প্রতিশোধ
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ২৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:২০:২১ দুপুর
এসির মধ্যেও রাসেল সাহেব ঘামছেন। রুমের টেম্পারেচার ২০ ডিগ্রীর নিচে। রাসেল সাহেব শার্টের উপরের দুইটি বুতাম খুলে ফেললেন। এক গ্লাস পানি খেলেন। পকেটে পিস্তল আছে কি না চেক করে দেখলেন।
রাসেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারি রাসেল সাহেব রোডস এন্ড হাইওয়ের প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার, সরকারী দলের লোক হওয়াতে অনেক সুবিধা পান। অল্প দিনেই প্রচুর টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি গুলশানে অফিস নিয়েছেন। অফিসের স্পেস চার কোটি টাকা দিয়ে কেনা। গুলশানে অফিস নেয়ার পিছনে কারনও আছে, আগামীতে ইলেকশান করার ইচ্ছে আছে। গতবার নমিনেশন না পেলেও উচ্চ পর্যায়ে ভাল লবিং করে যাচ্ছেন। গুলশানের অফিসটা মূলত রাজনৈতিক অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন। গতবার নমিনেশন না পাওয়ার পেছনে কারণ হল তার গায়ে নাকি ‘কলংক’ আছে। টুক টাক কলংক সবার গায়েই থাকে।
রাসেল সাহেব ফোনে সেক্রেটারিকে ডাকলেন। সুন্দরী সেক্রেটারিকে এই প্রথম অসুন্দর দেখাচ্ছে। মাথায় আগুন ধরানো এই সুন্দরীকেও নেয়া হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। রাজনৈতিক মেহামান আসলে তাকে এই সুন্দরী দিয়ে ‘আপ্যায়ন’ করা হয়।
“শহীদ (ড্রাইভার) কোথায়? ওর মোবাইলে পাচ্ছি না।”
“নীচে আছে স্যার। মোবাইল খুঁজে পাচ্ছে না বলেছে।”
“সকালেও ওর হাতে মোবাইল দেখেছি” বিরক্ত মুখে বললেন “শামসুকে ডাক” পরক্ষনেই আবার বললেন “না থাক, আমিই কল দিচ্ছি” “আরেকটা কথা, আজ আমি কারো সাথে দেখা করব না”
“বাইরে একজন অপেক্ষা করছে স্যার। কোন এক স্কুলের জন্য সাহায্য চাইতে এসেছে……..”
“ওকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দাও” মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রাসেল সাহেব বললেন।
শামসুকে ফোন দিলেন “তুমি কোথায়?”
শামসু “কাওরান বাজারে শ্রমিকদের একটা মিছিল হবে, লোকের ব্যবস্থা করতাছি”
রাসেল সাহেব “তুমি দ্রুত চলে এস। খুব বিপদে আছি।”
শামসু “শ্রমিকদের মিছিলে মন্ত্রীও থাকবেন, বিকালে আসব।”
রাসেল সাহেব ‘বিকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকলে তো!!! রাকিব পালিয়েছে।”
“রাকিব পালিয়েছে” শুনে শামসু কিছুক্ষণ স্থির হয়ে ছিল। “আমি এখুনি আসছি। মিছিলের খ্যাত পুড়ি”।
কিছুক্ষন আগে কে যেন রাসেল সাহেবকে ফোনে জানিয়েছে “রাকিব মেন্টাল হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে।” তখন থেকেই রাসেল সাহেব ঘামাচ্ছেন। এছাড়া আজ ২৮ শে অক্টোবর। তিনি জানালার ধারে দাঁড়ালেন, বাইরে তার ড্রাইভার সিগারেট ফুঁকছে। সব ঠিক আছে, এখন শামসু কাছে এলেই ঠিক হয়ে যাবে। শামসু পেশাদার কিলার, এছাড়া রাসেল সাহেবের পকেটেও লাইসেন্সওয়ালা পিস্তল আছে।
সুন্দরী সেক্রেটারী ভেতরে প্রবেশ করল, একমাত্র এই রুমে এই মেয়েটিই অনুমতি ছাড়া রুমে ঢুকতে পারে।
“স্যার, ভদ্রলোক আপনার সাথে দেখা করতে চায়। ওনার স্কুলে নাকি কি অনুষ্ঠান আছে। আপনাকে ইনভাইট করতে চাচ্ছেন……”
“যাও বলে দাও আমি কারো সাথে দেখা করব না। কোথায় কোন প্রোগ্রাম, নাম ঠিকানা লিখে রাখ। আমি পৌঁছে যাব।” রাসেল সাহেব আবার নিয়মিত বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রোগ্রামে যায়। রাজনীতি করতে হলে এসব করতে হয়। সামনে আবার নমিনেশন লাগবে।
সেক্রেটারি মেয়েটি ভয় পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পরে সেক্রেটারি এক গ্লাস পানি নিয়ে আসল। সে জানে উত্তেজিত হলে তার বস পানি খান। কিছুক্ষণ আগে দেখেছিল গ্লাস খালি, তাই পানি নিয়ে আসল।
রাসেল সাহেব ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললেন। বাইরে সেক্রেটারির চিৎকার শোনা গেল। রাসেল সাহেবের বুক কেঁপে উঠল। তবে কী রাকীব চলে এসেছে? রুমে দরজা ধাক্কা দিয়ে এক লোক ঢুকল। এ রাকীব না হয়ে পারে না। রাসেল সাহেব পকেটে হাত দিয়ে পিস্তল বের করলেন কিন্তু তা হাত থেকে পড়ে গেল। উনি গলায় হাত দিলেন। গলা শুকিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে জিহ্বা নিচের দিকে টেনে ধরেছে। খুব খারাপ লাগছে, তিনি হাঁটু গেড়ে বসে গেলেন।
সামনে দাঁড়ানো ছেলেটি রাকীব। খুনির দৃষ্টিতে রাসেল সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটির চেহারা ঠিক তার ভাই আসিফের মত।
রাসেল সাহেব নিজের গলা চেপে রাকীবকে বললেন “তুমিই কি পানিতে বিষ মিশিয়েছ?”
রাকীব হাসছে, মাথা খারাপ হলে যে হাসি হাসে। রাকীব বলল “এই বিষ তোমাকে অনেক কষ্ট দিবে, ধীরে ধীরে মারবে। আমি তোমার উপর দাঁড়িয়ে লাফাব, যেভাবে তুমি আমার ভাইয়ের উপরে লাফিয়েছ।”
রাসেল সাহেবের মনে পড়ে গেল ২৮ শে অক্টোবর ২০০৬ সালের কথা। পল্টনের মিটিং এ তিনি বিরুদ্ধ মতবাদের কিছু লোককে মেরে ফেলেন। একজনের লাশের উপরে নাচানাচি করেন। তিনি তখন ছাত্র নেতা ছিলেন। আসিফ নামের এক ছেলে মারা গিয়েছিল। ভাইয়ের মৃত্যুর ভিডিও দেখে তার ভাই রাকীবের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তাকে বেঁধে রাখা হত। সে মানুষ দেখলেই তেড়ে যেত। পরে বাধ্য হয়ে তার বাবা মা তাকে মেন্টাল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। তার জীবনের লক্ষ্য একটাই থাকে, তার ভাইয়ের খুনি রাসেলকে হত্যা করে রাসেলের শরীরের উপরে নাচবে!
রাসেল সাহেব চোখে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, উনি মারা যাচ্ছেন। রাকীব তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, মুখে ক্রুর হাসি।
বিষয়: বিবিধ
১০২১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন