স্লো পয়জনিং ৮
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ০৩ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৫১:১৬ সকাল
ইদানিং বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে “বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল”
কেউবা দিচ্ছে “ওমুক্টেল ফুর্তি”
যে যাই বিজ্ঞাপন দিক না কেন সবার বিজ্ঞাপনেই দেখা যাচ্ছে একদল ছেলে মেয়ের ‘বন্ধুত্ব’
মেয়েগুলির একটারও ওড়না নাই যদিও বাস্তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘ওপেন ইউনিভার্সিটি’ নর্থ সাউথের ছাত্রীরাও ওড়না পরিধান করে। সেই ওড়না অবশ্য কোথায় থাকার কথা আর কোথায় থাকে তা এখন নাই বা বললাম, কিন্তু ওড়না থাকে।
দুই নম্বর যে জিনিস ঐসব বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় সেটা হল “ছেলে মেয়ে হাতাহাতি”
“হাতাহাতি” বলতে যা বুঝাইছি তা হল- ইচ্ছা করে ছেলে মেয়ের উভয় সম্মতিতে বিভিন্ন উছিলায় একজন আরেকজনকে ‘টাচ’ করা! ব্যাপারটা বুঝলেন না? বুঝিয়ে বলি- সাধারণত আমরা অপরিচিত কোন ছেলে মেয়ে কেউ কারো গায়ে টাচ করি না। এটা ধর্ম ও সমাজ উভয়ের চোখে নিষিদ্ধ। যদি বিভিন্ন কারণে অনিচ্ছাকৃত টাচ লেগেই যায় তখন একজন আরেকজনকে সরি বলি। একদল ছেলে আছে যারা ইচ্ছা করেই বিভিন্ন ছলে বলে কৌশলে মেয়েদের শরীরে টাচ করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা লোক সমাগম বেশি হয় এমন সব লোকেশনকে বাছাই করে। এ বছর পহেলা বৈশাখের উদাহরনটা দেখতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশের এমন কোন মেলা হয় না, বাংলাদেশের এমন কোন মার্কেট নেই, বাংলাদেশের এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে এইসব ছেলেরা সুযোগ পেলেই মেয়েদের গায়ে হাত দেয়। বেশিরভাগ মেয়ে ভয়ে এসব নির্যাতন চোখ বুঝে সহ্য করে যায়। অল্প কিছু মেয়ে প্রতিবাদী হয়ে উলটা ছেলেদের মারধোর করে। অর্থাৎ এই যে একটা অপরিচিত ছেলে একটা মেয়ের গায়ে হাত দিবে তাতে মেয়েদের সম্মতি নেই। কিন্তু একটা ক্ষেত্রে মেয়েদের সম্মতি আছে সেটা হল-তার প্রেমিকের কাছে। এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মডার্ণ বন্ধুত্বের উদাহরণ হিসেবে টিভিতে যা দেখাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে শুধু প্রেমিক প্রেমিকাই নয় ছেলে মেয়ে শুধুমাত্র ‘বন্ধু’ হলেই একজন আরেকজনের গায়ে ইচ্ছা কৃত টাচ করা সম্ভব। এবং এটা খুবই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ঐসব বিজ্ঞাপন থেকেই দুই একটা উদাহরণ দেই-
*একটা ছেলে চেয়ারে বসে আছে, পেছন থেকে একটা মেয়ে ছেলেটার পিঠে হাত দিয়ে ধাক্কা দেয়, এরপরে আরেক ছেলে এসে ঐ মেয়েটার সাথে তালি দেয় মানে ছেলেটার ডান হাত আর মেয়েটার বাম হাত দিয়ে তালি। যেহেতু এক হাতে তালি বাজে না তাই দুই জনের দুই হাতেই তালি দিতে হল। তার মানে একটা মেয়ে দুই সেকেন্ডের মধ্যে দুইটা ছেলের সাথে হাত মেলালো।
*তালি দেয়ার পরে তারা সেলফি তুলল। সেলফি তোলার সময় মেয়েদের পিঠে ছেলেদের হাত থাকে। অথচ এই মেয়েদের পিঠে অপরিচিত কোন ছেলে হাত রাখলেই সেটা হয়ে যায় ইভটিজিং। অর্থাৎ (ছেলে) বন্ধুরা (মেয়ে) বন্ধুদের গায়ে হাত দিলে সেটায় কোন সমস্যা নাই।
এ ধরনের অসংখ্য বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখা যায়।
এখন আমার মত ক্ষেত পাবলিককে অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন-ছেলে মেয়ে বন্ধুত্ব হলে সমস্যা কী? এটা আধুনিক যুগ।
আমার উত্তর-ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব হলে আমার কোন সমস্যা নাই। সমস্যা হল ‘হাতাহাতিতে’। এ প্রসঙ্গে একটা কৌতুক বলি-
এক লোক এক ধর্মীয় গুরুকে প্রশ্ন করল “গুরু, ছেলে মেয়ে একত্রে ঘুমালে কোন সমস্যা?”
গুরু উত্তর দিলেন “একত্রে ঘুমালে কোন সমস্যা নাই কিন্তু তোরা তো ঘুমাস না!”
ছেলে মেয়ে বন্ধুত্ব করলে কোন সমস্যা নাই কিন্তু এখানে তো বন্ধুত্ব হয় না। একটা ছেলে একটা মেয়েকে প্রেমের অফার করলে মেয়েটার যদি পছন্দ না হয় তাহলে বলে “তোমাকে আমি বন্ধুর চোখে দেখি”
ছেলেটা তখন প্রশ্ন করে “তাহলে যে এতদিন আমার সাথে রিকশায় ঘুরলা, রেস্টুরেন্টে খাইলা, ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বললা, এসব?”
মেয়েটা উত্তর দিল “সব বন্ধু ভেবে করেছি”
ছেলেটার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
এ সমস্যায় বেশি পড়ে হাই স্কুল, কলেজের ভাল ছাত্ররা। প্রথম সারির ছেলেদের সাথে কিছু কিছু মেয়েরা ভাল ভাবে মিশে। তাদের নোট নেয়, তাদের কাছ থেকে সাজেশন নেয়। ছেলেটাও মেয়েটার কাছ থেকে ‘কিছু পাবে’ ভেবে রাত জেগে জেগে মেয়েটার ল্যাব এর খাতা তৈরি করে করে দেয়। নিজের পড়ালেখা ফেলে মেয়েটার জন্য নোট লিখে। আর পরীক্ষার সময় কোন সুন্দরী মেয়ের আশে পাশে যদি কোন ছেলের সীট পড়ে তাহলে তো কথাই নেই। সেই ছেলেটা হয়ে যায় মেয়েটার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’! ঐ ক’দিনের জন্যই। পরীক্ষা শেষ, বেস্ট ফ্রেন্ডও শেষ।
অনেক মেয়ে একই কলেজে পড়ে এমন ছেলে যদি এলাকায় থাকে তাহলে তাকেও ফ্রেন্ড বানায়। এর কারণ, নিরাপত্তা। মেয়েটা ছেলেটার সাথে কলেজে যায়, আশেপাশের সবাই মনে করে এদের মনে হয় ‘রিলেশান’ আছে। তাই এলাকার রোমিওরা, যাত্রাপথে দুষ্টুর ছেলেরা ও কলেজের অনাকাঙ্ক্ষিত ছেলে পুলেরা মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করে না। ছেলেটা মনে করে মেয়েটা তাকে পছন্দ করে, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। অনেক সময় হঠাত করে মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়, ছেলেটাকে বিয়ের কার্ড দেয়। তখন ছেলের প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটা জানায় “আমরা তো এতদিন খুব ভাল বন্ধু ছিলাম!” এরকম ঘটনা হর হামেশাই দেখছি।
লেখা বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। এটা আরো এক পর্বে শেষ করব।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালোবাসা নামক পবিত্র অনুভুতিটাকে এরা অপিত্র করে ফেলেছে।
-কথাটি বাস্তব সত্য। আপনাকে ধন্যবাদ এরকম একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে কলম ধরার জন্য।
তারা ভবিষ্যৎ!
তারা first class citizen!
তারা top class .....
প্রতিবাদ করলে উত্তরগুলি এমন আসে এখন।
বর্তমান সমাজের বাস্তবচিত্রই তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ।
মিথ্যাচার বিহীন বিজ্ঞাপন চাই।
যদিও পরিনতি একটাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন