আল্লাহর অলীগণের কারামত এবং চাঁদে আল্লামা সাঈদী

লিখেছেন লিখেছেন আবু লাবীব ইউসুফ সরকার ১০ মার্চ, ২০১৩, ০২:০৬:২৬ দুপুর

কারামত কি?

কারামত হল অসাধারণ কোন ঘটনা যা আল্লাহ্ তাঁর নেক বান্দাগণের মাধ্যমে তাদের জিবীতাবস্থায় অথবা তাদের মৃতু্র পর তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি কল্পে তিনি তা ঘটিয়ে থাকেন, এর মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাকে কোন অনিষ্ঠতা থেকে হেফাযত করেন, অথবা তাঁর বান্দার কোন কল্যাণ সাধন করেন, অথবা তিনি এর মাধ্যমে হকের সাহায্য করে থাকেন। (সৌদী আরবের ফতোয়া বোর্ডের লাজনা দায়েমার ফাতওয়া ১/৩৮৮)

কারামতের সংজ্ঞায় সুলাইমান বিন আবদুল্লাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ কারামত এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্ তাঁর মুমেন এবং মুত্তাকী বান্দার মাধ্যমে প্রকাশ করেন, হয় তার দোয়ার কারণে অথবা তার কোন সৎ আমলের কারণে অবে এতে অলীর কোন হাত বা শক্তি নেই। (তাইসিরুল আযীিযল হামীদ,৪১৩)।

অলীগণের মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হতে পারে তার দলীলঃজেনে রেখ নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমেনদেরকে রক্ষা করেন তাদের দুশমন থেকে, তিনি কোন বিশ্বাসঘাতক,অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সূরা হাজ্ব-৩৮)

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেনঃ হাদীস কুদসী আল্লাহ্ তা'লা বরেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার অলীর (প্রিয় বান্দার) সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। (বোখারী)

অলী কে?

যে আল্লাহর প্রিয় বিষয়সমূহ পালনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে চেষটা করে।

কারামত কেন সংঘটিত হয়?

কারামত সংঘটিত হওয়ার মাঝে অনেক কল্যাণ এবং হিকমত রয়েছে তন্মধ্যেঃ

ক) আল্লাহ্ র অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়নের বহিঃপ্রকাশ এবং তিনি যা চান তা করতে পারেন, এমনি ভাবে আমরা সচরাচর আল্লাহর দেয়া বিষয়সমূহের যা কিছু দেখছি তার বাহিরেও আরো অনেক কিছু আছে যার কিছু বহিঃ প্রকাশ এই কারামাত,যে বিষয়ে মানুষ অবগত নয়।

খ) কোন বান্দার মাধ্যমে কারামত সংঘটিত হওয়া তা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ যা তাকে আল্লাহ্ পৃথিবীতে দিয়ে দিলেন। এসুসংবাদ সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বলে প্রমাণ করে,এবং তার সুভ পরিণতির পূর্বাভাস।

গ) যার মাধ্যমে তা সংঘটিত হয় সে নবীর সঠিক অনুসারী বলে প্রমাণিত।

ইতি পূর্বে সংঘটিত কিছু কারামতঃ

১) সূরা কাহাফে উল্রেখিত আসহাবে কাহাফের ঘটনা যেখানে তারা আল্লাহর কৃপায় তিনশত বছরের অধিক সময় যাবৎ ঘুমিয়ে ছিলেন,অথচ এই দীর্ঘসময়ে তাদের শরীরের কোন ক্ষতি হয় নাই।

২) মারইয়াম বিনতে ইমরানের নিকট মেহরাবে খাবার উপস্থিত হওয়া যা দেখে যাকারিয় (আঃ) আশ্চার্য হতেন।

৩) ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একটি সেনাদল যুদ্ধের জন্য পাঠলেন,এদলটির নেতৃত্বে যিনি ছিলেন তার নাম ছিল সারিয়া, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মদীনায় খুতবা দিচ্ছিলেন এমতাবস্থায় তিনি হঠাৎ উচ্চ স্বরে বললেনঃ হে সারিয়া পাহাড় পিছনে রাখ! হে সারিয়া পাহাড় পিছনে রাখ! যখন সেনাদল ফিরে আসল তখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাদেরকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল তখন তারা বল হে আমিরুল মুমেনীন আমরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় আমরা একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম যে, হে সারিয়া পাহাড় পিছনে রাখ পাহাড় পিছনে রাখ! তখন আমরা দিক পরিবর্তন করলাম এবং আল্লাহ্ আমাদেরকে বিজয় দান করলেন।

৪) খালেদ বিন ওলীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কাফেরদের একটি কেল্লা অবরোধ করে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানালেন তখন তারা বললঃ আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের দেয়া বিষ পান করবে, খালেদ বিন ওলীদ বিষ পান করলেন এবং আল্লাহর মেহেরবাণীতে এতে তার কোনই ক্ষতি হয় নাই।

জ্বিন বা শয়তানের মাধ্যমেও কি এধরণের অসাধারণ কিছু ঘটনা ঘটতে পারে?

শয়তানও কিছু মানুসের দ্বারা এধরণের অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটিয়ে থাকে,তবে শয়তান ঐসমস্ত লোকদের মাধ্যমে তা ঘটায় যারা কোরআন এবং হাদীস থেকে দূরে। যেমন কোন ব্যক্তি হাওয়ার মধ্যে উড়ে যাচ্ছে,জ্বলন্ত

আগুনে হাত দিচ্ছে ইত্যাদি।

কোন ভাল মানুষকে নিয়েও কি জ্বিন বা শয়তান এসমস্ত কিছু করতে পারে?

হা এটাও সম্ভব, যেমন ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)তিনি তাঁর নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ যখন আমি মিসরে জেলে বন্দি ছিলাম, তখন তুর্কির এক অঞ্চলে জ্বিন আমার আকৃতি ধারণ করে মানুষকে বলতে লাগল যে আমি ইমাম ইবনু তাইমিয়া,এবং সে ওখানে আমার আচার আচরণ এবং চাল চলনের মত সব কিছু করতে লাগল, তখন সেখান কার শাসক মারদীন এই বার্তা দিয়ে মিসরের বাদশার নিকট একজন দূত পাঠাল, তারা বিষয়টিকে অলৌকিক কোন বিষয় বলে মনে করল, ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ আমি তখনো বন্দি অবস্থায় ছিলাম এবং এটা ছিল একজন মুসলিম জ্বিনের কাজ যে আমাকে ভাল জানত এবং তার ভাল জানা থেকে সে তা করেছিল, লোকেরা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ) কে বললঃ এটাকে আপিনি জ্বিন বলছেন কেন সেতো ফেরেশস্তাও হতে পারে? উত্তরে ইমাম বললেনঃ না ফেরেশ্তা কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেয়না।(মাজমূ ফাতাওয়া,খ১৩পৃঃ৯২)।

যারা এধরণের সংবাদ প্রচার করে তাদের সত্য মিথ্যা কি ভাবে বুঝা যাবে?

প্রথমত যে লোক বলছে তার আমল আখলাক ভাল হওয়া।

দ্বিতীয়তঃ যখন সে এধরণে কোন কথা বলছে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করে তাকে ঝাড় ফঁক করা, যদি বিষয়টি শয়তানী হয় তাহলে তা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন কিছু করা কি সম্ভব?

হা শক্তিশালী লেজার রশ্মীর মাধ্যমেও এমন কিছু করা সম্ভব।

উপসংহার

পরিশেষে প্রিয় পাঠকদেরকে বলতে চাই বিষয়টি জ্বিন,শয়তান বা অধুনিক প্রযুক্তির তেলাসমতিও হতে পারে,তবে এই ক্ষেত্রে বার্তাবাহককে উল্লেখিত পদ্ধতি যাচাই করলে সংশয় দূরবিত হবে ইনশা আল্লাহ্।

তথ্য সূত্রঃ আল ফুরকান বাইনা আওলিয়ায়ির রহমান ওয়া আওলিয়ায়িসশইতান, আল আক্বীদা আল ওয়াসেতীয়া,মাজমূ ফাতাওয়া লি শাইখিল ইসলাম ইবনে তাই মিয়া, শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহর) ওয়েব পেইজ।)

বিষয়: বিবিধ

১৫১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File