লালসালুর বিয়ে-১
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ২৫ মার্চ, ২০১৫, ১০:৩০:৫২ সকাল
লালসালুর বিয়ে ১-৩
ক)
উত্তরা চৌদ্দ নম্বর সেক্টরে আমার এক বস থাকতেন। আমি ওনার বাসায় নিয়মিত আসা যাওয়া করতাম। পিতৃতূল্য এই বস আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে এক সন্ধ্যায় ওনার বাসায় গিয়েছিলাম। উনি থাকতেন তিন তলায়। ওনার নীচ তলার এক মেয়ের সাথে বসের স্ত্রী মানে আমার ভাবীর সাথে গলায় গলায় ভাব। সেই মেয়ে ঐ মুহূর্তে ঐ বাসায় ছিল। বস মেয়েটিকে আমার সামনে নিয়ে এসে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি মেয়েটির রূপ দেখে কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হল বুকের মধ্যে হার্ট বিট হচ্ছে না! যেমন লম্বা, তেমনি ফর্সা, তেমনি চেহারা। এই মেয়ের চেহারা ঠিক বোম্বের নায়িকাদের মত। প্রচলিত পোষাকের যে সিস্টেম মেয়েটি সেই সিস্টেমের বাইরে ছিল। মানে হল, বর্তমানে সব মেয়েদের পোষাক বডি ফিটিং, যে পোষাক পরলে মেয়েদের বুক পাছা, কোমরের মাপ বলে দেয়া যায় মেয়েটি এই ধরনের পোষাক পরে নি অর্থাৎ ঢোলা লুজ ফিটিং থ্রি পিস পরেছে। সুন্দরী মেয়েরা নিজেকে দেখাতে ভালবাসে, টাইট ফিটিং ড্রেস এখন অসুন্দরীরাও পরে আর সুন্দরী হলে তো কথাই নেই, কীভাবে নিজেকে বেশি করে শো করা যায় তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মেয়েটির মাথায় কাপড় ছিল। বস মেয়েটিকে বসতে বললেন, মেয়েটি বসল। প্রায় দশ মিনিটের মত মেয়েটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু ঠিক মত কথা বলতে পারলাম না। আমি মনে হয় কথা বলা ভুলে গিয়েছিলাম। মেয়েটি উত্তরা উইমেন্স কলেজে ইন্টারে পড়ে।
ওই সময় হঠাত মনে হল সারা জীবন আমি যে ধরনের মেয়ে স্বপ্নে খুঁজেছি, যে ধরনের মেয়ে নিয়ে ঘর বোনার স্বপ্ন দেখেছি তার সাথে এই মেয়ের সব কিছুই মিলে যায়। এমন মেয়েকে বাস্তবে দেখব তা কল্পনাতেও ভাবিনি। কিন্তু আমার আর এই মেয়ের মধ্যে যে ফারাক তাতে কি এই মেয়েকে বিয়ে করা যাবে?
এই মেয়ে মাত্র ইন্টারে পড়ে। শুনলাম বড় ভাই বোনের অনেকেই এখনো বিয়ে করে নাই, লম্বা সিরিয়াল আছে। আরো অনেক ঝামেলা আছে। এত সুন্দরী মেয়ে আমার মত একটা কালো ছেলেকে পছন্দ করবে কী না। ওদের ফ্যামিলী কি ঝামেলা করবে? আমাদের ফ্যামিলীর কী মত থাকবে? বাবা-মার চাহিদানুযায়ী পাত্রী হলে এই মেয়ে অযোগ্য। তাদের কিভাবে ম্যানেজ করব?
খ)
দশ মিনিট মেয়েটির সাথে কথা বললাম। আমার কাছে দশ মিনিট দশ সেকেন্ডের মত মনে হল। মেয়েটি যখন উঠে গেল তখন ইচ্ছে হল তাকে বলি “আরো কিছুক্ষন কাছে থাক না” কিন্তু সাহসে কুলালো না। এছাড়া ভাবী কী মনে করবে। মেয়েটি চলে যাবার পরে আমার মনে হতে লাগল রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তি- আমি পাইলাম, আমি উহাকে পাইলাম। রবীন্দ্রনাথে এই মেয়েকে দেখে নিশ্চয়ই গাইতেন- আমারো পরানো যাহা চায়, তুমি তাই তুমি তাইগো।
ঐ বাসা থেকে বের হয়ে নীচে নামছিলাম। নীচ তলায় এসে হাটা স্লো করলাম-আশা, যদি ঐ মেয়েটিকে একটু দেখা যায়! কিন্তু না, ওর দেখা পেলাম না। বিল্ডিং এর বাইরে এসে মা কে ফোন দিলাম- মা তোমার পছন্দের মেয়ে পেয়েছি। মা খুশি হলেন কিন্তু এও জানালেন শুধু চেহারা দেখেই বিয়ে করা যায় না, বিয়ের সময় অনেক কিছু দেখতে হয়। আমি এত কিছু বুঝি না, এই মেয়েকে আমার চাই ই চাই।
বাসায় গিয়ে বাবা মার সাথে ডিটেইলস আলাপ করলাম, তার আগে অবশ্য বসের কাছ থেকে ওর সম্মন্ধে কিছু তথ্য নিলাম, যেসব প্রশ্ন আমার বাবা-মা আমাকে করতে পারে। ঘুরে ফিরে প্রশ্ন একটাই- ঐ মেয়ে কি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত? বাবা-মা কেমন যেন ইতস্তত করছিল। এর মধ্যে অনেক কারন আছে। প্রথমত, মেয়েটি মাত্র ইন্টারে পড়ে। বাবা-মার ইচ্ছা গ্র্যাজুয়েট বৌ ঘরে আসবে। দ্বিতীয়ত, মেয়েটির বাড়ী খুলনার দিকে আর আমাদের কুমিল্লায়। আমার বাবা প্রথম শ্রেনীর সরকারী অফিসার, তাই তিনি চাচ্ছেন প্রথম শ্রেনীর সরকারী বেয়াই। অথচ মেয়েটির বাবা কৃষক, ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় থাকে। আত্মীয় স্বজনকে আমার বাবা-মা জানালেন তারা কেউ ‘কৃষকের মেয়েকে’ ঘরে আনতে রাজী নন। এটা হল আমার দিকের অবস্থা আর মেয়ের দিকের অবস্থা হল, মেয়ের বড় দুই বিবাহযোগ্য ভাই ও এক বোনের এখনো বিয়ে হয় নি। এছাড়া মেয়েটি মেধাবী, এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েছে ইন্টারেও এ প্লাস পাবে। এই মেয়েকে এত দ্রুত বিয়ে দেয়ার চিন্তা ওদের ফ্যামিলীর কারো মাথাতে আসে নি। এখন এই মেয়ে যদি অনার্স শেষ করেও বিয়ে করে তাহলে আরো সাত বছর লাগবে মানে আমাকে সাত বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে যদি ওকে বিয়ে করতে হয়! ততক্ষণে এই মেয়ে কি ‘ফ্রী’ থাকবে? যদি কাউকে পছন্দ করে ফেলে? এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে উত্তরায় বসের স্ত্রী মানে ভাবীকে ফোন দিলাম “ভাবী, আপনি যে মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তাকে আমার পছন্দ হয়েছে, এখন আপনি কী করবেন ব্যবস্থা করুন। ভাবী অবাক হয়ে বললেন “আমি তো বিয়ের জন্য ঐ মেয়েকে তোমার সামনে আনি নি। এই মেয়ের তো এখনো বিয়ের বয়স হয় নি। ওর ভাই যদি জানে তাহলে আমার খবর আছে, আমার সাথে ফারজানাকে মিশতে দিবে না।” এই প্রথম মেয়েটির নাম জানলাম ‘ফারজানা’।
চলবে........
বিষয়: বিবিধ
১৮০৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফারজানারে করেন আর যাকেই করেন আমার তাতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু, বিয়েতে দাওয়াত চাইই চাই! আমি কুমিল্লার পোলা, দাওয়াত যদি না পাই, আপনার বিয়ে ভাঙ্গার ব্যপারে সর্বাগ্রে থাকব আমি।
আরেকটা কথা, আপনি খুব পর্দা মেইন্টেইন করেন? পর্দা পালন কে জীবনের অপরিহার্য মমে করেন? যদি করে থাকেন, তাহলে কিছু কথা বলার ছিল, নয়ত বলব না।। আপনার লিখা অনেক সুন্দর হয়েছে। মন যখন ফারজানাতেই আটকে গেছে, আটঘাট তাঁর সাথেই হোক, দোয়া রইল।
চলছে চলু,,,,,,
অ.ট. আপনার কোন পোস্টে আমাদের ভাবী মানে লালসালু ভাবীর কোন লাইক বা কমেন্ট আমরা দেখি না। এর কারণ জাতি জানতে চায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন