ব্যর্থ মানুষের গল্প ৫
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ২০ মার্চ, ২০১৫, ১০:৪০:২৫ সকাল
শাহেদের বাবা গাড়ীর মডেল চেইঞ্জ করেছেন। নতুন গাড়ী কেনা হল- এলিয়ন। শাহেদ ইন্টারে ওঠার পর থেকে এই পর্যন্ত বাবা তিনটা গাড়ী বদলেছেন। নতুন গাড়ী পেলে গাড়ীর প্রথম যাত্রী হয় শাহেদ। সে নতুন গাড়ী নিয়ে সারা দিন ঘোরে। তারপরে বাবা গাড়ী পান। এবারও এর ব্যতিক্রম হল না যদিও হালকা পরিবর্তন হল। সেটা হল প্রতিবার নতুন গাড়ীর সাথে ড্রাইভার থাকে, এবার শাহেদ ড্রাইভার নিল না, বাবাও এই প্রথম নতুন গাড়ী ড্রাইভার ছাড়াই শাহেদকে চালাতে দিয়েছেন। শাহেদের উদ্দেশ্যও এবার ভিন্ন। প্রতিবার গাড়ী পেলে গাড়ী নিয়ে সারা ঢাকা শহর চক্কর দেয়। এবারের টার্গেট সানজিদা! যদিও শাহেদ জানে সানজিদাকে এই গাড়ীতে ওঠানো যাবে না। কেনই বা সানজিদা শাহেদের গাড়ীতে ওঠবে? সানজিদা যদি শাহেদকে পছন্দ করে তাহলে তো শাহেদের গাড়ীতে ওঠবে। শাহেদ মনে মনে হাসল, সানজিদা শাহেদকে পছন্দ করলে তো বিয়েতেই রাজী হত। যেহেতু বিয়েতে রাজী না তাহলে ধরে নেয়া যায় সানজিদা শাহেদকে পছন্দ করে না। আর পছন্দ না করলে এক যুবকের গাড়ীতে কোন যুবতী উঠে না। এটা ইউরোপ আমেরিকা না। ফ্রী সেক্সের দেশ না। ‘ফ্রী সেক্সের দেশ’ কথাটা মনে পড়তেই শাহেদের শাহবাগের কথা মনে পড়ল। ইউরোপ আমেরিকার এই দিক টার সাথে শাহবাগের মিল আছে। এতগুলো যুবক যুবতী এক সাথে তাঁবুতে রাত কাটায়! না আছে কোন বিধি নিষেধ না আছে কোন বাঁধা। পুলিশ পাহারা দেয় যাতে বহিরাগত কোন লোক তাদের নিরাপত্তা বেস্টনি ভেঙ্গে তাঁবুর এলাকায় ঢুকতে না পারে। কিন্তু একই তাঁবুতে যদি ছেলে মেয়ে এক সাথে থাকে তাহলে পুলিশ তাদের বাঁধা দিবে না। দিবেই বা কেন? বাংলাদেশের কোন আইনেই তো তাদের বাঁধা দিতে পারে না। শাহবাগের ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে শাহেদের অসহায় মনে হয়। মনে হয় এই যদি হয় দেশের ‘নেতৃত্বশীল’ তরুণ তরুণী তাহলে দেশ এদের কাছ থেকে কী আশা করবে? শাহেদের বাবা যেমন একটা গাড়ী কিছুদিন চালানোর পরে মডেল পুরনো হয়ে গেলে নতুন মডেলের গাড়ী কিনেন তেমনি এই প্রজন্মের আধুনিক দাবীদার ছেলে মেয়েগুলোও বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের ক্ষেত্রে দিন দিন মডেল চেইঞ্জ করছে। শাহেদের সামনেই দেখা- প্রেমের নামে ছেলে মেয়েরা কী না করছে।
সানজিদা যা ই ভাবুক না কেন আজ সে সানজিদাকে তার গাড়ীতে ওঠার জন্য অফার করবে। এই উদ্দেশ্যে সে ফার্মগেইটে একটা কোচিং সেন্টারের সামনে গাড়ী পার্ক করে। এই কোচিং সেন্টারেই সানজিদা মেডিকেল ভর্তি কোচিং করছে। আশেপাশেই কোথাও সে হোস্টেলে থাকে। শাহেদ জানে কোন সময়ে সানজিদার ক্লাস থাকে। শাহেদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। ক্লাস ছুটি হয়, ছেলে মেয়েরা ক্লাস শেষে বের হয়ে গেল, আরেক ব্যাচ ক্লাসে ঢুকল, কিন্তু সানজিদার মত কাউকে পেল না। পাওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ একই সাথে একই বিল্ডিং এ চারটা কোচিং সেন্টার আছে। শত শত ছাত্র ছাত্রী আসা যাওয়া করছে। এর মধ্যে বোরখাওয়ালীর সংখ্যা কম না। শাহেদ সানজিদার হাইট অনুযায়ী বোরখাওয়ালী খুঁজছিল। সানজিদার হাইটের বোরখাওয়ালীর সংখ্যাও কম না। এদের ভেতর কে সানজিদা কে অন্য মেয়ে বোঝার উপায় নাই। একবার ভাবে ওকে ফোন দিবে কিন্তু পরক্ষনেই সে চিন্তা নাকচ করে দেয়। ফোন দিলে কেমন দেখায়? হতাশ হয়ে সে গাড়ী থেকে নেমে পত্রিকার দোকানের দিকে হাঁটা দিতেই এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেল। ধাক্কা খাওয়ার সাথে মেয়েটার পড়ে যাবার উপক্রম হতেই শাহেদ হাত দিয়ে মেয়েটিকে ধরল। মেয়েটি পড়ল না।
“আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া” কন্ঠটি কি জীবনেও ভোলা যাবে? এ কন্ঠের জন্য সে আজীবন অপেক্ষা করতে পারবে। বিধাতার কি খেলা! এত ভীড়ের মাঝে সানজিদার সাথেই ধাক্কা খেল।
“ওয়ালাইকুম সালাম” শাহেদ যদি জানত এই ধাক্কা খাওয়া মেয়েটা সানজিদা হবে তাহলে সহজে হাত ছাড়ত না।
“তুমি এখানে?” ভাব দেখাল শাহেদ কিছুই জানে না।
“আমি এই কোচিং এ পড়ি। আপনি?”
“এ দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাত পেপার কিনতে নামলাম। আজকের পত্রিকায় আমার ছবি ছাপা হয়েছে তো, কালেকশনে রাখতে হবে।” গর্বের সাথে শাহেদ বলল।
“আপনি তো এখন জাতীয় হিরো। টক শো’তে যান না?” তাচ্ছিল্যের স্বরে সানজিদা বলল।
শাহেদের কাছে সানজিদার প্রত্যেকটা কথাই অমৃত মনে হচ্ছিল। কোনটা তাচ্ছিল্য সেটা বুঝতে পারল না। “আগামীকাল রাতে টক শো আছে। রাত নয় টায়।” ইদানিং শাহবাগীদের বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিত টক শোতে দেখা যাচ্ছে। শাহেদকেও একটা চ্যানেল ডেকেছে।
শাহেদ শেষ পর্যন্ত সানজিদাকে গাড়ীতে চড়ার অফার করতে পারল না।
ইদানিং ব্যাঙের ছাতার মত টিভি চ্যানেল গজিয়ে উঠছে। টিভি চ্যানেলের অন্যতম আকর্ষণ টক শো আর টক শোর প্রধান আকর্ষণ হল ক্যাঁচাল। সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের দুই জন লোক যার যার পক্ষে যুক্তি খন্ডন করবে আর দর্শক মজা নিবে। কেউ কারো কথা শুনবে না, তালগাছের মালিক সবাই। কিন্তু শাহবাগীদের সাথে টক শোতে কোন প্রতিপক্ষ আনা হচ্ছিল না। টক শোর দুই জন বক্তাই শাহবাগী। এমনকি উপস্থাপক নিজেও শাহবাগী। অনেক সময় দুই প্রতিপক্ষ না থাকলে উপস্থাপক নিজেই এমন সব প্রশ্ন করবে যাতে মনে হয় টক শো নিরপেক্ষ। কিন্তু শাহবাগীদের টক শোতে উপস্থাপক নিজেকে বড় শাহবাগী প্রমাণের চেষ্টা করত। শাহেদ তেমনি এক টক শো তে অংশগ্রহণ করেছিল। শাহেদ খেয়াল করল এই টক শোর প্রধান আকর্ষণ হল সুন্দরী উপস্থাপিকা! মেয়েটি দেশীয় থ্রী পিস পড়েছে কিন্তু তাতে বিদেশী লুক! গলার কাছে এমন ভাবে খোলা যাতে একটু ‘অসাবধান’ হলেই অনেক কিছু দেখা যায়। এই উপস্থাপিকা এই টক শোকে তার রূপের মহিমা দিয়ে উজ্জ্বল করেছে।
এক দলীয় টক শো কখনো জমে না, এটাও জমল না। শাহেদ খেয়াল করল বিরোধী পক্ষ থেকে কোন টেলিফোনও আসল না। যত ফোন আসল সবই এসেছে শাহবাগের পক্ষে। শাহেদের সব কিছু সাজানো মনে হল।
টক শো থেকে বের হতে হতে রাত সাড়ে দশটা বেজে গেল। এখান থেকে শাহবাগ কাছে। শাহেদ সেখানেই ছুটে গেল। প্রতিদিন শাহেদ নতুন নতুন ব্লগারের সাথে পরিচিত হয়, আজও ব্যতিক্রম হল না। আজ পরিচয় হল- খামচি বাবা, মেরামত বাবা এই নামের কজনের সাথে। এরা সবাই নাম করা ব্লগার যদিও এদের কারো ব্লগে কখনো ঢুঁ মারা হয় নি। একদিকে ব্লগাররা আড্ডায় ব্যস্ত অন্যদিকে একদল লোক ল্যাপটপ নিয়ে ‘বাঁশেরকেল্লার’ বক্তব্যের প্রতিবাদ করছে।
‘বাঁশেরকেল্লা’ হল শাহবাগ বিরোধীদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ যার মাধ্যমে তারা অপ প্রচার চালিয়ে থাকে। ইতিমধ্যে সরকার ‘বাঁশেরকেল্লা’ কয়েকবার ব্লক করেছে। কিন্তু তাত তারা পিছপা হয় নি। বিকল্প পেইজ পরক্ষনেই খোলা হয়। দুই তিন ঘন্টার মধ্যে কয়েক লক্ষ লাইক পড়ে যায়। আশ্চর্য! দেশে ছাগুর পরিমান আশংকা জনক হারে বেড়ে গেছে। মানবতা বিরোধীদের ফাঁসি দিতে পারলেই দেশে ছাগু কমে যাবে।
“ছাগু ছাগু, ধর ধর” হঠাত বারডেম হাসপাতালের কোনা থেকে শোরগোল শোনা গেল। এতক্ষন সবাই ফেইসবুকে ছাগু নিধন করছিল। এখন বাস্তবেই ছাগু পাওয়া গেল। শাহেদ দৌড়ে সেদিকে চলে গেল। এক লোককে কিছু লোক পেটাচ্ছে। লোকটির সাদা পাঞ্জাবী রক্তাত্ব হয়ে গেছে। শাহেদ ও কিছু লোকের সহায়তায় লোকটিকে উদ্ধার করা হল। পরে জানা গেল, উনি কাকরাইল মসজিদে চিল্লায় এসেছিলেন। শাহবাগে কী হচ্ছে দেখার জন্য তিনি উৎসাহ নিয়ে এখানে এসেছিলেন। ওনার দাঁড়ি টুপি দেখে শাহবাগীরা তাকে ছাগু সন্দেহ করে পেটায়, রক্তাত্ব করে। শাহেদ চিন্তায় পড়ে যায়। শাহবাগের আন্দোলন তো ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। ওদের আন্দোলন মানবতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে। তাহলে এরা কথায় কথায় ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে কেন? প্রতিদিন এখানে বক্তৃতা হয়। অনেক বক্তার বক্তব্য শুনে মনে হয় এরা মানবতা বিরোধী নয় ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। যদিও ছাত্রলীগ এদেরকে একবারের বেশি বক্তব্য দিতে দিচ্ছে না তবুও শাহেদের মনে কেন যেন খটকা লাগে। সে ব্লগারদের আড্ডায় যোগ দিল। শাহেদ ভাল মানের ব্লগার না হলেও এরা সবাই শাহেদকে চিনে। আড্ডার ধরন দেখে শাহেদের মনে প্রশ্ন জাগল “আচ্ছা, আমরা কি ইসলামের বিরুদ্ধে?”
রাত বারোটায় বাসায় ফিরল। মাথায় তখন দুই তিনটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। এক নম্বরে অবশ্যই সানজিদা, দুই নম্বরে টক শো নামে নাটক, তিন নম্বরে শাহবাগে দাঁড়ি টুপিওয়ালা লোক নিষিদ্ধ কেন? চার নম্বরে শাহবাগীরা কেন ইসলামের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে? বিষয়গুলো তার মাথায় জট পাকিয়ে ফেলছে। মাঝে মাঝে বাঁশেরকেল্লায় ঢুকে দেখে, ঐ পেইজে ঢুকলে মনে হয় শাহবাগে শুধু নাস্তিকতার চর্চাই হয়। কনফিউশনে তার অনেক ক্ষন ঘুম হল না। মনের ভেতরে অনেকগুলো ‘কেন?’ উঁকি মারছিল যার উত্তর তার জানা ছিল না।
নতুন গাড়ী নিয়ে শাহেদ সানজিদাকে নিয়ে ঘুরতে চেয়েছিল কিন্তু সেদিন সানজিদাকে গাড়ীতে ওঠার কথা অফারই করা হয় নি কিন্তু আজ হঠাত করে সেই সানজিদাই শাহেদের গাড়ীতে উঠল! একটা বই কিনতে নীলক্ষেতে গিয়ে শাহেদের সাথে সানজিদার দেখা। বই আর কেনা হল না। শাহেদ নিজে গাড়ী ড্রাইভ করছিল। রাস্তায় গাড়ীর চাপ বেশি হবার কারনে গাড়ী এমনিতে স্লো চলছিল। হঠাত সামনে কোত্থেকে এক রিকশা এসে হাজির! শাহেদ কন্ট্রোল করতে পারল না। গাড়ী ধাক্কা দিল রিকশাকে। রিকশার এক মাত্র আরোহী পড়ে গেল। পড়ে গেল তবে কন্ট্রোল হারাল না। যাত্রীর হাত থেকে অনেক কাগজ পত্র বই খাতা পড়ে গেল। রিকশার চাকা বাঁকা হয়ে গেল। শাহেদ দ্রুত গাড়ী থেকে নেমে যাত্রীর দিকে এগোল। যাত্রী শাহেদের দিকে তাকিয়ে সেই ঐতিহাসিক কন্ঠে বলল “আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া!!! আরেকটু হলে আমাকে পঙ্গু করে দিচ্ছিলেন!” এ সানজিদা।
শাহেদ হাসি মুখ বলল “ব্যপার কী? তোমার সাথে কি আমার ধাক্কা ধাক্কির সম্পর্ক নাকি?”
শাহেদ সানজিদার বই খাতা কাগজ রাস্তা থেকে উঠিয়ে তার গাড়ীতে রাখল। রিকশায় আর যাত্রী নেয়া যাবে না। রিকশাওয়ালাকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে শাহেদ সানজিদাকে বলল “গাড়ীতে ওঠ। তোমাকে ফার্মগেইটে দিয়ে আসি।”
সানজিদা দেখল এই সময় আশে পাশে রিকশা নেই। সে গাড়ীতে উঠে পড়ল। সানজিদাকে পাশে পেয়ে শাহেদের বই কেনার কথা ভুলে গেল। মনে মনে দোয়া করতে থাকল “আল্লাহ রাস্তায় এমন জ্যাম দাও যাতে এখানে থেকে ফার্মগেইট যেতে কম পক্ষে তিন ঘন্টা লাগে!” জ্যাম লাগল কিন্তু তা তিন ঘন্টা মেয়াদী না, আধা ঘন্টা মেয়াদী। এর মাঝেই শাহেদ সানজিদার সাথে টুক টাক কথা বলতে লাগল। এক পর্যায়ে শাহেদ বলেই ফেলল “তুমি কি আমার ব্যপারে মত পরিবর্তন করেছ কি না?”
সানজিদা “আমাকে ক্ষমা করবেন ভাইয়া। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনি যেন অনেক ভাল মেয়ে পান।”
শাহেদ “আমার অনেক ভাল মেয়ে দরকার নাই। শুধু তোমাকে চাই।”
“আপনি কি পারবেন শাহবাগ থেকে ফিরে আসতে?” সানজিদার এই প্রশ্ন শুনে শাহেদ আকাশ থেকে পড়ল! যেখানে মানুষ শাহবাগে যাওয়ার জন্য পাগল সেখানে এই মেয়ে তাকে শাহবাগে যেতে মানা করছে!
“শুধু তাই নয় আপনাকে পরিপূর্ণভাবে মুসলমান হতে হবে। আমি চাই আমার স্বামী একজন মুসলিম হোক।”
সানজিদার কথা শাহেদের গায়ে কাঁটার মত বিঁধছে। রাজাকার মৌলবাদী আর সানজিদার কথার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। শাহবাগে গেলেই কি একজন মানুষ অমুসলিম হয়ে যায়? শাহেদের মাথায় রক্ত চড়ে গেল। জীবন দিলেও সে শাহবাগ ছাড়বে না। আজীবন মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চেয়েই যাবে।
সানজিদা কথা বলতেই থাকল। শাহবাগীরা যে সিলাম বিরোধী তার পক্ষে যুক্তি প্রমান সহ কথা বলতে লাগল। শাহেদ এসব কথা বাঁশেরকেল্লাও দেখেছে।
তার খুব ইচ্ছে হল এই মেয়েকে এখনই গাড়ী থেকে অপমান করে বের করে দিতে। কিন্তু বন্ধুর বোন এ কারনে তা করল না। এই মুহূর্তে সানজিদার প্রতি তার সকল মায়া প্রেম ভালবাসা সব দূর হয়ে গেছে। রাজাকারের দলের কোন মেয়েকে সে পছন্দ করত তা ভেবে তার গা গুলিয়ে যাচ্ছে। সে গাড়ী থামাল “সরি সানজিদা, কিছুক্ষনা আগেও আমি তোমার জন্য জীবন দিতে পারতাম। কিন্তু এখন তোমাকে আমার অসহ্য মনে হচ্ছে। আমি জীবনেও তোমার কাছে কোন দাবী করব না। তুমি যদি মঞ্জুর বোন না হতে তাহলে এখনই তোমাকে পুলিশে দিতাম। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে তুমি রাজাকারদের সাপোর্ট করছ ভাবতেই ঘৃণা লাগছে।”
সানজিদা কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়ী থেকে নেমে গেল। শাহেদের ভালবাসা শেষ হয়ে গেল। মন খারাপ করে রাতে বাসায় ফিরল। গাড়ী থেকে নামার সময় মনে হল কী যেন গাড়ীতে রয়েছে। একটা লিফলেট, যা সানজিদার হাতে ছিল। হ্যা, সানজিদার হাতে এ ধরনের অনেক লিফলেট ছিল, তখন খেয়াল করেনি কী লেখা ছিল সেই লিফলেটে। লিফলেট টা সে পকেটে ঢুকিয়ে রাখল। রাতে খাবার দাবারের পর সে লিফলেট খুলে পড়া শুরু করল। শিরোনাম ছিল “শাহবাগের নাস্তিকদের পরিচয়!”
লিফলেটে যাদের নাম লেখা আছে তাদের প্রায় সবাইকে শাহেদ চেনে। তাদের চরিত্র নিয়ে শাহেদের কোন সন্দেহ নেই। তারা কেউ চোর ডাকাত বদমাশ নয়। তাদের চরিত্রে দোষ দিতে রাজাকাররা উঠে পড়ে লেগেছে। লিফলেটে প্রত্যেকের ফেইসবুক পেইজের ঠিকানা ও কে কোথায় কী ব্লগ লিখেছেন তার বর্ণনা আছে। পড়ে শাহেদের সন্দেহ বেড়ে গেল। কম্পিউটার ওপেন করে এক এক করে তাদের দেয়া ব্লগে ঢুকতে লাগল। যতই পড়ছে শাহেদের মাথা ততই গরম হচ্ছে। কী লিখেছে ওরা? কোন মুসলমানের বাচ্চা কি এভাবে লিখতে পারে? “কচ্ছপ মহিউদ্দিন” নামকে এক ব্লগারের ব্লগ পড়ে সন্দেহ হল এই লোক আসলেই কি এটা লিখেছে কি না। তাকে ফোন দিল “বস আপনার ব্লগের লিংকটা দিবেন? আপনি তো বিখ্যাত ব্লগার। আপনার লেখা পড়তে চাই।” এক এক করে সবার কাছ থেকে তাদের ব্লগ এড্রেস নিয়ে প্রত্যকের ব্লগে ঢুকল। এরা নবী রাসূলকে নিয়ে যা লিখেছে যা যদি কোন মানুষ দেখে তাকে নিশ্চয়ই হত্যা করবে। শাহেদের নিজেরও ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে নাস্তিকদের গলা টিপে ধরে!
রাত তখন তিনটা বাজে। শাহেদের মনে পড়ল ইশ! সানজিদাকে কী অপমান করেই না গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়েছিল। মেয়েটা কী মনে করবে? শাহেদ এতদিন অন্ধ ছিল, সানজিদা তাকে এই অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিল। অথচ এই সানজিদাকে……..
শাহেদের রাগে দুঃখে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হল। এখন ফোনে সানজিদার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। নাহ! এখন রাত তিনটা বাজে। এছাড়া সানজিদা রাগে যদি ফোন না ধরে। যে করেই হোক না কেন সানজিদার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। অনেক দিন পরে শাহেদ অযু করে নামাযের জন্য দাঁড়ালো। এত রাতে কোন নামাজ নেই। সে তাহাজ্জুদ পড়ল। সারা রাত জায়নামাজে কাটিয়ে দিল। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইল এই বলে যে, সে এতদিন না জেন না বুঝে নাস্তিকদের সঙ্গ দিয়েছিল। আর সানজিদার সাথে খারাপ ব্যবহারের জন্যও অনুতপ্ত হল।
ফরজরের আযান দিল। অনেক বছর পরে সে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়ল। সারা রাত জেগে থাকার পর ক্লান্ত হয়ে নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমানোর আগে সিদ্ধান্ত নিল আজ অফিসে যাবে না এবং যে করেই হোক না কেন সানজিদার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে। জীবনেও শাহবাগের নাম নিবে না।
ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দুপুর বারোটা বেজে গেল। মোবাইল চেক করে দেখে মঞ্জুর অনেকগুলো মিস কল!
শাহেদের সাথে সানজিদার বিয়ের কথা বার্তা শুরু পর থেকে মঞ্জুর সাথে শাহদের সম্পর্কটা একটু অন্যরকম যাচ্ছে। লজ্জায় শাহেদ ও মঞ্জু কেউ কারো সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলছিল না। আজ মঞ্জুর এতগুলো কল পেয়ে শাহেদ অবাক হল। তবে কি সানজিদা মঞ্জুকে গতকালের অপমানের ঘটনা বলেছে? নাহ এটা কেমনে করে বলে? যদিও সানজিদার সাথে আসলেই খুব খারাপ আচরণ করা হয়েছিল। শাহেদ মঞ্জুকে ফোন দিল। দুই বার রিং হতেই ওপাশ থেকে মঞ্জুর কান্নাজড়িত কন্ঠ “দোস্ত, সর্বনাশ হয়ে গেছে। গত রাতে মগবাজার থেকে পুলিশ সানজিদাকে গ্রেফতার করেছে!!!
সানজিদার গ্রেফতারের কথা শুনে শাহেদ আকাশ থেকে পড়ল! এতদিন শুনত চোর ডাকাতরা জেলে যায় অথচ এখন সানজিদার মত মেয়ে জেলে যায়। মঞ্জু জানাল সানজিদা যে সংগঠন করে সেই সংগঠনের এক বৈঠক গতকাল মগবাজারে তাদের কার্যালয়ে হচ্ছিল। বৈঠকের নাম ‘দারসুল কোরান’। সেই বৈঠকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক জঙ্গী বই সহ সানজিদাসহ পনের জনকে গ্রেফতার করে। জিহাদী বইয়ের ভেতরে ছিল কোরানের তাফসীর, কিছু হাদীস ও ইসলামী বই। মঞ্জু সকালে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছে। দুপুর একটার আগে পৌঁছুতে পারবে না। শাহেদকে অনুরোধ করল সে যেন থানায় গিয়ে তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে।
সকাল নয়টা। শাহেদ নাস্তা না করে দ্রুত গাড়ী নিয়ে থানায় হাজির হয়ে পুলিশের ওসির সাথে দেখা করল। ওসি সাহেব শাহেদকে দেখেই চিনল। ওসি সাহেব দুই দিন শাহবাগে ডিউটি করেছিল। ওনার নাম কামরুল, বাড়ী গোপালগঞ্জে।
“কামরুল ভাই, আপনাদের কাস্টডিতে আমার পরিচিত এক লোক আটক আছে। তাকে ছাড়ানোর জন্য কী করতে হবে বলুন।”
“আপনার পরিচিত লোক! নাম বলেন, এক মিনিটে ছেড়ে দিব। আপনাদেরই তো এখন দিন!”
“সানজিদা”
“সর্বনাশ! এই মেয়েদের গতকাল রাতে এরেস্ট করেছি। সবগুলো পত্রিকা, টিভি চ্যানেলে ওদের লিস্ট চলে গেছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টারেও ওদের নাম গেছে। এই মুহূর্তে ছাড়া সম্ভব না। উপরের নির্দেশ আছে।”
“এ কেমন কথা? ওদের কী অপরাধ?” শাহেদের প্রায় কান্না চলে আসছে।
“মেয়েগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় গ্রেফতার হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের উপর মহলের আদেশ ছাড়া আমাদের কারো কিছু করার নেই।” ওসি সাহেব বললেন।
“আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি?” শাহেদ বলল।
“সরি, আমার চাকরি বাঁচাতে চাই। আমাকে এই অনুরোধ করবেন না প্লীজ। এমনিতেই অনেক প্রেসারে আছি। থানার অর্ধেক জনবল শাহবাগে ডিউটি করছে। অর্ধেক লোক দিয়ে এতবড় এলাকা চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি নিজেও মহিলাদের গ্রেফতারের পক্ষে নই। এদের মধ্যে একজন প্রেগনেন্ট মহিলা রয়েছে। ওকে দেখে আমার মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল। আমার মেয়েও প্রেগনেন্ট। প্রেগনেন্ট মেয়েদের যেভাবে থাকার দরকার সেই ব্যবস্থা থানায় নেই, আদালতেও নেই, জেলেও নেই।” ওসি সাহেবের কথায় শাহেদের মনে হল পুলিশের মধ্যে এখনো অনেক ভাল মানুষ রয়েছে। অনেক অনুনয় বিনয় করেও শাহেদ সানজিদার সাথে দেখা করতে পারল না। অগত্যা সে থানার সামনে গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। ওসি সাহেবের কথা অনুযায়ী কিছুক্ষণ পরে ওদেরকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।
এগারোটার সময় দেখা গেল একদল বোরখা পরা মেয়ে থানা থেকে বের হয়ে প্রিজন ভ্যানে উঠছে। শাহেদ ওদের সাথে কথা বলতে সামনে এগোল, উদ্দেশ্য সানজিদা। কিন্তু গেইটেই পুলিশ আটকে দিল। শুধু শাহেদই নয়, ওখানে মেয়েদের আত্মীয় স্বজন অনেকেই ছিল। একে একে সবাই প্রিজন ভ্যানে উঠল। গাড়ী আদালতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিল। শাহেদ তার গাড়ী নিয়ে প্রিজন ভ্যানের পেছন পেছন যেতে লাগল। তার সাথে দুইজন যাত্রী আছে। ওনার স্ত্রীও এই মেয়েদের দলে রয়েছেন। থানার সামনে অপেক্ষা করতে করতে এই লোকের সাথে পরিচয় হল। এই লোক কাঁদছে। সাথে তার চার বছর বয়সী কন্যা শিশু। সেও মায়ের জন্য কাঁদছে।
যেতে যেতে শাহেদের মনে হল এখনো কোন উকিলের সাথে কথা বলা হয় নি। পাশের ভদ্রলোককে এ কথা বলতেই তিনি জানালেন “আদালত চত্বরে আল্লাহর সাহায্য অপেক্ষা করছে।”
শাহেদের জন্য এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা। আদালতের সামনে হাজার হাজার মানুষ। “নারায়ে তাকবীর” রবে আইনজীবিরা শ্লোগান দিচ্ছে, মিছিল করছে। শত শত পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ভীড় ধাক্কাধাক্কির মধ্যে মহিলাদের প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হল। এর মধ্যে একজন মহিলাকে অসুস্থ মনে হল। ওনাকে আরো তিন জন মেয়ে ধরে আদালতে নিয়ে গেল। শাহেদের গাড়ীতে যে লোক ও তার পিচ্চি এসেছিল তাদের কান্না দেখার মত। পিচ্চি “মা মা” বলে কাঁদছে। মেয়েটা মনে হয় তার মা’কে দেখতে পেয়েছে। পিচ্চির কান্না দেখে শাহেদ সানজিদার কথা ভুলে গেল। আল্লাহর কাছে দোয়া করল “প্রয়োজনে আমার গ্রেফতারের বিনিময়েও ঐ মেয়ের মাকে মুক্ত করে দাও।”
হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে আদালতের এজলাসে শাহেদ ঢুকতে পারল না। মানুষের মুখ থেকে শুনেছে তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ডের কথা শুনে শাহেদ ও মেয়েদের আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। রিমান্ডের নির্যাতনের কথা শাহেদ পত্রিকা মারফত শুনেছে। এছাড়া এরা মেয়ে মানুষ, এদের সাথে কী আচরণ করা হয় কে জানে!
মঞ্জু পৌঁছুতে পৌঁছুতে সানজিদাদের প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হল। মঞ্জুও কাঁদছে। মঞ্জুর মা অসুস্থ, ওনার কাছে সানজিদার গ্রেফতারের খবর সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে। শুনলে স্ট্রোক করতে পারেন। মঞ্জুও সকাল থেকে কিছু খায় নি। শাহেদের ক্ষিদা নেই। মঞ্জু যেহেতু এখনো না খেয়ে আছে তাই জোরাজোরি করে মঞ্জুকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করল। কারো গলা দিয়ে খাবার নামছে না।
রেস্টুরেন্ট থেকে শাহেদ সরাসরি চলে গেল একটা টিভি চ্যানেলের অফিসে। এই সেই চ্যানেলে যেখানে শাহেদ টক শো করেছিল। চ্যানেলের সিইওর সাথে দেখা করল।
“আপনারা জানেন শাহবাগের আন্দোলনের পেছনে কারা?” শাহেদ প্রশ্ন করল।
সিইও উত্তর দিলেন “জানব না কেন? আপনিও তো শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা। আপনার মত অনেক মানবতাবাদী তরুণ শাহবাগে জড়ো হয়েছেন।”
“তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড জানেন? তারা ব্লগে কী লিখে বলতে পারবেন?” শাহেদ প্রশ্ন করল।
“এত কিছু দেখা আমাদের দায়িত্ব না। এখন জাতির চোখ শাহবাগের দিকে। সবাই শাহবাগের নিউজ পেতে চায়। শাহবাগের পর নতুন কোন ইস্যুর সৃষ্টি হলে আমরা টিভি চ্যানেলওয়ালার সেই দিকে গুরুত্ব দেব। কে কোনটার পেছনে আছে, কে কী করে, কার ব্যাকগ্রাউন্ড কী এসব দেখা আমাদের কাজ নয়। আমরা চাকরি করি। সবার আগে টার্গেট থাকে আমাদের চাকরি বাঁচানো। আমাদের চ্যানেল মানুষ না দেখলে বিজ্ঞাপন পাব না। বিজ্ঞাপন না পেলে চ্যানেল চলবে না। আর চ্যানেল না চললে আমাদের চাকরি থাকবে না। এছাড়া আপনি কি চান আমাদের চ্যানেল বন্ধ হোক।” সিইও সাহেবের উত্তর শুনে শাহেদ হতাশ হয়ে পড়ল। শাহেদ বুঝল অন্য চ্যানেলগুলোর বক্তব্যও একই রকম হবে। সবাই নিজ নিজ ধান্ধায় ব্যস্ত।
ঐ অফিস থেকে বের হয়ে এক টিভি রিপোর্টারকে ফোন দিল “ভাই, আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।” ঐ রিপোর্টার নিয়মিত শাহবাগে ডিউটি করে, শাহেদের লাইভ ইন্টারভিউ নিয়েছিল।
ফার্মগেইটে ঐ সাংবাদিকের সাথে শাহেদ দেখা করল।
“আপনারা যাদের হিরো বানাচ্ছেন তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী জানেন? তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা কী ব্লগ লিখে একবারও দেখেছেন?” শাহেদ রিপোর্টারকে বলল।
“ভাই, আট বছর ধরে সাংবাদিকতা করি। আগে করতাম একটা পত্রিকায়, এখন টিভিতে। শাহবাগীদের সকলের ব্যাকগ্রাউন্ড আমাদের জানা আছে। কে কী লিখে তাও। কিন্তু আমাদের পেট চালাতে হবে। কেউ চায় তার পেটে লাথি মারতে?”
রিপোর্টারের উত্তর শুনে শাহেদ আবারও হতাশ হল “তার মানে ইসলাম, নবী রাসূলকে নিয়ে ওরা উস্কানীমূলক কথা বলেই যাবে, ব্লগে আজেবাজে কথা লিখবে আর আপনারা জাতির বিবেক হয়ে চুপচাপ দেখে যাবেন? আপনাদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই যিনি এই শাহবাগীদের নাস্তিক্যবাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ফাঁস করবেন। আমি ছা পোষা মানুষ। আমি বললে হয়তো দুই চারজন মানুষ আমার কথা বিশ্বাস করবে। কিন্তু দেশে লক্ষ কোটি মানুষ এখনো জানে না শাহবাগের পেছনে উগ্র নাস্তিক্যবাদ কাজ করছে। এ বিষয়ে আলেম সমাজও নিশ্চুপ। ওনারা নিশ্চুপ থাকবেই কারণ ওনারা এখনো জানে না নাস্তিকরাই শাহবাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।”
রিপোর্টারের সাথে কথা বলে লাভ হবে না বুঝে শাহেদ সেখান থেকে চলে গেল। মঞ্জুকে একটা প্রাইভেট হোস্টেলে রেখে আসল, সেখানে শাহেদের কয়েকজন বন্ধু বান্ধব থাকে।
শাহেদ এলাকার মসজিদে এশার নামাজ আদায়ের পরে ঈমাম সাহেবের সাথে কথা বলল। এই ঈমাম সাহেবের বাবা শাহেদকে ছোট কালে কোরান পড়া শিখিয়েছিলেন।
শাহেদ এতদিন শুনেছে মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। এখন এই ঈমাম সাহেবের সাথে কথা বলে বুঝতে পারল আসলেই কথা ঠিক। এই ঈমাম সাহবেও শাহবাগীদের পরিচয় জানেন না। ব্লগ বোঝেন না। ওরা যে নবী রাসূলের বিরুদ্ধে লিখে তাও জানেন না। শেষ পর্যন্ত ঈমাম সাহেবকে বোঝাতে ব্যর্থ হল। শাহেদ রুম লাইট অফ করে শুয়ে আছে। ভাবছে, পুরো জাতিকে অন্ধকার করে গুটি কয়েক লোক শাহবাগে ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি করছে। ‘ফাঁসি চাই’ শ্লোগানের নামে তারা সমাজে বিভক্তির সৃষ্টি করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বিরোধী পক্ষকে দমাতে চাইছে। সাধারন জনগণ এখনো ‘আসল ঘটনা’ বুঝতে পারছে না। কোন মিডিয়ায় ওদের পরিচয় ফাঁস করছে না। সবাই তাদের ‘দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘অগ্নি কণ্যা’ খেতাব দিচ্ছে। একবার যদি কোন মিডিয়া শাহবাগীদের আসল পরিচয় তুলে ধরত তাহলে দেশে একটা বিপ্লব শুরু হত। ফেইসবুকের মাধ্যমে কিছু লোক নাস্তিকদের পরিচয় জানতে পেরেছে। কিন্তু সেটা সংখ্যায় নগণ্য। দরকার জাতীয় পত্রিকা অথবা কোন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচয় ফাঁস। সেই পর্যন্ত কেউ বিশ্বাস করবে না শাহবাগে কারা কাজ করছে।
সত্য কখনো চাপা দিয়ে রাখা যায় না। যেভাবে হোক প্রকাশ পায়। যুগে যুগে এমন কিছু মানুষ জন্মায় যারা সবস সময় স্রোতের বিরুদ্ধে চলে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেয়। সেই যুগে হয়তো তাদের কদর থাকে না কিন্তু পরবর্তী যুগ তাদের গুরুত্ব দিয়ে সম্মান করে। ইতিহাসে এমন অনেক মনীষী আছে, অনেক বিপ্লবী আছে যারা ঐ সময়ের সন্ত্রাসী ছিল। অনেকে নিজের জীবন দিয়ে হলেও সত্য প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। শাহেদ যখন রাতে রুমের আলো নিভিয়ে কাঁদছিল সেই সময়ে কারওয়ান বাজারের এক পত্রিকা অফিসে ছাপা হচ্ছিল “শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি” সানজিদা যখন জেলে বসে কাঁদছে তখন কাওরান বাজারের সেই পত্রিকা অফিসে প্রিন্ট হচ্ছিল “শাহবাগ আন্দোলনের পেছনে কারা”। মূলত মাহমুদুর রহমান নামের এক ইঞ্জিনিয়ার যিনি রাজনীতির জন্য তার জীবনের সকল সঞ্চয় বিক্রি করে পত্রিকা কিনেছেন তিনি শাহবাগের নাস্তিকদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন। শাহেদ জানে না আজ সারাদিন যে বাংলাদেশ সে দেখেছে আগামীকাল সেই বাংলাদেশীদের মনে শাহবাগ সম্মন্ধে নতুন ধারনা হবে।
বোমা ফাটালেন মাহমুদুর রহমান।
ব্যর্থ মানুষের গল্প ৯
সকাল এগারোটায় শাহেদ জীবনের প্রথম ‘আমার দেশ’ পত্রিকা পড়ে। এই দিনে শাহবাগ আন্দোলনের নেতারা ব্লগে কে কী লিখেন তা তাদের ব্লগ, ফেইসবুকের লিংক সহ প্রকাশ করা হয়েছে। খবরটা পায় মঞ্জুর কাছ থেকে “দোস্ত, আমার দেশ পত্রিকায় শাহবাগের নাস্তিকদের গোপন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এখনই এক কপি পত্রিকা কিনে ফেল। ফার্মগেইট এলাকায় পত্রিকার কপি শেষ। তোদের এলাকায় এখনো থাকতে পারে!”
‘আমার দেশ’ এমন একটা পত্রিকা যার নির্দিষ্ট কিছু কাস্টমার আছে। সুশীলরা এই পত্রিকা কিনে না। এমনকি বিএনপির অনেক নেতা এই পত্রিকা কিনে না। অথচ এটাই একমাত্র জাতীয় পত্রিকা যা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। বিএনপি পন্থী সুশীল যারা বিভিন্ন টক শোতে অংশ গ্রহন করেন ও পত্রিকায় কলাম লিখেন তারাও তাদের লেখায় বক্তব্যে ‘প্রথম আলোর’ রেফারেন্স দেয়। ভাবটা এমন আমি ‘প্রথম আলো’র রেফারেন্স দিয়ে নিজেও সুশীল বনে গেলুম! আমার দেশ পত্রিকার কাটতি প্রথম আলোর চার ভাগের এক ভাগ হয় কি না সন্দেহ। বাজারে যতগুলো পত্রিকা ছাপা হয় তাতে আমার দেশের মার্কেট শেয়ার হবে হয়তো বেশি হলে ৫%, এই ৫% পত্রিকা খবর প্রকাশ করলে বাকী ৯৫% পাঠকের মনে সেই খবর বিশ্বাস যোগ্য করা কঠিন। যেহেতু বাকী ৯৫% পত্রিকার খবর শাহবাগ পন্থী। কিন্তু ৫% মার্কেট শেয়ারের খবরের কাগজ সে সময় একটা বিপ্লবের সৃষ্টি করেছিল। এমনিতেই কিছু কিছু মানুষ ব্লগে ফেইসবুকে নাস্তিকদের সম্মন্ধে ধারনা পেয়ে অনেকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল তার উপরে জামায়াতে ইসলামীর দাবীও ছিল শাহবাগীরা নাস্তিক ঠি সেই সময়ে আমার দেশ পত্রিকা আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল।
আমার দেশ পত্রিকা যা ছাপিয়ে ছিল সেই খবর তার দুই দিন আগে ‘সোনার বাংলা’ নামক এক জামাতী ব্লগে পোষ্ট করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে সেই ব্লগকে বাংলাদেশ থেকে ব্লক করা হয়েছিল। কিছু কিছু লোক প্রক্সি দিয়ে ‘সোনার বাংলা’ ব্লগে ঢুকতে পারছিল। সেই ব্লগের প্রতিক্রিয়া জনমনে কোন প্রভাব ফেলতে পারে নি। কারণ বাংলাদেশে হাতে গোণা কিছু লোক ব্লগিং এর সাথে জড়িত। আর এই হাতে গোণা ‘কিছু’ লোকের অধিকাংশই বাম পন্থী বিভিন্ন ব্লগে লিখেন পড়েন। সুতরাং কিছু লোকের মধ্যে আরও ‘কিছু লোক’ ভাগ হয়ে যাওয়াতে যে সংখ্যক লোক নাস্তিকদের পরিচয় পেয়েছেন তা দিয়ে তেমন সাড়া পাওয়া যায় নি। আর যে সকল লোক এদের পরিচয় পেয়েছেন তাদের একটা বড় অংশ এমন এক রাজনীতির সাথে জড়িত যার কারনে তারা বেশিরভাগই ফেরারী জীবন যাপন করছেন। দুই দিন আগে জামায়াতে ইসলামী যে দাবী করেছে আজ আমার দেশ পত্রিকা ঠিক সেই দাবীই করেছে। পার্থক্য হল, জামায়াতে ইসলামীর দাবী সাধারন মানুষের মনে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি কিন্তু আমার দেশ পত্রিকার কলাম সাধারন মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলে। ইন্টারনেটের যুগে কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে পার পায় না। পত্রিকার খবর অনুযায়ী নাস্তিক ব্লগারদের ব্লগের যে লিংক দেয়া ছিল তা মানুষ ইন্টারনেট দিয়ে সার্চ করে পড়ে দেখছিল আসলেই আমার দেশের দাবী সঠিক কিনা। ব্লগে ঢুকে মানুষ অবাক! পত্রিকায় যা রাখ ঢাক করে লেখা হয়েছিল কিন্তু ব্লগে ঢুকে এসব কী দেখছে! বাংলাদেশের অনেক মানুষের সেই দিনও ‘নাস্তিকতা’ সম্মন্ধে ধারনা ছিল না, ধারনা ছিল না কোণ মানুষ তার সৃষ্টি কর্তাতে অস্বীকার করতে পারে। কিন্তু ‘বিশ্বাসী’ মানুষের সাথে একদল ‘অবিশ্বাসী’ মানুষ আছে যারা কোন ধর্মকে স্বীকার করে না। যারা নাস্তিকতা সম্মন্ধে আগে থেকেই জানত তারা ভাবত নাস্তিকরা হয়তো ‘নিজের মত’ করেই আছে। কিন্তু নাস্তিকরা যে আল্লাহ ও তাঁর নবী রাসূল নিয়ে গালিগালাজ। নোংরামী নিয়ে ব্লগ লিখে সেটা তাদের কল্পনাতেও ছিল না। শুধু যারা নিয়মিত ব্লগ লিখতেন পড়তেন তাদের কেউ কেউ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারতেন। নাস্তিকদের বিষয়টি সেদিন পাড়া মহল্লার গন্ডী পার হয়ে দেশে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছিল। যার ফলে ঐ দিন আমার দেশ পত্রিকা সকাল দশটার মধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল অথচ এই পত্রিকা অন্যদিন পত্রিকা স্ট্যান্ডেই পড়ে থাকে। শাহেদ খবর পেয়েই তাদের এলাকার পত্রিকার দোকানে যায়। পত্রিকা শেষ, ফটোকপি বিক্রি হচ্ছিল! শাহেদ সেই ফটোকপি কিনল। জীবনের প্রথম সে আমার দেশ পত্রিকা পড়ল। শাহেদ পত্রিকার খবরের সাথে তার দেখা ব্লগের সাথে মিলিয়ে দেখল পত্রিকা একটুও বাড়িয়ে লিখেনি বরং কিছু রাখঢাক করে লিখেছে। সে সেই কপি নিয়ে এলাকার মসজিদের ঈমাম সাহেবের কাছে যায়। ঈমাম সাহেবের হাতেও পত্রিকার কপি। তিনিও একজনের কাছে শুনে পত্রিকা না পেয়ে ফটোকপি কিনেছেন। ঈমাম সাহেবের চোখে পানি। আশে পাশে আরো চার জন লোক। প্রত্যেকেই দাঁড়ি টুপিওয়ালা, সম্ভবত আশে পাশের মসজিদের ঈমাম মোয়াজ্জেম হবেন। ঈমাম সাহেব বললেন “গত সপ্তাহে আমি এই গণ জাগরণ মঞ্চের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করেছি। অথচ তাদের পেছনে এইসব লোক কাজ করছে! যেই রাসূলের উছিলায় আল্লাহ এই জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেই রাসূলের উছিলায় আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন সেই রাসূলকে তারা এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিতে পারল! এই সব নাস্তিকদের উপরে আল্লাহর গজব তো পড়বেই আর তাদের সাথে যারা ছিল তাদের উপরেও পড়বে। আর কেউ যদি জেনে শুনে তার প্রতিবাদ না করে সেও অভিশপ্ত হবে।”
শাহেদ তার ইউনিভার্সিটিতে গেল। উদ্দেশ্য ভিসি স্যারকে একটা কপি দিবে। স্যারের যদি তাতে জ্ঞান ফিরে। বাসায় গাড়ী নেই, সিএনজিও পেল না, অগত্যা বাসে উঠল। খেয়াল করল, বাসের যাত্রীরা নাস্তিকদের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছে। একদল বিশ্বাস করেছে আরেক দল বিশ্বাসই করছে না। শাহেদ চুপ করে শুনল।
ভিসি স্যার রেগে আছেন। কারা যেন ওনার দরজার ফাঁক দিয়ে একটা লিফলেট দিয়ে গেছে। শিরোনাম “শাহবাগে নাস্তিকদের পরিচয়”, এই লিফলেটটা দেখে শাহেদের সানজিদা কথা মনে পড়ে গেল। সানজিদার সাথে যখন শেষ দেখা হয়েছিল তখন তার কাছেও এমন একটা লিফলেট ছিল। ভিসি স্যার তার পিয়নকে আচ্ছা মত ঝাড়ছেন। কার এত বুকের পাটা যে তার রুমে এই লিফলেট দিয়ে যায়। পিয়ন চা আনতে বাহিরে গিয়েছিল, এই ফাঁকেই কারা যেন এই কাজ করেছে। ভিসি স্যারের মেজাজ দেখে শাহেদের সাহস হল না পত্রিকার কপি দিতে।
এই ইউনিভার্সিটির সামনেও একটা গণ জাগরণ মঞ্চ আছে যেখানে রাতে নাচ গান হয় আর দিনের বেলায় কিছু ছাত্র ছাত্রী জমায়েত হয়। শাহেদ খেয়াল করল আজ মঞ্চের সামনে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কম। অনেকের হাতে পত্রিকার কাটিং।
ঐদিন দুপুর থেকে গণ জাগরন মঞ্চ থেকে শুরু হল মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে বক্তৃতা বিবৃতি কুশপুত্তলিকা দাহ। আমার দেশ পত্রিকা অফিস ঘেরাও করারও একটা প্ল্যান ছিল কিন্তু কী কারনে যেন সেটা তারা করল না। কী কারনে তারা করল না তা জানা গেল কিছুক্ষন পরে। পুলিশই আমার দেশ অফিস ঘেরাও করেছে। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। শোনা গেল যে কোন মুহূর্তে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হতে পারে। মাহমুদুর রহমানও অফিস থেকে বের হলেন না, বাসা থেকে কিছু জামা কাপড় আনিয়ে নিয়ে অফিসেই থাকা শুরু করলেন।
ঘুমন্ত দেশ বাসীর ঘুম ভাংল। পর পর তিন দিন পত্রিকায় নাস্তিকদের নিয়ে লেখালেখি হল। আমার দেশের দেখায় জামায়াতের নিজস্ব পত্রিকা ‘সংগ্রাম’ নাস্তিকদের বিরুদ্ধে লিখল। যদিও বাংলাদেশের বিরাট অংশের মানুষ ‘সংগ্রাম’ পত্রিকার নামই জানে না। দুই একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালে নাস্তিকদের বিষয়টি হাইলাইট হল। কয়েক দিনের মধ্যে শাহবাগের যে আকাশ্চুম্বী জনপ্রিয়তা ছিল তা নিমিষেই হ্রাস পেল। আগে শুধু জামাতের লোকজনই শাহবাগ বিরোধী মিছিল করত অথচ এখন দু একটি মসজিদ থেকে নামাজ শেষে মুসল্লীরা নিজ উদ্যোগে নাস্তিক ও শাহবাগ বিরোধী মিছিল বের করল। সেই সব মিছিল ছিল স্বল্প মেয়াদী, কেউ নেতৃত্বে ছিল না। যার যার মত মিছিল করে কিছুদূর এগিয়ে যে যার মত বাসায় ফিরে গেছে। ছোট খাট ইসলামী দল গুলো সরাসরি শাহবাগের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিল, মিছিল করল। অথচ কয় দিন আগে তারাই শাহবাগের পক্ষে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছিল। বড় দলের মধ্যে বিএনপি শাহবাগ থেকে নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল। দুই তিন দিন পর থেকে শাহবাগের জন সমুদ্র নদীতে পরিণত হল। নেতাদের মাঝে গ্রুপিং সৃষ্টি হল। একদল আরেকদলকে নাস্তিক ডাকতে লাগল। বিশেষ করে ছাত্রলীগের অংশটি নাস্তিকদের সহজে সুযোগ দিল না। দেশ ব্যাপী গণ প্রতিরোধ শুরু হল। কিছুদিন আগেও যেখানে সারা দেশে গণ জাগরণ মঞ্চের পক্ষে মিছিল করে জামাত বিএনপির অফিস ভাঙ্গা হচ্ছিল ঠিক সেখানেই জনগণ মিছিল করে গণ জগরণ মঞ্চ ভেঙ্গে দিতে লাগল। পাড়ার যেসব ছেলে পুলে নিজেকে শাবাগী পরিচয় দিতে গর্ববোধ করত তারা এখন লজ্জায় মানুষের সামনে মুখ দেখায় না। মসজিদে মসজিদে ঈমাম সাহেবরা নামাজ শেষে নাস্তিকদের অভিশাপ দিয়ে মোনাজাত করল।
চলবে. .......
বিষয়: বিবিধ
২০৩২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন