"ধারাবাহিক নামাজ শিক্ষা"--৩
লিখেছেন লিখেছেন সান বাংলা ২৪ জুন, ২০১৪, ১০:১৮:৫৩ সকাল
নামাজের ওয়াজিব:
নামাজের ওয়াজিব হচ্ছে যদি নামাজের ওয়াজিব কোন একটা ভুলক্রমে ছুটে যায় তবে সহু-সিজদা দিতে হবে, আর যদি সহু-সিজদা না দেয়া হয় তবে নামাজ আদায় হবে না।আর ইচ্ছাকৃত ভাবে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে নামাজ হবেনা। নামাজের ওয়াজিব হল ১৪ টি – সুরা ফাতেহা পুরা পরা সুরা ফাতেহার সাথে সুরা মেলানো রুকু-সিজদায় দেরি করা রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা দরমিয়ানি বৈঠক অর্থাৎ দুইয়ের অধিক রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে দুই রাকাত পরে আত্তাহিয়াতু’র জন্য বসা উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পরা ঈমামের জন্য কিরআত আস্তে’র জায়গায় আস্তে এবং জোরে’র জায়গায় জোড়ে পড়া বিতর নামাজে দোআ কুনুত পড়া দুই ঈদ’র নামাজে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর বলা ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা প্রত্যেক রাকাতের ফরয এবং ওয়াজিব’র তরতিব ঠিক রাখা ইমাম’র অনুসরণ করা সালাম ফেরানো এখানে উল্লেখ্য যে আমরা রুকুতে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদার মাঝখানে বসার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি করি।রুকু হতে দারানর সময় পুরা সোজা হয়ে দারাতে হবে এবং দুই সিজদার মাঝখানে একেবারে সোজা হয়ে বসতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই একবার তাসবিহ অর্থাৎ “সুবহানআল্লাহ” পড়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম।এশা’র নামাজের পর বিতর নামাজে দোআ কুনুত পড়ার ব্যাপারটি অত্যন্ত জরুরি। যে দোআ কুনুত পরতে পারেনা সে মুখস্থ করবে।আর মুখস্থ করার সময় পর্যন্ত সে “ রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাত্নাউ ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাত্নাউ অয়াকিনা আজাবান্নার” একবার এবং তিনবার “আল্লাহহুম্মাগফিরলি” পরবে।
নামাজের সুন্নতসমূহঃ
১)তাকবীর বলে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠান । ২) হাতের আঙ্গুল পরস্পর পৃথক রাখা । ৩) ইমামের জন্য নামায আরম্ভের তাকবীর উচ্চঃস্বরে পড়া । ৪) ছানা পাঠ করা । ৫) “আউযুবিল্লাহ্” পাঠ করা । ৬) “বিছমিল্লাহ্” পাঠ করা । ৭) সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ঈমাম ও মুস্তাদিগণের মৃদুস্বরে “আমীন” বলা । ৮) পুরুষের জন্য নাভীর নীচে তাহরিমা বাঁধা আর স্ত্রী লোকের জন্য ছিনার উপরে তাহরিমা বাঁধা ৯) রুকুর তাকবীর বলা । ১০) রুকুতে দুই হাঁটু ধরা ও আঙ্গুল সমুহ পরস্পর পৃথক রাখা । ১১) রুকুর ভিতরে তিন, পাঁচ বা সাতবার তাছবীহ্ বলা । ১২) রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ান । ১৩) রুকু হতে উঠার সময়ে ইমামের “ছামিয়াল্লাহ হুলিমান হামীদা” ও মোক্তাদিগণের “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা । ১৪) ছেজদায় গিয়ে দুই হাঁটু ও তাকবীর বলে বসা । ১৫) ছেজদায় তাছবীহ্ পড়া । ১৬) পুরুষের জন্য ছেজদাহ হতে উঠে ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা, আর স্ত্রীলোকের উভয় পা ডান দিকে বাহির করে ছতরের উপর বসা । ১৭) ছেজদা থেকে উঠার পর এক তছবীহ্ পরিমাণ সময় বসে থাকা । ১৮) দরুদ শরীফ পাঠ করা । ১৯) দোয়ায়ে মাছুরা পড়া । ২০) দুই দিকে ছালাম ফিরান
নামাজের মুস্তাহাবসমূহঃ
এক্বামতের সময়ে “হাইয়্যালাল ফালাহ্” বলামাত্র নামাযে ঠিকভাবে দাঁড়ান । তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়ে আন্তিন হতে হাতের তালু বাহির করা । দাঁড়াবার সময়ে সিজদার জায়গার প্রতি দৃষ্টি রাখা । রুকুতে পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা । বৈঠকে কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা । সাধ্যানুযায়ী হাসি ও কাশি বন্ধ রাখা । রুকুতে মাথা ও পৃষ্ঠ ভাগ সমান উঁচু রাখা । সিজদায় প্রথমে দুই হাঁটু ,তারপর দুই হাত জমিনে রাখা, পরে নাক ও তারপরে কপাল জমিনে রাখা এবং সেজদা হতে উঠার সময়ে যথাক্রমে প্রথমে কপাল, পরে নাক উঠিয়ে তৎপর দুই হাত হাঁটুর উপরে রেখে বসা । সিজদায় দুই হাতের মধ্যে মাথা রাখা, নাক দুই বৃদ্ধাংগুলির মধ্যে বরাবর রাখা । হাত-পায়ের আঙ্গুলিসমূহ কেবলা মুখ করে রাখা । ছালাম ফিরানোর সময় দুই সিনার প্রতি দৃষ্টি রাখা । সেজদায় পুরুষের দুই হাত পৃথক ভাবে রাখা এইভাবে উঁচুতে রাখতে হবে যেন বকরীর বাচ্চা যাতায়াত করতে পারে । কিন্তু স্ত্রীলোকের জন্য সেজদায় এর বিপরীত করতে হবে । যেমন দুই হাত চাপিয়ে রাখা এবং রানের উপর পেট রাখা । তিন বারের অধিক-বেজোড় তছবীহ্ পড়া । ফযরের নামাযে (سورة الحجراة – سورة البلد ) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পড়া। আছরের নামাজে ( سورة الشمس – سورة البينة) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পড়া । মাগরিবের নামাজে ছোট ছোট সূরাহ (سورة الزلزال - سورة الناس) পাঠ করা । এশার নামাজে (سورة الحجراة – سورة البلد ) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পাঠ করা ।
নামাজের মাকরূহ বিষয়সমূহঃ
১)চাদর বা জামা না পড়ে কাঁধে ঝুলিয়া রাখা । ২) ময়লা ধুলা-বালি লাগার ভয়ে কাপড়/জামা গুটানো । ৩) আঙ্গুল মটকান । ৪) বস্ত্র,শরীর অথবা দাঁড়ির সাথে খেলা করা । ৫) এদিক ওদিক দেখা । ৬) চুল মাথার উপরিভাগে বাঁধা । ৭) বিনা ওজরে সেজদার স্থানের ইট-পাথর সরান । ৮) আলস্যভরে শরীর মোড়ামুড়ি করা । ৯) সিজদার সময়ে হাত বিছিয়ে দেওয়া । ১০) আগের কাতারে স্থান থাকতে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো । ১১) অবহেলা করে খালি মাথায় নামায পড়া । ১২) আকাশের দিকে তাকান । ১৩) ভাল কাপড় থাকা সত্ত্বেও মন্দ কাপর পড়ে নামায পড়া । ১৪) নামাযের মধ্যে কপালের মাটি মুছে ফেলা । ১৫) কোন প্রাণীর ছবি সম্মুখে,ডাইনে,বামে,মস্তকের উপর বা কাপড়ের মধ্যে থাকা । ১৬) সিজদার সময়ে বিনা কারণে হাটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখা । ১৭) বিনা কারণে আসন পেতে বসা । ১৮) ফরয নামাযে এক সূরা বার বার পড়া । ১৯) কোন মানুষের মুখের দিক হয়ে নামায পড়া । ২০) সিজদাতে পিঠ উভয় উরুর সহিত মিলিয়ে দেওয়া । ২১) এক হাত বা তদুর্ধ স্থানে ইমামের দাঁড়ান । ২২) উভয় সিজদার মধ্যে অথবা তাশাহুদ পড়ার সময়ে কুকুরের ন্যায় বসা । ২৩) দুই হাতে মাটি ভর দিয়া উঠা । ২৪) কোন সুন্নত পরিত্যাগ করা । ২৫) নাক মুখ ঢেকে নামাজ পড়া
বিষয়: বিবিধ
২০৪৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন