আপেল খোর

লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ০৬ মে, ২০১৪, ১০:১৯:২০ সকাল

শহরের সবচেয়ে প্রতাপশালী ব্যাক্তি ওসমান সাহেব। একদিন ওনার কাছে এক যুবক এসে বলল “চাচা, একটা অন্যায় করে ফেলেছি!”

ওসমান সাহেব এই ছেলেটিকে জীবনেও দেখেননি। হয়তো এই ছেলে আবার কী আকাম কুকাম করে ধরা খেয়েছে। এখন কারো কাছ থেকে বাঁচার জন্য ওসমান সাহেবের কাছে এসেছে হয়তো।

“কী অন্যায় করেছো?”

যুবক “আমি ‘অবৈধ ভাবে’ আপনার গাছের একটা আপেল খেয়ে ফেলেছি। খাওয়ার পরে মনে হল আমি ভুল করেছি। এখন আপনার কাছে এসেছি ঐ আপেলের দাম শোধ করার জন্য।”

ওসমান সাহবে “আপেল পেয়েছ কোথায়?”

যুবক “শীতলক্ষ্যার তীরে একটা আপেল ভেসে এসেছিল। সেটা খেয়ে ফেলেছিলাম। পরে যখন মনে হল এই আপেলের মালিকের কাছে আপেলের দাম দেয়া উচিৎ তা নাহলে আমি সারা জীবন বিবেকের কাছে দায় বদ্ধ থাকব তখনই নদীর পাড় ধরে হাঁটতে থাকলাম। এক সময় এসে দেখলাম শীতলক্ষ্যার তীরে আপনার একটা বাগান বাড়ী আছে। সেই বাগানের কয়েকটা গাছ একেবারে নদীর কিনারে আছে। ঐ গাছ গুলো দেখে আপনার কাছে আসলাম। এখন আপনি আপেলের দাম রাখুন।”

ওসমান সাহেব ভাবলেন এমন বেকুবও এই যুগে আছে! তিনি ছেলেটিকে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বললেন “টাকা দিয়ে তুমি আমার আপেলের দাম শোধ করতে পারবে না। এগুলো আমার কাছে অনেক দামী। তুমি আমার অধীনে বিনা বেতনে চাকরি করে আপেলের দাম শোধ করবে।”

ছেলেটি সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল।

এমনি করতে করতে কয়েক মাস পার হয়ে গেল কিন্তু আপেলের দাম আর শোধ হয় না। ছেলেটিও কখনো ওসমান সাহেবের কাছে এসে বলে না “চাচা, আপেলের দাম শোধ হতে আর কত দিন কাজ করতে হবে?”

একদিন ওসমান সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাতে স্বপ্ন দেখলেন তিনি স্ট্রোক করেছেন। সেই স্বপ্ন দেখে উনি প্রচন্ড ভয় পেলেন। মনে করলেন উনি আর বাঁচবেন না। আত্মীয় স্বজনদের খবর দিলেন। এক এক করে প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ভেতরে ডেকে সবার কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলেন। জীবনে কার কার সাথে মিথ্যা কথা বলেছেন কার সাথে গোপনে অন্যায় করেছেন সেই কথা স্বীকার করতে লাগলেন। উনি সেই ‘ফ্রী খাটা’ যুবককেও ডাকলেন। এই যুবকের সাথেও মহা অন্যায় করেছেন। কারণ ওনার আপেল গাছই নেই। পাশে বসে ওনার সুন্দরী মেয়ে কাঁদছে। সেও মনে করেছে বাবা হয়তো মরে যাচ্ছে।

ওসমান সাহেব “যুবক তোমাকে একটা সত্যি কথা বলি। না বললে আমার আত্মা শান্তি পাবে না। আমার কোন আপেল গাছই নেই। তুমি কার না কার আপেল খেয়েছ। আর আমার জন্য ‘ফাও খেটেছ’। তোমার মত বেকুব এই জগতে আমি আরেকটা দেখি নি। তবে তুমি ভাল ছেলে। তোমার মত ভাল ছেলেও আমি এ জগতে দেখিনি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

যুবকও ভাবল ওসমান সাহেব সত্যি সত্যি মারা যাচ্ছেন। যুবক বলল “চাচা, মৃত্যুর আগে আমিও আপনাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই নাহলে আমি বেঁচে থেকেও শান্তি পাব না।”

পাশে বসা ওসমান সাহেবের মেয়ে যুবককে থামিয়ে দিয়ে বলল “না থাক এখন এসব কথা বলার সময় না। পরে সুযোগ পেলে…..” ওসমান সাহেব টাস্কি খেয়ে একবার যুবকের দিকে একবার মেয়ের দিকে তাকালেন।

যুবক বলল “না এখনই বলি। আপনার মেয়ের সাথে আমার অনেক দিনের রিলেশান কিন্তু আমার বাবা কোন সন্ত্রাসীর মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিবনে না। আপনার মেয়েও আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। এছাড়া এই শহরে কোথাও আমরা ডেটিং করার সাহস পেতাম না। সব জায়গায় আপনার লোক! তারা দেখে ফেললে পায়ে ইট বেঁধে শীতলক্ষ্যায় ডুবাবে। তাই নিরাপদে ডেটিং করার উদ্দেশ্যে আপনার বাসাকেই বেছে নিলাম। তাই আপেল খাওয়ার গল্পটা ফাঁদি আর আপনিও বিশ্বাস ......…”

ওসমান সাহেবের কান দিয়ে কোন কথা ঢুকছে না। নিজে যে এত বড় মাপের বেকুব তা জীবনে কল্পনাও করেন নি। আর এই ছেলে কোন আপেলের কথা বলেছে এতদিন তা টের পেলেন। এবার তিনি সত্যি সত্যি স্ট্রোক করলেন।

বিষয়: বিবিধ

১১৫৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

218026
০৬ মে ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
218036
০৬ মে ২০১৪ সকাল ১১:২৯
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অাপেল খাওয়ার এই ঘটনাটি একটি সত্য ঘটনা।

ঐতিহাসিক ভাবে ইরাকী ব্যক্তিটির নাম সম্ভবত 'ছালেহ জংকি'। তিনি নদীর ভাটিতে একটি আপেল পেয়ে খেয়েছিলেন। পরে তিনি অনুতপ্ত হয়ে বাগান মালিকের সন্ধানে নদীর উজানে গিয়ে বাগান মালীকের সন্ধান পান।

বাগান মালীক ছেলেটিকে খুবই সৎ ও আল্লাহ ভিরু হিসেব পান। পরে তার কন্যাকে সেই ছেলের সাথে বিয়ে দেন। অনেক লম্বা ঘটনা মাঝখানে আছে। সেই দম্পতির কোলে জন্ম হয়েছিল দুনিয়া বিখ্যাত আল্লাহর ওলি আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)।

আপনি সেই কাহিনী অবলম্বনে এটি অন্যভাবে লিখেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
218063
০৬ মে ২০১৪ দুপুর ০১:১৬
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
218380
০৭ মে ২০১৪ সকাল ০৯:২৩
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : হায়রে! কি গল্পের আপনি কি পরিণতি করলেন! D'oh

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File