান্সেলর, প্রবীণ শিক্ষাবিদ, জ্ঞানী-গুণী
ব্যক্তিত্ব, ধনাঢ্য-ব্যবসায়ী, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী,
আমলা-সচিব, আইনজীবী ও সাংবাদিকগণও এসব
দরবারের পরম ভক্তদের মধ্যে শামিল রয়েছেন।
ভোঁজবাজি বলেন, সম্মোহনী বলেন বা ভেল্কিবাজী
কিংবা যাদু-টোনা ইত্যাদি; অনেকের ধারণা ভণ্ড
পীর ও দরবারি ফকীররা এসব যাদু-টোনার মাধ্যমে
মানুষকে সম্মোহিত করে দলে বিড়িয়ে থাকে। যদি
তাই হয় তবে এ ধরনের ভোঁজবাজি শেখা বা রপ্ত
করাও কিন্তু বিশেষ কষ্টের ছিল না চরমোনাইঅলাদের
পক্ষে।
ব্যাস! এক-দুটো রপ্ত করে পীরালির জমজমাট ব্যবসায়ের ফরসা সাজিয়ে বসতে পারতেন তাঁরা।
সৌদির আধ্যাত্মিক ইমাম হলেন মুহাম্মদ ইবনে
আবদুল ওয়াহব (রহ.)। তিনি ধর্মীয় সংস্কার
আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেখানে। বলা হয়ে থাকে,
অনেকটা তাঁর আদলে ভারত উপমহাদেশেও ধর্মীয়
সংস্কারের জন্যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন শহীদে
বালাকোট আমীরুল মুমিনীন হযরত সাইয়েদ আহমদ
বেরলবী (রহ.)। আজকের সুরেশ্বরী, চন্দ্রপুরী,
আটরশি, দেওয়ানবাগী, মুনিরিয়া ও রাজারবাগীরা
নাকি তওহীদের ঝাণ্ডাবাহী সেই মরদে মুজাহিদেরই
সিলসালার অনুসারী। একজন খালেস তওহীদীবাদীর
অনুসারীরা যদি এমনভাবে নষ্ট-ভ্রষ্ট-ভ্রান্ত-ভণ্ড
হতে পারে তবে চরমোনাইঅলাদের পূর্বসূরিরা
যতোই দেওবন্দি হোক না কেন, যদি তাঁরা ভণ্ডামি-
নষ্টামির পথ ধরতে চাইতেন, তাহলে আমার মনে হয়,
এটা নিয়ে কারোই কোনো মাথাব্যাথা থাকতো না।
আজকে যারা চরমোনাইঅলাদের নিয়ে সমালোচনার
সুযোগের জন্যে মুখিয়ে থাকে, ফ্যাশনেবল মন্তব্য
ছুটতে যারা অভ্যস্ত, খুঁত ধরতে যারা কোমর বেঁধে
আছে, অযথা-অনর্থক কুতর্কে যারা সিদ্ধহস্ত;
আমার মনে হয় তখন তাদের কোনোই সমস্যা হতো
না, দুশ্চিন্তা বা হতাশাও তাদের মধ্যে থাকতো না।
মোটেও আহা ধ্বনি বেরুতো না। বরং আনন্দই
লাগতো তাদের। চরমোনাইঅলারা পীর-মুরীদীকে
বাণিজ্যে পরিণত করেননি, রুটি-রুজির অসীলা
বানাননি, চাইলে করতে পারতেন, যারা করেছে তাদের
চেয়ে চরমোনাইঅলাদের সেই সুযোগ-সুবিধা আরও
বেশি ছিল। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি জিহাদ নয়?
চরমোনাইঅলারা সোনার পালঙ্কে ঘুমান নাকি?
স্বর্ণের সিংহাসন গড়ে তুলেছেন নাকি কোথাও?
বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি এবং প্রাসাদ বানিয়েছেন
তাঁরা? বাংলাদেশে অনেক পীর-ফকীর আছে, যাদের
ঢাকা শহরে বিলাসবহুল বাড়ি আছে, ভেতরে স্বর্ণের
সিংহাসন আছে, সোনা-রুপোর পালঙ্ক আছে, চড়েন
নামি-দাগি গাড়িতে। ওরা এসব যেভাবে যোগাড়
করেছে ভণ্ডামির পথ ধরলে এসব জোড়ানো
চরমোনাইঅলাদের জন্য মিনিটের ব্যাপার মাত্র।
তখন কেউ মানাও করতো না, সমালোচনাও করতো
না। কই, যারা চরমোনাইয়ের সমালোচনা করে তারা
দেওয়ানবাগী-রাজারবাগীদের সমালোচনা তেমন করে
কই? আজকে অনেক কম সমালোচকদেরই জানা আছে
হয়তো, পীর সাহেব চরমোনাইরা হলেন সৈয়দ বংশের
লোক। যাকাত-ফিতরা তাঁরা সচেতনভাবে এড়িয়ে
চলেন। নিষিদ্ধ তাঁদের জন্য। সাইয়েদ মুহাম্মদ
ইসহাক (রহ.) ছিলেন তাঁদের দাদা। চরমোনাইয়ের
প্রথম পীর। পীরালির মধ্য দিয়ে তাঁরা ধন-
সম্পদশালী হননি, বরং স্থানীয়ভাবে সম্ভ্রান্ত ও
জমিদার পরিবারের সন্তান সাইয়েদ ইসহাক (রহ.)
পীর হয়ে পারিবারিক এবং উত্তরাধিকার সূত্রে যে
বিশাল ধন-সম্পদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন তার হিংসভাগ
বিলিয়ে গেছেন ইসলাম প্রচারের কাজে। পরদাদার
সম্পদ থেকে যেটুকু উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর নাতি-
নাতনিরা পেয়েছেন সেটুকু যথেষ্ট চরমোনাইঅলাদের
কয়েক প্রজন্মের জন্য। পীর-ফকীরী ও খয়রাতি করে
চরমোনাইঅলারা চলার লোক নন। এটা তাদের রুটি-
রুজির অবলম্বন নয়, এটি একটি জিহাদ, একটি
আন্দোলন।
চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সাহেব সাইয়েদ মুহাম্মদ
ফজলুল করীম (রহ.)। তিনি তাঁর সবগুলো
ছেলেদেরকে পড়িয়েছেন কওমি মাদরাসায়। তাঁর
জীবদ্দশায় অনেকগুলো মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন
তার সবগুলোই কওমি মাদরাসা, এর মধ্যে অন্তত
১০টির মতো দাওরা হাদীস-সম্পন্ন। গাঁও-গ্রামে ৬৮
হাজার মকতব প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর স্বপ্ন। রাত-দিন
আরামের ঘুমকে হারাম করে ছুটে বেড়িয়েছেন
সারাদেশের আনাচে-কানাচে। গ্রামে-গঞ্জে, দেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দিনে চার-পাঁচটা প্রোগ্রাম,
দিনে সমাবেশ, রাতে মাহফিল, ইবাদত-গুজারি,
দীর্ঘস্থায়ী গাড়ির সফর। চরমোনাইঅলাদের এমন
খাঁটুনি কি রুটি-রুজির জন্যে? আমি মনে করি, ধর্মের
চোরেরা চারদিক থেকে দীনের ওপর হামলে পড়েছে।
শকূনের চোবল থেকে বাচ্চাদের রক্ষার যে প্রাণপণ
চেষ্টা থাকে পীর সাহেব চরমোনাই ছিলেন ঠিক
তেমনি। ধর্মের চোরেরা যেভাবে দীনের ওপর হামলে
পড়ছিল, বহিঃশত্রুরা যখন আক্রমণ করছিল পীর
সাহেব চরমোনাই তখন মায়ের মতো দীনের একনিষ্ঠ
খাদিমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
যখন ভণ্ড পীরেরা সহজ-সরল ও সাধারণ মানুষকে
পীর-মুরীদীর নামে দলে বিড়িয়ে নিচ্ছিল তা থেকে
রক্ষা করতে পীর সাহেব চরমোনাই সারা দেশে ঘুরে
ঘুরে হকের পথ বলে বেড়িয়েছিলেন। এটি তিনি তাঁর
মুরীদ বৃদ্ধির জন্যে করেননি, করেছিলেন ভণ্ডদের
হাত থেকে তাদের রক্ষার জন্যে। যখন আওয়ামী-
বিএনপি ও বস্তুবাদী-বামপন্থি রাজনীতির কবলে
মানুষ ঈমানহারা এবং স্বতন্ত্র ইসলামি শক্তির
ধারা বঞ্চিত ও নেতৃত্বশূন্য হতে চলছিল তখনই
তিনি স্বতন্ত্র ইসলামি রাজনীতিক শক্তি গঠনের
লক্ষ্যে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে
জোরদার করেছিলেন। যখন দেখলেন স্কুল-কলেজ
থেকে বেরুনো ভবিষ্যত দেশের রাষ্ট্রনেতৃত্ব
ধর্মবিমুখ হতে চলছে তখনই তিনি সেখানে ইসলামী
শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে নির্দেশ
দিলেন। যেদিক থেকে চিল-শকূন ইসলামের ওপর
আক্রমণ করেছে পীর সাহেব চরমোনাইয়ের মায়ের
মতো দৃঢ় পদক্ষেপে সেদিকেই সাহসী ভূমিকা পালন
করে মুসলিম উম্মাহকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন।
আমি জিজ্ঞাসা করি, এসব কি জিহাদ নয়?
ভণ্ড পীর-দরবারের কথা বাদ দিন। বাংলাদেশে হক
বা আধা-হক অনেক দরবার ও পীর সাহেবানও আছেন।
জৌনপুর, ফুরফুরা, শর্ষিনা, ফুলতলী, বায়তুশ শরফ,
গারাঙ্গিয়া, নোয়াপাড়া, নানুপুর, তাবলীগ জামায়াত
ও কওমি মাদরাসা। কিছু কিছু মহল বিশেষ জামায়াতি
পক্ষ থেকে সবসময় অভিযোগ করা হতো, পীরের
দরবার, তাবলীগ ও কওমি মাদরাসা থেকে হক কথা
বলা হয় না। গদি, মাদরাসার ফান্ড হারানোর ভয়ে
ইসলামের অন্যতম অঙ্গবিধান রাজনীতির বিষয়ে
কোনো সত্য উচ্চারণ এখান থেকে আসে না। এ
কারণে তারা বরাবরই এসবের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত
ছিলো। ব্যাপারটা জামায়াতিরা ছাড়াও সচেতন
অনেকে জানেন এবং এ ব্যাপারে অনেকটা ঐকমত্যও
পোষণ করে থাকেন। তবে একথা অস্বীকারের
কোনো জোঁ নেই যে, পীরের দরবারগুলো আস্তে
আস্তে হক্কানিয়ত হারানোর অন্যতম বড় কারণ
হচ্ছে, তাদের রাজনীতিনিরপেক্ষতা। আর এই
সুযোগটা সুবিধে মতো ব্যবহার করছে সেক্যুলার,
ধর্মনিরপেক্ষ ও বামপন্থিরা। তারা এখন
রাজনীতিনিরপেক্ষ পীর-মুরীদীর পাশাপাশি
ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাজারজাত করে সমান ব্যবসা
চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে একটা অপরটার সম্পূর্ণ
পরিপূরক হয়ে উঠেছে, সমার্থক হয়ে উঠেছে। একটা
অপরার পৃষ্ঠপোষকও বটে। এখানে উভয়পক্ষের লাভ।
পীরেরা হরেক রকমের মুরীদ পেয়ে থাকে আর
রাজনীতিকরা হরেক রকমের ভোট পেয়ে থাকে।
ভোট এবং পীর ব্যবসায়ের সমার্থক ধারা থেকে
বেরিয়ে এসেছেন পীর সাহেব চরমোনাই। ধর্মে ও
রাজনীতিতে বিভাজনসৃষ্টিকারী পীরব্যবসায় এবং
ধর্মহীন রাজনীতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন একমাত্র পীর
সাহেব চরমোনাই। আওয়ামী-বিএনপিসহ বস্তুবাদী
মুরীদদেরকে খেদিয়ে তাঁর দরবার থেকে বের করে
দিয়েছেন। মুরীদ হতে হলে ইসলামী শাসনতন্ত্র
আন্দোলন করতে হবে বলে তিনিই একমাত্র
শর্তারোপ করেছেন। তিনি অন্যান্যদের মতো
আওয়ামী-বিএনপির হাদিয়া-তুহফাদানকারী বিশাল
ধন-সম্পদশালী মুরীদ হারানোর ভয়ে ভীত হননি,
পীর-মুরীদী ব্যবসা লাটে ওঠে কিনা আশাঙ্কায়ও
শঙ্কিত হননি। সবকিছুকে পায়ে সঘৃণায় নিক্ষেপ করে
ইসলাম কি চায় সেটাই তিনি করেছেন। তিনি মুজাহিদ
না হবে তো মুজাহিদ তবে কে? এতো ত্যাগ,
আত্মবিসর্জন এবং নিজের সাথে নফসের সাথে
জিহাদের জন্যে তাঁকে মুজাহিদ বলা হবে না তো
কাকে বলা হবে? আজকে পেটপূজারি পীর-ফকীর,
মাদরাসা-মসজিদের তথাকথিত খাদিম-খুদ্দামদের
তো সমালোচনা করতে শুনি না, শুনি একনিষ্ঠ এক
আল্লাহঅলার সমালোচনা করতে। কেন রে?
ধান্ধাবাজির পীর-মুরীদীকে ত্যাগ করে মানুষজনকে
দীন প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ কেন করে গেছেন সেটাই কি
তাঁর অপরাধ? আজকে চরমোনাইঅলারা যদি ঢাকা
শহরে একটা বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়ে সোনার
হিংসান আর স্বর্ণের পালঙ্কে ঘোমাতেন তখন তো
তোমাদের কোনো মাথা ব্যথা হতো না, মাথার
ব্যাথাটা কি এই কারণেই যে, তিনি কেন ইসলামী
আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন? কেন
তিনি ইসলামের পক্ষে একটা রাজনীতিক শক্তি গড়ে
তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন? সে জন্যে?
চরমোনাইয়ের দাদা হুযুর হযরত সাইয়েদ মুহাম্মদ
ইসহাক (রহ.) যখন মুজাহিদ কমিটি কায়েম করেন
তখন সারাদেশে পীরের পূজো হতো। মাযারে মাযারে
সাজদা হতো, সামা-কাওয়ালি চলতো বাধা-বিপত্তি
ছাড়াই। দেশের আনাচে-কানাচে পীরের অসংখ্য
মাজার-দরহা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। ইসলাম,
সুন্নত বলতে কেবল মানুষ এসবকেই জানতো। এমন
ফিতনা-ফাসাদের যুগে সাইয়েদ ইসহাক (রহ.) কিছু
মানুষজনকে কেঁদে, হাতে-পায়ে ধরে, বুঝিয়ে-সুজিয়ে
সুন্নত, নবী (সা.)-এর প্রকৃত তরীকা ইত্যাদির
প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন। তখন পরিস্থিতি এতোটা
নাজুক ছিল যে, একটা মানুষকে কোনো মতে লাইনেই
আনাই ছিল একটা রাজ্যজয়ের সমতুল্য। যখন
কোনো মানুষ শায়খের কথায় সুন্নতের অনুসারী
হতেন তখন স্বাভাবিক একটা সুখ অনুভূতিতে এবং
সুন্নতি আমলের প্রতি মানুষের অশোভন আচরণসহ
এক ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও ওই
লোকের এমন সাহসিকতার জন্য দাদা হুযুর (রহ.)
তাকে স্নেহের বশে ‘মুজাহিদ’ বলে ডাকতেন। আর
এটা কুরআন-হাদীসের বিরোধী কোনো কথাও নয়।
তিরমিযী শরীফের হাদীস: َﺪَﻫﺎَﺟ ْﻦَﻣ ُﺪِﻫﺎَﺠُﻤْﻟﺍ
ُﻪَﺴْﻔَﻧ (যে নিজের প্রবৃত্তির সাথে লড়াই করে সেই
প্রকৃত মুজাহিদ)। সে থেকে চরমোনাইঅলারা ভালো
কাজে উৎসাহিত করতে একে অপরকে মুজাহিদ বলে
ডাকাডাকি শুরু করে, নিজেরা মুজাহিদ বলে পরিচিত
হয় পরস্পরের মাঝে। এভাবেই মুজাহিদ কমিটি গঠিত
হয়। আমি বুঝি না, এমন সরল একটা বিষয়কে নিয়ে
কেন রাজনীতি হয়?
আমি তো অনুভব করছি, হযরত দাদা হুযুর (রহ.)-
কর্তৃক তাঁর মুরীদানকে মুজাহিদ হিসেবে
অবহিতকরণের পেছনে ইসলামি রাজনীতি ও
আন্দোলনের প্রতিই তাঁর নির্দেশনা ছিল।
‘মুজাহিদ’ শব্দটি প্রথম পর্যায়ে আধ্যাত্মিক অর্থে
ব্যবহৃত হবে বটে, তবে পরবর্তীতে এটি নফসের সাথে
জিহাদে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি পরিব্যপ্ত হবে,
ইসলামী আন্দোলন হবে, তারও পরবর্তীতে এটি
গণবিপ্লব হবে, সশস্ত্র সংগ্রাম হবে—সেই
সুদূরপ্রসারী নির্দেশনাই হয়তো তাঁর ‘মুজাহিদ’
আখ্যার মধ্যে নিহত আছে, সেই গোপন অর্ডারই
হয়তো তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি আল্লাহঅলা
ব্যক্তিত্ব ছিলেন, এটি হয়তো তাঁর প্রতি আল্লাহর
পক্ষে ইলহাম ছিল। আল-হামদু লিল্লাহ, তাঁর
সুযোগ্য সাহেবযাদা ও নীতিবর্গ আজকে সেই
কাজটাকে আনজাম দিয়ে চলেছেন। অনেকে অনেকটা
গুঁয়ার্তুমি করে বলছে, আমীরুল মুজাহিদীন উপাধি
কেন? আমি বলি, অন্যায় কি আছে তাতে? আল্লামা
শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)-কে ‘মুজাহিদে আযম’
বলা হয়, মজলুম জননেতা মুফতী ফজলুল হক আমিনী
(রহ.)-কে বলা হয় ‘মুজাহিদে মিল্লাত’। আপনারদের
কি এসবেও আপত্তি আছে? জিহাদ মানেই কি সশস্ত্র
সংগ্রাম? তাহলে কিতালের আলাদা পরিভাষা কেন?
আসলে চরমোনাইঅলাদের এসব উপাধিতে খাহেশ
নেই। কিন্তু যারা বিরোধিতা তাদের এ বিরোধিতা
যে সম্পূর্ণ অনৈতিক, হিংসাত্ম, বিদ্বেষমূলক তাতে
কোনো সন্দেহ নেই। এরা কেউ পরামর্শদাতা নয়,
কল্যাণকামী শ্রেণির কেউ নয়, এরা আসলে
ছিদ্রান্বেষণকারী, চোগলখোর।
বিষয়: বিবিধ
১৯০৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কে কি বলেছে তা বড় কথা নয়, বড় কথা হল আপনারা পূর্নাঙ্গ ইসলামকে কতটা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। রাসূল সঃ যেভাবে দেখিয়ে গেছেন, আপ্নারাও হুবুহু সেভাবে কাজ করে যান, তাহলে বিভিন্ন দল, মত, পথের অনুসারীরা যত সমালোচনাই করুক, আপনার পরিশ্রম আল্লাহ নিশ্চয় কবুল করবেন।
আর সমালোচনাকারীদের সমালোচনার বিষয়গুলো যদি সত্যিই আপনাদের ভেতরে থেকে থাকে এবং তা পূর্নাঙ্গ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, তাহলে সেগুলো করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
আমরা কতটুকু চেষ্টা করছি তা একমাত্র আল্লাহ পাকই বলতে পারবেন।
তবে একথা সত্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলছি।
গঠন মূলক সমালোচনার জন্য শুকরিয়া।
অযোগ্য কোন লোককে দেওয়া হয়েছে কি না ,তা বলুন ।হিংস্বত্বক মনোভাব পরিহার করুন।
একটি কথা না বললে নয়, বর্তমানে যেমন বিজ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে, তেমনি ইলমী মুবাহাসার ও উন্নতি হচ্ছে। এক সময় হয়তো দ্বীনি ইলমের চর্চা খুব একটা ছিল না। তাই ঐ সময়ের আলেমরা যথাসাধ্য ইসলাম প্রচার করেছেন। কিন্তু বর্তমানে একটু আপডেট হওয়া দরকার। একটু সংস্কার করা দরকার। বিশেষ করে ভেদেমারেফাতসহ অন্যান্য গ্রন্থগুলো একটু সম্পাদনা করে কুরআন হাদীসের নিরিখে নতুন করে ছাপালে খুব ভালো হয়। তাতে দ্বীন প্রচারেও সহায়ক হবে, বিরোধীদের প্রোপাগান্ডাও বন্ধ হবে। জাযাকাল্লাহ খাইর
আপনাদের মত বিজ্ঞদের এক্ষেত্রে অনেক করনীয় আছে ,যা আমার মত অজ্ঞ লোকেরা আপনাদেরকে বুঝাতে পারবোনা।
তবে ভেদে মারেফাতের কোন বিষয় আপনার দৃস্টি কটুহলে আপনি শায়েখের নযরে দিয়ে দিলে আমার বিশ্বাস শায়েখ এব্যাপারে দূরত্ব সিদ্ধান্ত নিতে ক্রটি করবে না।
জাযাকাল্লাহ।
আপনার অবস্হা সুবিধার না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন