ব্যর্থ মানুষের গল্প ২

লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:২৯:৫১ দুপুর

ব্যর্থ মানুষের গল্প-৪

সেদিন বিকেলে শাহেদের সাথে মঞ্জুর দেখা করার কথা ছিল কিন্তু মঞ্জু সময় দিতে পারে নি। শাহেদও ভেবে দেখল বিষয়টা আগে মা কে জানানো দরকার।

মা কে জানাতেই এই গল্পের প্রথম পর্বের প্রথম ডায়লগ দিলেন “তাই বলে একটা সিএনজি ড্রাইভারের বোনকে বিয়ে করবি? আমার মান সম্মান কোথায় থাকবে একটু ভেবে দেখেছিস?” মা খুব রেগে গেছেন …………………….. প্রথম পর্ব ঘুরে আসুন।

শাহেদ কোনভাবেই মা কে রাজী করাতে পারছে না। বাবা কে তো বলাই যাবে না। বাবা খুব নাক উঁচু মানুষ। ওনার ছেলের বন্ধু সিএনজি চালাচ্ছে এটাও তিনি মেনে নিতে পারেন নি।

শাহেদের ইউনিভার্সিটিতে সানজিদা ভর্তি হল না। সে ইয়ার লস দিবে। এভাবে কয়েক মাস পার হল। মঞ্জু সরকারী প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেল। পোস্টিং গ্রামের বাড়ীতে। তারা এক মাসের মধ্যে গ্রামে চলে যাবে। ইতিমধ্যে তারা বাড়ীওয়ালাকে নোটিশ দিয়েছে।

“আন্টি কোথায় যাবেন?” শাহেদের মা পরিচিত কন্ঠ শুনে আশেপাশে তাকালেন। দেখলেন এক সিএনজি ড্রাইভার ওনাকে ডাকছেন। সে আর কেউ নয়, মঞ্জু।

“গাড়ীতে উঠুন আন্টি”

শাহেদের মা এই ভর দুপুরে আধা ঘন্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে সিএনজিওয়ালাদের গোষ্ঠী উদ্ধার করছিলেন। কেউ মালিবাগ যেতে চাচ্ছে না। ভাব দেখে মনে হল ড্রাইভারের ইচ্ছা মত রাস্তায় চলতে হবে। ঠিক এমন সময় কোন গাড়ী পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যপার। কিন্তু এই মুহূর্তে শাহেদের বন্ধুকে দেখতে পেয়ে মেজাজ আরো গরম হল। কারণ এই ছেলের বোনের জন্যই পাগল হয়েছে শাহেদ। অন্য সময় হলে এক কথা ছিল কিন্তু শাহেদের মায়ের এই মুহূর্তে খুব খারাপ লাগছে। গরমে মাথা ঘুরছে। তিনি সিএনজিতে উঠে পড়লেন “মালিবাগ চল”।

শাহেদের মায়ের মালিবাগ যাওয়া হল না। পথে প্রচন্ড জ্যাম, গরমে অবস্থা খারা হতে লাগল। মঞ্জু ব্যাপারটা বুঝতে পারল। এই মুহূর্তে শাহেদদের বাসায় যেতে হলে জ্যাম পার হয়ে যেতে হবে। সেটা কম হলেও দুই ঘন্টা! আন্টিকে প্রস্তাব দিল “আমাদের বাসায় চলেন, কাছেই।”

অন্য সময় হলে তিনি মঞ্জুদের বাসায় যেতে চাইতেন না। কিন্তু এই মুহূর্তে ওনার প্রচন্ড খারাপ লাগছে। মনে হয় প্রেসার বেড়ে গেছে। দ্রুত বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। এতক্ষন রোদে দাঁড়ানো উচিৎ হয় নি। উত্তর দিলেন “চলো।”

মঞ্জুর মা বাসায় ছিলেন না। মঞ্জুর খাটেই আন্টি শুয়ে পড়লেন। সানজিদা ভিজা একটা তোয়ালে দিয়ে আন্টির হাত পা মুছে দিল। ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয়, এই প্রচন্ড গরমে বিদ্যুৎ চলে গেল। ছোট রুম, গ্রীষ্মের দুপুর, গরম আরো বেড়ে গেল। সানজিদা একটা হাত পাখা জোগাড় করে বাতাস করতে লাগল। শাহেদকে জানানো হল। সে আসছে, সম্ভবত মা কে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে। শাহেদও জ্যামে আটকা পড়েছে। জ্যামের কন্ডিশন অনুযায়ী তার আসতে দুই ঘন্টা লাগবে। তার বাবা হাসপাতাল থেকে ওনার নিজের গাড়ীটা পাঠিয়ে দিয়েছেন। শাহেদ সেই গাড়ীতেই আসছে। গাড়ীর জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। আন্টির অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। শাহেদ সানজিদাকে বলল “তুই আন্টিকে ধরে সিএনজিতে ওঠা। গলির রাস্তা ধরে কিছুদূর এগিয়ে লোকাল একটা ক্লিনিক আছে, ঐ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও কিছুটা উপকার হবে।”

সানজিদা দ্রুত বোরখা পড়ল।

ধরাধরি করে আন্টিকে সিএনজিতে ওঠানো হল। এ গলি সে গলি পার হয়ে লোকাল একটা ক্লিনিকে পৌঁছাল। ক্লিনিকে কোন কাজ হল না তারা বলল দ্রুত বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সম্ভবত স্ট্রোক করেছেন। গলি থেকে বের হয়েই জ্যাম, তবে একটু গতিশীল হয়েছে। ওরা শাহবাগে অবস্থিত ইব্রাহীম কার্ডিয়াক সেন্টারে গেল। ইমারজেন্সীতে ভর্তি করানো হল। এর মধ্যে শাহেদ সেখানে উপস্থিত হল। শাহেদের বাবার এক ব্যাচ মেট ঐ হাসপাতালের সিনিয়ার ডাক্তার। উনি সেই ডাক্তার সাহেবকে ফোন করে রোগীকে দেখতে বললেন।

রাত আট টায় রোগীর অবস্থা স্বাভাবিক হল। হাসপাতালে আরো দুই একদিন থাকতে হবে। ইতিমধ্যে শাহেদের বাবা সেখানে উপস্থিত হল। শাহেদের বাবাও হৃদ রোগী। উনিও একবার স্ট্রোক করেছিলেন (প্রথম পর্বে পাবেন)।

মাস খানেক পর শাহেদের মা নিজেই সানজিদাকে দেখতে চাইলেন। মেয়েটা ওনাকে সেই মুহূর্তে সেবা না করলে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছুতে পারতেন কি না সন্দেহ হচ্ছে। তিনি নিজেই একদিন মঞ্জুদের বাসায় হাজির হলেন। সেই দিন তারা জিনিস পত্র গোছাচ্ছিল। পর দিন তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাবে। আন্টি সানজিদার সাথে কথা বললেন। মেয়েটা আসলেই অসাধারন সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী। এরকম মেয়েই উনি ওনার ছেলের বৌ হিসেবে চান। কিন্তু সানজিদার পরিবার ও ডাক্তার সাহেবের পরিবারের মধ্যে স্টেটাস গত ব্যবধান অনেক। এই পরিবারের মেয়েকে ঘরে আনতে ওনার মন সায় দিচ্ছিল না।

উনি বাসায় ফিরে গেলেন। সানজিদার মত বৌ ওনার ছেলের জন্য দরকার কিন্তু সেটা সানজিদা না। ‘ভাল পরিবার’ হতে হবে। মজার বিষয় হল সানজিদা গ্রামে গেল না, সে ঢাকায় একটা লেডিস হোস্টেলে থেকে গেল। হোস্টেলে থেকে মেডিকেলে ভর্তি কোচিং করছিল।

শাহেদের মা সানজিদার কথা ভুলতে পারছিলেন না। তিনি সানজিদার সঙ্গে ওদের হোস্টেলে গিয়ে দেখা করলেন। অসাধারন রূপবতী মেয়ে দেখলে শুধু যে ছেলেরাই পাগল হয় তাই না, শাহেদের মাও পাগল হলেন। আফসোস! এই মেয়ে যদি ‘ভাল ঘরে’ জন্মাতো!

সানজিদা চালাক মেয়ে, সে সানজিদার মায়ের মনোভাব বুঝতে পারল।

এদিকে শাহেদের চাপাচাপিও বেড়ে গেছে। সে সানজিদাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। বাধ্য হয়েই শাহেদের মা সানজিদার মা কে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দিল। মঞ্জু ও তার মা উভয়েই রাজী। ডাক্তার বাবা জোর করে রাজী হলেন। এমন এক দিনে হঠাত সানজিদা শাহেদকে ফোন করে দেখা করতে চাইল! শাহেদ আকাশ থেকে পড়ল। মেয়েরা বিয়ের কথা বার্তা বললে কি সাহসী হয়ে উঠে?

শাহেদ পর দিন সানজিদার সাথে দেখা করল।

টুক টাক দুই এক কথা বলার পর সানজিদা শাহেদকে বলল “আমায় ক্ষমা করে দিন ভাইয়া। আমি বিয়ে করতে পারব না।”

চলবে……

বিষয়: সাহিত্য

৯২৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

265002
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৪৬
রঙের মানুষ লিখেছেন : এইটা কি হইল! নায়িকা বিগড়ে গেল Tongue
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
208783
দিশারি লিখেছেন : আহা!... Rolling Eyes
265017
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৬
আফরা লিখেছেন : আসলেই এটা চিন্তার বিষয় । পারিবারিক অবস্থান সমান না হলে পরে অনেক সমস্যা হতে পারে এটা ঠিক ।
265118
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪২
দিশারি লিখেছেন : বেচারা নায়কের অবস্থা তো বড়ই বেদনাদায়ক হয়ে গেল Broken Heart Broken Heart Broken Heart
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪২
208831
রঙের মানুষ লিখেছেন : নায়কের বেদনায় এত খুশী কেন Tongue
265210
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৪০
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : সব সমান চাইলে পরে গর্তে পড়ার সম্ভাবনা......!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File