দেরিতে বিয়ে-সামাজিক সমস্যা বাড়ায়
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ০১ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৩৭:৫৮ রাত
দেরীতে বিয়ে-সামাজিক বিশৃংখলার অন্যতম কারণ!
আজ একটা খবর দেখলাম। খবরটা সবার সাথে শেয়ার করি।
চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন অভিজাত খুলশী আবাসিক এলাকার একটি গেস্টহাউস থেকে নগরীর সুপরিচিত এক মডেলসহ ৩৮ তরুণ-তরুণীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে ৩০ জন তরুণ এবং ৮ জন তরুণী।
আটককৃতরা হলেন চট্টগ্রামের সুপরিচিত মডেল মারিয়া জাহান (২২), তানিয়া আক্তার (২৩), সুমি আক্তার (২১), জেরিন আক্তার (২৩), নাজু আক্তার ( ২০), রুনা আক্তার ( ১৮) তন্বি আক্তার (২০), মেরী (১৮), হারুনুর রশীদ (৩০), হাবিব (২০), সুমন দাশ (৩১), ওয়াসিম বণিক ( ৩৭), মো. সৈয়দ ( ৩৫), জাবেদ হোসেন (৩২), লুৎফুর রহমান (৩৫) মো. জুয়েল (৩৩), কাউছার (৩৭), জামাল উদ্দিন ( ৩৫), নাছির (৩৫), ইফতেখার ( ৩০), নজরুল ইসলাম ( ২০), মো. তারেক (২৫), দীপন (৩২), আফসার (৩৩), রহিম ( ৪০), মো. লিংকন, রণজিৎ, আশোক, বেলাল হোসেন, জাফর আহমেদ, রাসেল, ফখরুল ইসলাম, সুব্রত দে, সাইফুর রহমান ও সাইফুল।
এখন আসি মূল পোষ্টে। এখানে যেসব মেয়ে পতিতাবৃত্তি করছে তাদের নিয়ে আমার কোন কমেন্ট নেই। আটক কৃত ছেলেদের কয়েকজনের বয়স দেখুন।
হারুনুর রশীদ (৩০)
সুমন দাশ (৩১)
ওয়াসিম বণিক ( ৩৭)
মো. সৈয়দ ( ৩৫)
জাবেদ হোসেন (৩২)
লুৎফুর রহমান (৩৫)
মো. জুয়েল (৩৩)
কাউছার (৩৭)
জামাল উদ্দিন ( ৩৫)
নাছির (৩৫)
ইফতেখার ( ৩০)
দীপন (৩২)
আফসার (৩৩)
রহিম ( ৪০)
চট্টগ্রামে আমার শৈশব কেটেছে। ঐখানে একটা ঐতিহ্য রয়েছে, সেটা হল- ছেলেদের অনেক দেরীতে ও মেয়েদের অনেক দ্রুত বিয়ে দেয়া। আমাদের এলাকার সবচেয়ে সুন্দরী, আমার হার্ট থ্রব এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল এসএসসি পাশ করার পরে। এর অবশ্য কারণ আছে। মেয়েটা অতিরিক্ত সুন্দরী হবার কারণে বিভিন্ন ছেলেরা প্রেমের অফার করত। আর সে তো মানুষ, কতক্ষন আর লোভ সামলে রাখবে। এলাকার এক বখাটে ছেলের সাথে প্রেম শুরু করল। বাবা মা ঘটনা জানতে পেরে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিল। যার সাথে বিয়ে হল তার বয়স দাবী করেছে ৩৩ কিন্তু দেখে মনে হল ৩৫/৩৬ হবে।
আমাদের বাসার সামনের এক দোকানদার ছিল। আমি ভাবতাম ওনার ছেলে মেয়ে ওনাকে পছন্দ করেন না বলে ওনার দোকানে আসেন না। ওনার বয়স কম হলেও ৩৫ হবে। একদিন জানতে পারলাম ওনার বিয়েই হয় নি। শুনে অবাক হলাম। উনি স্থানীয় লোক। অনেক টাকা বাড়ী ভাড়া পান। আবার নিজের দোকানও আছে। সেখানেও ইনকাম, তাহলে সমস্যা কী? সমস্যা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম, ওনার বড় ভাইয়েরও বিয়ে হয়নি। সিরিয়ালে আটকে আছেন। ওনার বড় ভাইয়ের বয়স ৪০ এর কাছাকাছি!
উপরে যে সুন্দরী মেয়ের কথা বর্ণনা করেছি সেই মেয়ের চাচার বিয়ে হয়েছে ৩৬ বছর বয়সে। তারা জন্ম থেকেই কোটিপতি ও শিক্ষিত।
এরকম হাজার হাজার উদাহরণ চট্টগ্রামে আছে। অর্থাৎ ছেলেদের অনেক দেরীতে ও মেয়েদের অনেক দ্রুত বিয়ে দেয়া হয়। ও, ভাল কথা, সুন্দরী মেয়েটির বাবা মায়ের বয়সের পার্থক্য ছিল মাত্র ২০! যার ফলে প্রথমে ভেবেছিলাম তারা বাপ-মেয়ে!
এখন আসি এই দেরীতে বিয়ের প্রভাব কী পড়ে। যখন ছোট ছিলাম তখন এত কিছু ভাবিনি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি একটা ছেলের পক্ষে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত সেক্সুয়ালি সৎ থাকা প্রায় অসম্ভব। কেউ যদি দাবী করে তিনি এত শারীরিক ভাবে সামর্থ্যবান অথচ এত বছর পর্যন্ত সেক্সুয়ালি সৎ আছেন তাহলে সন্দেহ হবে উনি সত্য কথা বলছেন কি না।
বড় হবার পরে যখন বন্ধু বান্ধবদের সাথে ১৮+ কথা বার্তা বলা শুরু করলাম তখন জানতে পারলাম অনেক ছেলে ঐ বয়সে (১৮/২০) ‘নিষিদ্ধ’ এলাকায় যায়। চট্টগ্রামে কোন নির্দিষ্ট নিষিদ্ধ এলাকা নেই তবে নিষিদ্ধ বিল্ডিং/ফ্ল্যাট আছে। সেটাও গোপনে। চট্টগ্রামের লোকজন জানতে পারলে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। অনেক তরুণ এইসব নিষিদ্ধ এলাকায় যায় যার একটা মাত্র কারণ “বিয়েতো অনেক দেরীতে হবে, এতদিন শারীরিক চাহিদা মেটাবো কী করে? তাই একটু পরখ করে দেখি।” আর এটা এমন এক জিনিস যেখানে একবার গেলে আর অন্য কিছু ভাল লাগে না। অন্য কিছু বলতে আমি ‘হস্ত শিল্প’ বুঝিয়েছি।
উপরে যা বলেছি তা হল বাস্তবতা। চট্টগ্রামের স্থানীয় মানুষের একটা বড় অংশ এই ঐতিহ্য ফলো করে। যার ফলাফল খুব একটা ভাল হয় না।
চট্টগ্রামে কথা বাদ দিয়ে এবার আসি সারা দেশের দিকে। একটা ছেলের যৌণানুভূতি শুরু হয় ১৩/১৪ বছর বয়সে কিন্তু তাকে বিয়ের জন্য যোগ্য হতে হতে ৩০/৩২ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় যা খুবই অমানবিক। পশ্চিমা সমাজে ১৩/১৪ বছর বয়সে ছেলে-মেয়েরা যে অভিজ্ঞতা পায় সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আমাদের দেশের ছেলেদের ৩০/৩২ বছর অপেক্ষা করতে হয়। যদি পরিবারের যথেষ্ঠ টাকা পয়সা থাকে তাহলে অন্য কথা কিন্তু বাস্তবতা হল একটা ছেলের অনার্স মাস্টার্স শেষ করতেই লাগে ২৬/২৭ বছর। এরপরে চাকরি, আর চাকরিতে জয়েন করলেই হয় না, চাকরিতে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়। আয়ের লেভেল এমন হতে হয় যাতে সে পরিবার পালতে হয়। তখন সে বিয়ে করার অনুমতি পায়। এ বিষয়ে একটা জোকস মনে পড়েছে।
শফিক সালামকে জিজ্ঞেস করছে “বয়স তো হল, কখন বিয়ে করবেন?”
সালাম উত্তর দিল “আগে নিজের পায়ে দাঁড়াই, তারপরে।”
পাঁচ বছর পরে সালামকে আবারো জিজ্ঞাসা করা হল “কখন বিয়ে করবেন?”
উত্তরে সালাম এবারও বলল “নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরে”
শফিক বললে “যতদিনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন ততদিন আসল জিনিস দাঁড়াবে কিনা সন্দেহ”
ছেলেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে অনেকেরই এই সমস্যা হয়ে যায়।
বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হালাল ভাবে শারীরিক চাহিদা মেটানো কিন্তু দেরীতে বিয়ের জন্য অপেক্ষা করলে মানুষ নিজেই কতক্ষন হালাল থাকতে পারবে সন্দেহ রয়েছে।
এফএম রেডিওতে মাঝে মাঝে ‘জীবনের গল্প’ প্রোগ্রামটা শুনতাম। সেখানে অনেক ছেলের ইন্টার্ভিউ নিয়েছে যারা বলেছে তারা বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে না পেরে নিষিদ্ধ স্থানে গিয়েছে।
এটা হল নিষিদ্ধ স্থানের কথা। যেখানে ছেলেরা টাকা পয়সা খরচ করে যৌণ ক্রিয়া করে। এবার বলি ‘সেমি-হালাল’ নিষিদ্ধ জিনিসের কথা। সেমি-হালাল বলতে আমি ধর্মের দৃষ্টি কোন থেকে হালাল বুঝাইনি। সমাজের দৃষ্টিতে সেমি-হালাল। আজকাল ছেলে মেয়ে রিলেশান একটা স্বাভাবিক ব্যপার হয়ে গেছে। খেয়াল করে দেখবে আশেপাশে যত রিলেশন আছে তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য বেশি না। অর্থাৎ বিশ বছরের ছেলের সাথে আঠারো বছর বয়সী মেয়ের রিলেশন আছে। ক্লাস মেটের মধ্যে যখন প্রেম হয় তখন তারা সম বয়সী থাকে। অর্থাৎ বাইশ বছরের ছেলের সাথে বাইশ বছরের মেয়ের প্রেম। এখন আঠারো বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের জন্য বেশিদিন অপেক্কাহ করতে হবে না কারণ আর দুই এক বছর গড়ালেই তার জন্য পাত্র দেখা শুরু হবে। কিন্তু সে যেই ছেলের সাথে প্রেম করছে তার বিয়ের যোগ্যতা অর্জন করতে আরো আট দশ বছর লেগে যাবে। মোম যদি আগুনের সংস্পর্শে আসে তাহলে গলতে বাধ্য। আধুনিক যুগে দুইটা ছেলে মেয়ে রিলেশন করলে তারা সব সময় সুযোগ খুঁজতে থাকে। অনেকে কথোর পারিবারিক নজরদারির কারণে কিছুই করতে পারে না কিন্তু অনেকেই আমি বলছি এর বিরাট অংশ ঠিকই ‘গোপন ও নিরাপদ স্থান’ বেছে নিয়ে শারিরীক চাহিদা মেটাচ্ছে। যদিও এইসব রিলেশনের ৮০ ভাগ টিকে না কিন্তু এর ফলাফলও ভাল হচ্ছে না। এবার আসুন সম বয়সী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। তাদের মধ্যে বিয়ে হবার সম্ভাবনা ১০ ভাগ। বাকী ৯০ ভাগ কী বসে বসে আঙুল চুষবে? তারাও তাদের কাজ সেরে নেয়। কারণ বিয়ের জন্য এত বছর অপেক্ষা করা সম্ভব না হাতের কাছেই যদি সুযোগ থাকে।
আমার কথায় চট্টগ্রামের লোকজন আশা করি রাগ করেবন না কারণ শুরুতে আমি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের উদাহরণই দিয়েছি। কিন্তু সারাদেশের চিত্র একই।
আরেকটা কথা, দেরীতে বিয়ে বলতে আমি বুঝাইছি ছেলেদের ২৫ আর মেয়েদের ২২ পার হওয়া।
বিষয়: বিবিধ
১৬২৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সব কথার শেষ কথা, দারুন হয়েছে। বিয়েতে দেরি করা একেবারেই অনুচিত। সুন্দর পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ।
কারণ বিয়ে শুধু বৈধভাবে সেক্স করার জন্যই করা হয় না , একজন/একাধিক মানুষের ভরনপোষন করাও এখানে বিরাট ফ্যাক্টর। নিজের পায়ে শক্তভাবে না দাঁড়াতে পারলে অন্যের ভার বইবেন কি করে?
ভরণপোষন না করতে পারলে জিনিস সতেজ থাকলেও কাজ হবে না । ঘুরে ফিরে ঠিকানা ঐ একই ।
আসল সমস্যা এসব নয়-
"নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো"-র জীবনদর্শনই মূল সমস্যা!
দারিদ্র যতই অসহনীয় হোক, জীবনযাপনের মান যতই সাধারণ কজতে হোক, মানুষে যা বলার বলুক, আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে যত কষ্টই হোক, সবই সন্তুষ্টচিত্তে মানা নেয়ার সিদ্ধান্ত যে মুমিন/মুমিনা মেনে নিতে পেরেছে সমাজের কোন চোখরাঙানীই তার জন্য বিবেচ্য নয়!!
এসব শুধুই তত্ত্বকথা নয়, নিজের ও আরো অনেকের বাস্তব জীবন থেকে নেয়া!
ছেলেদের ২৫ আর মেয়েদের ২০ - যথার্থ!
ক্যারিয়ারগঠনের যোগ্যতা ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে সংসার করেও তা ভালোভাবে করা যায়- অসংখ্য উদাহরণ চোখের সামনেই আছে! এমনকি এ ব্লগেও অনেক ক'জোড়া আছেন, নাম বলছিনা!
কিন্তু বড়ভাই-বোনের বিয়ের আগে বিয়ে না হওয়া এবং নিজের পায়ে দাড়ান এই দুই বিষয়ই প্রবল ভাবে আছে। এখনতো একজনের মাস্টার্স পাশ করতেই কমপক্ষে ২৫ বছর বয়স হয়ে যায়। সেখানে নিজের পায়ে দাড়াতে দাড়াতে সত্যিই আসল জিনিস না দাড়ানর অবস্থা হয়ে যায়। আমাদের সামাজিক আন্দোলন শুরু করা উচিত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন