#‎এমন‬ মৃত্যু পায় ক’জনা!

লিখেছেন লিখেছেন এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী ০৩ মার্চ, ২০১৫, ০২:২৯:৫১ দুপুর

অনেকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষক এক আলেম। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বাড়ির সবাইকে ডাকলেন। ডাকলেন বাড়িতে আসা এক মেয়ে জামাইকেও।

এবার সবার উদ্দেশ্যেই বললেন, ‘আমি কিছুদিন ধরে নামাজ আদায় করতে পারিনি! কিছু রোজাও রাখার সুযোগ হয়নি! তার জন্য ২০ হাজার টাকা মসজিদে দিয়ে দিও! আর তোমাদের মায়ের মোহরানার কিছু টাকা বকেয়া ছিল। বকেয়া মোহরানার ২০ হাজার টাকা তোমাদের মা’কে দিও!’ পরিবারের জন্য আরও কিছু নির্দেশনা দিলেন অসুস্থ এই ব্যক্তি।



ওই রাতটা পার হলো। পরদিন শুক্রবার সকাল বেলা। মাদ্রাসা শিক্ষক এই আলেম আবার বাড়ির সবাইকে ডাকলেন। পাঁচ ছেলের মধ্যে এক ছেলে উপস্থিত ছিলেন না- তাকেও ডাকা হলো। চার মেয়ের মধ্যে বিবাহিত দুই মেয়েও সেই সময় বাবার শয্যাপাশে উপস্থিত হলেন।

এবার তিনি বললেন, ‘আমাকে গোসল করাও, পবিত্র করে দাও!’ বেশি অসুস্থ বলে গোসল করানো গেল না। যতটুকু পরিচ্ছন্ন করা যায় করানো হলো। নতুন লুঙ্গি পরানো হলো, সাথে পরিষ্কার জামা।

এই আলেম বললেন, ‘আমি যে খাটে শুয়ে আছি সেটি কোনো বিধর্মীর বানানো কিনা জানি না! মুসলমানের বানানো না হলে আমাকে নিচে মাটিতে বিছানা করে শুইয়ে দাও!’

এবার তিনি সবাইকে বললেন, ‘সবাই আমার সঙ্গে কলেমা পড়ো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)!’

আর এভাবেই এক আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) সাক্ষ্য দিতে দিতেই এই আলেম পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গেলেন! ইন্নালিল্লাহি ওয়া...রাজিউন।

ঘটনাটি গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে এমনই ঘটনা ঘটেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা। আর যিনি মৃত্যুর আগে সবকিছু বলে-কয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি গ্রামে বসবাসকারী নিতান্তই এক আলেম- মাওলানা আবদুচ্ছালাম (ক্বদিম)। পবিত্র শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যান।

কক্সবাজার সদরের পাশের উপজেলা রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের হালদারকুলের অজপাড়া গাঁয়ে বাস করতেন এই আলেম। তিনি গ্রামের অতি সাধারণ, সহজ-সরল এবং একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হলেও তার প্রতিষ্ঠানটি ছিল বিখ্যাত। বাড়ির পাশের রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদ্রাসায় তিনি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শিক্ষকতা করে আসছিলেন।

উনার ছাত্র ও একই মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর জানিয়েছেন, রাসুলের (সা.) সুন্নাতের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান, আচরণে বিনয়ী, ভদ্র ও সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন বিজ্ঞ এই আলেম।

মাওলানা আবদুচ্ছালামের (ক্বদিম) মেজো জামাতা, কক্সবাজারে কর্মরত সংবাদ কর্মী এএইচ সেলিম উল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা দেখাসহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শ্বশুর বাড়িতে জামাতাদের মধ্যে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি ঘটনার পরম্পরা বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সবকিছুর নির্দেশনা দিয়েই আমার শ্বশুর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এমন মৃত্যু ক’জনের ভাগ্যে জোটে!’

সেলিম উল্লাহ জানান, ইন্তেকালের সময় উনার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি সহধর্মিনী, চার ছেলে, পাঁচ মেয়ে রেখে গেছেন।

সেলিম উল্লাহ বলেন, ‘মৃত্যুর প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই আমার শ্বশুর তার কাফনের কাপড় কেনার জন্য টাকার বরাদ্দ দিয়ে গেছেন। তার মৃত্যুর পর জানাজার নামাজ কে পড়াবেন সেটিও তিনি জানিয়ে গেছেন। তিনি দুইজন আলেমের কথা বলে রেখেছিলেন। তাদের একজন মুফতি মুর্শেদুল আলম চৌধুরী, যিনি কক্সবাজার জেলা তাবলিগ জামাতের আমির, তিনি মাওলানা আবদুচ্ছালামের (ক্বদিম) জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন।’

মাগরিবের নামাজের পর বাড়ির পাশের চাষের জমিতে এই জানাজার আয়োজন ছিল। কিন্তু জানাজা যখন শুরু হচ্ছিল তখন সন্ধ্যা পৌনে ৭টা বাজে। চারদিকে অন্ধকার। আর তারই মাঝে কয়েক হাজার মানুষ লাইন ধরে অপেক্ষমান। একটু দূর থেকেও বুঝার উপায় নেই এতো মানুষ অন্ধকার মাঠে জানাযার অপেক্ষায় আছেন!

কক্সবাজারের প্রবীণ সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হেলালী মনে করেন, ‘তিনি হয়তো বড় আলেম না হতে পারেন, কিন্তু তিনি ছিলেন এক পাক্কা ঈমানদার মানুষ!’

মাওলানা আবদুচ্ছালাম (ক্বদিম) ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল রাজারকুল ইউনিয়নের হালদারকুলের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজীবন এই মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দ্বীনি শিক্ষার খেদমতে নিবেদিত ছিলেন।

তিনি পশ্চিম রাজারকুল আশরাফিয়া মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সদরে মুহতামিম ও হালদারকুল জামে মসজিদের খতিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

উনারই ছাত্র হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের মতে, ‘হুজুর ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার আলেম! তিনি আজীবন ফেকাহ শাস্ত্র শিক্ষা দিয়েছেন।’

বিষয়: বিবিধ

১০৭০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

307049
০৩ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০২:৪৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : يا ايتها النفس المطمئنة ارجعي الى ربك راضية مرضية فادخلي في عبادي وادخلي جنتي নিশ্চয় অনেক সৌভাগ্যবান। আল্লাহ তায়ালা কাছে এমন মৃত্যুই চাই। মাওলানার জন্য জান্নাত কামনা করছি।
০৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৪
248412
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : আমিন ।
307059
০৩ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:২০
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : আল্লাহু আকবার
০৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৪
248413
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : আল্লাহু আকবার ।
307069
০৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৫:০০
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ঘটনাটি গল্পের মত হলেও অনেক ইমানদার ব্যক্তির বেলায় ঘটে থাকে। আমি নিজেও এই ধরনের কয়েকটি ঘটনার কথা জানি। ধন্যবাদ।
০৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৫
248414
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : Praying Praying Praying শুকরিয়া ।
307074
০৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৫:৫১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজীউন।
يا ايتها النفس المطمئنة ارجعي الى ربك راضية مرضية فادخلي في عبادي وادخلي جنتي নিশ্চয় অনেক সৌভাগ্যবান। আল্লাহ তায়ালার কাছে এমন মৃত্যুই প্রার্থনা করি। মাওলানার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন। আমিন ছুম্মা আমিন।
০৪ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৫
248510
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : আমিন Praying Praying Praying
307098
০৩ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আল্লাহতায়লা তাকে জান্নাত নসিব করুন।
০৪ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৫
248511
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : আমিন Praying Praying Praying
307127
০৩ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:৫২
আফরা লিখেছেন : আল্লাহতায়লা তাকে জান্নাত নসিব করুন।
০৪ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৬
248512
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : আমিন Praying Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File