ব্যর্থ মানুষের গল্প ৪
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৩৩:২৫ বিকাল
জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, সানজিদার জন্যও শাহেদের জীবন থেমে থাকে নি। সে এখন শাহবাগের একটিভ কর্মী। সে যে শাহবাগের কর্মী থেকে নেতা বনে যাবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি। ঘটনার শুরু এভাবে- শাহেদের ইউনিভার্সিটির ভিসি স্যার ‘জাতীয় বুদ্ধিজীবি লীগের’ বড় নেতা। তিনি আগামীকাল শাহবাগে বক্তব্য রাখবেন। আজ তিনি শাহেদকে তাঁর রুমে ডাকলেন।
ভিসি স্যার “শুনেছি তুমি নাকি নিয়মিত শাহবাগে যাচ্ছ?”
শাহেদ “জ্বী স্যার”
ভিসি স্যার “আগামীকাল আমার সাথে যাবে। তোমাকে মঞ্চে উঠাব। তুমিও বক্তৃতা দিবে।”
শাহেদের বিশ্বাস হচ্ছে না। সে কি তবে ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে? শাহবাগে যারা সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, রাজাকার বিরোধী বক্তৃতা দিচ্ছে তারা এখন হিরো! পত্র পত্রিকা, রেডিও, টিভিতে তাদের হাইলাইট করা হচ্ছে। তিন জন মেয়ে ইতিমধ্যেই ‘অগ্নি কণ্যা’ উপাধীতে ভূষিত হয়েছে। টিভি চ্যানেল গুলো পুরো ২৪ ঘন্টা লাইভ কাভারেজ করছে। নিরাপত্তারও অভাব নেই। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে শাহবাগ এলাকা পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী দ্বারা সংরক্ষিত হচ্ছে। স্থানে স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
শাহবাগের মঞ্চে বক্তৃতা দেয়া শাহেদের জীবনের জন্য অনেক বড় সুযোগ। তার বাবা ডাক্তার শফিকুর রহমানও একজন প্রগতিশীল। তিনি শাহেদের প্রতি ক্ষ্যাপা কারণ শাহেদ ডাক্তার হতে পারে নি। শাহবাগের মঞ্চে বক্তৃতা দিলে বাবার ক্ষোভ কিছুটা হয়তো প্রশমন হবে। সে সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল “স্যার, টপিক কি আপনি ঠিক করে দিবেন? নাকি আমি নিজেই ঠিক করব?”
ভিসি স্যার “আমিই ঠিক করে দিচ্ছি। কারণ আমাদের দু’জনের বক্তব্য একই রকম হলে কেমন দেখাবে? আর বিষয় তো একটাই-এ দেশ থেকে রাজাকার ও তার দোসরদের চীরস্থায়ী বিদায় করা ও সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতি বন্ধ হোক।” ভিসি স্যার প্রিন্ট করা একটা কাগজ বের করলেন “এই নাও, আমি আগেই লিখে রেখেছি। এর সাথে তুমিও কিছু যোগ করতে পার। আর পছন্দ না হলে এর থেকে কিছু বাদ দিতেও পার।”
ভিসি স্যার এক সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন। টিভির টক শোতে ওনাকে নিয়মিত দেখা যায়। উনি বক্তৃতা দিলে শ্রোতারা সম্মোহিত হয়ে যায়। উনি যা লিখে দিবেন তা যদি কোন মতে মঞ্চে বলা যায় তাতে শাহেদ হিট হয়ে যাবে। এর সাথে কোন কিছু যোগ বা বিয়োগ করা যাবে না। “স্যার, আপনার লিখে দেয়া বক্তৃতাই আমি দেব।”
বাসায় ফেরার সময় গাড়ীতে বসে বসে শাহেদ ভিসি স্যারের লিখে দেয়া বক্তৃতা পড়ছিল। লেখা পড়ে শাহেদের মনে হল এ লেখা ইসলাম বিরোধী। ভিসি স্যার আবেগের বশবর্তী হয়ে রাজাকার আর ইসলামকে একত্রে গুলিয়ে ফেলেছেন। শুধু ভিসি স্যারই নন শাহবাগের অনেক বক্তাই রাজাকার আর ইসলামকে গুলিয়ে ফেলছে। এটা ঠিক যে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীরা ইসলাম ধর্মকে তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জামাত শিবির খারাপ হলে কি আমাদেরও খারাপ হতে হবে? ওরা ইসলামকে ব্যবহার করে বলে আমাদের ইসলাম বিরোধী হতে হবে? বিষয়টা শাহেদের ভাল লাগল না। শত্রুরা অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীরা এই সুযোগ কাজে লাগাবে। সাধারন মানুষকে তারা বোঝাবে যে শাহবাগীরা ইসলাম বিরোধী। এই সুযোগ শাহেদ হতে দিবে না। শাহেদ নিজেই বক্তৃতার টপিক ঠিক করল।
পরদিন ছিল শুক্রবার। শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম যুদ্ধাপরাধ বিরোধী মহা-সমাবেশ। ডঃ জাফর ইকবাল সহ অনেক বড় বড় খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবি সেখানে বক্তব্য রাখলেন। শাহেদের ইউনিভার্সিটির ভিসি স্যার বক্তব্য দেয়ার আগে শাহেদও পাঁচ মিনিট বক্তৃতা দিল। বক্তৃতা শুনে শ্রোতার এক বিরাট অংশ করতালি দিল। একটি অংশ রহস্য জনক ভাবে চুপ থাকল, বিশেষ করে মঞ্চের আশেপাশে যারা অবস্থান করছিল। মঞ্চ থেকে নামতেই এক টিভি সাংবাদিক শাহেদের ইন্টারভিউ নিল। শাহেদ খুব সুন্দর করে ইন্টারভিউ দিল। যেহেতু শাহেদ একটা ইউনিভার্সিটির তরুণ লেকচারার তাই টিভি চ্যানেলটি গুরুত্বের সাথে সাক্ষাৎকারটি বার বার প্রচার করল। পর দিন ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে শাহেদ দেখল সে এখন হিরো বনে গেছে। বিকালে শাহবাগে গিয়ে দেখল সবার মুখে শাহেদের নাম।
এক দল ছাত্র ছাত্রী তাকে জোর করে মঞ্চে নিয়ে গেল। মঞ্চে কিছুক্ষণ বক্তৃতা দিয়ে মঞ্চ থেকে নামতেই এক জন লোক তাকে ডাকল।
লোকটির ভাব ভঙ্গী ভাল ঠেকল না। বলল “নেতা হইতে চান? নেতা হইতে চাইলে আমাগো লিস্টে নাম লেখান। ইচ্ছা মত মঞ্চে উঠবেন, বক্তৃতা দিবেন এইডা মানা যাইব না।”
লোকটির সাথে আরো তিন চার জন ছিল। শাহেদের সাথে শাহেদের এক বন্ধু ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে লোকটিকে বাঁধা দিয়ে বলল “সাকিব, তুমি চলে যাও। ও আমার বন্ধু।”
লোকটি চোখ গরম করে চলে গেল, ভাব দেখাল “তোকে দেখে নেব।”
শাহেকে তার বন্ধু জানাল এরা ছাত্রলীগের নেতা কর্মী। কেউ জনপ্রিয় হয়ে গেলে ওদের গায়ে লাগে। ওদের দলে যোগ না দিয়ে শাহবাগে জনপ্রিয় হতে গেলে বিপদ।
শাহেদের বাবা ডাক্তার আশরাফ সাহেবের আজ মেজাজ মর্জি ভাল। শাহেদের জন্য একটা পাত্রীর খোঁজ পেয়েছেন। পাত্রী ওনার বন্ধু ডাক্তার সোবহানের মেয়ে। ডাক্তার সোবহানেরও ইচ্ছা ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন কিন্তু মেয়ে গেছে অন্য লাইনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ‘কণা’ দেখতে অনেক সুন্দরী। এই মেয়ের একটা ছবি টেকনিকালি বন্ধুর কাছ থেকে নিয়েছেন। ছেলে মেয়েকে একবার দেখুক, যদি পছন্দ হয় তাহলে বন্ধুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিবেন। এই মেয়েক শাহেদের সাথে ভালই মানাবে। ফ্যামিলীগত ভাবেও দুই পরিবার কাছাকাছি মর্যাদার। বন্ধুর কাছ থেকে শোনা এই মেয়েও শাহবাগ আন্দোলনের সাথে জড়িত। প্রতিদিন সেখানে সময় দেয়। এরকম আধুনিকা মেয়েই ওনার ছেলের বৌ হিসেবে দরকার। তিনি শাহেদকে ছবি দেখালেন। শাহেদ দেখল মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দরী। শাহেদ ঠিক করল এই মেয়েকে কৌশলে শাহবাগে দেখে নিবে, যদি খুঁজে পাওয়া যায়।
পর দিন শাহবাগে গিয়ে শাহেদ তার বন্ধুর খোঁজ করল। সেই বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জটে পড়ে এখনো পাশ করতে পারে নি। তাকে কণা সম্মন্ধে তথ্য দিতেই সে বাংলা বিভাগের এক বন্ধুকে ফোন দিল “দোস্ত আমার সাথে দেখা কর, ছবির হাটে।”
সেই বন্ধু আসল, দেখা গেল শাহেদ তাকেও চিনে। অনেক দিন দেখা হয় নি। তাকে কণার কথা জিজ্ঞাসা করা হল “দোস্ত কণারে চিন? থার্ড ইয়ারে পড়ে।”
“ওরে চিনুম না। ফাটাফাটি জিনিস!” বলে বন্ধুটি হাত দিয়ে খারাপ ইশারা করল।
শাহেদ বুঝল বন্ধুটি কী বোঝাতে চেয়েছে, তবুও শিউর হবার জন্য জিজ্ঞেস করল “কী রকম ফাটাফাটি?”
“আরে দোস্ত, সে একখান মাল। এক্কেরে খাসা মাল। ক্যান, ওর ভিডিও দেখস নাই? সবার মোবাইলে, পিসিতে তার ভিডিও আছে। অবশ্য পোলাডা কে তা চেনা যায় নাই। সম্ভবত আগের প্রেমিক। নতুন প্রেমিক হইলে ঠিকই চিনতে পারতাম।”
শাহেদের এসব কথা শুনতে ভাল লাগছে না “তোর মোবাইলে আছে? দেখা।”
বন্ধুটি ভিডিওটি দেখাল, এই মেয়েকে চিনতে শাহেদের কোন অসুবিধা হল না। এই তার বাবার বন্ধুর মেয়ে। মেয়ের এই সমস্যার কথা বাবাকে বলা যাবে না। কৌশলে টেকনিক করে বাবাকে ‘না’ করে দিতে হবে।
এক দিন মেয়েটিকে সামনা সামনিও দেখল, মঞ্চের কাছেই বসে আছে। এই মেয়েকে দেখলে কে বলবে ওর গোপন ভিডিও সবার হাতে ছড়িয়ে আছে! আচ্ছা, এই মেয়ের কি কোন লজ্জা নেই? সে নিশ্চয়ই জানে তার ভিডিও সবার হাতে আছে। লজ্জা থাকলে তো ক্লাসে আসত না, কাউকে মুখ দেখাত না।
বাবাকে ‘না’ বলল এক কারণে কিন্তু বাবা বুঝল আরেক কারণ-সানজিদা। বাবা ভাবলেন ওনার ছেলের মনে সানজিদা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের স্থান হবে না। কী আছে সেই মেয়ের মধ্যে!
বাবার ধারনা ভুল না। শাহেদের মনে এখনো সানজিদা আছে। সে এখন দ্রুত বিয়ে করতে চাচ্ছে কারনে সে সানজিদাকে ভুলে যেতে চায়। কিন্তু সানজিদাকে ভুলতে গিয়ে এমন মেয়েকে বিয়ে করবে না যার চরিত্রে সমস্যা আছে।
শাহবাগ আন্দোলন জমে উঠেছে। একে একে দেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো শাহবাগে স্পন্সর করা শুরু করল। দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী, গ্রাম থেকে কৃষক, কুলি, মজুর সবাই শাহবাগের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করা শুরু করল। ফেইসবুকে ফ্যান পেইজ খোলা হল। তাতে দুই একদিনেই লক্ষ লক্ষ লাইক পড়ল। সরকারও এতে সহযোগীতা করল। যেমন শাহবাগ এলাকার কঠোর নিরাপত্তা প্রদান, খাবার পানির ব্যবস্থা, ভ্রাম্যমান টয়লেটের ব্যবস্থা ইত্যাদি।
খাওয়া দাওয়ার কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। মোট কথা ঐ মুহূর্তে দেশের বেশির ভাগ লোক শাহবাগকে সমর্থন দিচ্ছিল। ছেলে, বুড়ো সবাই শাহবাগের সাথে আছ। মিডিয়া এমন ভাবে প্রচার করেছে যেন বাংলাদেশের সব মানুষ শাহবাগীদের পক্ষে। কেউ শাহবাগীদের বিপক্ষে গেলে তাকে রাজাকার ডাকা হচ্ছে। কে চায় রাজাকার হতে?
রাজবাড়ীতে এক ডাক্তার ফেইসবুকে শাহবাগীদের নিয়ে কটুক্তি করল, ব্যাস, ঐ ডাক্তারকে পুলিশে ধরল। এক শিক্ষক ক্লাসে শাহবাগীদের বিরুদ্ধে কথা বলল। পর দিন সেই শিক্ষকের চাকরি গেল। শাহবাগীদের সমর্থনে দেশের প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিল। শাহেদ সবচেয়ে বেশি মজা পেল যখন যুদ্ধাপুরাধীদের দল (!) বিএনপিও বলেছে “তারা শাহবাগের সাথে আছে।”
বিএনপির দুই একজন নেতা শাহবাগের বিপক্ষে হালকা পাতলা সূর তুলেছিল। তাদেরকে বিভিন্ন পুরানো মামলায় গ্রেফতার করা হল। মোট কথা সারা বাংলাদেশে শাহবাগের বিরুদ্ধে কথা বলাই পাপ ছিল। মানুষ শাহবাগীদের হিরোর চোখে দেখত। পুরো প্রশাসনকে শাহবাগের পক্ষে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। ডিসি এসপিরা তাদের জেলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে শাহবাগের জন্য ‘অনুদান’ সংগ্রহের আদেশ দিলেন। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে শাহবাগের ফান্ডে টাকা দিল।
এত বাঁধা বিপত্তির মাঝেও দেশের এক দল লোক শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধীতা করছিল। শাহবাগের ছেলে মেয়েরা যখন “আ তে আমার দেশ তুই রাজাকার তুই রাজাকার” বলে শ্লোগান দিচ্ছিল তখন ঐ লোকগুলো শ্লোগান দিচ্ছিল “রাজবন্দীদের মুক্তি চাই” শাহবাগীরা যখন রাত্রে পুলিশ পাহারায় তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিল তখন সেই লোকগুলো গ্রেফতারের ভয়ে নিজ বাসায় না ঘুমিয়ে বিভিন্ন মেসে, ছাত্রাবাসে, আত্মীয়ের বাড়ীতে, পাহাড়ে, জঙ্গলে রাত যাপন করছিল। শাহবাগীরা যখন পেট ভরে বিরানী, কোল্ড ড্রিংক্স খেয়ে ঢেকুর তুলছিল তখন ঐ দলের লোকেরা দিনের পর দিন পলাতক অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছিল। শাহবাগীরা যখন সরকারী মেডিক্যাল টিমের সহায়তায় ‘মাথা ব্যথা ও বমি বমি ভাবের’ চিকিৎসা নিচ্ছিল তখন সেই দলের লোকেরা পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে গ্রেফতার হয়ে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরছিল। শাহবাগীদের যখন বিভিন্ন টক শো, টিভি প্রোগ্রামে হিরো হিসেবে দেখানো হচ্ছিল তখন ঐ দলের লোকদের টিভিতে প্রচার করা হচ্ছিল দেশের শত্রু হিসেবে। অর্থাৎ সেই লোকগুলো সব দিক দিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল।
শাহেদ তখনো জানে না, আমাদের গল্পের নায়িকা সানজিদা সেই নিপীড়িত দলের একজন অগ্রসর কর্মী!
চলবে…………..
বিষয়: সাহিত্য
১১৫৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন