পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে ২শতাধিক আহত গ্রেফতার শতাধিক: লতিফ সিদ্দিকীসহ ধর্মদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড আইন পাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে;
লিখেছেন লিখেছেন এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৩৯:১৪ দুপুর
পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে ২শতাধিক আহত গ্রেফতার শতাধিক:
লতিফ সিদ্দিকীসহ ধর্মদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড আইন পাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে;
৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম ও ১৪ নভেম্বর খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশ এবং ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ
স্বঘোষিত মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকীর ফাসির দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। পরে বেলা ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে থেকে বিশাল গণমিছিল বের করলে পুলিশ বৃষ্টির মত রাবার বুলেট, টিয়ার সেল এবং লাঠি চার্জ করে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নগর সভাপতি অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, সেক্রেটারি আহমদ আবদুল কাইয়ূম, শ্রমিক নেতা সৈয়দ ওমর ফারুকসহ ২শতাধিক নেতাকর্মী আহত ও শতাধিক কর্মী গ্রেফতার হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনের আমীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বিকাল ৪টায় দলের কার্যালয়ে আহুত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের এই হামলাকে তান্ডব বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লতিফ সিদ্দিকীসহ সকল মুরতাদ, ইসলামের বিরুদ্ধে কটাক্ষকারী নাস্তিকদের মৃত্যুদণ্ডের আইন পাশ, দেশে না ফিরলে লতিফের নাগরিকত্ব বাতিল ও তার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ অন্যান্য দাবী আদায়ে কর্মসুচী ঘোষণ করেন। ঘোষিত কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে ২২ অক্টোবর হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ, ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশ, ১৪ নভেম্বর খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশ এবং ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ। তিনি ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে এই মৃত্যুদণ্ড চায় কিনা প্রয়োজনে গণভোটেরও দাবী জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আজকের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে সরকারের বাহির ও ভিতরের অবস্থা এক নয়। ধর্মদ্রোহীদের শাস্তির আইন পাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও শেখ পরিবারকে নিয়ে কোনো কটুক্তি করলে তার শাস্তির আইন থাকবে তাহলে ইসলাম, আল্লাহ ও রাসূল সা. নিয়ে কটুক্তি করলে আইন থাকবে না তা হতে পারে না। আজকের পুলিশী হামলায় সরকার প্রমাণ করেছে তারা ইসলামের পক্ষে নয়, তারা ইসলামবিরোধী সরকার।
তিনি আরো বলেন, যারা ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করে তারা পারলে ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে দেখুক, তার অবস্থা কি হয়। যাদের হাতে ইসলাম নিরাপদ নয়, তাদের কাছে কোনো ধর্মই নিরাপদ নয়।
পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, সরকারের সদ্য অপসারিত মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজ্জ, তাবলীগ জামাত, প্রবাসী বাংলাদেশী, সাংবাদিক এবং টকশোতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গকে উদ্দেশ্য করে চরম কটাক্ষপূর্ণ আপত্তিকর ও অমার্জনীয় মন্তব্য করায় তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করে দেশে না আসলে তার নাগরিকত্ব বাতিলসহ তার সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবী জানিয়েছেন। তার এহেন বক্তব্যে গোটা দেশবাসী স্তম্বিত ও ক্ষুব্ধ।
তিনি আরো বলেন, তার কান্ড-জ্ঞানহীন বক্তব্যের দায়ে ইতিমধ্যেই ক্ষমতাসীন সরকার এবং তার দল আওয়ামীলীগ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে মন্ত্রীপরিষদ থেকে অপসারাণ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলী থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে করে ক্ষমতাসীনরা কিছুটা হলেও বাস্তবতা উপলদ্ধি করতে পেরেছেন। তবে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী যে অন্যায় করেছেন এবং এখনও পর্যন্ত যে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করছেন সে তুলনায় তার বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপকে কোনো শাস্তিই বলা যায় না। লতিফ সিদ্দিকীর মতো একজন অসভ্য এবং জ্ঞানপাপী লোক কি করে এতোদিন আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ছিলেন এবং বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী ছিলেন তা ভেবেই দেশবাসী অবাক হচ্ছে। লতিফ সিদ্দিকীর এ ঘটনায় বর্তমান মন্ত্রীপরিষদের সদস্য এবং আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের যোগ্যতা, রুচি এবং শিক্ষা নিয়ে জনমনে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাই লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ক্ষমতাসীনদেরকে প্রমাণ করতে হবে তারা ধর্মবিরোধী অসভ্য এবং জ্ঞানপাপীদের পক্ষে নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মাদানী বলেন, লতিফ ইসলামের মুল স্তম্ভ নিয়ে কটুক্তি করে মুরতাদ হয়ে গেছে। তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, লতিফ দেশে আসলে সর্বোচ্চ শাস্তি, দেশে না থাকলে তার নাগরিকত্ব বাতিলসহ তার অবৈধ সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, আহমদ আবদুল কাইয়ূম, লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, এডভোকেট মো: আবদুল মতিন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, ছাত্রনেতা আরিফুল ইসলাম, এইচ এম সাইফুল ইসলাম, নগর নেতা নুরুজ্জামান সরকার, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, বিশ্ব নবী সা.-এর অবমাননা, পবিত্র হজ্ব অস্বীকারকারী এবং তাবলীগ জামাত নিয়ে কটুক্তিকারী স্বঘোষিত মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ২০ অক্টোবর (সোমবার) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল গণসমাবেশ-এর ঘোষণা ছিল। প্রশাসন ৩ বার মৌখিক অনুমিত দেয়ার পরও বাতিল করে দেয় এবং মাইক ও মঞ্চ তৈরি সরঞ্জাম নিয়ে যায়। পরে বেলা ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েও বাতিল করার প্রতিবাদে বিশাল গণমিছিল বের করে। মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরে বায়তুল মোকারমের উত্তর গেইটে পৌঁছলে পুলিশ মিছিলকে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও লাঠি চার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশের অমানবিক হামলায় ২শতাধিক হামলায় অসংখ্য কর্মী আহত হয়। পুলিশের হামলায় লোকজন দিকবিদিক ছুটাছুটি করে গলির ভিতর গেলেও পুলিশ সেখানে গিয়েও কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে।
বিষয়: বিবিধ
১০৭১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন দোয়া করুন।দোয়া ছাড়া কোন পথ দেখছিনা।
দেখা যাবে সরকারী হালূয়া রুটির জোরে আবার কোথায় হারিয়ে না যান।
সরকারের এই কর্মকান্ড বন্ধ করতে হলে সবাইকে এক হয়ে মোকাবেলা করতে হবে।
মুনাফিকেরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য যখন এই ইস্যুকে ব্যাবহার করা শুরু করে দেয়,তখনই প্রকৃত আন্দোলন বাধাগ্রস্থ হয়।
তবে এইকথা সত্য- সরকারের এই কর্মকান্ড বন্ধ করতে হলে সবাইকে এক হয়ে মোকাবেলা করতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন