ধর্মদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত জনতা ঘরে ফিরবে না : মহাসমাবেশে পীর ছাহেব চরমোনাই

লিখেছেন লিখেছেন এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৫৬:৫৮ দুপুর



ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর ছাহেব চরমোনাই বলেছেন, ধর্মদ্রোহী ও মুরতাদদের শাস্তির দাবিতে তৌহিদী জনতা আজ ঐক্যবদ্ধ। ধর্মদ্রোহী ও মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত এদেশের মুসলমানরা ঘরে ফিরে যাবে না, আর সরকারও এদেশের মাটিতে টিকে থাকতে পারবে না।

পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলাম এবং মদীনার সনদের আলোকে দেশ চালাবে বলে ওয়াদা করে জনগণের সাথে ধোঁকাবাজি করছে। সরকারের সাথে যে মুসলমানরা জড়িত তারা মুরতাদদের ফাঁসির দাবিতে এক কাতারে না আসলে তাদেরও ঈমান থাকবে না।

সরকার এখন মুরতাদদের লালন পালনকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পীর ছাহেব বলেন, আমরা জীবন ও রক্ত দিব, তবুও মুরতাদদের বিরুদ্ধে কোন ছাড় দেব না। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের বৃহত্তর ইসলামী জনতার প্রাণের দাবি ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাস করতে হবে। এই বিষয়ে গণভোট করলেও জনগণের দাবিই প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহীদের আস্ফালন বন্ধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।



তিনি বলেন, নেতানেত্রীদের নামে কটূক্তি করলে শাস্তি হয়, কিন্তু আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করলে শাস্তির আইন হবে না তা হতে পারে না। পীর ছাহেব বলেন, উল্লিখিত দাবীতে সর্বশেষ গত ২০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা করা হলে সেখানেও অনুমতি না দিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ অতর্কিত হামলা করে ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ, চট্টগ্রাম, খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশ, মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকী ২৩ নভেম্বর ঢাকায় ফিরলে ২৪ নভেম্বর মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়।

অনেক বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও গতকাল শুক্রবার বাদ জুমআ মুরতাদ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সর্বোচ্চ শাস্তি এবং ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাসের দাবীতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

দাবী আদায়ে মহাসমাবেশে পীর ছাহেব চরমোনাই নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করেন- ৯ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ, ১২ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় মহাসমাবেশ, ২৫ ডিসেম্বর থানায় থানায় বিক্ষোভ, ২৩-২৫ ডিসেম্বর ঢাকা-কুড়িগ্রাম, ৫-৭ জানুয়ারী ঢাকা-সিলেট, ৭-৯ জানুয়ারী ঢাকা-খুলনা, ১০-১১ জানুয়ারী খুলনা-বরিশাল, ২১-২৩ জানুয়ারী ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ; ১৫-২৮ ফেব্রুয়ারী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান, আসন্ন সংসদ অধিবেশন চলাকালে সংসদ অভিমুখে গণমিছিল ও স্পিকার বরাবর স্মারকলিপি পেশ, ১৮ মার্চ বঙ্গভবন অভিমুখে গণমিছিল ও প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি পেশ।

মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হক আজাদ মুহাদ্দিছ, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, আমীরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সহকারী মহাসচিব আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম ও মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, নগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, হাটহাজারী মাদরাসার মুুহাদ্দিস মাওলানা মোমতাজুল করীম বাবা হুজুর, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, এড. আব্দুল মতিন, মুফতী হেমায়েতুল্লাহ, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, এড. লুৎফর রহমান, এড. এ কে এম এরফান খান, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা আরিফুল ইসলাম, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, ঢাকা জেলা সভাপতি সৈয়দ আলী মোস্তফা, নারায়ণগঞ্জ-এর সভাপতি আলহাজ্ব আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী, মাওলানা অধ্যাপক ফজলুল হক মৃধা, মু. মোশাররফ হোসেন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

মহাসমাবেশের কর্মসূচীর আবেদনের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা বলা হলেও শেষ মুহূর্তে এসে মহাসমাবেশ করতে পুলিশ টালবাহানা করে।

সর্বশেষ গতকাল সকালে মাইক লাগাতে গেলে পুলিশ মাইকসহ পিকাপ ভ্যান ও মাইক স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এদিকে ফজর নামাজের পরই ঢাকার বাইর থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও আশপাশে সমবেত হতে থাকে। নামাজের সময় জনতার উপচেপড়া স্রোত পল্টনমুখে ধাবিত হতে থাকে। জুমআর নামাজের আগে বায়তুল মোকাররম, পল্টন,দৈনিক বাংলা,মতিঝিল ও আশপাশে জনতার ঠাঁই ছিল না। এর ফলে বায়তুল মোকাররম ছাড়া একাধিক জুমআর জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ রাস্তা-ঘাটে যেখানে জায়গা পেয়েছে সেখানেই নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যায়।

জুমআর পর মাত্র ৬ টি মাইকের মৌখিক অনুমতি দিয়ে শর্ত জুড়ে দেয় আধা ঘণ্টার। এ বিশাল মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বেলা ১০ টা থেকেই পুলিশের সমরসজ্জা ছিল লক্ষ্যণীয়।

মহাসমাবেশে পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে খুশি করতে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিলেন এবং মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে যারা আন্দোলন করছে, তাদের উপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছেন তারাও এখন শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে না। রাজপথে তাদের মিছিলের ভাষা থেকে তা বুঝে নেওয়ার জন্য পীর ছাহেব চরমোনাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এখনও সময় আছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে ফিরিয়ে আনুন। ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন সংসদে পাস করে লতিফ সিদ্দিকীকে সে আইনে বিচার করুন। অন্যথায় সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

পীর ছাহেব বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনগণের মনের ভাষা বুঝতে চায় না। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং দুর্নীতি ও দলবাজি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতেই মেনাযোগী থাকে। ফলে সময়ের ব্যবধানে জনগণ কর্তৃক আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। এই কারণেই বর্তমান সরকার জনরোষের শিকার। তাই সরকারকে জনরোষ ঠেকাতে ইসলাম বিরোধী সিদ্ধান্তসমূহ বাতিল করে ধর্মদ্রোহী ও মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাস করতে হবে এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।

পীর ছাহেব বলেন, একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ছাড়া এদেশের মানুষের ভাগ্যের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন সম্ভব নয়। পরিবর্তনের এই বিপ্লবের সূচনা করতে হবে আপনাদেরকেই। একজন সচেতন, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে আপনাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যার মাধ্যমে সূচনা হবে এক নতুন সম্ভাবনার।

মাওলানা মাদানী বলেন, সরকার লতিফ সিদ্দিকীকে শাস্তি না দিয়ে টালবাহানা করছে। এই সরকার নাস্তিকদের পক্ষের সরকার, ইসলাম বিরোধী সরকার। এই সরকার ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ বানচালের চেষ্টা করেছে। আমাদের ঈমানী আন্দোলনে বাধা দিয়েছে। মুরতাদদের শাস্তি দিতেই হবে। তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।

প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাসের দাবি আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আদায় করবো। তিনি বলেন, প্রশাসনের নানান টালবাহানার পরও আজকের মহাসমাবেশের উপস্থিতি প্রমাণ করে এদেশে মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের ঠাঁই নেই।

বিষয়: বিবিধ

১১১৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291763
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৮
বেআক্কেল লিখেছেন : শালা দুলাভা্‌ইয়ের সম্মীলিত ইসলামী রাজনৈতিক মাহফিল! দেইখা তৃপ্তি পাইলাম, তবে এইভাবে আতাত করিয়া ঢাকায় সমাবেশ করা যাইব লেকিন কুনদিন বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাইব না।

অন্য ইসলামী দল মানববন্ধন করিতে চাইলে ডান্ডা পেটা আর গরম পানি মারে।
এই সমাবেশে দেখিলাম সরকার পান করিবার জন্য ঠান্ডা পানির সাপ্লাই দেছে!

অন্যত্র দেখিলাম ইমামের পিছনে নামাজের কাতারে দাড়ানো মুসল্লিকে কাতার থেইকা বাহির কইরা মসজিদেই পিঠাইছে!

এই সমাবেশে দেখিলাম সরকার ট্রাক ভইরা পানি লইয়া ওজুর পানি সাপ্লাই দেছে!!!

অন্যত্র দেখিলাম একই জায়গায় মানব বন্ধনে অনুমতি নাই বইলা হগলেরে ধইরা জেল খানায় পুরছে!

এই সমাবেশে দেখিলাম সমাবেশের জায়গা সহ আড়াই গুন জায়গা দখল করিয়া সমাবেশ করিল, সরকার আর পুলিশ বাহিনী ঠান্ডা মস্তিষ্কে ওনাদের ওয়াজ শুনিলেন!!

কেন এমন হইবার পারছে জানেন?

আওয়ামী ওলামা নেতা, আল্গামা ফরিদ উদ্দীন মাসুদ রেজাউল করিমের দুলাভাই,

আর ইসলামী আন্দোলনের সুবিধাবাদী ভোল পাল্টানো নেতা রেজাউল করিম ফরিদ মাসুদের শালা!

জনগন বুঝ এবার ঠেলা..........

আমনেরে এই তথ্য শেয়ার করিবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করি আমার পোষ্ট খানা অতীতের মত মুইছা দিবেন না। তারপরও দোয়া করি এখনও আমারে ব্যান মারেন নাই হেই লাইগা।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
235353
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : আপনারা মনে হয় পারবেন?ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করতে।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪১
246001
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : মউদুদী জামাতের অন্যতম প্রচারক টিপুদের কাজ হল মিথ্যাচার করা।আর এই মউদুদী বাদীরা মিথ্যাচার করাকে ইবাদাত মনে করে।
291766
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : ইনাদের সমাবেশে বাঁশ বেয়ে প্যান্ডেলের উপরে উঠা , আবার নামা ইভেন্টটি থাকবে তো এবারও নিশ্চয়ই ?
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২১
235351
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : উঠা নামা আর লাফানো দেখতে খুব মজা।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
235381
হতভাগা লিখেছেন : মিয়াজী ভাই কোথায় ? আপনারে কি প্রক্সি দিতে কইছে ?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪১
246002
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : আহারে হতভাগা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৬
246005
হতভাগা লিখেছেন : এতদিন পর ! আপনি কি ইভেন্টটাতে ব্যস্ত ছিলেন ?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:২৩
246412
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : Waiting Waiting :Thinking

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File