শোকের মাস আগস্ট-সত্য ঘটনা অবলম্বনে
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:০৪:১৫ দুপুর
শোকের মাস আগস্ট
সত্য ঘটনা অবলম্বনে-
১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজে ভর্তি হলাম। ভর্তি হয়েই বুঝলাম শিবির কি জিনিস! ক্যাম্পাসে কোন ছেলে মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না, এক সাথে হাঁটতে পারবে না। একেবারে তালেবানি স্টাইল! ছেলে মেয়ে একে অপরের দিকে আড়চোখে তাকানোই ছিল একমাত্র সম্বল। যদি কোন ছেলে কোন মেয়ের সাথে কথা বলে সাথে সাথে শিবিরের কর্মীরা কোথা হতে হাজির হত। ছেলেটিকে কাছে ডেকে নিয়ে হ্যান্ডশেইক করত। নাম, ধাম জিজ্ঞে করত ইত্যাদি। আর কোন কিছু বলত না। এতেই ছেলেটির খবর হয়ে যেত। মেয়েগুলোও আর কথা বাড়াত না।
মেয়েগুলোর সাথে মাঝে মধ্যে কলেজের বাইরের কোচিং সেন্টারগুলোতে কথা হত। রাস্তা ঘাটেও কথা হত কিন্তু সেটা কথা না বলার মতই। সুতরাং মহসিন কলেজের ছেলে মেয়েদের মধ্যে কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। দুই একটা ঘটনা যা ঘটে তার সংখ্যা খুব কম।
এবার আসি আসল ঘটনায়। এসএসসি পরীক্ষার আগে টেস্ট পরীক্ষার পরে চট্টগ্রামের এক কোচিং সেন্টারে কোচিং করলাম। সেখানে আমাদের সাথে ক্যাডেট কলেজের এক ছাত্রও পড়ত। ক্যাডেটের ছাত্ররা এসএসসি পরীক্ষার আগে কিছু দিন ছুটি পায়, সেই সুযোগে অনেকে কোচিং এ পড়ে। এই ছেলের নাম ছিল মামুন। সঙ্গত কারনেই মামুনের অনুরোধে মামুনের আসল নামটা ব্যবহার করলাম না। ইন্টারে পড়ার সময় মামুন মাঝে মধ্যে আমাদের কলেজে আসত। যখনি ক্যাডেট কলেজ ছুটি হত তখনই মামুন আমাদের সাথে আড্ডা দিতে কলেজে আসত। উল্লেখ্য মামুনের বাসা ছিল কলেজের সাথেই।
আমাদের ক্লাসে রীতা নামের মিষ্টি চেহারার এক মেয়ে পড়ত। মামুন জানাল রীতা মামুনের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। মামুন যখনি রীতা প্রসঙ্গে কথা তুলত তখনি মামুনের চেহারা বদলে যেত। তখন বুঝলাম ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। আমরা বন্ধুরা মামুনকে জোর করে ধরলাম। মামুন স্বীকার করল সে রীতাকে ভালবাসে। কিন্তু রীতাকে সে কখনো মুখ ফুটে কিছু বলেনি। আমরা মামুনকে বললাম তুই বলতে না পারলে তোর পক্ষে আমরা অফার করি। মামুন ভয় পেল কারন আত্মীয়ের মধ্যে তো, যদি তার ফ্যামিলীতে জানাজানি হয়ে যায়! আমরা তাকে অভয় দিলাম। আমরা অফার করে দেখি পরে সে মেয়ে যদি ডিনাই করে তার ফ্যামিলীতে জানায় তাহলে তুই পল্টি মারবি। এমন ভাব করবি যেন তুই জানিস না। আর যদি এক্সেপ্ট করে তাহলে তো কেল্লা ফতে। ছুটি শেষে মামুন ক্যাডেট কলেজে চলে গেল। আমরা আমরা রীতাকে অফারের অপেক্ষায় রইলাম। মনে কিছু ভয় কাজ করছিল। রীতা যদি শিবিরের নেতা কর্মীদের এই খবর জানিয়ে দেয়! তাহলে কারো হাড় গোড় আর আস্ত থাকবে না এমনিতেই মাঝে মাঝে শোনা যায় ইভ টিজিং এর কারনে ওমুক ফ্যকাল্টির অমুক ভাইকে শিবিরের নেতারা ধোলাই দিয়েছেন। ধোলাই দেয়ার নির্দিষ্ট কিছু স্থানও রয়েছে।
ঐ বছর মানে ১৯৯৯ সালে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। এই ঘটনাটা বর্ষা কালের। বন্ধুর প্রেমিকাকে বন্ধুর জন্য অফার করব তাতেই আমাদের বীরপুরুষদের হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে। না জানি নিজের প্রেমিকার ক্ষেত্রে কী হয়! এভাবে এক মাস কেটে গেল কিন্তু রীতার সাথে কথা বলার মত সময় ও সুযোগ পাচ্ছি না। কীভাবে যে অফার করি। একদিন ক্লাস শেষ হবার পর কী কারনে যেন আমি দেরি করে ফেললাম। যখন বাসায় ফেরার ইচ্ছা হল তখন প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল। কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ খেয়াল হল পাশে রীতা দাঁড়িয়ে। আশেপাশে শিবির তো দূরের কথা কোন ছাত্রই নেই, মাঠ পুরোপুরি ফাঁকা। এই তো সুযোগ। কিন্তু যে মেয়ের সাথে জীবনে কথা বলি নাই সেই মেয়েকে কীভাবে বন্ধুর জন্য অফার করি। দেখি আগে পরিচয় হই। টুকটাক কথা বলা শুরু করলাম যদিও আশেপাশে নজর ছিল কখন যে শিবিরের পোলাপাইনেরা দেখে ফেলে। বৃষ্টি থেমে গেল, আমার হাতে ছাতা রীতার হাতে কিছুই নেই। দু’জনেই কলেজ থেকে বর হলাম। গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে রীতা রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে আর আমি রাস্তা পার হয়ে ওপারে যাব। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল। আমি রীতার দিকে আমার ছাতা বাড়িয়ে ধরলাম “আমি বাসে উঠে যাব। ছাতাটা পরে ফেরত দিও।” সে বিনীত স্বরে মানা করল। এমন সময় ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। প্রয়োজন লজ্জা মানে মানে না। যাকে আস্ত ছাতা দিয়েছিলাম একা ব্যবহার করার জন্য সে নিজেই আমার ছাতার নিচে চলে আসল, প্রায় গায়ে গা ঘেঁষে। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে একই ছাতার নিচে দাঁড়ালামা! মুন্নী সাহা যদি তখন জিজ্ঞেস করত “অনুভূতি কী?” আমার উত্তর থাকত “ফাট্টাফাট্টি”। বন্ধুর পছন্দের মেয়ের সাথে একই ছাতার নিচে আছি তখন তা মাথায় আসছিল না, মাথায় আসছিল ইশ এই মেয়ে যদি আমার প্রেমিকা হত! চট্টগ্রামে স্থানীয় ভাষায় একটা গান মনে পড়ে গেল -কইলজার ভিত্রে বান্ধি রাইকখুম তোয়ারে___ । এই প্রথম বুঝতে পারলাম মেয়েটি আসলে অপরূপ সুন্দরী। ক্যাম্পাসে যেহেতু মেয়েদের দিকে সরাসরি তাকানো যায় না তাই খেয়াল করতে পারিনি। এমন মেয়ে যদি আমার জীবন সঙ্গীনি হত! মামুন এমনি এমনি এই মেয়ের প্রেমে পড়েনি। ছাতার নিচে থেকেই সে রিকশা ডাকছিল। আমি মনে মনে চাইলাম –কোন রিকশা যেন যেতে রাজী না হয়। প্রথম দু’টো রিকশা যেতে রাজী না হলেও তৃতীয় রিকশাটা যেতে রাজী হল। এই প্রথ কোন রিকশাওয়ালার প্রতি মারাত্মক রাগ হল। শালা খেপ নেবার আর টাইম পাস নাই। আর দশটা মিনিট পরে যদি রিকশা পেত। রীতা চলে যাবার পর অনেক্ষন ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে হল এই জায়গাটা আমার অনেক প্রিয় জায়গা। বৃষ্টির ঝাপ্টা আরো বাড়ল। একটা বাসে উঠে পড়লাম। সারাটা দিনেই মাথার ভিতরে রীতার চিন্তা।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর রীতার চিন্তা মাথা থেকে দূর হয়ে গেল। শত হলেও বন্ধুর পছন্দ। ঐ শালাই যা ইচ্ছা করুক। আমি অন্য রাস্তা মাপি। জীবনে প্রেম করা হবে না। তাই রীতার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলাম।
ক্লাসমেট দেলোয়ার ছিল এক শিবির নেতার ভাগিনা যার নিউমার্কেট এর সামনে ফুলকলি নামে মিষ্টির দোকান রয়েছে। দেলোয়ারের খালাত বোন আমাদের ক্লাসেই পড়ত। মেয়েটির নাম মায়মুনা না কি যেন, খাঁটি জামাতী ফ্যামিলী। মেয়েটির চোখ আর হাত ছাড়া আর কিছুই দেখি নাই। তবে চোখ আর হাত দেখে মনে হল মেয়েটি অপূর্ব সুন্দরী। দেলোয়ারের কাছে জানতে চাইলাম সে দেখতে কেমন। জবাবে দেলোয়ার যা বলল তাতে টাস্কিত হলাম। ক্লাস থ্রি এর পর থেকে এই মেয়ের চোখ আর হাত ছাড়া সে আর কিছুই দেখেনি যদি তাদের বাসা একই এলাকায়। ক্লাসমেট হওয়ায় তারা এক সাথেই এক স্যারের কাছে ক্লাস ফাইভ থেকে লেখাপড়া করত। আমি অবাক হলাম ক্লাস ফাইভ থেকে এক ছেলে আর এক মেয়ে একই স্যারের কাছে পড়াশোনা করে, সম্পর্কে আপন খালাত ভাই বোন, অথচ যে সময়ে ছেলে মেয়েদের মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় সেই সময় থেকে মেয়েটি ছিল সম্পূর্ণ পর্দার আড়ালে।
এই মেয়ে, দেলোয়ার আর আমি এক স্যারের কাছে কোচিং করতাম। মাঝে মাঝে মায়মুনার সাথে কথা হত। এক ফাঁকে তাকে রীতার বিষয়টা জানালাম। মায়মুনা জানাল রীতার সাথে তার অনেকদিনের সম্পর্ক। সুতরাং রীতার কাছে আমার বন্ধুর প্রস্তাব পেশ করতে কোন সমস্য হবে না। এ কথা শুনে আমার বুক ব্যাথায় চিন চিন করল। ইশ রীতাকে যদি আমার জন্য অফার করতে পারতাম। মাঝে মাঝে ক্লাসের বাইরে রীতার সাথে কথা হত। মহসিন কলেজের পেছনে কয়েকটা ক্যান্টিন ছিল। টিফিন পিরিয়ডে সেখানে সিঙ্গাড়া খেতে যেতাম আমি যে ঘটনার কথা জানাব তা ঘটার পনের বিশদিন ধরে আমি রীতা আমার এক বন্ধু আর ক্লাসের আরেক মেয়ে এক সাথেই সিঙ্গাড়া খেতাম। তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতাম। কারন শিবিরের উপরে কোন বিশ্বাস নেই। কখন কী যে ঝামেলা পাকায়! রীতার সাথে মোটামোটি ভাব জমে গেল। ভাবছি দোস্তের পক্ষ থেকে অফারটা করেই ফেলি। আবার মাথায় চিন্তা ঢুকল- অফার করার পর আমাকে কী ভাববে? নেগেটিভ কিছু ঘটলে একত্রে বসে সিঙ্গাড়া খাওয়া হবে না। আম ছালা দুটিই যাবে। এভাবেই পনের বিশদিন কেটে গেল। কথা বার্তাতে বেশিরভাগ রীতার ফ্যামিলীর কথা উঠে আসত। রীতার মা মারা গেছে বছর দুয়েক হল।
১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে মায়মুনা রীতাকে মামুনের প্রস্তাবের কথা বলতেই রীতা বলল
“আমি জানি মামুন আমাকে পছন্দ করে। আমিও তাকে পছন্দ করি। সে নিজের মুখে আমাকে তার ভাললাগার কথা বলবে আমি সেই অপেক্ষায় ছিলাম।”
তখন মনে হল আমার বন্ধু রাজ কপাল নিয়ে জন্মেছে। এই বয়সে এত সুন্দরী মেয়ে তাকে পছন্দ করে। শালার কপাল! সেপ্টেম্বর মাসে ক্যাডেট কলেজ কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। তখন না হয় মামুন রীতাকে অফিসিয়ালী অফার করবে। তার আগে রীতা অবশ্য আমাকে জানিয়েছিল –তোমার বন্ধুকে তুমি আমার সম্মতির কথা জানিয়ে দিতে পার। ক্যাডেট কলেজে টিন্ডটি নম্বরে ফোন করা যায় কিন্তু সেটার একটা লিমিটেশন আছে। রীতা যে মামুনকে পছন্দ করে সেটা মামুনকে না জানানো পর্যন্ত আমার ঘুম আসছে না। কবে যে মামুনকে জানাব, আমার আর তর সইছে না।
মামুনকে রীতার সম্মতির কথা জানানোর একটা সুযোগ পেলাম। পেরেন্টস ডে তে মামুনের চাচাত ভাই কি যেন একটা সিস্টেম করে ক্যাডেট কলেজে গিয়ে হাজির হল। সে চট্টগ্রাম কলেজেই পড়ত। আমাদের পক্ষ থেকে মামুনকে সে রীতার সম্মতির কথা জানাল। সুযোগ পেয়ে মামুনও আমাদের উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখল। চিঠিতে লেখা, তার আর তর সইছে না। সেপ্টেম্বর মাসে বাসায় এসে সুন্দর একটা শার্ট গায়ে দিয়ে এক গুচ্ছফুল নিয়ে রীতাদের বাসায় যাবে। উল্লেখ্য রীতার বাবা ভাই সবাই চাকুরি করে। যেহেতু মা বেঁচে নেই তাই রীতা সারাদিন একা একা থাকে। মামুন যেহেতু ওদের কাছের আত্মীয় তাই রীতার বাসায় যাওয়া ওর জন্য কোন ব্যপার না। ফুল হাতে নিয়ে সে রীতাকে নিজের মুখ দিয়ে অফার করবে। চিঠিতে আরো লেখা মামুন আমাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। সেপ্টেম্বরে ছুটুতে এলে সে আমাদেরকে চাইনিজ খাওয়াবে। আমি চিঠি পড়তে পড়তে মনে মনে বললাম- আরেকটুর জন্য ঘটনা আরেকদিকে মোড় নিচ্ছিল। তখন আমারে পাইলে বান্ধতি। আমরা সবাই সেপ্টেম্বরের চাইনিজ খাবারের অপেক্ষায় রইলাম।
আগস্ট মাস শুরু হল। আওয়ামীলীগ আমলের আগস্ট মাস মানে -রাঁধো বাঙ্গালী রাঁধো। অফিসিয়ালী -কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো হলেও ঐ মাসে সারা দেশে রান্না বান্নার উৎসব লেগে যায়। বিভিন্ন স্থানে খিচুড়ি মাংস রান্না হয়। আবার এই খিচুড়ি মাংস ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি হয়। ঢাকায় আওয়ামীলীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদার মিরপুরে বিশাল কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করেছেন। কামাল মজুমদারের অন্যতম আস্থাভাজন লোক ছিলেন আমার খালাত ভাই ইসহাক মজুমদার। উনি নিজেও একটি গরু জবাই করবেন। ঢাকা থেকে আমার ডাক পড়ল-আমি একটা আস্ত গরু দিয়ে মেজবান খাওয়াচ্ছি আর তুই চট্টগ্রামে থাকবি? খাওয়ার প্রতি আমার ছোটকাল থেকেই লোভ ছিল। কেউ যদি আমেরিকাতে বসে আমাকে খাওয়ার দাওয়াত দেয় এবং আমেরিকায় যাবার বন্দোবস্ত করে দেয় তাহলে আমি খাওয়ার জন্য আমেরিকাও যেতে প্রস্তুত! বৃষ্টিভেজা ১২ই আগস্টে আমি আন্তঃনগর ট্রেনে চড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমার খালাত ভাইয়ের তখন রম রমা অবস্থা। দল ক্ষমতায়, টাকা পয়সার অভাব নেই। তিনি তখন মিরপুরের একটি নাম করা স্কুলের অভিভাবক কমিটির সদস্য এবং সম্ভাব্য কমিশনার প্রার্থী যেখানকার তৎকালীন কমিশনার ছিলেন বিএনপি নেতা আসাদ।
১৫ই আগস্ট রাতের গাড়ীতে আমি চট্টগ্রামে ফিরি।
দুই একদিন পরে ক্লাসে গেলাম। কয়েকদিন ক্লাস মিস দিয়েছি তাই মতি গতি কিছু বুঝি নাই। ক্লাস শুরুর দিকে এক মেয়ে আমার কাছে এসে বলল
“তুমি কি লালসালু?”
“জ্বী”
মায়মুনা তোমাকে একটা কথা জানাতে বলেছে।
“বলো”
“আমাদের ক্লাসে রীতা নামে এক ছাত্রী ছিল। সে কয়েকদিন আগে মারা গিয়েছে।”
আমি ভেবেছিলাম মেয়েটি হয়ত আমার সাথে ঠাট্টা করছে। কিন্তু মৃত্যু নিয়ে কি কেউ ঠাট্টা করে? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম
“কে মারা গেল?” “রীতা নামের কি একটা মেয়েই ক্লাসে ছিল?” “অন্য মেয়েও তো হতে পারে। হয়তো কোন ভুল হয়েছে।”
আমাদের কথা শুনে আরেক মেয়ে আমাদের কথোপকথনের মাঝে উপস্থিত হল।
“আসলে রীতাই মারা গেছে। এই নামেই অন্য কোন মেয়ে নেই। ওর রোল নম্বর _ _”
আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। এ কি হল? মাত্র কয়েকদিন আগে যার সাথে বসে একত্রে সিঙ্গাড়া খেলাম, যাকে বন্ধুর প্রেমিকা হিসেবে দেখতে শুরু করলাম সে এখন আমাদের মাঝে নেই, একেবারে দুনিয়া থেকেই নেই।
রীতার টিবি রোগ ছিল। ১২ই আগস্ট সন্ধ্যায় হঠাৎ করে রীতার রক্তবমি শুরু হয়। তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ভর্তি করা হয়। রাতেই রীতা মারা যায়। আমিও এক অভাগা, রীতার মৃত্যুর খবর জানলাম চার পাঁচদিন পর।
এমনিতেই রীতার জন্য শোক আবার মাথায় আরেকটা চিন্তা ঢুকল। আমার বন্ধু কি সহ্য করতে পারবে এই শোক? সে এখনো জানে না রীতা মারা গেছে। তাকে কীভাবে জানাব? যদিও সে ছুটির পর জানবে। ক্যাডেট কলেজ ছুটি হবে আর মাত্র দশ বারো দিন পরে আর মামুন বাসায় এসে শুনবে তার প্রিয় মানুষটা দুনিয়াতে নেই। এর চেয়ে প্রেমের অফারে ছ্যাঁকা খেলে হয়ত এত কষ্ট পেত না। দোয়া করি যাতে ও সকল শোক সহ্য করতে পারে। আমরা আবারো সেপ্টেম্বরের অপেক্ষায় রইলাম।
বিষয়: সাহিত্য
২৮২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন