ল্যাংটা বাবা ইসমাঈল
লিখেছেন লিখেছেন আবাবিল ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৪১:৫২ রাত
আমাদের পাশের গ্রামের নাম হরীপুর। সে গ্রামের একটা পাগলের নাম ছিলো ইসমাঈল। সে এক অনন্য পাগল। অনন্য পাগল বল্লাম এই জন্যেই যে তার ছিলো কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য। যেমন-
১। সে জামাকাপড় পরতো না। তার শরীরের ৯০% অংশ বের হয়ে থাকতো। কখনো কখনো পুরোটাই বের হয়ে থাকতো।
২। একটু আধুনিকমনা (!?) ছিলো তাই তার হাতে থাকতো ১০-১২টা করে ঘড়ি।
৩। একটু ঐতিহ্যবাহী(!?) ছিলো তাই তার আংগুলে ছিলো প্রচুর পরিমানে আংটি।
৪। সে ইট খেতে পছন্দ করতো।
৫। কথা বলতো খুবই কম। কাউকে কখনো আক্রমন করতো না। সবাই তাকে ভালোবাসতো।
৬। সবার কাছথেকে দুই টাকার উপর নিতো না।
যাহোক এছাড়া একজন পাগলের আরও যে বৈশিষ্ঠ্য সাধারনত থাকে সেগুলো তার মাঝেও বিদ্যমান ছিলো।
মাস দুয়েক আগে বাড়িতে গিয়ে শুনলাম ইসমাঈল মারা গেছে। শুনে কষ্ট পেলাম। কারন ছোট কাল থেকেই তাকে দেখে আসছি আমাদের বাজারে। ছোট বেলায় দুষ্টমিও করতাম তাঁর সাথে।
ঘটনা এখানেই ষেশ নয়। এর পরে শুনলাম লোমহর্ষক ঘটনা। তাকে কবরস্থানে কবর দেয়া হয়নি। তাকে তারই নিজের জমিতে কবর দেয়া হয়েছে এবং তার উপর বিশাল আকারে মাজার বানানো হয়েছে। সেই সাথে আমাদের দেশের মাজার গুলোতে যা থাকে তার সবই করা হয়েছে যেমন- সামিয়ানা, মোমবাতি, গোলাপ জল,খাদেম, লালসালু মার্কা কাপড় ইত্যাদি।
আমিতো শুনে আক্কেল গুড়ুম। আরো শুনলাম ইতিমধ্যে ঐ মাজারে নাকি বিশাল আকারে ওরশ উদযাপন করা হয়েছে। সেখানে মহিষ জবাই করা হয়েছে , সিন্নি দেয়া হয়েছে। আর আমন্ত্রিত অতিথি ছিলো দেশ বিখ্যাত জটালাধারি বাবাগন। সে ছিলো এক এলাহিকান্ড। গাঁজার ধোয়ায় আকাশ বাতাশ ছিলো মুখরিত(!?), সেই সাথে জটলাধারিদের মাথা আছরিয়ে হু...হু...হু...
জিজ্ঞেস করলাম মাজারের নাম কী দেয়া হয়েছে, "ল্যাংটা বাবা ইসমাঈল" নাকি? উত্তরে জানলাম মাজারের নাম "হযরন বাবা ইসমাঈল শাহ"
এদিক সেদিক তথ্য নিয়ে দেখলাম। ইতিমধ্যে আমাদের এলাকার ও গ্রামের অনেকেই তার ভক্ত বনে গেছে।
অথচ তারাই নিজের চোখে ইসমাঈলকে সম্পর্ন বিবস্ত্র অবস্থায় হাটে বাজারে দেখেছে। আরও খেয়া করলাম নানা মুখরোচক কল্পকাহিনীও সাজানো হয়েগেছে তার নামে। অনেকেই তার মাঝে নিজের কল্যান খোঁজা শুরু করেছে।
আজ থেকে ১০০-২০০ বছর পরে যা হবে এই ইসমাঈলকে ঘিরে তা হয়তো নিম্নরুপ-
১। ইসমাঈল ছিলো আল্লাহর ওলি
২। সে আকাশে উরতে জানতো এবং পানির উপর দিয়ে হাটতে পারতো।
৩। সে এতই ধ্যানমগ্ন থাকতো যে তার শরীরে যে কাপড়র নেই সে খেয়ালও রাখতো না।
৪। তার হাতের আংটিগুলো কথা বলতো এবং শত্রুর যাবতীয় খোজ খবর তাকে জানাতো।
৫। সে ছিলো আধুনিক ঘড়ির আবিষ্কারক।
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি...
"তাদের অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর উপর ঈমান আনে আবার সাথে সাথে শিরিক করতে থাকে"
-- সুরা ইউসুফ ১০৬
বিষয়: বিবিধ
৩২৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন