“বিদেশ নামের সোনার হরিণ”(দুঃসহ জীবন যাত্রা)
লিখেছেন লিখেছেন ওমর শরীফ ২০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৫৭:১৬ সন্ধ্যা
বিধাতার কাছে খুব চাইতে ইচ্ছে করে;হে বিধাতা,কিছু সময়ের জন্য আমাকে দু‘টো ডানা দাওনা;আকাশে উড়ে বেড়ানো ঐ পাখিদের মত। একটি বার উড়ে গিয়ে দেখে আসি;আমার প্রিয় স্বদেশটাকে,দেখে আসি আদরীনি মাকে। দুই গালে একটু আদর করে আসি আদরের ছোট্ট ভাইটিকে। বন্ধু মহলে একটু আড্ডা দিয়ে আসি। মনের কিছু দুঃখ শুনিয়ে আসি শৈশব,কৈশরের হাঁজারো সৃতীর সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চেনা আকাশটিকে। সবুজ প্রান্তঘেরা সোনালী ধানের ক্ষেতের পাশ দিয়ে কিছুটা সময় হেটে আসি। দেখে আসি কতোদিন ধরে না দেখা প্রিয়জনদের মুখ গুলোকে। সেই বটের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আসি কিছুটা সময়। দূর থেকে দেখে আসি শৈশব,কৈশরে ছুটে বেড়ানো সেই গোল্লা ছুটের মাঠখানি। প্রানভরে নিঃশ্বাসের সাথে নিয়ে আসি বেঁচে থাকার জন্যে কিছু অক্সিজেন। জানো! এখানে না মাঝে মাঝে নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসে। বুকের ভিতর চিন করে উঠে;কষ্ট গুলো সব দলা দলা গলায় ঠেকে যায়। আমি যেনো আর ঢোক গিলতে পারি না।
এ কথাগুলো শুধু একা আমার নয়; প্রবাসে থাকা প্রত্যকটি বাংলাদেশী ভাইদের। আজ তাদের নামের পাশে আরেকটি নাম এসে যোগ হয়েছে;তাদের আরেকটি পরিচয়, এখন তারা প্রবাসী। সেই প্রবাসীদের দুঃসহ জীবন যাত্রার কথাই আজকে বলবো।
বিদেশে সোনার হরিণের প্রত্যাশায় বাংলার সোনার ছেলেরা বাবার ভিটেমাটি,মায়ের স্বর্নালঙ্কার বিক্রি করে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে আকাশে ডানা মেলে। আর তখনি নিজ দেশ ছেড়ে অন্যর দেশে হয়ে উঠেন প্রবাসী।
হায়রে প্রবাস জীবন! কঠিন কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রান্ত,ক্লান্ত, অবসন্ন দেহে ঘরে ফিরে প্রতিটি মানুষ।
ঘাত-প্রতিঘাতকে জয় করে সোনালী স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য চালায় জীবন সংগ্রাম!বাবা-মায়ের মুখে ফুটাবে হাসি’ সংসার হবে সুখের।
হায়রে জীবন সংগ্রাম! এ সংগ্রামের অবসান হবে কবে? হয়তো কোনো দিনই হবেনা। সংগ্রাম চলছে,চলবে আমরন। সংগ্রামে যে বিজয়ী সে কিছুটা কামীয়াবী;আর যে সংগ্রাম করেও কামীয়াবী হতে পারছে না তার অবস্থা কি?
যারা সময়ের সাথে গা মিলিয়ে দিয়ে ভেশে যাচ্ছে তারা পরবর্তীতে মহা আফসোস করেও যেন ভাগ্যকে আর ফিরিয়ে আনতে পারছে না।
হায়রে ভাগ্য! ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস! যে ছেলেটি বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে থাকতে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে খেতো না, সেই সোনার ছেলেটি সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে ঘরে ফিরে নিজের হাতে রান্না করে খায়।কাপড় পরিস্কার করে, ঘর গোছায় অর্থাৎ জীবনের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই নিজেকে করতে হয়। তবু করবো জয় এটাই দৃঢ় প্রত্যয়।
হায়রে কাজ! প্রবাসের কাজ বলতেই সব নিন্মস্তরের কাজ;যা সত্যিই লজ্জাজনক; যে কাজটি কোন দিনই দেশে থাকতে করার প্রশ্নই আসেনা। কিন্তু প্রবাসে এসে সেই কাজটিই কতোনা মহা আনন্দে করতে হচ্ছে। তাও যদি ভাগ্য জোরে জোটে। একটি কাজ জোগাড় করা যে কি কষ্ট তা শুধুমাত্র যে করে সেই বুঝতে পারে।ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে হয়। আর যদি ভাগ্য একটু খেলা করে তবে তো কথাই নেই; সেই নিন্মস্তরের কাজ জোগাড় করতে করতে জীবন হয়ে যায় সারশূন্য।
হায়রে বাসা ! যেখানে আপনি প্রথম উঠবেন যদি কোন পরিচিত,পরিজন না হয়; তবে যে কি দুঃসহ অবস্থা যা যে উপভোগ করেছে সেই একমাত্র জানে । প্রতিটি শহরের একই অবস্থা; বাসা নেই;হোটেলে ক’দিন; বাসা আছে জায়গা নেই; নেই সীট’ ফ্লোরিং, তাও আবার বাড়ীওয়ালার হুঁশিয়ারী। আছে বাথরুমে দীর্ঘ লাইন। কোন রকম মাঝখান দিয়ে হেঁটে বাথরুমে যাওয়া। শব্দ ছাড়া হাঁটা এলাকা। কত কিছুইনা সহ্য করতে হয় থাকার জন্য। কষ্টে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার কষ্ট কি?
বাবা-মা’র সর্বস্ব দিয়ে দালালের পিছে ঘোরাঘুরি আজ না কাল; কাল না পরশু;দিনের পর দিন;মাসের পর মাস ;তবুও যদি মিলে একটি ভিসা; হয় যদি বিদেশে আসা।
তবুও চলছে জীবন; কাটছে দিন; এভাবেই চলতে থাকবে;সপ্নের,সুখের পিছনে ছুটতে,ছুটতে আবার একদিন সবকিছু শান্ত নিরব হয়ে আসবে;কতটুকু সুখ পেয়েছি কিংবা পাবো সেই হিসাব মেলাবার সাহস আমাদের হয়না;যখনি মেলাতে যাই চোঁখ দু’টো জলে ভেশে উঠে। আমরা আর পারি না। এভাবে আর কতোদিন ?
বিষয়: বিবিধ
৫৫৯৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক আবেগ দিয়ে আপনার ও আর অনেকের কষ্ট গুলো তুলে ধরেছেন । ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন