লালসালুর বিয়ে-২

লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ২৭ জুলাই, ২০১৫, ১০:১১:৩১ সকাল



ফারজানা আমার জীবনে ঝড়ের মত এসেছিল। ও কালবৈশাখী ঝড়ের মত হঠাত করে এসে আবার হঠাত করে চলে যাবে এটা ভাবতেই আমার বুকে কেমন যেন করত। এই মেয়েকে ছাড়া কীভাবে থাকব? ‘দিল্লী বহু দূর’- যে মেয়েকে আমার পছন্দের কথাই বলা হয় নাই তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছি কীভাবে? এমন যদি হত ফারজানার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে তাহলে একটা কথা ছিল। আমি আর ফারজানা দু’জন যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করছি। মাঝে মাঝে ভাবতাম ওর সাথে যদি প্রেম করতে পারতাম! নাহ প্রেমের বয়স এখন আর নাই। সরাসরি বিয়ে করতে হবে। আর বিয়ে করতে হলে ফ্যামিলীগত ভাবে এগোতে হবে। যেহেতু ফারজানার ফ্যামিলী থেকে ফারজানার বিয়ের ব্যপারে কোন আগ্রহ নেই তাই আমাদের ফ্যামিলী এ ব্যপারে কোন আগ্রহ দেখালো না। এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেল। এই এক সপ্তাহের প্রতিটি দিন আমি ফারজানার কথা ভেবেছি, মনে মনে ঘর বাঁধার কথা ভেবেছি কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সব ভেস্তে যাচ্ছে যখন কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসি। আর আমি না হয় জীবনে একবার এরকম মেয়ে দেখে পাগল হয়েছি, ফারজানার নিশ্চয়ই এরকম অনেক ছেলেকে দেখেছে, সে কি পাগল হয়েছে? হবার কথাও নয়। আমি যদি নায়ক মার্কা চেহারার হতাম তাহলে হয়তো সে আমাকে নিয়ে কিছুটা চিন্তা ভাবনা করত কিন্তু এ বয়সী মেয়েরা আমার মত ছেলেকে পছন্দ করে না। এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

এক সপ্তাহ পরে আমার বাসায় আমার এক খালাতো ভাই আসলেন যিনি আমাদের পরিবারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। বয়সে উনি আমার মায়ের চেয়েও সিনিয়ার। ভাইয়াকে ফারজানার কথা বললাম। উনি আমাকে বললেন- তুই ব্যবস্থা কর, যা করার লাগে আমি করব। উনি আমার মা’কে অনেক ক্ষন ধরে বোঝালেন- ছেলে যা চায় তাই করেন। মা সম্ভবত ভাইয়ার চাপে জোর করে আমাকে বললেন- তোর যা খুশি তা কর। তার মানে মা রাজী নন কিন্তু ভাইয়ার চাপে হা বলেছেন। আমার কি এত কথা শোনার দরকার আছে? আমি উত্তরার ভাবীকে ফোন দিলাম “ভাবী আর তো পারছি না। একটু ব্যবস্থা করুন না প্লীজ।”

ভাবী আমার মনের কথা বুঝতে পেরে “ওদের ফ্যামিলীর কেউ বিয়ের নাম গন্ধ শুনতে চায় না আর আমি কীভাবে বিয়ের কথা বলব?”

“তাহলে আমি যে ফারজানাকে পছন্দ করি তার কথা জানিয়ে দাও। আমি ওর জন্য আজীবন অপেক্ষা করব। যখন ওর ফ্যামিলী বিয়ে দিতে রাজী হবে তখনই বিয়ে করব।”

“লালসালু, তুম কি পাগল হয়েছ। তোমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে আর ফারজানার এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি। সে কেন তোমার জন্য অপেক্ষা করবে?”

আমি অসহায় বোধ করলাম। এ কেমন পরীক্ষা! আল্লাহ কেন আমার চোখের সামনে ফারজানাকে আনল? আর আনলই বা যখন তখন কেন আমাদের মিলনের ব্যবস্থা করছেন না? আমি তো খারাপ কিছু চাইনি, বিয়ে করতে চেয়েছি।



ফারজানার কথা গত কয়েকদিন স্টেটাসে লিখছি এ কারনে, এপ্রিল মাসের সাথে ফারজানার সৃতি জড়িয়ে আছে।

প্রথমেই জানিয়ে রাখি, এই কাহিনী সম্পূর্ণ বাস্তব। হয়তো কারো নাম পরিচয় প্রকাশ না করার জন্য কারো নাম ঠিকানায় ঈষৎ পরিবর্তন করা হয়েছে। আর যারা এই স্টেটাস অর্থাৎ ৪ নং স্টেটাস প্রথম পড়ছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি বাকী ১,২ ও ৩নং স্টেটাস পড়ার জন্য, যা আমার টাইম লাইনে আছে। ঐ স্টেটাস গুলো না পড়লে এই পর্ব বুঝবেন না। ও আরেকটা কথা, এই গল্পের শিরোনাম দিয়েছিলাম- বিয়ের আগের শেষ ছ্যাঁকা, এখন নাম পরিবর্তন করে রেখেছি “যে প্রেম শেষবার এসেছিল জীবনে!”

যাহোক মূল কাহিনীতে ফিরে আসি। ভাবীর কাছে সাড়া না পেয়ে আমি আমার বসকে জানাতে উদ্দোগী হলাম, কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছিলাম না। প্রথম স্টেটাসেই বলেছি বস আমার পিতৃতম, বয়সেও আমার বাবার কাছাকাছি। ওনাকে কীভাবে বলি! লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ওনাকে বলেই ফেললাম। উনি জানালেন “উনি শেষ চেষ্টা করবেন।” বস ভাবীকে এ ব্যপারে দায়িত্ব দিলেন।

ফারজানার ফ্যামিলীর অবস্থা জানিয়ে রাখা ভাল। ১০০ ভাগ গ্রামে বড় হওয়া ফারজানারা ১১ ভাই বোন। এক বোন মারা গেছেন। ফারজানার বাবা মারা গেছেন ২০০৮ এ। ভাই বোনদের মধ্যে ফারজানাই সবচেয়ে ছোট। ইমিডীয়েট বড় বোন অনার্সে পড়ে যার এখনো বিয়ে হয় নাই। বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী বড় বোনের বিয়ে না হলে ছোট বোনের বিয়ের নাম কেউ মুখে নেয় না। ও থাকে উত্তরা ভাইয়ের বাসায়। সেই ভাইও জীবনের ঘানী টানতে টানতে বিয়ে করে নাই। বড় এক বোন তার ছেলে মেয়ে সহ একই বাসায় থাকে, ঐ বোনের ছেলে মেয়ে উত্তরায় লেখাপড়া করে, হাসবেন্ড থাকেন ইউরোপে। আরেক বোন ফ্যামিলীসহ থাকে পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশে। তাদের মূল টার্গেট ইউরোপে চলে যাওয়া। ফারজানা ও তার বোনের জন্য যদি ইউরোপে বস বাসরত বাংলাদেশী ছেলে পায় তাহলে সেখানে তাদের বিয়ে দিবে-এটাই ওদের ইচ্ছা। সেক্ষেত্রে সব বোন মিলে ইউরোপে থাকতে পারবে। যে পর্যন্ত ইউরোপে যেতে না পারছে সেই পর্যন্ত তারা উত্তরায় থাকবে।

ভাবী ফারজানার বড় বোনকে আমার কথা বললেন। বড় বোন জানালেন-ফারজানার বিয়ে এখন দেয়া যাবে না। ১. আগে বড়টার বিয়ে হোক। ২. ‘কুমিল্লার’ ছেলে তাদের পছন্দ নয়, খুলনার দিকের পাত্র হলে ভেবে দেখা যেতে পারে। ৩. তাদের বড় বোন ফারজানার জন্য ইউরোপের পাত্র খুঁজছেন, যেহেতু ফারজানা অপূর্ব সুন্দরী তাই ধনী পাত্র পাওয়া কোন ব্যপার না।

তার মানে আমি তিন কারনে রিজেক্ট হয়ে গেলাম- এক, কুমিল্লা বাড়ী হওয়ার কারনে, দুই, ইউরোপে না থাকার কারনে ও তিন, ধনী না হওয়ার কারনে। অবশ্য আমার দেখা যত সুন্দরী দেখেছি রায় সবারই বিয়ে হয়েছে কোটিপতি পাত্রের সাথে। আমার মামাতো বোন গ্রামের সুন্দরী মেয়ে, তাকে কীভাবে যেন এক কোটিপতি ফ্যামিলী খুঁজে পায়, পরে তাদের বিয়ে হয়ে যায়। তারপরে একটা কথা আমার কানে এসেছে, সেটা হল-আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। গার্মেন্টস এর নাম নিলে এখনো অনেকে নাক সিটকায়। তখন আমার পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন ছিল, কিন্তু বেতনকে ছাপিয়ে আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকল। আপনারা যারা গার্মেন্টসে চাকরি নিতে আগ্রহী বলে আমাকে মেসেজ পাঠান তারা বষয়টি ভেবে দেখবেন!

ফারজানার ফ্যামিলী আমার মত পাত্রকে পছন্দ করবে না। আমাদের ফ্যামিলীও ফারজানার ফ্যামিলীকে পছন্দ করছে না। যেহেতু অফিসিয়ালী আগানোর পথ বন্ধ তাই আমি আনফিসিয়ালী আগানোর প্ল্যান করলাম। ফারজানাকে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রেমের প্রস্তাব দু’টিই এক সাথে দিব। সেক্ষেত্রে ভাবীকে দরকার। ভাবীর কাছে কয়েকবার গিয়েছিলাম কিন্তু লাভ হয় নি। যখনই ফারজানার প্রসঙ্গ তুলি তখনই ভাবী বিভিন্ন উছিলা ধরে কথা ঘুরিয়ে নেন। একবার বলেন, মেয়ে তাবলীগ করে, নিয়মিত তালিমে যায়, এসব কথা তার সামনে বলাই যাবে না। আরেকবার বলেন, ও বাড়ী গেছে। এভাবে ভাবী আমাকে ঝুলিয়ে রাখলেন। আমাদের ফ্যামিলী থেকেও আমার জন্য পাত্রী দেখা চলছে।

আমি তখন ব্লগ জগতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছিলাম। আজে বাজে লেখা লিখলেও অনেক প্লাস/লাইক/কমেন্ট পড়ত যা আমার ফ্রেন্ড লিস্টের অনেকেই জানে। ফেইসবুকে তখন একটা একাউন্ট করা জরুরী হয়ে পড়ল। একাউন্ট খুললাম মূল নামে। সেই আইডিতে অনেক ব্লগার এড হল। এর মধ্যে এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল যার নাম ‘তাজকিয়া বিনতে নাজিব’। ফেইসবুকে সেলিব্রেটি এই মেয়েকে অনেকেই চিনেন। এক সময় দিগন্ত টিভির সংবাদ পাঠিকা ছিল। তাজকিয়ার সাথে আমার ফেইসবুকে হুব ভাব হয়ে যায়। তাজকিয়া হঠাত একদিন জানায়-তার এক সিনিয়ার সংবাদ পাঠিকা আপু আছে যে বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে। আপনার সাথে মনে হয় ভালই হবে। আপনি যদি আগ্রহী হন তাহলে আমি সেই আপুর সাথে কথা বলে দেখতে পারি। নাম জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু তাজকিয়া সেই মেয়ের নাম বলল না। তিন চার দিন পরে আমাকে ফোনে জানাল-ভাইয়া আপনাকে যার কথা বলেছিলাম সেই মেয়েকে আপনার প্রোফাইল দেখালাম, সে আগ্রহী হয়েছে। আপনি এখন আমাদের সাথে এক জায়গায় মিট করেন। দু’জনের সাথে কথা বলিয়ে দিব। এরপর আপনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন আপনারা কি সামনে আগাবেন নাকি বাদ রাখবেন। এবার ওর সেই আপুর নাম জিজ্ঞাসা করলাম, সে নাম জানাল, এও বলল অমুক দিন সকাল এগারোটায় দিগন্ত টিভিতে এই মেয়ে খবর পড়বে, আপনি দেখে নিয়েন। আমি এই প্রথম দিগন্ত টিভির খবর দেখার প্রতি আগ্রহ বোধ করলাম।

প্রথম পর্বের লিংক

বিষয়: বিবিধ

২৫৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

331908
২৭ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:০৮
মু নূরনবী লিখেছেন : এত্ত ঘুরাও ক্যারে?...

331929
২৭ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:১৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : মু নূরনবী লিখেছেন : এত্ত ঘুরাও ক্যারে?...
331935
২৭ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:১০
হতভাগা লিখেছেন : কুমিল্লার লোকদের প্রতি অন্য জেলার মানুষদের একটা নেগেটিভ ধারনা আছে যে , কুমিল্লার লোকেরা কুটনা / কুটনী হয়ে থাকে ।

আর ফারজানার ব্যাপারে আপনার এই ছ্যাবলামী আপনাকে তার কাছে ওয়েট লস করিয়ে দেবে , এটা সংসার জীবনেও আপনাকে সং সাজিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

এরকম ওয়েটলেস ছেলেদেরকে মেয়েরা চুষে নেওয়া আমের মত ছুড়ে ফেলে।
332053
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:০১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কিয়ের লয় কি??
পাইলেন না কিন্তু এত পাগল হইলেন কেন?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File