শীতলক্ষার তীরে আমার কবর দিও ভাই যেন সকাল সন্ধ্যা
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ০৫ মে, ২০১৪, ০৭:১৪:২৩ সন্ধ্যা
সময়ঃ রাত বারোটা। স্থানঃ নারায়ণগঞ্জ বাবা শামীম শাহ শীতলক্ষীর দরবার শরীফ। চোখ ঢাকা এক ব্যাক্তিকে হাত পা বেঁধে দরবার শরীফে আনা হল। ইন্টারকমে ফোনে এক লোক জানাল “বাবাকে খবর দিন। লালসালুকে ধরে আনা হয়েছে।”
বোতল হাতে বিশালদেহী এক ব্যাক্তির রুমে প্রবেশ। যে লোকগুলো লালসালুকে বেঁধে এনেছিল তাদের চকচকে দৃষ্টি বোতলের দিকে। শামীম শাহ তার সিংহাসনে বসলেন।
“তুই কি লালসালু?”
“না ওস্তাদ। লালসালু আবার কেডা? জীবনে প্রত্থম নাম শুনলাম”
দাঁড়িয়ে থাকা এক লোক লালসালুর গালে এক চড় লাগিয়ে বলল “হারামজাদা মিছা কথা কয়। ক তুই লালসালু, নইলে হান্দায়া দিমু।”
কী হান্দাইব সেটা জিজ্ঞেস করতে মন চাইল না। স্বীকার করল “ওস্তাদ আমি লালসালু”
বাবা শামীম শাহ এবার ক্রুর হাসি হাসলেন।
লালসালু “জীবনে আপনার নাম অনেক শুনেছি। একবার আপনার মহান চেহারাটা সামনা সামনি দেখবার চাই।”
বাবা শামীম শাহের মন নরম। মানুষের কষ্ট সহ্য হয় না। এই যে কয়দিন আগে এক লোককে তার লোকজন পিটিয়ে হাড় গোড় ভেঙ্গে দিল। যন্ত্রনায় লোকটি কাতরাচ্ছে। দ্রুত হাসপাতালে নিতে না পারলে বাঁচানো যাবে না। ঐ এলাকায় এত গুরুতর রোগীর চিকিৎসাও নেই। লোকটির প্রতি বাবা শামীম শাহের দয়া হল। শান্তির উদ্দেশ্যে পকেট থেকে পিস্তল বের করে লোকটির মাথায় চেপে গুলি। ব্যাস লোকটির সকল যন্ত্রনার অবসান হল। লালসালুর কথা শুনে বাবা শামীম শাহ চোখের বাঁধন খুলে দিতে আদেশ দিলেন।
চোখ খুলে লালসালু বাবা শামীম শাহকে দেখল।
বাবা শামীম শাহ “তুই নাকি আমার বিরুদ্ধে উল্টা পালটা লেখস?”
লালসালু আমতা আমতা করে বলল “সবাই ই তো লেখে। আমি একা কী দোষ করলাম?”
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অস্ত্র হাতে এক লোক “কী বাবার মুখের সামনে প্রশ্ন করে? এত বড় সাহস? তোর পায়ে একশটা ইটা বাইন্ধা শীতলক্ষায়……. ”
“খামোশ” বাবা শামীম শাহ সবাইকে চুপ করতে বললেন। “দেখি তো তুই কী লেখছস?”
এক সুন্দরী মেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে পাশে বসা ছিল। লালসালু এতক্ষন ওকে খেয়াল করে নাই। খেয়াল করলে এই মেয়েকে নিয়ে একটা স্টেটাস লিখে ফেলত। অবশ্য হাত পা বাঁধা অবস্থায় স্টেটাস লেখা যায় না।
সুন্দরী মেয়েটি বাবা শামীম শাহের কাছে ল্যাপটপ খুলে লালসালুর বিভিন্ন লেখা দেখাতে লাগল। বাবা শামীম শাহ কিছু কিছু লেখা পড়ে হাসলেন। “তুই তো খারাপ লিখস না। আমার বিরুদ্ধে কেন লেখতে গেলি? পক্ষে লেখলে কিছু নজরানা পাইতি।” পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে “এই হারামজাদাকে কোথা থেকে ধরে এনেছিস?”
“গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে। মাওনা থেকেই পিছু নিয়েছিলাম। সাথের লোকজন চৌরাস্তায় নেমে যাওয়ার পর একা পাইছি, তখন মাইক্রো সহ নিয়া আইছি। বাইরে ড্রাইভারকে রাখছি। ওরে সহ একত্রে শীতলক্ষার পানিতে…….”
বাবা শামীম শাহ “কেউ পিছু নেয় নাই?”
“কিছুদূর পর্যন্ত গাজীপুরের মেয়রের লোকজন মাইক্রো নিয়া ধাওয়া করছিল। কাঁচপুর ব্রীজে ঢোকার পরে কেউ আর সাহস করে নাই। ঐ মাইক্রোটা আদমজী রোডের ভিত্রে হান্দাইয়া গেছে।”
“দিনকাল এমনিতেই খারাপ যাইতাছে। ওর পকেট দেখছস? মোবাইল দিয়া তো এখন খুঁইজা পাওন যায়”
“না ভাই, মোবাইল আগেই ফেইল্যা দিছি”
বাবা শামীম শাহের টেনশন মনে হয় কমে নাই “যাহ, দ্রুত এইডারে সাইজ কর। কাক পক্ষী যেন টের না পায়”
লালসালু “বাবা! শেষবারের মত আমার কোন ইচ্ছা পূরণ করতে দিবেন?”
বাবা শামীম শাহ দয়ার থলথলে শরীর। উনি পাশে দাঁড়ানো সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন “যাও, লালসালুর শেষ ইচ্ছা পূরণ করে দেও” কথা মত মেয়েটি লালসালুর দিকে আগালো।
লালসালু “তওবা তওবা, নাউজুবিল্লাহ। আমি কি এটা চেয়েছি নাকি?”
লালসালুর কথা মেয়েটি বাবা শামীম শাহের দিকে ফিরল।
“তোর শেষ ইচ্ছা কী?”
“আপনার পুনটা দেন, পুন্দিব” ভয়ে লালসালুর শব্দগুলো বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল।
“খামোশ! তুই আমাকে পো_ইবি? আমারে কি রূপবান গোষ্ঠীর ওকে ভাবছস?”
“না বাবা, আমি কইতে চাইছিলাম মোবাইলটা দেন। একখান কল দিমু।”
বাবা শামীম শাহ এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তিনি নিজেও টেনশনে পড়ে গিয়েছিলেন। “আমি তোরে মোবাইল দিমু আর তুই কল দিয়া র্যাব ডাকবি! অন্য কিছু চাইলে বল” বলে মেয়েটির দিকে ইশারা করল।
লালসালু “আপনারে নিয়া একখান কোবতে লিখতে চাই, যদি অনুমতি দেন”
বাবা শামীম শাহ ভাবলেন “বুবু কত ডিগ্রী নিলেন। কত মানুষকে নিয়ে কত গল্প কবিতা লেখা হল অথচ তাকে নিয়ে সাংবাদিকরা শুধু খারাপ কথা লিখে। এই ছেলে যদি ভাল কিছু লেখতে পারে তাহলে তো ভালই হবে। বললেন “ঠিক আছে। তোর কোবতে শুনে যদি আমার ভাল লাগে তাহলে তোরে ছাইড়া দিমু। আর পছন্দ না হয় তাইলে পায়ে ইটা বাইন্ধা……….. ”
পাশে দাঁড়ানো সুন্দরী বলল “বাবা লালসালু তো শুধু অন্যের ছড়া কবিতা নকল করে। নিজের লেখাগুলো বাজে।”
বাবা শামীম শাহ “তো কী হইছে? আমিতো অম্রেশ পুরীরে নকল করি”
মেয়েটির বাঁধা ধোপে টিকল না।
লালসালু আবৃত্তি করল-
“বাবা শামীম
তুমি চীর উন্নত ব্যাটসম্যান তামীম!”
বাবা শামীম শাহ হাত তুলে থামতে ইশারা করলেন “এটা ভাল লাগে নাই, আরেকটা বল” তবে বাবা শামীম শাহের মুখটা উজ্জ্বল হল। এই ছেলেই পারবে তাকে জাতে তুলতে। এরকম একটা ছেলে সাথে থাকলে ভালই হত।
লালসালু এবার একটা গান গাইতে লাগল “আকাশেতে লক্ষ তারা শামীম কিন্তু একটাই রে….. ” বাবা শামীম শাহের মুখ খুশিতে ভরে উঠল “তুই এতদিন কই ছিলিরে? তুই ভাল কিছু বানা। তোরে চাষাড়ায় একটা চারতলা বাড়ী কিন্যা দিমু। বউ আছে? না থাকলে দুই একটা……
ঐ তোরা চাষাড়ার শিমুলের বাড়ীটা দখল কইরা দে, লালসালুরে রাখুম”
“ঐটা তো চার তলা না তিন তলা”
“তাইলে চার তলা একটা দখল কর। আমার নাম কবি, এমনিতেই বাড়ী ছাইড়া দিব। না ছাড়লে ইটা বাইন্ধা শীতলক্ষায়........ ”
লালসালু “না আমার বাড়ী লাগব না। জানে না মারলেই চলব। আরেকটা কোবতে শুনবেন?”
“ক”
“নারায়ণগঞ্জের শামীম বাবা সবার চেয়ে ভাল
কথাবার্তা মিষ্ট ভাষী মুখটা একটু কালো” এই বলে লালসালু জ্বীভে কামড় দিল।
শামীম শাহ এবারো খুশি হলেন “বাহ বাহ। তোরে এরাকটা বাড়ী দিমু, ফতুল্লায়। ওর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দে” বোতলটা সামনের দিকে এগিয়ে ধরে “খাবি?”
“শুধু পানি খামু”
দরবারের লোকজন দেখল পরিস্থিরি পালতে গেছে। তারা ভাল একটা সোফাতে লালসালুকে বসতে দিল। ঠান্ডা কোক এনে দিল।
লালসালু এবার বলল “এইবারের কোবতেটা অনেক সুন্দর হবে। এটা আপনি আপনার বাসার সামনে লিখে রাখতে পারেন। কবি নজরুলে কবিতা থেকে নকল করা।”
“নজরুলটা আবার কে? ঐ তোরা লালসালুর লগে নজরুলরেও বাইন্ধা আনতি! তোর কোবতে কো, শুনি।”
লালসালু “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই
যেন সকাল সন্ধ্যা মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই” বলে লালসালু বুঝল নকল হয় নাই, পুরো কপি পেস্ট হয়ে গেছে। তবে এইবার শামীম শাহের পছন্দ হল। উনি এটাকে এডিট করতে বললেন।
এডিটে লালসালু ওস্তাদ। এডিট করে বলল
“শীতলক্ষ্যার তীরে আমায় কবর দিও ভাই
যেন সকাল সন্ধ্যা তাহাজ্জুদের আযান শুনতে পাই!!!”
শামীম শাহ এইবার মহা খুশী। তোরে একটা নয়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা স্টেডিয়াম তোরে লেইখ্যা দিমু। তিনি নিজে আবৃত্তি করতে লাগলেন
“শীতলক্ষ্যার তীরে আমায় কবর দিও ভাই
যেন সকাল সন্ধ্যা তাহাজ্জুদের আযান শুনতে পাই!!!”
বাইরে হঠাৎ গোলাগোলির শব্দ শুরু হল। মনে হয় গাজীপুরের মেয়র মান্নান ভাইয়ের লোকজন হামলা করেছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩২০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেন সকাল সন্ধ্যা তাহাজ্জুদের আযান শুনতে পাই!!!”
সব কিছু মিলাতে পারলেও শেষেরটা মিলাতে পারছি নাঃ
"বাইরে হঠাৎ গোলাগোলির শব্দ শুরু হল। মনে হয় গাজীপুরের মেয়র মান্নান ভাইয়ের লোকজন হামলা করেছে।"
মন্তব্য করতে লগইন করুন