লালসালুর বিয়ে-৩
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ২৯ জুলাই, ২০১৫, ১২:২৪:৫০ দুপুর
ঙ
কিশোর কিশোরীদের উপস্থাপনায় ‘মুক্ত খবর’ নামের একটা অনুষ্ঠান একুশে টিভির প্রথম দিকে প্রচারিত হত। সেই মুক্ত খবরে এক মেয়ে সংবাদ উপস্থাপনা করত। মেয়েটির চেহারা ছিল প্রিতী জিনতার মত, এমনকি পোষাক আষাকও! টিভিতে যতদিন ঐ মেয়েকে দেখেছি ততদিন দেখেছি ভিন দেশী পোষাক পরে অনুষ্ঠান করছে। ঐ মেয়ের নাম এই মুহূর্তে খেয়াল আসছে না তবে চেহারা ঠিকই খেয়াল আসছে। তখন কার ছেলেদের কাছে প্রিয় এই মেয়েটি যখন শুনলাম আমার এক বন্ধু শাফকাত এর আত্মীয় তখন ইছে হল মেয়েটিকে একবার দেখি। তখন চট্টগ্রামে থাকতাম, সেখানকার কোন মেয়েকে শার্ট প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখিনি, এমনকি ওড়না ছাড়াও দেখিনি।
২০০৫ সালে হঠাত একদিন উত্তরার সী শেল রেস্টুরেন্টে সেই মেয়েটির সাথে দেখা। শাফকাতের বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে ঐ মেয়ে ফ্যামিলী সহ এসেছিল। সে তখন চারুকলা ইন্সটিটিউটে পড়ত, আমাদের এক বা দুই ব্যাচ জুনিয়ার হবে। মেয়েটা বাস্তবেও অনেক সুন্দরী। আমার বন্ধু আমার সাথে তার কথা বলিয়ে দিল। মিডিয়ার কোন সুন্দরীর সাথে আমার ঐ প্রথম সামনা সামনি দেখা এবং কথা বলা। তখন থেকেই ভাবতাম মিডিয়াতে যত মেয়ে কাজ করে সবাই অসাধারন সুন্দরী। তবে মিডিয়ার মেয়েদের চরিত্র নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। এদের অনেকেই পিয়ালের ফ্ল্যাটে নিয়মিত আসা যাওয়া করে।
দিগন্ত টিভির মালিক জামাত নেতারা। এ টিভিতে জামাতের অনেক নেতা কর্মী চাকরি করে। এর মধ্যে আমার পরিচিত অনেকেই আছেন। জামাতের বাইরেও কিছু আছে, যেমন হিন্দু একজন পরিচালক, একজন বৌদ্ধ ম্যানেজার এছাড়াও মুসলমানদের মধ্যে কিছু জামাতের বাইরের লোক ছিল। দিগন্ত টিভি যখন মেয়েদের দ্বারা উপস্থাপনা বিশেষ করে সংবাদ পাঠ শুরু করাল তখন ভাবতাম এরা মনে হয় ওদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রী সংস্থার প্রোডাক্ট। এ কারনেই মনে হয়েছে যেহেতু তারা হিজাবী। কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমানিত করে দেখলাম এদের অনেকেই বেপর্দা এবং ছাত্রী সংস্থার সাথে দূর তম সম্পর্ক নেই। এদের মধ্যে এক মেয়ে কিছুদিন চ্যানেল আই এ খবর পড়ত কয়দিন পরে দেখি দিগন্তে খবর পড়ছে হিজাব পরিধান করে। আমার দু’জন বন্ধু দিগন্ত টিভিতে চাকরি করত, যাদের মাধ্যমে ওদের কিছু খবর পেতাম। ওদের সংবাদ পাঠিকাদের অনেকেই অফিসে এসে হিজাব পরিধান করত আবার অফিস থেকে বের হওয়ার সময় বোরখা খুলে ফেলত।
তাজকিয়া আমাকে যখন ওদের অফিসের এক সংবাদ পাঠিকার কথা বলল তখন আমার মনে হয়েছিল এটা কোন টাইপের মেয়ে? এ মেয়ে কি ছাত্রী সংস্থা করে? নাকি অফিসে ঢুকে বোরখা পরে? দু’টি ভন্ড ক্যাটাগরি! যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করে তাই আমার মেয়েটাকে দেখার খুব আগ্রহ দেখা দিয়েছিল। দু’দিন পরে বুধবার সকাল এগারোটায় টিভিরে মেয়েটি সংবাদ পরিবেশন করল। আমি অফিস থেকে আর আমার মা বাসা থেকে টিভিতে পাত্রী দেখল। টিভিতে মেয়েটিকে কেমন যেন বুড়ী বুড়ী লাগছিল, আসলে হিজাব পরলে অনেককে বেশি বয়সী লাগে। বুড়ী মেয়ে কার ই বা পছন্দ কিন্তু আমার মেয়েটির সাথে দেখা করার খুব সখ হল তাই আরো দু’দিন পরে শুক্রবার বিকেলে নয়া পল্টনস্থ যেকোন রেস্টুরেন্টে দেখা করার প্ল্যান করলাম।
নয়া পল্টন এলাকা আমার অনেক ভাল করে চেনা কারন এই এলাকায় আমি দু’বছর চাকরি করেছি। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস নয়া পল্টনে অবস্থিত। কিন্তু এই এলাকার কোন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট চিনি না! চিনব কী করে? আমার দৌড় টং দোকান পর্যন্ত। স্পট ঐ এলাকায় গিয়ে ঠিক করব ভেবে আমি আর আমার ছোট বোন সহ নয়া পল্টনে পৌঁছুলাম। শুক্রবার ঐ এলাকার বেশিরভাগ চাইনিজ বন্ধ থাকে এটা আগে জানতাম না। অনেক খুঁজে শেষ পযন্ত হোটেল মিড নাইট সান-৩ খোলা পেলাম। এটার অবস্থান হল বিএনপি অফিস থেকে পশ্চিম দিকে গেলে হাতের ডান দিকে। মিড নাইট সানে-৩ তে তাজকিয়া ঐ মেয়েকে নিয়ে আসল। এই মেয়েকে টিভিতে যতটা বুড়ী বুড়ী লাগছিল বাস্তবে ততটা খুকী খুকী লাগছিল! এতো অনেক সুন্দরী। কিছুক্ষন কথা বললাম, বাসায় ফিরে এলাম কিন্তু অবাক হলাম আমি এই মেয়ের সাথে ফারজানার সাথে তুলনা করা শুরু করেছি। কে বেশি সুন্দরী? উত্তর এলোঃ ফারজানা। এ ধরনের অনেক প্রশ্ন মনে মনে এলো কিন্তু উত্তর এলো একটাইঃ ইস্ট অর ওয়েস্ট ফারজানা ইজ দ্যা বেস্ট। এই মেয়ের সাথে আর এগোতে পারলাম না কারন মেয়েটা অনেক উচ্চাকাঙ্খী। আমাকে অনেকগুলো শর্ত দিয়েছিল আর বলেছিল এই শর্তগুলো মানতে পারলে তার সাথে বিয়ে সম্ভব না হলে নয়। এর মধ্যে একটা শর্ত ছিল-আমাকে জামায়াতে ইসলামী করতে হবে!!! ছাত্রী সংস্থার অগ্রসর কর্মী (ছেলেদের ক্ষেত্রে সাথী), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এই মেয়েকে আমার কোনমতেই বিয়ে করা সম্ভব না। জামাত করার চাইতে বিয়ে না করা অনেক ভাল।
হোটেল মিড নাইট সান এ পাত্রীর সাথে দেখা করা আর ফারজানার সাথে দেখা করার মধ্যে সময়ের তফাৎ ছিল দেড় মাসের মত। মাথায় আবার ভূত চাপল উত্তরার (ফারজানার) খবর জানার জন্য। আমাদের কি বিয়ে সম্ভব? আর এক মেয়ের জন্য আমার বসে থাকা কি ঠিক হবে? এই মেয়েকে বিয়ে করতে হবে এমন কি কোন বাধ্য বাধকতা আছে? দুনিয়াতে তো অনেক মেয়ে আছে, একজনের জন্য অপেক্ষা করে লাভ কী? বাবা-মা দু’একটা পাত্রীর বায়োডাটা ছবি যোগাড় করে আমার সামনে মাঝে মাঝে রাখতেন, আমি দেখতাম আর ফারজানার সাথে মেলাতাম। একটাকেও ফারজানার কাছাকাছি পেলাম না।
মাঝে মাঝে উত্তরার সেই বাসার সামনে গয়ে ধীরে ধীরে হাঁটি-আশা করতাম ইশ যদি ফারজানা বের হত। ওর মোবাইল ছিল না আর আমার এত সাহস ছিল না মোবাইল নম্বর যোগাড় করে কোণ মেয়েকে ফোন করব।
একদিন উত্তরার সেই ভাবীকে ফোন করলাম-ফারজানার কী খবর জানার জন্য। ভাবী ফোন দিলেন-ফারজানার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমি যেন এই ব্যপারে আর ওনাকে কখনো ফোন না করি।
চ
বাস, ট্রেন, নারী এই তিনটির জন্য অপেক্ষা করতে নেই। একটা গেলে আরেকটা আসবে। কিন্তু সমস্যা হল পছন্দের মানুষকে হারিয়ে ফেলার দুঃখ সহ্য করা অনেক কঠিন। অনেকে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে, অনেকে দেবদাস হয় কিন্তু পার্বতীরা ঠিকই সুখে শান্তিতে বাস করে। আবার অনেকে সাধু ব্রত বেছে নেয়। ঠিক তেমনি এক ছ্যাঁকা খেয়েছিল আমার স্কুল জীবনের বন্ধু রাজীব। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে আমরা এক ক্লাসে পড়তাম। আমরা পাঁচ বন্ধু এক স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়ার সময় দুই বন্ধু এক সাথে একই মেয়েকে পছন্দ করে, মেয়েটি খাস্তগীর স্কুলে পড়ত। কোন বন্ধু তাদের পছন্দের কথা মেয়েটিকে স্কুল জীবনে জানাতে পারেনি। কলেজে দেখা গেল আমরা আর সেই মেয়েটি একই কলেজে একই সেকশনে ভর্তি হয়েছি। কলেজ জীবনেও দুই বন্ধুর কেউ মেয়েটিকে ভালবাসার কথা জানাতে পারে নি। কলেজ শেষ করার পর দুই বন্ধু জানতে পারল মেয়েটির এক হিন্দু ছেলের সাথে প্রেম রয়েছে, ঐ হিন্দু ছেলেটি আবার আমাদের বন্ধু তখন থেকেই রাজীব বেচারা দুঃখে হাফ মেন্টাল হয়ে যায়। তার লেখাপড়া, খেলাধুলা কোন কিছুর প্রতি মন বসে নাই। নর্থ সাউথে অনেক সুন্দরী-সেক্সী মেয়ের আনাগোনা, তার কাছে সেই সব মেয়ের সৌন্দর্য ফিকে মনে হত! গত বছর রাজীব সব ভুলে বিয়ে করেছে। রাজীবের সেই মেয়ের কথা ভুলতে সময় লেগেছে ১৪ বছর!
ভাবীর কাছে ফারজানার বিয়ের খবর শুনে যতটা ব্যাথিত হয়েছি ততটা অবাক হয়েছি। কারন ভাবী তখন বলেছিলেন ফারজানার অবিবাহিত বড় বোন আছে, লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে দিবে না ইত্যাদি হাবিজাবি। তাহলে কি তারা সিদ্ধান্ত বদল করেছে? ফারজানার বড় বোনের বিয়ে দিয়েছে? এত কিছু ভাবছি এর মধ্যে ঘটে যেতে লাগল একের পর এক অঘটন!
গত এক বছরে আওয়ামীলীগ সরকার একটা ঘটনা ঢাকার জন্য আরেকটা ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। সুরঞ্জিতের কালো বিড়ালের দুর্নীতি ঢাকা দিতে আরেকটা ঘটনা ঘটিয়েছিল, সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আরেকটা ঘটনা। সেই সূত্র ধরে কাদের মোল্লার ফাঁসি, ফঁসির পরে বিজয় দিবসে পতাকা প্রার রেকর্ড, পতাকার পরে বাড়ল দিদ্যুতের দাম, এরপর জাতীয় সঙ্গীতের রেকর্ড মোট কথা একটা ইস্যূ নিয়ে কেউ গরম হবার আগে আরেকটা ইস্যু তৈরি করতে লাগল, আর একেকটা ইস্যু এমনভাবে তৈরি হতে লাগল যাতে জাতী আগের ইস্যুটা ভুলে যায়। এটা আওয়ামীলীগের ভাল পলিসি। আমার জীবনেও এরকম একের পর এক ইস্যূ আসতে লাগল যাতে আমি ফারজানার শোক ভুলে যেতে যাছিলাম।
বাবার বুকের ব্যাথা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগল, বাইপাস করা জরুরী। ঠিক হল বারডেম হাসপাতালের পাশে ইব্রাহীম কার্ডিয়াক সেন্টারে অপারেশন হবে। ফ্যামিলীর কারো এত বড় অপারেশন দেখিনি, তাই অনেক ভয় লেগেছিল। টেনশনে এক মাস ঠিক মত ঘুমাতে পারিনি। বড় ছেলে হিসেবে আমার দায়িত্ব বেশি ছিল। টানা এগার দিন হাসপাতালে ছিলাম। এটা নিয়ে তখন সামুতে পোষ্ট দিয়েছিলাম। ছয় ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল তার বেশিরভাগ পেয়েছিলাম ব্লগে পোষ্ট দিয়ে! এটা আমার ব্লগ জীবনের অন্যতম সাফল্য। অনেকে ফোন করে সান্তনা দিয়েছিলেন।
অপারেশনের টেনশন যখন শেষ ফারজানার টেনশন যখ শুরু হচ্ছিল ঠিক তখনই আমাদের ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগল। তখন সাভার ইপিজেডের পাশে একটা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতাম। বিল্ডিং এর ছাদে কিছু কাজ হত। সেখানে টিন শেড বানিয়ে প্রোডাকশন ফ্লোর বানানো হয়েছিল, সেখানেই আগুন লেগেছিল। ভাগ্য ভাল আগুন বেশি ক্ষতি করেনি কিন্তু তাতে প্রশাসনের টনক নড়েছিল-কারন ছাদের উপরে স্থাপনা করা নিষিদ্ধ, ফায়ার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। আর ফায়ার লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। ফায়ার সার্ভিসের অফিস খুব কাছে হওয়ায় তাদের কাছে বিষয়টি বেশ পরিষ্কার ছিল। তারা এসে ফ্যাক্টরিতে তালা লাগিয়ে গেল। ফ্যাক্টরি বন্ধ, বেতনও বন্ধ। আমার তখন মাথায় বাঁশ। হঠাত করে চাকরি চলে গেলে বিপদ। প্রায় দেড় মাসের বেতন পাওনা এটাও যদি বন্ধ হয়ে যায়…… আল্লাহ সেবার বাঁচিয়েছিল। মন্ত্রী এমপি নেতা কর্মী ধরে সেবার বাঁচা গিয়েছিল। দুই মাস পরে আমরা বেতন পেয়েছিলাম। আর ঐ মুহূর্তে অন্য কোথাও চাকরিও পাচ্ছিলাম না।
ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পরে টেনশন যখন মুক্ত হব হব ঠিক তখনই আমার সেই খালাত ভাই মারা গেল যার কথা আমি ২নং স্টেটাসে বলেছিলাম। তিনি আমার অভিভাবক ক্যাটাগরির ছিলেন। ওনাকে এখনো অনেক মিস করি। বিশেষ করে আমাদের ফ্যামিলীর পক্ষ থেকে ফারজানার সাথে বিয়ের ব্যাপারে তিনিই প্রথম আগ্রহ দেখিয়েছিলেন আজ ভাইয়া নেই ফারজানাও নেই।
এই তিনটি ঘটনার সাথে নতুন একটি ঘটনা যোগ হল-আমাদের কোম্পানীতে অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং শুরু হল, আজ এর চাকরি যায় তো কাল ওর চাকরি যায়। এত টেনশন নিয়ে চাকরি করা দুরূহ। তাই অন্য দিকে চাকরি খোঁজায় মন দিলাম। এর মধ্যে একদিন বসের বাসায় গেলাম। ফারজানার খোঁজ নিলাম। যখন জানতে পারলাম ফারজানার বিয়ে হয় নি তখন মনে একটা ক্ষীন আশা জাগল।
ফারজানার বিয়ে সম্মন্ধে ভাবী আমাকে এর আগে যা জানিয়েছিল তার সার কথা হল- উত্তরার মাসকট প্লাজায় ও নর্থ টাওয়ারে কয়েকটি দোকান আছে এমন এক ধনী ব্যবসায়ী ফারজানাকে এই বাসায় দেখে। ঐ ছেলে সরাসরি ফারজানাকে অফার করে। ফারজানা উত্তরে বলেছিল- বিয়ের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, যা করার আমার ভাই করবে। ভাবী মনে করেছিলেন ‘ফারজানা ঐ ছেলের সাথে বিয়েতে রাজী’।
অথচ ফারজানার ফ্যামিলী থেকে বিয়ের নাম গন্ধ নেয়াও যাচ্ছে না। ওদের টার্গেট ওর বড় বোণ। আগে বড় জনের বিয়ে তারপর দেখা যাক। তার মানে এক বছরে সিদ্ধান্ত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ওর বড় বোন যিনি ছেলে নিয়ে থাকতেন তিনি তিন চার মাস আগে ছেলে পুলে সহ ইউরোপে চলে গেছেন। উনি সেটেক হলেই ফারজানা ও বড় ভাইকে নিয়ে যাবেন।
আমি তখন ভাবীকে জোর করলাম যাতে আমার বিয়ের প্রস্তাব ফারজানাকে আবার দেয়। হিসেবে করে দেখলাম, ফারজানার ব্যপারে আমি ভাবীকে গত এক বছরে দশ থেকে বারো বার বলেছিল। একবারও ফলাফল আসে নি কিন্তু এই প্রথম অদ্ভুত এক ফল এলো।
আমাকে একদিন ভাবী উত্তরায় দেখা করতে বললেন, আমি অফিস শেষে হাজির হলাম। কিছুক্ষন পরে ভাবী এক মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি অবাক হলাম এ কে? ফারজানার সাথে চেহারার অনেক মিল তবে ফারজানার মত লম্বা, সুন্দর নয়, তবে সুন্দর! হঠাত মনে হল ফারজানার তো একটা বড় বোন আছে যার বয়স ওর চেয়ে চার বছর বেশি। তখন মেজাজ চড়ে গেল, ঐ মেয়ের সাথে ঠিকমত কথা বললাম না। এমনভাবে কথা বললাম যাতে মেয়েটি দ্রুত চলে যায়। ও আমার অনের ভাব বুঝতে পেরে দ্রুত রুম ত্যাগ করল আর আমি ঐ বাসা ছেড়ে চলে আসলাম।
বসের কাছে পরে শুনেছিলাম-আমার এত আগ্রহ দেখে ভাবী ফারজানার বড় বোনকে স্কাইপিতে আমার কথা বলেছিলেন। বড় আপা উত্তরে বলেছিলেন ফারজানার বড় বোনকে বিয়ে না দিয়ে ফারজানার কথা কোনভাবেই ভাবা যাবে না। ঐ ছেলের (আমার) যদি এত আগ্রহই থাকে তাহলে বড় মেয়েটাকে দেখাক। দু’জন দু’জনকে পছন্দ করলে তখন ফ্যামিলীগত ভাবে আগানো যাবে। এ কারনে ভাবী আমার সামনে বড় বোনকে নিয়ে এসেছিল।
বিষয়টা আমার ‘গরু মেরে জুতো দানের’ মত মনে হয়েছিল। ঐ ঘটনায় ফারজানার প্রতি আমার আশা শেষ হয়ে গেল। আশা যখন শেষ তখনই পরিচয় হল ছোট বোনের মত এক ব্লগার ডাঃ সেতু ও তার বান্দর ভাই হবু ডাক্তার মামুনের সাথে। এটা ছিল আমার লাইফের একটা টারনিং পয়েন্ট। ডাঃ সেতু রেইন স্পট নামে বিভিন্ন ব্লগে লিখে আর মামুন বিভিন্ন নিকে লিখে। ১০০ ভাগ আওয়ামীলীগার বাবার ঘরে জন্ম নেয়া এই দুই ছেলে মেয়ে কীভাবে যেন জামাতী (!) হয়ে গেল। সেতুর মাধ্যমেই তানিয়ার সাথে পরিচয় এবং সে ই ছিল আমার জীবনের শেষ…
চলবে
বিষয়: সাহিত্য
২০১১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন