মানবতার প্যাকেজে ওদের নামটি কেনো আসেনা?
লিখেছেন লিখেছেন ওমর শরীফ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৫৬:০৬ বিকাল
সভ্যতার রাজপথে নিহত ব্যক্তিটি এখন লাশ হয়ে পড়ে আছে,অযত্নে আর অবহেলায় পৃথিবীর সমস্ত মায়া থেকে নিজেকে সে বিদায় দিয়েছে একটু আগেই। রক্তে রক্তে ভিজে গিয়ে সাদা জামাটি এখন লাল হয়ে আছে; দূর থেকে তাকালে মনে হয় এ বুঝি লাল টুকটুকে রক্ত গোলাপ কিন্তু,এমনভাবে পড়ে আছে যেন পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার কোন অধিকারী ছিলনা! বাগানের সুগন্ধিমাখা গোলাপটি এখন আরো বেশী লাল হয়ে পড়ে আছে ধুলোমাখা রাজপথে। রাষ্ট্রের জীবিতদের থেকে সে আর কোনদিন পানাহার চাইবে না,অর্থও চাইবে না। কিন্তু জীবিতদের কাছে তার একমাত্র চাওয়াটি হলো,খুনির শাস্তি। বিচারের সে দায়ভার রেখে যায় জীবিতদের কাঁধে। সভ্য সমাজে গুরুতর অপরাধীরও বিনা বিচারে হত্যা করার অধিকার কারো নেই,এমন কি দেশের রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধানেরও নাই। এটি এক নিরেট সন্ত্রাস।
বাংলাদেশে জীবিতরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে,তেমনি মৃতরা বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায় বিচার থেকে। অথচ নিহতদেরও বেঁচে থাকার ন্যূন্যতম মানবিক অধিকার ছিল। খুনির হাতে অহরহ ছিনতাই হচ্ছে সে অধিকার। মানব জীবনে এটিই সবচেয়ে বড় ছিনতাই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,যে ব্যক্তি কাউকে (বিনা বিচারে)হত্যা করে সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করলো। আইনের দৃষ্টিতে এটিই সবচেয়ে বড় অপরাধ। আমাদের এই হাহাকারে জড়ানো আকুতিভরা কথাগুলো হয়তো দেশের চরিত্রহীন,ধর্মহীন ও বিবেকহীন রাজনৈতীক নেতাদের কাছে হয়তো মামূলী বিষয়। মামূলী বিষয় দেশের দুর্বৃত্ত পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মচারিদের কাছেও। কারণ দুর্বৃত্তদের জীবনে শুধু যে ঈমান ও নৈতীকতা লোপ পায় তাই নয়, লজ্জাও লোপ পায়। মানুষের ঈমান ও বিবেক দেখা যায় না। কিন্তু দেখা না গেলেও অজানা থাকে না। দেহের ত্রুটিকে পোষাকে ঢেকে রাখা গেলেও মনের রোগ লুকানো থাকে না। সেটি দ্রুত প্রকাশ পায় ব্যক্তির কর্ম ও আচরনে। ধরা পড়ে ন্যায়কে ভালবাসা এবং অন্যায়কে ঘৃনা করার সামর্থের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সমাজে যারা মানবাধিকার প্যাকেজ নিয়ে ঘুরে বেড়ান অথবা দেশের সুশীল সমাজের বিবেকবান মানুষদের কাছে আমার প্রশ্ন? এই মানবাধীকার কি শুধুমাত্র বিশেষ কোন শ্রেনী বা দলের জন্য? কতোটা নৃশংসভাবে খুন হলে আপনাদের ঐ মানবাদীকার প্যাকেজে ঐ নামটি উঠে আসে? কতোটা অধীকার হনন হলে আপনাদের মুখে অধীকারের বুলি ফুটে উঠে?ভাবুন!উত্তরটা একটু পরেই নিচ্ছি।
খুন শুধুমাত্র রাতের আঁধারেই হচ্ছে না,মানুষ এখন খুন হচ্ছে দিনেদুপুরে এবং প্রকাশ্য রাজপথে। সরকারি বাহিনীর হাতে কেউ খুন হলে কি সে খুনের বিচার হয়? র্যা ব বা পুলিশের বিরুদ্ধে কেস করতে থানায় যাবে,সে সাহস ক’জনের? যেন জঙ্গলের অরাজকতা। জঙ্গলে হিংস্র পশুর হাতে কেউ নিহত হলে সে পশুর বিরুদ্ধে কোন পুলিশই তদন্তে নামে না। আদালতও সমন জারি করে না।ফলে তা নিয়ে কোন বিচারও বসে না। বাংলাদেশে সে শিকারী জন্তুটির স্থানটি নিয়েছে পুলিশ,র্যা ব ও সরকারি দলের গুণ্ডারা। র্যা ব ও পুলিশ পরিণত হয়েছে দেশের সবচেয়ে সংগঠিত সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠানে। নেতারা শুধু আইনবহির্ভূত হত্যার নির্দেশই দেন না,তেমন হত্যা নিয়ে বুক ফুলিয়ে গর্বও করেন। খুনিরা এতকাল রাতের আঁধারে গোপনে খুন করতো। এখানে তারা এতটাই স্বাধীনতা পেয়েছে যে একাজে রাতের ঘুম নষ্ট করাকে অনার্থক মনে করে। প্রয়োজন বোধ করে না হত্যাকর্ম গোপনে করার। বরং সেটি করে দিনে-দুপুরে বহু লোকের চোখের সামনে।
বাংলাদেশের পুলিশ ও আদালত পরিনত হয়েছে এখন রাজনৈতিক হাতিয়ার রুপে। পুলিশের কাজ হচ্ছে,সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেফতার করে রিমাণ্ডে নিয়ে পেটানো। আদালতের কাজ হচ্ছে,বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের রিমোণ্ডের নামে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া এবং তাদের কারারুদ্ধ করার ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যে কতটা আস্তাকুরে গিয়ে পড়েছে তা বুঝতে কি বিশাল বিদ্যা বুদ্ধির প্রয়োজন? শেখ হাসিনা বলেছেন,“পুলিশ যেন ধৈর্যের সাথে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো,জামায়াত শিবিরকে কেন প্রতিহত করা হবে? তারা কি বাংলাদেশের নাগরিক নয়? রাজনীতির অধিকার কি তাদের মৌলিক মানবাধিকার নয়? সে অধিকারে হাত দেয়া তো সন্ত্রাস। বাংলাদেশ কারো পিতার তালুক বা জমিদারি নয়। বাংলাদেশের মাটিতে শেখ হাসিনা ও তার দলের রাজনীতির যতটা অধিকার আছে, জামায়াত-শিবির কর্মীরও সে পরিমান অধিকার আছে। তা থেকে এক বিন্দু কম নয়। জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করা ও নির্মূল করা যদি সুস্থ্য রাজনীতি হয়,তবে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা ও নির্মূল করাও তো ন্যায্য রাজনীতি। এতে কি দেশে সংঘাত বাড়বে না? এমন প্রতিহত করার রাজনীতি কি কারো মানবাধিকারের উপর হামলা নয়? আর এমন হামলা কি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ নয়? তাছাড়া রাজনীতিতে কোন দলকে প্রতিহত করার দায়িত্ব কেন পুলিশ নিবে? বরং পুলিশের দায়িত্ব হলো,যারা অন্যদের রাজনীতি প্রতিহত করার নামে তাদের মানবিক অধিকারে হাত দেয় তাদেরকে গ্রেফতার করা ও কোর্টে চালান দেয়া। এছাড়াও সরকারের আরেকটি মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে; দাড়ি-টুপিধারিদের গ্রেফতার করা এবং তাদের উপর নির্যাতন চালানো। কারণ, তাদের শত্রু চোর-ডাকাত নয়,সন্ত্রাসী বা নারী পাচারকারিরাও নয়। বরং ইসলামপন্থিরা। যে কোন দেশেই বিভিন্ন দলের মাঝে রাজনৈতীক লড়াই থাকে। তবে সেটি হতে হবে রাজনৈতীক ভাবে। পুলিশ দিয়ে নয়। দলীয় গুন্ডাদের দিয়েও নয়। সরকার কি জানে না যে দেশ আজ ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে পতিত হতে যাচ্ছে!
এক বিশ্বজিৎকে নির্মম হত্যার পর সকল গনমাধ্যম ও পত্রিকাগুলিও এরূপ নিষ্ঠুর হত্যার নিন্দা করেছে। তারাও বিচার দাবী করেছে। অনেক কলামিস্টরা নিন্দা করে কলামও লিখেছেন। এই প্রথম যেন তাদের বিবেক মৃত অবস্থা থেকে জেগে উঠলো। এটি কি এজন্য যে বিশ্বজিৎ দাশ একজন হিন্দু? রাজশাহীর শিবির কর্মীদের মাথা ইটের উপর রেখে অন্য ইট দিয়ে জোরে জোরে গুতিয়ে গুতিয়ে মাথার খুলি ভাঙ্গা হয়েছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাশের উপর নাচানাচি করেছিল। সে হত্যা কি বিশ্বজিৎ হত্যার চেয়ে কম নৃশংস ছিল? কিন্তু আওয়ামী লীগের সে খুনিদের আজও শাস্তি হয়নি। তা নিয়ে কোন মামলাও হয়নি। সেদিনও এই নৃশংস হত্যা নিয়ে পত্রপত্রিকায় এত লেখালেখি হয়নি।ছাপা হয়েছিল কি কোন ছবি? হয়েছিল কি কোন টিভি টক শো? না হওয়ার কারণ কি এটি,নিহতরা হিন্দু ছিল না? নাকি মুসলমান হওয়াই ছিল তাদের অপরাধ? অথবা ওরা জামায়াত-শিবির ছিল তাই ওদের জন্য কোন মানবাধিকার নেই? আওয়ামী লীগের কেউ সামান্য আক্রান্ত হলেই মানবাধীকার প্যাকেজগুলো একেএকে সব সেখানে গিয়ে হাজির হয় অথচ মিছিল করা মানবিক অধিকার। আজকে জামায়াত,শিবিরের সে অধিকার খুনের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভাবখানা এমন যেন এটি কোন অপরাধই নয়! বরং এই নৃশংস খুনের বিরুদ্ধে কথা বলাটাই যেন মানাবতা বিরোধী অপরাধ। আজও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা নৃশংসতা ভাবে খুন হচ্ছে ;তাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হচ্ছে! চোখের সামনেই পা কেটে নেয়া হল! চোখের সামনে থেকে ধরে নিয়ে পুলিশ হেফাজতেই চোখ তুলে ফেলা হল!পশুর মতো গুলি করে শহীদ করা হয়!তাদের নাক মুখ মাথা থেতলে দেয়া হয়! বুকে বাশের ফালি দিয়ে কলিজা ছিড়ে ফেলা হল! এগুলি কি কম বীভৎস ও নিষ্ঠুর? বাংলাদেশের কোন লেখক,কোন সাংবাদিক বা কোন পত্রিকা সম্পাদকের চোখে সে নৃশংসতা কোন নৃশংস মনে হয়না। বরং তারা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরুলেই তাদের কাছে সেটা জামায়াত-শিবিরের তান্ডব মনে হয়। যারা মুখে মানবতার বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন তাদের কাছেও এটি বর্বরতা মনে হয়। বাংলাদেশে মানবাধীকার চেয়্যারম্যান তিনিও আজ একচোখা রুপ ধারন করে বসে আছেন অথচ এমন বীভংস বর্বরতার নিন্দা জানাতে বেশী মানবতা লাগে না। গুলিকরে হত্যা কিংবা চোখ উপড়ানো লাশটিও তাদের মানবতার প্যাকেজে আসেনা। এজন্যই খুনের পর তাই উৎসব করে খুনিরা।
ডাকাতের পল্লীতে অন্যায়কে অন্যায় এবং জুলুমকে জুলুম বলা যায় না। বরং সেখানে হয় নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা নিয়ে উৎসব,উল্লাস। হিটলারের জামানায় গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদীর মৃত্যুতেও জার্মানীতে তাই প্রতিবাদ হয়নি। প্রতিদেশে ফ্যাসিস্টরা একই ভাবে মানুষের বিবেককে হত্যা করে। বাঙালীর বিবেকে আওয়ামী লীগ যে কতটা পচন ধরিয়েছে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের কর্ম ও আচরণ হলো তারই প্রমাণ। জামগাছ থেকে আম যেমন কখনো পাওয়া যায় না। ফিরাউন-আবু লাহাব-আবু জেহেলদের সুবিচার সম্ভব হয়ে তাদের বিনাশের কেন প্রয়োজন দেখা দিল? চেঙ্গিজ খান কখনোই তার নৃশংস খুনি সৈনিকদের বিচার করেনি। হিটলারও করেনি। বর্তমান আওয়ামী সরকারও করছেনা বরং উৎসাহ দিয়ে চলেছে বিরোধীদের নিধনে। আজ কার কাছে চাইবো মানবতা? কোথায়,কোন গর্তে ঘাপটিমেরে বসে আছে সে! তাই কারো কাছে মানবতা আজ আর চাইতে ইচ্ছে করেনা। কেবলমাত্র একজনের কাছে সেই বিচারের ভার তুলে দিয়েছি যিনি সকল বাদশার বাদশা যিনি সকল বিচারকদের বিচারক।
আঁধার যেমন আলোকে বরদাস্ত করে না,তেমনি আওয়ামীলীগও জামায়াত-শিবিরকে বরদাস্ত করতে পারছেনা। তাদের একটাই ভয়! আধারে লুকিয়ে থাকা হুতুম পেচাটি যেভাবে ভোরের সূর্যকে গালাগাল দিতে থাকে আর রাত যত গভীর হয় গালাগাল তত বাড়তে থাকে তাই বলে সূর্য উঠা কিন্তু বন্দ হয়ে যায়না তেমনি জামায়াত শিবিরের মানবিক অধিকার হনন করা তাদের এতো জুলুম,নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবার পরও যদি বাংলার আকাশে সেই সোনালী ভোরের উদিত হয় তবে হুতুম পেচাদের কি হবে!!! জুলুম,নির্যাতন বাড়ার সাথে সাথে বিজয়ের সম্ভাবনাও ততই নিকটে ঘনিয়ে আসে। অতএব,রাত এখন অনেক গভীর অপেক্ষা শুধ সেই সোনালী ভোরের…।।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন