ফিরে দেখা পয়লা এপ্রিল
লিখেছেন লিখেছেন নেওয়াজ ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৫৭:২৭ সকাল
আজ পয়লা এপ্রিল। ছোটবেলায় না জেনে অনেকের মতো আমিও দিনটিতে মজা করতাম কাউকে ঠকিয়ে। অথচ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেয়া এক মর্মন্তুদ সত্য ঘটনা কী ঘটেছিল সেদিন, তা আমাদের সবার জানা উচিত।
৭১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই তারিক বিন জিয়াদ নামে এক মুসলিম বীরের নেতৃত্বে সাত হাজার ৩০০ সৈন্য (মতান্তরে ১২ হাজার) যুদ্ধে স্পেনের খ্রিষ্টান সেনাপতি রডারিকের এক লাখ সৈন্যকে পরাজিত করে দেশটি জয় করে ও প্রায় আট শত বছর ধরে শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মতত্ত্বচর্চা, স্থাপত্যশিল্প, জ্যোর্তিবিদ্যা প্রভৃতির বিকাশ, সর্বোপরি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম শাসকেরা স্পেনের কর্ডোভা, টলেডো, সেভিল, গ্রানাডাকে উদার ও, বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপকে আলোয় পথ দেখিয়েছিলেন। এর স্বীকৃতি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেক ইতিহাসবিদের লেখায় আজো উজ্জ্বল।
কালের পরিক্রমায় একসময়ে এই মুসলিম সাম্রাজ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, হানাহানি, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা মহামারীর রূপ নেয়। ফলে গ্রানাডার শেষ রাজা আবুল হাসানের ছেলে আবু আবদুল্লাহ ওরফে কুখ্যাত কুয়াবদিল ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জানুয়ারি বাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গ্রানাডা দখল করে খ্রিষ্টান রাজারানী ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার হাতে তুলে দেন। এ কাজে মা আয়েশা ছেলের পক্ষে সমর্থন জোগালেন। এর পর স্পেনের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে মুসলিম সৈন্যগণ প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। উপায়ান্তর না পেয়ে কূটকৌশলী ফার্ডিন্যান্ড প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ঘোষণা করেন, মুসলিমরা অস্ত্র ত্যাগ করে পয়লা এপ্রিল মসজিদে আশ্রয় নিলে তারা ক্ষমা পাবে এবং অত্যাচারের শিকার হবে না। নিরুপায় মুসলিম নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধ সবাই এ প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে মসজিদে আশ্রয় নিলে আগুন লাগিয়ে অগ্নিকুণ্ডে পুড়িয়ে মারা হয় নিরস্ত্র অসংখ্য মুসলিমকে। তদুপরি সমগ্র স্পেনের অবশিষ্ট মুসলিমদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়। এ নারকীয় তাণ্ডব সর্বশেষ মুসলিম নিধন না হওয়া, অর্থাৎ তৃতীয় ফিলিপের শাসনামল ১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
১৪৯২ সালের পয়লা এপ্রিল যে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল, সেই নৃশংসতার স্মৃতি হিসেবে খ্রিষ্টান জগৎ পয়লা এপ্রিল দিনটি আনন্দ দিবস বা এপ্রিলফুল হিসেবে পালন করে আসছে।
যে জাতির মাধ্যমে একদিন সমগ্র ইউরোপে সভ্যতার চেতনার উদ্ভব হয়েছিল, সেই ভাগ্যবিড়ম্বিত মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করতে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল ১ এপ্রিল। মানব ইতিহাসে এটি এক কলঙ্কিত অধ্যায়। মানবতার ধারক-বাহক মুসলিমদের কাছে সে ঘটনা বিষাদের চির অমার্জনীয় ঘটনা। সমগ্র মুসলিম জগতে পয়লা এপ্রিল বছর ঘুরে অপার বেদনা জাগিয়ে যায়।
(কামরুজ্জামান টুটুল)
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন