মুনাফিকের করাল গ্রাসে হেফাজাত:মুসলিম জাতির জন্য আরেকটি হতাশা
লিখেছেন লিখেছেন এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:২১:১৮ দুপুর
হেফাজতে রাজনৈতিক মতানৈক্যে বাড়ছে বিরোধ
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে রাজনৈতিককরণে সংগঠনের মধ্যে মতানৈক্য বাড়ছে। ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। সংগঠনটির মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতাদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে মাদ্রাসার অরাজনৈতিক শিক্ষকরা। অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে জড়িয়ে পড়েছেন শীতল বিরোধে। এতে হেফাজত নিয়ে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে।
হেফাজতের নেতৃত্বে যেমন মাদ্রাসার শিক্ষকরা আছেন, তেমনি আছেন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। মূলত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে হেফাজতকে মাঠে নামতে আগ্রহী রাজনৈতিক নেতারা। এ জন্য তারা ২৪ ডিসেম্বর সমাবেশ করার তৎপরতা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে মাদ্রাসার অরাজনৈতিক শিক্ষকেরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে আগ্রহী নন। একই সঙ্গে তারা চান না তাদের মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হোক।
হেফাজতে ইসলামীর নেতৃত্বে আছেন ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারা। এছাড়া, ১৮ দলীয় জোটের বাইরে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা আছেন।
এদিকে, এ সব রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে নিজেদের মধ্যেই জড়িয়ে পড়ছেন শীতল বিরোধে। ফলে হেফাজতের কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়েও সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। হেফাজতের কর্মকাণ্ডের সংবাদ গণমাধ্যমেও পাঠানো নিয়ে নেই কোনো সমন্বয়। নিজের ইচ্ছে মতো তিনজন বিবৃতি ও সভার সংবাদ পাঠান।
শুক্রবার রাজধানীর বারিধারায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও হেফাজতের ঢাকা আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী সাংবাদিকদের ২৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে কথা বলেন। তার এই ব্রিফিংয়ের পর বিকেলে ইসলামী ঐক্য জোটের যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা ওয়াছেল হেফাজতের সমাবেশ সফল করা নিয়ে নিজ দলের হেফাজত নেতাদের একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠান ।শনিবারও ওয়াছেল উপস্থিত ছিলেন না নূর হোসাইন কাশেমী সংবাদ সম্মেলনে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী ঢাকার অস্থায়ী কার্যালয় পরিবর্তন করে বারিধারা মাদ্রাসায় নির্ধারণ করলেও লালবাগকেন্দ্রিক ইসলামী ঐক্যজোটের অংশটি এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। লালবাগ মাদ্রাসাকে অস্থায়ী কার্যালয় দেখিয়ে বিবৃতি পাঠাচ্ছে হেফাজতের এ অংশটি।
এ ব্যাপারে মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী বলেন, ‘আল্লামা শফী সাহেব বারিধারা মাদ্রাসাকেই অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আমি বুঝতে পারছি না তারা কেন এমন করছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে লালবাগ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়ার সুযোগ নেই। আমার সংবাদ সম্মেলনের পর একই দিনে বিবৃতি দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।’
ইসলামী ঐক্য জোটের যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা ওয়াছেল বলেন, ‘আমি ঢাকার হেফাজতে ইসলামের প্রচার সেলের প্রধান। মূল দায়িত্ব আমার। হেফাজতের ঢাকার কার্যালয় লালবাগে। তবে মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী অসুস্থ থাকায় তিনি বারিধারায় সভা করেন। নিয়মিত লালবাগে আসতে পারেন না।’
হেফাজত সূত্রে জানা গেছে, মামলা-গ্রেপ্তারের ভয়ে মাঠে নামতে নারাজ হেফাজতের অরাজনৈতিক নেতারা। ফলে ঘোষণা দিয়ে বারবার স্থগিত হচ্ছে কর্মসূচি। এদিকে রাজনৈতিক দলের হেফাজত নেতারা আল্লামা শফীকে চাপ দিচ্ছেন শাপলা চত্বরে সমাবেশের করতে।
তবে চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে কোনো অবস্থাতেই সমাবেশ করতে আগ্রহী নয় আল্লামা শফীসহ সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। এছাড়া এই মুহূর্তে সমাবেশ ডাকা হলে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক সুবিধা নেবে বলেও কোনো কর্মসূচি করতে অনীহা তাদের।
হেফাজতের সূত্র জানায়, গত বুধবার হাটহাজারীতে রাজধানীর শাপলা চত্বরের সমাবেশের ব্যাপারে হেফাজত নেতাদের একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় অরাজনৈতিক অংশের কয়েকজন শীর্ষনেতা আল্লামা শফীকে মামলা-গ্রেপ্তারের কারণ দেখিয়ে সমাবেশ বাতিল করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ১৮ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও হেফাজতের ঢাকা আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমীসহ ঢাকার রাজনৈতিক নেতারা সমাবেশ করতে আল্লামা শফীকে পাল্টা চাপ দেন। তবে চট্টগ্রাম হেফাজত সূত্রে জানা গেছে আল্লামা শফী ঢাকায় সমাবেশে আসবেন না।
এ বিষয়ে মাওলানা কাশেমী বলেন,‘আমাদের কর্মসূচি ১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য। সরকারের পতনের জন্য নয়। এছাড়া দেশের শান্তি কামনা করে দোয়া করা হবে। সমাবেশে আল্লামা শফী উপস্থিত থাকার সম্মতি দিয়েছেন। তবে তিনি অসুস্থ, এ কারণে না আসতে পারলে কিছু করার নেই।’
মূলত রাজনৈতিক দলের হেফাজত নেতাদের তৎপরতায় চট্টগ্রামের কমিটিতেও তৈরি হয়েছে বিভাজন। গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর ‘শানে রেসালাত সম্মেলন’ ও ১৪ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৫ ডিসেম্বর হরতাল কর্মসূচি নিয়ে এ বিভাজন স্পষ্ট হয়।
হেফাজত ও ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘এসব কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমিসহ আরও অনেকে অবগত ছিলেন না, আমরা পরে জেনেছি।’
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (অরাজনৈতিক) মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘আমরা তো দাঙ্গা-হাঙ্গামা চাই না। যে কারণে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’
উৎসঃ বাংলামেইল২৪ডটকম
বিষয়: বিবিধ
১২৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন