লালসালুর মুরগী জবাই
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ২৬ জুলাই, ২০১৫, ০৩:১২:১৪ দুপুর
অনেক দিন আগের ঘটনা। তখন সম্ভবত ক্লাস এইটে পড়ি। চট্টগ্রাম শহরে থাকতাম। চট্টগ্রাম শহরে মাজার ব্যবসা দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে ভাল। শুধু মাজারই নয় মসজিদের হুজুররাও কম যান না। ওনারাও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন।
এরকম একটা ব্যবসা ছিল হাঁস মুরগী হুজুরদের দিয়ে জবাই করানো। যারা ধনী তারা নিয়মিত হাঁস মুরগী হুজুরদের দিয়ে জবাই করাতো। বাকীরা বিশেষ বিশেষ দিনে হুজুরদের কাছে হাঁস মুরগী নিয়ে যেত। বিশেষ বিশেষ দিন বলতে শবে বরাত, শবে কদর, আশুরার ইত্যাদি বুঝিয়েছি। চট্টগ্রামের ঐসব লোকের ধারনা হুজুরকে দিয়ে জবাই করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যাবে। এখানে আবার একটা প্যাকেজ আছে- সেটা হল মুরগী হুজুরকে দিয়ে জবাই করানো হল ঠিকই কিন্তু এই মুরগী খেতে হলে হুজুরের পানি পড়া লাগবে! অর্থাৎ সকালে যে বাড়ীর মুরগী জবাই করা হত দুপুরে সেই বাড়ীর লোক এসে পানি পড়ার জন্য হুজুরের কাছে আসত। হুজুররা দুই বারেই টাকা নিতেন। অনেক হুজুরের প্যাকেজ ছিল তারা একবারেই টাকা নিতেন। আমি যে সময়ের ঘটনা বর্ণনা করব তখন মুরগী জবাইয়ের রেট ছিল পাঁচ টাকা। এবার আসি মূল ঘটনায়।
চট্টগ্রামের যে কোন এলাকার মত আমাদের এলাকার মসজিদেও জামাত শিবিরের লোকজন দাওয়াতী কার্যক্রম চালাত। প্রতি বছর তাদের নতুন নতুন মুখ দেখা যেত। যে বছরের কথা বলছি সেই বছরে লম্বা দাঁড়িওয়ালা এক হুজুর টাইপের লোককে এই এলাকার ইউনিট সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হল। তিনি মসজিদে এসে বিভিন্ন লোকের সাথে পরিচয় হতেন। উদ্দেশ্য একটাই- জামায়াতের মার্কেটিং করা। একদিন শবে বরাতের দিন মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আমি আর উনি কথা বলছি। ঐদিন আমার মসজিদে যেতে দেরি হয়ে গিয়েছিল, জামাত পানি। ওনারও দেরি হয়ে গিয়েছি, উনিও জামাত পান নি, তাই ওনার ঈমামতীতেই নামাজ পড়লাম। মসজিদ থেকে বাইরে এসে উনি আমাকে শিবিরের পক্ষে কথা বলা শুরু করলেন। এমন সময় এক লোক হন্ত দন্ত হয়ে মুরগী নিয়ে হাজির। উনি এসে মসজিদের ঈমাম মোয়াজ্জেম সাহেবদের খুঁজতে লাগলেন। কে যেন বলল ঈমাম মোয়াজ্জেম চলে গিয়েছেন তখন লোকটি মন খারাপ করল। আমার মাথায় তখন একটা বুদ্ধি খেলল। আমি ঐ লোকটিকে বললাম “হুজুর তো আমার সামনেই রয়েছে।” আর আমার সাথে থাকা শিবির সভাপতিকে বললাম “এই লোকটির উপকার করতে হবে। ওনার মুরগী জবাই করতে হবে।” উনি খুশী মনে মুরগী জবাই করে দিলেন। হেল্পার হিসেবে আমি মুরগী ধরলাম। এরপর কোথা থেকে আরো তিন জন মুরগী নিয়ে হাজির। তাদের মুরগীও জবাই করে দিলাম। এরপর প্রথম ব্যাক্তি শিবির সভাপতিকে ৫ টাকা সাধল। উনি জিজ্ঞেস করলেন “কীসের টাকা?” উনি টাকা নিতে চাইলেন না। আর যে লোকটির মুরগী জবাই করা হয়েছে উনিও নাছোড়বান্দা। হুজুর টাকা না নিলে নাকি ‘ফাতেহা’ হবে না। উনিও টাকা দিয়ে ছাড়বেন। বাকী লোকগুলোরও একই অবস্থা। আমি ওনাদেরকে বললাম “আমার কাছে টাকা দিন। আমি হুজুরকে ম্যানেজ করব।” টাকাগুলো আমি নিলাম।
হুজুর (!) আমাকে বললেন “এই টাকাগুলো হারাম। এগুলো নেয়া ঠিক হবে না .... ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে লাগলেন। শেষে আমাকে বললেন “এই টাকা আপনি নিয়ে যান, আমার লাগবে না!”
আমি মূলত ওনার কাছ থেকে এই কথাটাই আদায় করতে চেয়েছি। চার মুরগী জবাইয়ের বিশ টাকা হাতে পেলাম। ক্লাস এইটের ছেলের হাতে ঐ আমলে বিশ টাকা আসা মানে এই আমলে দেড়শ টাকা আসা। কারণ তখন গরুর মাংসের দাম ছিল ৫০ টাকা কেজি। একটা চকবার আইসক্রীম ৮ টাকায় পাওয়া যেত।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৬৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানে চোরের উপর বাটপার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন