যখনই বাসে উঠি বুকটা অজানা আতংকে কেঁপে উঠে
লিখেছেন লিখেছেন নেওয়াজ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:১৭:৪৪ দুপুর
বিগত একমাসের অবরোধ নামক এই রাজনৈতিক কর্মসূচীতে গোটা বাংলাদেশ যেন একটি মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে, মানুষের জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে, জন্মিলে মরিতে হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু মৃত্যুর নামে এই বিভীষিকা, এই নৃশংসতা মানুষ হিসেবে সহ্য করা ক্রমেই দায় হয় যাচ্ছে। কেউবা মারা যাচ্ছে পুড়ে, কেউবা পুলিশের গুলিতে। পেট্রোল বোমা নামের যে মৃত্যুদূতের আবির্ভাব হয়েছে তা এর আগে আমরা দেখেছি বলে আমার মনে পড়ছে না। সাধারন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর কোন গ্যারান্টি আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কোন একজন মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আবার যে বাসায় ফিরতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
প্রতিটি মানুষ মৃত্যু ভয়ে ভীত। আমি নিজেও তাই। যখনই বাসে উঠি তখনই মনে হয় এই বুঝি কোন এক দিক থেকে পেট্রোল বোমা এসে আমার সমস্ত শরীর ঝলসে দিবে। আমাকে ঝলসানো অবস্থায় নেয়া হবে বার্ণ ইউনিটে। মিডিয়ার স্ক্রোলে আমার পুড়ে যাবার খবরটি প্রচার করা হবে। চিকিৎসক সাংবাদিকদের বলবেন যে আমার শরীরের এত ভাগ পুড়ে গেছে, বাঁচার সম্ভাবনা একেবারই কম। একদিন আমি আমার আপনজনদের ছেড়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবো। আমার মৃত্যুর পর আর একবার টেলিভিশনে আমার নাম নেয়া হবে। সরকার এবং সরকার বিরোধীরা পরষ্পর পরষ্পরকে দায়ী করে বিবৃতি দিবে। এই ধরনের ঘটনা প্রবাহ বর্তমানে নিত্যনৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মানুষ আমার মৃত্যুতে সমবেদনা জানাবেন। কিন্তু তারপর কি হবে? আমরা কি কেউ ভেবে দেখি যে মানুষটি মারা গেলেন তার পরিবারের কথা, আমরা কি ভাবি তার সন্তানাদির ভবিষ্যতের কথা?
আর যদি কোন ভাবে বেঁচেই যাই তাহলে আমার ভবিষ্যতই বা কি? অর্ধ ঝলসানো শরীরটা তখন আমার কাছে হয়ে যাবে বোঝা। হয়ত কর্মক্ষমতাও হারাতে পারি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনও এরকম একটা বেঁচে থাকা কামনা করি না। হয়ত এরকম একটা জীবনের চেয়ে মৃত্যুই আমার কাছে শ্রেয়।
রোজ সকালে আমাকে বাসা থেকে অফিসে আর রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে হয়। বাসই আমার একমাত্র যানবাহন। যখনই বাসে উঠি বুকটা অজানা আতংকে কেঁপে উঠে। এভাবে আর কতদিন?
বিষয়: রাজনীতি
১১৬০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন